করোনা যখন প্রথম বাংলাদেশে ছড়াতে শুরু করলো, এবং গণমাধ্যমগুলো করোনা ছড়ানোর প্রধাণ মাধ্যমগুলো নিয়ে নিউজ করতে শুরু করলো, তখন পর্যন্ত আমি লকডাউনের পক্ষেই ছিলাম। কেননা গণমাধ্যমগুলো কিংবা বহিবির্শ্বের বিভিন্ন সংস্থা করোনা নিয়ে যেসকল তথ্য প্রচার করেছে, তার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে লকডাউনকে সমর্থন করাটাই স্বাভাবিক... ।
যেমন করোনা ছড়ানোর প্রধাণ মাধ্যম হিসেবে দেখানো হয়েছে হাঁচি কাশি কিংবা আক্রান্ত রুগী কোন সুস্থ্য মানুষের সাথে হ্যান্ডশেকের মত স্পর্শকেন্দ্রিক কার্যক্রমগুলো যদি করে থাকে সেগুলোকে। সেসব জ্ঞানকে পুঁজি করেই লকডাউনের সুর উঠলো। এবং সেটি বাস্তবায়নের জন্যেও যথেষ্ট তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল।
কিন্তু দিন যত গড়াতে থাকলো, দেখা গেল করোনা ছড়ানোর ক্ষেত্রে যেসকল মাধ্যমগুলো প্রধান ভূমিকা পালন করে বলে প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছিলো, সেগুলোর প্রতিফলন আসলেই বাস্তবিক জীবনে দেখা যাচ্ছে না... ।
করোনা নিয়ে বিজ্ঞানীরা আজ অবধি যেসকল তথ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন, সেসব তথ্যের ভিত্তি ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হয়েছে। কখনো তারা বলছেন, করোনা হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, আবার কখনো বা বলছেন থুতুর মাধ্যমেও ছড়ায়। প্রথম প্রথম শুনে এসেছি ৩ ফুট দূরত্ব বজার রাখলেই একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহতে করোনা প্রবেশের কোন সম্ভাবনা নেই। আবার কিছুদিন পরেই তারাই বলছেন ২৭ থেকে ৩০০ ফুট দুরত্ব বজায় রাখাও নিরাপদ নয়। কখনো বলছেন ভাইরাসটা বাতাসের তুলনায় ভারী। তাই বেশীক্ষণ বাতাসে ভেসে না বেড়িয়ে কিছুক্ষণ পরই মাটিতে পড়ে গিয়ে ভাইরাসটা মিশে যায়। আবার কখনো বলা হচ্ছে বাতাসে ভাসতে পারে বলেই ৩০০ ফুট দূরেও ভাইরাসটি আক্রমণ ঘটাতে সক্ষম...
সুতরাং, করোনা নিয়ে বিজ্ঞান আজ অবধি যা বললো, তা মূলত চুড়ান্ত কোন তথ্য নয়। এই তথ্য পরিবর্তনশীল। আজ ৮ ই জুলাইতে বিজ্ঞান করোনা নিয়ে যে ধারণা করে বসে আছে, ঠিক আর এক সপ্তাহ পরেই সেই ধারণা থেকেই অনেকটা সরে দাঁড়াবে। আর এই সরে দাঁড়ানোর ব্যাপারটি লক্ষ্য করা গিয়েছে বিগত প্রায় কয়েক মাস যাবত।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, বিজ্ঞান যেহেতু এখন চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌছুতে পারেনি, তাহলে ততদিন আমরা কি করতে পারি। এক্ষেত্রে উত্তর হচ্ছে, করোনার থাবাটা যতটুকু ছড়াতে পারে বলে ঘোষনা করা হয়েছিল, ততটুকু থাবা বসাতে পেরেছে কিনা, সেটা একটু যাচাই করে দেখা। এই যাচাইটা যখন অনেকেই করতে যাবেন, তখন দেখবেন এতদিন যা যা রেডিও টেলিভিশনে শুনে এসেছেন, তার সাথে অনেক কিছুর সাথেই বর্তমান পরিস্থিতির মিল পাবেন না... ।
যেমন, রেডিও টেলিভিশনে প্রচারিত "১ জন করোনা রুগী হাজার জনকে আক্রান্ত করতে পারে" তথ্যটি যদি আমরা বাস্তবে যদি যাচাই করতে চাই, তবে দেখবো গাণিতিক হিসাবের বিচারে রোগটি আসলে যতটা মারাত্বকভাবেে এক্সপোনেনশিয়াল রেটে ছড়ানোর কথা ছিল, ততটা ভয়াবহ আকারে ছড়ায় নি। অনেকেই হয়তো আপত্তি করে বলতে পারেন, মানুষ মাস্ক ব্যবহারের পরিমান বাড়িয়েছে। হাত ধোয়ার পরিমান বাড়িয়েছে। সেজন্যেই হয়তো ততটা ছড়ায়নি। কিন্তু বলা বাহুল্য, ১০ টাকা দামের যেসকল সার্জিকাল মাস্ক বাঙ্গালীরা ব্যবহার করে যাচ্ছে, সেগুলো কখনোই করোনার জীবানুকে বাঁধা দিতে সক্ষম নয়।
আর হাত ধোয়ার ব্যাপারটি ভালভাবে চর্চা করে যাচ্ছে এলিট শ্রেণীরা। তারা এখনো এর পক্ষে কথা বলছে। নেটফ্লিক্সের কনটেন্ট দেখছে আর বলে বেড়াচ্ছে "ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন" । অথচ, ঘরে থাকা, ঘন ঘন হাত ধোয়া, মাস্ক নিয়ে বের হওয়া ইত্যাদি ঠিকভাবে না ব্যবহারের জন্যেই যদি করোনা যদি মহামারী ঘটাতে সক্ষম হতো, তবে সর্বপ্রথমে লাশের স্তুপ পড়তো আমাদের বাংলাদেশের সমস্থ বস্তিগুলোতে। কেননা এই শ্রেণীটাই অন্তত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে মারাত্বকভাবে অসচেতন... ।
করোনা সম্পর্কে যেসকল তথ্য আজ অবধি আন্তর্জাতিক এবং লোকাল মিডিয়াগুলো প্রচার করে গিয়েছে, সেগুলোর বাস্তব ভিত্তি থাকলে করোনায় লাশে স্তুপ পড়ার কথা ছিল সবচাইতে বেশী জনসংখ্যার ঘনত্বের দেশগুলোতে। কিন্তু পুরো পৃথিবী জুড়ে করোনা রিপোর্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, যেসকল দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব তুলনামূলক কম ছিল, সেখানেই বরং করোনা ভয়াবহভাবে ছড়িয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্বের দেশগুলোতে তেমনভাবে ছড়ায় নি... ।
করোনা যে সত্যিকার অর্থেই কোন মাধ্যমে ছড়ায়, কিংবা যেসম মাধ্যমে ছড়ায় বলে দাবী করা হচ্ছে সেসবের জন্যে মাসের পর মাস লকডাউন অব্যাহত রাখা কতটুকু যৌক্তিক, কতটুকু দূরত্ব বজার রেখে চললে করোনা থেকে নিরাপদ থাকা যায়, শুধুমাত্র হাত ধোয়া, হাইজিন মেইন্টেইন করা কিংবা মাস্ক নিয়ে চললেই করোনা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব কিনা, এসব ব্যাপারে আলোচনাটা একেবারেই থিওরেটিক্যাল বিধায় বাস্তবিক অর্থে কতটূকু মেনে চলাটা যৌক্তিক সেটি এখনো পর্যন্ত ধোয়াশাপূর্ণ... ।
অনেকেই হয়তো বলবেন, যতদিন পর্যন্ত ভাল কোন সলিউশন না আসছে, অর্থাৎ কার্যকরী ভ্যাক্সিন আবিষ্কার না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত লকডাউন অব্যাহত রাখাই শ্রেয়। এই ভাবনাটা মূলত লটারীর টিকেট কিনে টাকা পয়সার আসায় বসে থাকার মত ব্যাপার হয়ে গেল। কেননা ভ্যাক্সিন মূলত কবে আসবে, সেটা উপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানেন না।
"যক্ষা হলে রক্ষা নাই" বাক্যটি হয়তো ছোটবেলা থেকেই অনেকে শুনেছেন। কেননা একটি যুগ ছিল, যখন যক্ষাই ছিল সে সময়কার এইডস। কারো যক্ষা হয়েছে মানেই কাশতে কাশতেই নিশ্চিত মৃত্যু। সেই রোগের ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করতে সময় লেগেছিল পাক্কা ১৩ বছর ( https://bit.ly/3gyAIEU ) ।
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন মহামারী হচ্ছে প্লেগ। দফায় দফায় প্রায় দেড় হাজার বছর যাবত মানব জাতি অসংখ্য জীবন হারিয়েছে এর থাবায়। শেষে রাশিয়ান একজন ব্যক্তি যিনি কিনা লুই পাস্তুরের ল্যাবরেটরীতে কাজ করতেন, তিনি ১৮৯২ সালে সর্বপ্রথম এই রোগের ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেন।
বর্তমানে করোনার বাহিরে যে রোগের ভ্যাক্সিন আবিষ্কার নিয়ে বিস্তর গবেষনা চলছে, সে রোগটির নাম হচ্ছে এইডস। বছরের পর বছর পেরিয়ে যাচ্ছে, পৃথিবীর বাঘা বাঘা চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত এর কোন কুল কুনারা করতে পারেননি, কবে পারবেন তাও কেউ জানেনা।
সেখানে এক মাসের ভেতরেই বিজ্ঞানীরা একটা করোনা ভ্যাক্সিন নিয়ে আসতে পারবেন যা কিনা শতভাগ কার্যকর উপায়ে পৃথিবী থেকে করোনা বিলুপ্ত করে ফেলবে, এমন আসা করাটা বাড়াবাড়ি । যক্ষার ভ্যাক্সিন এসেছে ১৯২১ সালে। এবং ধারণা করা হচ্ছে ২০৩৫ সালের ভেতর এটি পৃথিবী থেকে পুরোপুরি বিলুপ্ত করা সম্ভব হবে ( https://bit.ly/38yuuCh ) ।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, করোনার ভ্যাক্সিন যদি আগামীকালও আবিষ্কার হয়ে যায়, তবে পৃথিবী থেকে সেটি পুরোপুরি বিদায় নিতে কত বছরের প্রয়োজন হবে? যদি ২০৫০ সালও লেগে যায়, তবুও কি আমরা লকডাউনেই পড়ে থাকবো?
লকডাউন কখনোই দীর্ঘমেয়াদী কোন সমাধান হতে পারে না। "ঘরে থাকুন , নিরাপদে থাকুন" এই কথাগুলো শুনতেই কেবল সুন্দর। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আপনি ঘরের বাহিরে মাস্ক পড়ে বেরুলেও করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন, আবার স্বাভাবিকভাবে বেরুলেও করোনায় নাও আক্রান্ত হতে পারেন। কেননা আগেই বলেছি, করোনা মূলত যে কোন উপায় কিভাবে ছড়ায়, সে ব্যাপারে বিজ্ঞান এখনও নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না...
কিন্তু আপনি যদি মাসের পর মাস বছরের পর বছর ঘরে পরে থাকেন, তবে আপনার ধ্বংস নিশ্চিত, দেশের ধ্বংসটাও নিশ্চিত। যে ধ্বংসের শুরুটা একটু একটু করে মানুষের বেতন কমানো কিংবা কর্মী ছাটাই এর মাধ্যমে কেবল মাত্র শুরু হয়েছে...
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:১৯