somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেম-২২

১১ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিষাণীর স্মৃতি থেকে-১০
অনেক অনেকদিন হয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেম এর আর কোন পর্ব দেয়া হচ্ছে না।
শুরুতে কৃষক এ কাজটা নিজে করতেন একটা সময় এসে আমার মনে হল শুধু তার অনুভূতি ই বলা হচ্ছে, আমি নিজের কথাগুলো বলার তাগিদ অনুভব করলাম। তাকে বল্লাম "আমার কথাগুলো বলি"। তিনি রাজি হলেন। আমি আমার কথা বল্লাম, অনেক সময়ই একই কথার পুনরাবৃত্তি হল।

একসময় এসে মনে হল থমকে গেছি, তাকে বল্লাম "এবার তুমি লেখ"। সে রাজী হয় না, আমাকে বলে "কৃষকের নিক আমি তোমাকে দিয়ে দিলাম, তুমি এটা যেভাবে ইচ্ছা শেষ কর"। আমি বলি "যেভাবে ইচ্ছা শেষ করবো কেন? এটা তো আমাদের স্মৃতিচারণ, যা ঘটেছে তা ই লিখবো"। তার কথা "বেশ, তুমি তাই কর"।

আমার উপর এত বড় একটা কাজ চাপিয়ে দিয়ে তিনি বেশ আরাম করে দুরে সরে রইলেন। এতদিন খুব মজা করে লিখে গেছি, এরপর ঘাবড়ে গেলাম, আর লেখার কিছু খুঁজে পাই না। তাই এতদিন হয়ে গেল নতুন কিছু লেখা হয় না।

শুরুতে অনেকে বলতেন, "দেখবেন ধারাবাহিকটা ঝুলিয়ে ফেলবেন না"। আমরা আমাদের এই ধারাবাহিক টা শুধু ঝুলিয়ে ফেলিনি, একেবারে মেরেই ফেলেছি বলা চলে। গত সপ্তাহে কৃষককে বলছিলাম একটা কিছু লেখ, তিনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন দু'একদিনের মাঝে কিছু লিখবেন; তবে লেখার কোন আলামত দেখছি না।

এবার একটু স্মৃতিচারণ করি........................


আমাদের একটা রুটিন মাফিক জীবন হয়ে গিয়েছিল। সকাল থেকে বিকেল অবধি ক্লাশ, ক্লাশ শেষে দু'জনে টিএসসি তে বসে চা খাওয়া, তারপর লাইব্রেরীতে বসে এসাইনমেন্ট/প্র্যাকটিক্যাল খাতা রেডি করা, হল বন্ধ হবার কিছু আগে একটু হাঁটা, তারপর হলে ফেরা। ছুটির দিনগুলোতে সকালে সে আসতো, খানিকক্ষন নদীর পারে বসা, অথবা টিএসসি তে বসা, দুপুরে হলে ফেরা, বিকেলে আবার এলোমেলো ঘুরে বেড়ানো। সন্ধ্যায় রিকশা করে শহরে যাওয়া। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শহর থেকে বেশ দুরে ছিল, যেতে প্রায় আধঘন্টা লাগতো। এতটা সময় পাশাপাশি বসা যাবে তার অনুভূতি ই আলাদা ছিল।একটু অন্ধকার হলে হয়তো হাতটা ও ধরা যাবে।

কলেজ জীবনে আমি অংকে একেবারে ভালো ছিলাম না। স্ট্যাটিকস, ডাইনামিকস নিয়ে বেশ বেকায়দায় ছিলাম। অংকের রেজাল্ট ও খুব ভাল ছিল না। এখন ভাগ্যের ফেরে ভর্তি হয়েছি ইন্জিনিয়ারিং এ; যেখানে অংক ছাড়া কোন কথা নেই। ফার্ষ্ট ইয়ারে মেকানিকস পড়তে যেয়ে দেখি এটি স্ট্যাটিকস, ডাইনামিকস ছাড়া আর কিছু না। মাথায় তো আকাশ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। আবার কলেজের বই নিয়ে বসলাম, অবাক ব্যপার এতদিন যা মাথায় ঢুকতো না তখন সেটা ভালই দ্রুত বুঝতে পারলাম। সে ছিল আবার অংকে বেশ ভাল। মেকানিকস তার খুবই পছন্দের বিষয়। চলল তার সাথে মেকানিকস পড়া, একসময় দেখা গেল সারা ক্লাশে আমরা দুজন সবচেয়ে ভাল এ বিষয়টিতে। আমাদের আশা ছিল ফাইনাল এ পাঁচটি অংকই (৫টি অংক করতে হত) আমরা পারবো। আমাদের যে স্যার পড়াতেন আমি জানি তিনি ও ওর কাছে এটা প্রত্যাশা করতেন। তবে আমরা শেষ পর্যন্ত ৫ টি পারিনি, চারটি পেরেছিলাম; অবশ্য অন্য কেউ ও পারেনি।

মেকানিকস এ ভাল বলে সে সারাক্ষন শুধু সেটাই করতো। একসময় দেখা গেল অংকটা ও ভালই জ্বালাচ্ছে। আমি পন্ডিতের মত পরামর্শ দিলাম অংক টা কোন কলেজের স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়লে কেমন হয়।কেবল কলেজ থেকে পাশ করে এসেছি তাই তার এবং আরো কয়েকজনের এ প্রস্তাবটা বেশ মনঃপুত হল। একজন শিক্ষক খুঁজে পাওয়া গেল তবে তার বাসা শহরের এক প্রান্তে। এতে যেন আমাদের আরো লাভ হল। একটা দীর্ঘ সময় রিকশা ভ্রমনের যুক্তিসঙ্গত একটা কারন পাওয়া গেল। অন্য কিছু মিস হলেও অংক করতে যাওয়ার মিস নাই। স্যার দেখতেন আমরা দু'টিতে সবার আগে হাজির। তবে এই প্রাইভেট পড়াতে রিকশায় কাছাকাছি বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপকার হয়নি। কারণ আমরা একদম প্র্যাকটিস করতাম না, সে তো আরো না। ক্লাসের পর লাইব্রেরীতে পড়ার পর আমি রুমে এসে আবার পড়তাম, সে পড়তো না। তার তখন হলের অন্য বন্ধুদের নিয়ে দ্বিতীয় দফা আড্ডা শুরু হত। কাজেই পড়া আত্মস্থ করার কাজটি সে করতো না। এই বন্ধুদের সাথে আড্ডার মাসুল তাকে দিতে হয়েছিল খুব ভালো ভাবেই।

আমি তার সর্বক্ষনের পড়ার সাথী, চলার সাথী। তাই আমার উপর একটা অধিকার বোধ তার মাঝে জন্মনিল। অংক পরীক্ষায় সবাই খুব হিমশিম খায়, এবং কারোই খুব ভালো হয় না। পরীক্ষার সময় তার একটাই কথা আমি যেটুকু পারি তাকে কেন দেখাই না। আমার উপর তার একছত্র অধিকার কাজেই আমি তার কথা শুনবো এটাই ছিল তার প্রত্যাশা। তবে আমি অতি ভদ্র ভীতু টাইপ এক ছাত্রী। পরীক্ষার হলে আমি কোনরকম এপাশ ওপাশ করতে পারিনা। কাউকে দেখানো বা দেখা যে কোনটা করতে গেলে আমার হার্টবিট বেড়ে যা পারি তা ও ভুলে যাবো। তাই আমি শুধু ফিসফিস করে বল্লাম, না দেখাতে পারবো না। সে তো ভয়ানক নাখোশ আমার উপর। অবশ্য বেচারা পারছিল না এটাও সত্যি। আমার একেবারে উভয় সংকট অবস্থা। পরীক্ষার পর আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল। কোন খবর নিচ্ছে না। পরদিন ছুটি ছিল, অনেক কষ্টে তাকে খুঁজে বের করলাম, রাগ ভাঙ্গলো, বন্ধুরা সুযোগ বুঝে আমার উপর শাস্তি আরোপ করলো, শহরে নিয়ে খাওয়াতে হবে। তখন শহরে একটি দুটি খাবার দোকান ছিল।
আমরা শহরে দল বেঁধে খেতে গেলাম।

অংক পরীক্ষায় হাবুডুবু খেতে খেতে আমি কোনরকম পার হয়ে গেলাম আর তার রেফার্ড হয়ে গেল। ফার্ষ্ট ইয়ারের রেজাল্ট যখন বের হল জানা গেল মাত্র একটা ফার্ষ্টক্লাশ। আমরা কেউ পাইনি, এক সিনিয়র ভাই পেয়েছেন। আমাদের ফ্যাকাল্টিতে ফেল করাটা একটা সাধারন ঘটনা। তাই আমাদের সাথে অনেক সিনিয়র ভাই ছিলেন। পরে জানা গেল ফার্ষ্টক্লাশ একটা নয় তিনটা, আমি তিন নম্বর এবং আমার পড়ার সাথীর একটা রেফার্ড। থার্ড হওয়াটা আমার কাছে আশাতীত ভাল রেজাল্ট, এবং আমি জানি সে সাথে না থাকলে আমি কখনোই এটা পেতাম না।

রেফার্ড হয়ে যে লোকসান টা হল তা হল তার রোল নম্বর গেল পিছিয়ে। তবু ভাগ্য ভালো প্র্যাকটিক্যাল গ্রুপটা বদল হয়নি কারন ভর্তির সময় আমার রোল ও পিছনের দিকেই ছিল। তবে ফাইনাল পরীক্ষার সময় আমরা আর একসাথে বসতে পারবো না। এটা নিয়ে একটা দুশ্চিন্তা হয়েছিল, সেটা কিভাবে সামাল দেয়া হয়েছিল পরে একদিন বলবো।........

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:৩৫
২৬টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×