somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আশিক সরকার শুভ (আবীর)
আমি আশিক। প্রচন্ড স্বপ্নবাজ একজন মানুষ। একাধারে অনেক কিছু হবার ইচ্ছে।খুব আত্মকেন্দ্রিক একজন । অনেক কথা কারো সাথে তাই বলা হয়ে ওঠেনা। তাই এখানে আসা। যা কিছু মনে আসে, তার মধ্য থেকেই সবার সাথে শেয়ার করা.. এইতো.. আর কিছু বলার নেই...

শিরোনামহীন

১৮ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বাসার সামনেই একটা ভিডিও গেমসের দোকান ছিল। এখন যেখানে থাকি সেখানকার কথা বলছিনা। যে বাসার কথা বলছি, তা ছিল মেনরোড থেকে বেশ ভিতরের দিকে। আমরা থাকতাম দোতলায়। জানালা দিয়ে তাকালেই দোকানটা দেখা যেতো।

গেমসের দোকানের পাশেই ছিল এক মুদির দোকান। মুদির দোকানে যিনি বসে থাকতেন তিনিই দোকানদুটোর মালিক। তিনি বলতে তাদের পরিবারের কথা বলছি। পরিবার বলতে উনার বাবা মা ছোটভাইসহ বাকী সবাই। বয়স তখন ৪০ পেরিয়ে গেছে।আমি আঙ্কেল বলে ডাকতাম। তখনও বিয়ে করেন নি। গ্রামের একটা মেয়েকে ভালবাসতেন। পাক্কা আড়াই বছর রঙ্গিন পাঞ্জাবী আর শাড়ী পড়ে ঘোরাঘোরি চললো। কোন এক রাতে মেয়েটি পুকুরঘাটে দেখা করতে বললে তিনি সারারাত দাঁড়িয়ে ছিলেন। মেয়েটি আসেনি। সপ্তাহখানেক পর জানা গেল মেয়েটা প্রবাসী। স্বামী সংসার আর টাকা পয়সা সবদিক থেকেই ভাল আছে।

সন্ধ্যার পর কারেন্ট চলে গেলে দোকানের সামনের রাস্তা দিয়ে আসার সময়ে একটি গোল লাল আলো অন্ধকারে ওঠানামা করলেই বুঝতাম তিনি কাঠের টুলে বসে বিড়ি টানছেন। গেমস খেলার ফাঁকে ফাঁকে প্রায় সময়ই আমার সঙ্গে গল্পসল্প করতেন। প্রায় সময়ই নিজের অনেক টুকরো টুকরো কাহিনী শোনাতে শোনাতে বিড়ি ধোয়া অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে ছাড়তেন আর বলতেন "আশিক, কখনো কাউকে নির্ভরশীল হয়ে ভালবেসো না। একবার বেসেছো, তো মরেছো"।

এই অসম্ভব রকমের কষ্ট বয়ে বেড়ানো মানুষটি প্রায় সময় আমাকে গেমসের দোকানের ক্যাশে বসিয়ে দুপুরে খেতে চলে যেতেন। প্রায় সময় ভুলে ক্যাশে মানিব্যাগটা ফেলে যেতেন। একদিন কৌতুহল থেকে মানিব্যাগটা খুলে দেখলাম একটি ছোট্ট পকেটে পাসপোর্ট সাইজের একটি সাদাকালো ছবি রাখা। একটি মেয়ের ছবি। সম্ভবত এ ছবিটার সাথেই জড়িয়ে আছে অনেক টুকরো টুকরো গল্প। মেলার নাগরদোলার গল্প, বাগানের গল্প,ঝড়ের গল্প, কান্নাকাটির গল্প।

একটা রিলেশনে যখন কোন ব্রেকাপ হয়, তখন মেয়েটা হাউমাউ করে কাঁদে। মেয়েটা নিজেও জানেনা এই কান্না করাটা তাকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে। তাকে ভুলিয়ে দিচ্ছে। তারা কাউকে ভালবাসলে হয়তো সর্বস্ব দিয়ে ভালবাসে। আবার কাউকে ঘৃণা করলে এক সেকেন্ডের ব্যবধানেই সর্বস্ব দিয়ে ঘৃণা করে। ভালবাসতে তাদের যতটুকু কার্পণ্যতা থাকে, ঘৃণা করায় তার ছিটেফোটাও থাকেনা।

ছেলেদের বেলায় ব্যাপারগুলো এমন নয়। যেদিন ব্রেকাপ হয়, সেদিন টং দোকানে বন্ধুদের আড্ডায় বিড়ি টানতে টানতে বলবে"দোস্ত, পরীমনির একটা নতুন আইটেম সং আসছে শুনলাম?"। হাসিঠাট্টার আড্ডা দিতে দিতে বিকাল কেটে সন্ধ্যা হয়। রাতে বেশ করে খাওয়াও হয়। ঘুমটাও হয় শান্তির। পরেরদিন সকালে দাতব্রাশ করতে করতেও ভাবে "ভালই হয়েছে হারামিটা গেছে... কত আছে ওরকম মেয়ে.." ।

সমস্যা শুরু হয় এরপর থেকে। বৃষ্টি হলে এখন আর কোন ফোন আসেনা। দুপুরের লাঞ্চ করা হয় বিকেলে। ঘন ঘন এখন আর রাত করে রিচার্জের দোকানে যেতে হয় না। প্রতিদিনের অভ্যাসগুলোয় হুট করে একটু একটু পরিবর্তন আসায় সে বুঝতে শুরু করে, সামথিং ইজ ভেরি রং... রাতে ফোনের ম্যাসেজগুলো তাকে সাংঘাতিকভাবে তাকে পোড়ায়। পরদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন দেখে গালদুটো ভেঙ্গে ভেতরে বসে গেছে, তখন সে বুঝতে শুরু করে জীবনের বড় একটা অংশ সে হারিয়ে ফেলেছে। হারানো অংশটি ফিরে পেতে সে তখন বড় অমানুষ হয়ে পড়ে। রীতিমত যুদ্ধে শুরু করেও যখন কোন ফল হয়না ততদিনে সেই মেয়েটার কাছে সে একজন অপরিচিত আগন্তক...

তার চারদিকে তখন একটি হতাশার দেয়াল তৈরী করে ফেলে সে। সে দেয়ালে হেলান দিয়ে থাকতে থাকতেই কখন যে বনমানুষ হয়ে যায় তা সে নিজেও টের পায়না। হাউমাউ করে কান্না করাটা নাকি মানুষের শেষ আশ্রয়। সৃষ্টিকর্তা সেটুকুও তাকে দেয়নি।

আজ সকালে কি মনে করে আঙ্কেলকে যেন ফোন করেছিলাম। অনেক কথাবার্তার পর জিজ্ঞেস করলাম , বিয়েশাদির কি খবর। উত্তরটি এলো বেশ ভিন্নভাবে। জানলাম, সে মানিব্যাগ তার এখনো আছে। যে ছোট্ট পকেটে সাদাকালো ছবিটি ছিল, সেটিও মানিব্যাগের সে পকেটেই আছে। উনার দোকানের অবস্থা আগের চাইতে ভাল হয়েছে। সামনের রাস্তায় নতুন পিচ পড়েছে।ল্যাম্পপোস্ট দুটো বেড়েছে। লোডশেডিং কমেছে। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি কাঠের টুলে বসে বিড়ি টানাটা। এখনো টুকরো টুকরো গল্প তার করা হয় ।নাগরদোলার গল্প, পুকুরঘাটের গল্প, বাগানের গল্প, ঝড়ের গল্প, কান্নাকাটির গল্প। তবে সে গল্পের শ্রোতার স্থানে আমার জায়গায় বসেছে হয়তো অন্য কোন ছেলে..

ভালবাসায় পাপ কতটুকু জানিনা, কিন্তু প্রায়শ্চিত্ত অনেক বড় । যারা জীবনে কাউকে না কাউকে নির্ভরশীল হয়ে ভালবাসে, সে ভালবাসা তাদেরকেই অনেক বড় ঋনী করে ফেলে। যে ঋণ তারা শোধ করে সারাটা জীবন দিয়ে...
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:২৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×