somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণজাগরণ মঞ্চকে ভেবেচিন্তে পথ চলতে হবে

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার আজ (২৫ ডিসেম্বর) প্রথম প্রহরে একটি ফেসবুক স্ট্যাসাট পোস্টিং দিয়েছেন । ঐ পোস্টিং-এর প্রথমেই তিনি লিখেছেন – “খুব ভালো লাগছে যে ৭দিন পরে হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো উপলব্ধি করতে শুরু করেছে পাকিস্তান বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে অন্যায় করেছে!”

অন্য এক জায়গায় তিনি লিখেছেন- “মুসলিম লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার জাতীয় পরিষদে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে অনৈতিক প্রস্তাবও পাশ করেন। আর ইসলামের চিহ্নিত শত্রু পাকিস্তান জামায়াতে ইসলাম তাদের সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ আক্রমণ করার আহবান জানানোর মতো ধৃষ্টতা দেখানোর পর বাংলাদেশে গণজাগরণ মঞ্চের তীব্র গণ আন্দোলনের চাপে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন যা ঘটনার ৩দিন পর”।

পোস্টিং-এর শেষের দিকে তিনি সম্ভবত সরকারকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন- ”জাতীয় স্বার্থে কোনো আপোষ কেউই মেনে নেবে না”।

উপরোদ্ধৃত বাক্যগুলোতে তথ্য বিভ্রাট রয়েছে এবং রং সিগন্যাল দৃশ্যমান । কারণ, প্রথমত ৭ দিন পর নয়, বর্তমান সরকারি দলসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলো ১৬ ডিসেম্বর থেকেই পাকিস্তানের পার্লামেন্টের পদক্ষেপের ব্যাপারে নিন্দা জ্ঞাপন করতে থাকে । দ্বিতীয়ত, ৩দিন পর নয়, ২দিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, তথ্যসূত্র- Click This Link অর্থাৎ, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি দেওয়াতে পাকিন্তান পার্লামেন্টে শোকপ্রস্তাব পাশ হয় ১৬ ডিসেম্বর, আর প্রধানমন্ত্রী প্রতিবাদ জানান ১৮ ডিসেম্বর । অন্যদিকে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় ১৭ ডিসেম্বর, তথ্যসূত্র- Click This Link অর্থাৎ, আমাদের সরকারের পক্ষে ১দিন পরই প্রতিবাদ জানানো হয়, ৩দিন পর নয় । কাজেই গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রের নিকট থেকে এ ধরণের তথ্য বিভ্রাট কাম্য নয় । তৃতীয়ত, কার সাথে সরকার আপোস করছে তা ইমরানের স্পষ্ট করে বলা উচিত ছিল । কারণ, যে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু করাসহ আইনের ফাঁকফোকর বন্ধ করে এ পর্যন্ত অন্তত একটা যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে, সেই সরকার যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে আপোস করবে বলে উক্তি করা অতিবিপ্লবী মন্তব্য বলেই মনে হচ্ছে ।

পকিস্তানের পার্লামেন্টে নিন্দনীয় প্রস্তাব গ্রহণের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আরো ত্বরিত ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারতো কিনা তা অবশ্যই আলোচনা-সমালোচনার বিষয় হতে পারে বৈকি । তবে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রের স্ট্যাটাস পোস্টিং-এ বিরোধী দলগুলোর, বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল এবং বিরোধী দলীয় নেতার দীর্ঘ নীরবতার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা থেকে কেনো বিরত থাকলেন তা বোধগম্য নয় । বিরোধী দল, যারা যুদ্ধাপরাধীদের সাথে জোটবন্ধভাবে আন্দোলন করছে, ইমরান তাদেরকে যুদ্ধাপরাধীদের সাথে আপোস নাকি অন্য কিছু করতে দেখছেন তা খুব জানতে ইচ্ছা করছে ।

ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশন অভিমুখী গণজাগরণ মঞ্চ আয়োজিত ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বরের সমাবেশ ও মিছিলে পুলিশি হামলা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না, তা অতীব নিন্দনীয় এবং এ ব্যাপারে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয় । প্রথম দিন (১৭ ডিসেম্বর) গোটা সময়জুড়ে আমি ঐ সমাবেশ ও মিছিলে উপস্থিত ছিলাম । তাতে আমার ব্যক্তিগত খানিকটা বিপদও ঘটেছে বৈকি। সে বড় কোনো বিষয় নয় । ঐ দিন সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় পুলিশকে দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করানোতে আমার সামান্য হলেও ভূমিকা ছিল । তবে একটি বিষয় আমার কাছে এখনো রহস্যাবৃত যে, ঐ দিন (১৭ ডিসেম্বর) সরকারকে ২০ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া এবং পরের দিন (১৮ ডিসেম্বর) আবার একই ধরণের কর্মসূচি ঘোষণার আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল কিনা । বরঞ্চ ১৯ ডিসেম্বর থেকে গণজাগরণ মঞ্চ যেসব কর্মসূচি পালন করে আসছে সেসবে জনসম্পৃক্ততা বাড়ছে, প্রশংসনীয় এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে এক ধরণের অলিখিত চুক্তি মোতাবেক পাকিস্তান এবং পাকিস্তানপন্থীবিরোধী যুগপদ আন্দোলন-সংগ্রাম বেগবান হচ্ছে ।

গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের মনে রাখা প্রয়োজন- ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ যাবত তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে- অন্যতম যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে লটকানো । এ কাজে তারা সবচেয়ে বড় সহায়তা পেয়েছেন কোন পক্ষীয় শক্তির নিকট থেকে, তা কি তাদের অজানা ? পক্ষান্তরে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষীয়রা ক্ষমতায় আসলে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থা কী হবে তা কি তারা চিন্তা করেন ? কাজেই গণজাগরণ মঞ্চকে ভেবেচিন্তে কথাবার্তা বলা, কর্মসূচি প্রণয়ন এবং পথ চলতে হবে । অন্যথায়, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয় তারুণ্যের অযুত শক্তিতে বলিয়ান গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হতে পারে ।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×