রাজনীতি নিয়ে সাধারণত আমার কখনো কথা খরচ করতে ইচ্ছে হয় না। কেননা এটি খুব ভালভাবেই পরিষ্কার, এসব কথায় এই দেশের একটা চুল পরিমানও কখনো উলটে যায়নি... আর উলটে যাবেও না...
কিন্তু তবুও মনে হয় এ নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। রাজনীতি সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে... You can hate politics, but you can't ignore it... । অর্থাৎ, বাংলাদেশের পলিটিক্সটাকে আমরা ষোল কোটি মানুষ মিলে সম্মিলিতভাবে ঘৃণা করতে পারি, কিন্তু তাকে এড়িয়ে যাবার কোন সুযোগ আমাদের হাতে নেই।
বিএনপি আসুক, আওয়ামীলীগ আসুক, কিংবা রাশিয়ার পুতিন এসে বাংলাদেশের রাজনীতির হাল ধরুক, আপনার আমার শেকড়ের গন্তব্য শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশই... এর মধ্যেই থাকতে হবে, এর মধ্যেই মানতে হবে... । আর এটাই সূর্য্যের আলোর মত সত্য, এটাই নিয়তি...।
প্রথমেই বলি, যা নিয়ে এই পোস্টে কথা বলতে চাইছি, সেই কথাগুলো একেবারেই নিরপেক্ষ একটি অবস্থান থেকে বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলা। আর এ কথাটা এই পোস্টের একেবারে শেষ পর্যন্ত মনে রাখার অনুরোধ থাকবে।
বাংলাদেশে যে পরিমান ক্রাইম হচ্ছে, সেগুলোর প্রতিকার হিসেবে অনেককেই দীর্ঘদিন যাবত বলতে শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। পরিবর্তন না হলে এই অস্থিতিশীলতার পরিবর্তন আসবে না। পরিবর্তন বলতে যে মূলত সরকারের পরিবর্তনকে বোঝানো হচ্ছে , সে ব্যাপারে হয়তো সন্দেহের অবকাশ নেই।
যদি তাই হয়ে থাকে, তবে এক্ষেত্রে নিজস্ব কিছু মতামত এখানে রাখছি...
রাজনীতির বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন হলেও ভাল কিছু বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছে, সেটি খুব জোড়ালোভাবে বলা যাবে তো?। যাবে না... কেননা পরিবর্তনের মাধ্যমে আবার যে দলগুলো ক্ষমতায় আসবে সেগুলো আবার বাংলাদেশকে ৬ষ্ঠ বারের মত দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানাবে । অতীত তাই বলে...
প্রকৃত সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশে অনেক লীগ এর দালাল রয়েছে, বিএনপি এর দালাল রয়েছে, জামাতেরও দালাল রয়েছে, জাতীয় পার্টিরও দালাল রয়েছে, এমনকি অন্যান্য দলেরও দু চারজন দালাল হয়তো এখনও রয়েছে... কিন্তু বাংলাদেশের কোন দালাল নেই । সমস্যাটা সেখানে ।
আপনি যে দলেই যান, দেখবেন কোন দল বামপন্থী আর কোন দল ডানপন্থী... তাহলে কথা হচ্ছে বাংলাদেশপন্থী দল কোনটা.. ।
যাই হোক, এই পোস্টের উদ্দেশ্য যেহেতু কোন রাজনৈতিক দল নিয়ে কাটাছেড়া করা নয়, তাই সে প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাইছিনা। সেসব কাটাছেড়া প্রতিনিয়ত প্রতি চ্যানেলে চ্যানেলেই প্রতি মধ্যরাতের টক শো গুলোতে হচ্ছে। আর এসব কাটাছেড়ার আল্টিমেট আউটপুটে আসার দৌড় যে কতটুকু ,সেটি কমবেশী সবাই দেখে আসছে...
তার চেয়ে বরং আমাদের দেশটি যদি নোংরা রাজনীতির অভয়ারণ্য হয়ে থাকে, তবে কেন সেটি হলো সে ব্যাপারে কিছুটা দৃষ্টিপাত করা যাক।
প্রথমেই বলি, আমাদের এই নোংরা সংস্কৃতিটা তৈরী হবার পেছনে দায়ী হচ্ছেন আমাদের বাবা মায়েরা । মূলত তারাই দেশটাকে ধর্ষন করার মূল কারিগর হিসেবে দায়িত্বটুকু বেশ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। কেননা তাদের সমস্থ মেধাবীদের ধরে ধরে উনারা ডাক্তার ব্যারিস্টার আর ইঞ্জিনিয়ার বানাতে ব্যস্ত ছিলেন... । রাজনীতি করলে আবার ছেলে খারাপ ।
আর তাছাড়া পুরো ইউনিভার্সে এই তিনটার বাহিরে কোন প্রফেশনই নাই। থাকলেও সেগুলোর মাধ্যমে সমাজে সম্মান টিকে না । ফলে ঢামেক আর বুয়েটের ভেতর কোনরকমে নিজের ছেলেমেয়েদের ঠেসে ঢুকানোর প্রতিযোগীতাও এখনও মাশাল্লাহ লেভেলের... ।
আবার এসব পাব্লিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাত্র কয়েক হাজার সিটের বীপরিতে যখন কয়েক লাখ ছেলেপেলের কম্পিটিশনে প্রতি বছরই যখন সেই কয়েক হাজার ছেলেপেলে বাদে বাকীরা লাথি খেয়ে প্রাইভেটে পড়তে বাধ্য হয়, তাদের দিকেও আবার বাঁকা নজরে তাকানোর একটা রেওয়াজ আমাদের দেশে বেশ পাকাপোক্তভাবেই আছে ।
এতসব দৌড়াদৌড়ির আর বাপ মায়ের "সংসারের হাল ধর। বাপ বুড়ো হচ্ছে" টাইপ কথাবার্তা শোনার ভীড়ে আর ওই অনেস্ট পলিটিক্স করে দেশকে দেয়ার মত কোন অবস্থা সত্যিকার অর্থেই কারো থাকে না । কেননা আমাদের বাপ মায়েরা সেই চিন্তা করার কোন প্রকার কোন স্পেসই দেন নাই । এমনকি সেই স্পেস থাকা না থাকা নিয়েও তাদের কোন মাথাব্যথা নাই।
সবচাইতে আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে, এসব ভুড়ি ভুড়ি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের বাহিরে যে দু চারজন ছেলে স্কুল লাইফে স্বপ্ন দেখতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবার, ছোটকাল থেকে বাবা মায়ের করে দেয়া ওয়াশড ব্রেইন নিয়ে সেও একটা সময়ে ঢাকা মেডিকেল আর বুয়েটের ফর্ম তুলতে ব্যস্ত হয়ে যায়... আমাদের বাবা মায়েরা আমাদের ছোটবেলা থেকেই এভাবে অনেক অনেক বঙ্গবন্ধু নেলসন ম্যান্ডেলাদের খুন করে আসছেন...
এখন কথা হচ্ছে, এই যখন পরিস্থিতি, তাহলে রাজনৈতিক নেতা হচ্ছে কারা? ব্যাকগ্রাউন্ড ঘেটে দেখবেন যারা সারাজীবন স্কুল ফাঁকি দিয়ে রেললাইনে বসে পাতার বিড়ি টানতো, এরাই একটা সময়ে এলাকার মাথা হয়। ধীরে ধীরে উপজেলার মাথা হয়, একটা সময়ে যেয়ে এমপি মন্ত্রীও হয়।
আর যেসব মেধাবী ছেলেপেলেগুলো যারা একটা সময়ে বিসিএস পরীক্ষার রিটেনে কোনভাবে টিকে যায়, পার্মানেন্ট জবের জন্য তারা ঘুরেফিরে সেই ব্যাকবেঞ্চার এমপি মন্ত্রীর কাছেই যেয়ে সুপারিশ করে আসে, যারা কিনা একটা সময়ে গার্জিয়ানের সাইন নকল করে নিজের রেজাল্ট কার্ড ক্লাস টিচারকে জমা দিত... ।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন দেশের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে সেরকম কিছু চিন্তা করা অনেকটা চিনি দিয়ে সাগরের পানি মিষ্টি করার মতই একটা প্রচেষ্টা মনে করাটা খুব সম্ভবত অযৌক্তিক কিছু না ।
মাঝখান দিয়ে একটা জেনারেশনের মেধাবীগুলোকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানাতে যেয়ে আমাদের বাবা মায়েরা নিজের অজান্তেই যেরকম ধর্ষনটা এই দেশের করেছেন, সেটা কয়টা পদ্মা সেতু দিয়ে কাভার করা সম্ভব সেটা সবচাইতে বড় প্রশ্ন...।
সবচেয়ে দুঃখ লাগে একটা কথা ভেবে। আর মাত্র কয়েকটা জেনারেশনকে যদি এভাবে পঙ্গু করা হয়, তবে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠের ডাকে লাখ লাখ মানুষের কোটি কোটি ব্যাগ রক্ত দিয়ে কিনে নেয়া আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশটা একটা সময়ে হবে ইন্টারন্যাশনাল একটি ক্রাইম জোন ।
হয়তো দেশের মেধাবী মাথাগুলো এই ব্যাপারটি বেশ ভালভাবেই ধরতে পেরেছে। তাই সেই হীরের টুকরোগুলো ধীরে ধীরে বাহিরে সেটেল হচ্ছে। আর কুলাঙ্গাররা একটা সময়ে রেললাইনে বসে পাতার বিড়ি টানা নেতা মন্ত্রীদের পা চেটে দেশে সেটেল হচ্ছে... ।
আর যাদের বাহিরে যাবার সামর্থও নেই, আবার পা চাটারও অভ্যাস নেই... তাদের জন্ম হয়েছে সমাজের কাছ থেকে লাথি খাওয়ার জন্যে...
এই যখন পরিস্থিতি, তখন ক্রাইম জোন না হয়ে আর উপায় কোথায়...
সুতরাং, এইযে আপনারা দিনেরাতে চব্বিশটা ঘন্টা দুর্নীতিবাজ অথর্ব মদ্যপ এবং কথাবার্তার কোন তালছাড়া মন্ত্রী মিনিষ্টারদের সমালচনা করে যাচ্ছেন, সেই অধিকার সত্যিকার অর্থে আপনাদের কারোই নেই... । কেননা, তাদেরকে সেই জায়গায় আপনি এবং আপনার বাবা মায়েরাই বসিয়েছেন... ।
একটা দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্যে সবচেয়ে গুরুত্ব পেশা হচ্ছে রাজনীতি। বছরের পর বছর যুগের পর যুগ সেই গুরুত্বপূর্ণ পেশাকে পায়ে ঠেলার খেসারত তো দিতেই হবে তাই নয় কি?
তাহলে দিন এখন... দুর্নীতিবাজ অথর্ব নেতা মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে আপনার সমালোচনা কিংবা গালিগালাজপূর্ণ ফেসবুক পোস্ট কিংবা ব্লগ যতই দিন না কেন, সেসব মন্ত্রীদের তাতে কিচ্ছু যায় আসেনা...
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৫৭