somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতির কোলাজ

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ ৩১ অক্টোবর অগ্নিযুগের বিপ্লবী ফণিভূষণ মজুমদারের ৩৪তম মৃত্যু বার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিনে তিনি পরলোক গমন করেন। বৃটিশ-ভারত, পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশ- এই ত্রিকালজুড়ে রাজনৈতিক ভুবনে প্রবল পদচারণা ছিল ফণিদার। আর ১৯৮১ সালে যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাঁকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিশেষ মাত্রার আবাহ বিরাজমান ছিল। কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন তখন বিশ্বাসঘাতক ও ষড়যন্ত্রকারী এবং সামরিক-স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুর রোষানলে নিপতিত ছিল। স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী মূল রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং অন্যান্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা দিশেহারা, ঘরছাড়া এবং শত-শত ছিলেন কারান্তরীণ। ফণিদাকেও ১৯৭৭ সালে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারপূর্বক কারাগারে নিক্ষেপ করে সামরিক-স্বৈরাচার। তবে এক বছরের অধিক সময় পর হাইকোর্টের আদেশবলে ১৯৭৮ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন। জেলের ভিতরে কি বাইরে সে সময়ে আওয়ামী লীগের অন্যতম মূল নীতি নির্ধারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদকে। পিপিআর-এর অধীনে সীমিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের দেখভাল করা, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনে কমিটি গঠন, ১৯৭৮ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ১৯৭৯ সালে সংসদ নির্বাচন এবং ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন- এসবের প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ডে ফণিদার ইতিবাচক ভূমিকা নিজ দলের ভেতরে এবং দলীয় গণ্ডি পেরিয়ে তাঁকে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এবং জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত করে তুলে। ফলে চিকিৎসারত ফণিদার প্রতি চিকিৎসকদের পূর্ণমাত্রায় বিশ্রামের কঠোর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০ নম্বর কেবিন হয়ে ওঠে তৎকালীন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের তীর্থভূমি। দলীয় সর্বোচ্চ ফোরামের সভা অনুষ্ঠানসহ তৎকালীন রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক সশরীরে খোঁজ-খবর নেয়া, দলমত নির্বিশেষে সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক প্রমুখের ভিড় লেগেই থাকতো তাঁর শয্যাপাশে। ফণিদার বয়স উন-আশি বছর হওয়া সত্ত্বেও তাঁর শারীরিক গঠন, মনের জোর এবং রোগশয্যায় রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা দেখে কউ কল্পনাও করতে পারেননি তিনি সহসাই না ফেরার দেশে চলে যাবেন, বরঞ্চ তিনি সুস্থ হয়ে সবার মাঝে ফিরে এসে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড শুরু করবেন- এটাই ছিল সকলের প্রাণের প্রত্যাশা। কিন্তু ঐ বছর ৩১ অক্টোবর সকাল ৯টা ৪০মিনিটে মারাত্মকভাবে হৃদরোগাক্রান্ত হয়ে অনেকটা হঠাৎ করেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ফণিদার মতো জনপ্রিয় বিপ্লবী ও সর্বত্যাগী জননেতার মৃত্যুতে সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। ফলে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ জীবনাচার নিয়ে একাধিক শোক ও স্মরণসভা আয়োজিত হয়। বিদুষী কবি বেগম সুফিয়া কামালকে সভাপতি এবং প্রথিতযশা সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্তকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় ‘ফণিভূষণ মজুমদার স্মৃতি সংসদ’। সোৎসাহে প্রতি বছর স্মরণসভা আয়োজনসহ উক্ত স্মৃতি সংসদ ১৯৮৪ সালে ‘ফণিদা: চেতনার অনির্বাণ শিখা’ নামের উৎকৃষ্টমানের একটি স্মরণিকা প্রকাশ করে। এতে ফণিদাকে নিয়ে বেগম সুফিয়া কামাল, পঞ্চানন চক্রবর্তী, সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন, আব্দুর রাজ্জাক, রংগলাল সেন, সন্তোষ গুপ্ত প্রমুখ স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের স্মৃতিচারণমূলক লেখা প্রকাশিত হয়। তিন দশক আগে প্রকাশিত সেই খেঁড়ো খাতায় প্রখ্যাত এই সকল ব্যক্তিবর্গ বিপ্লবী ফণিভূষণ মজুমদারকে নিয়ে যেসব মূল্যবান স্মৃতিচারণ করে গেছেন পর্যায়ক্রমে সেসবের মুখ্যাংশ এখানে উদ্ধৃত করা হলো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্মানীয় এই ছয় ব্যক্তিও ইতোমধ্যে একে-একে পরলোক গমন করেছেন।

‘ফণিভূষণ মজুমদার স্মৃতি সংসদ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং অধুনা নারী জাগরণের মূর্ত প্রতীক বেগম সুফিয়া কামাল তাঁর সংক্ষিপ্ত লেখায় বলেন- “ফণিভূষণ মজুমদার ছিলেন একজন হৃদয়বান সত্যনিষ্ঠ ও কর্তব্যপরায়ণ মানুষ। তাঁর আড়ম্বরহীন জীবনযাপন, অথচ দেশেকে ভালবেসে তিনি দেশের মঙ্গল কামনায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে এগিয়ে এসেছেন শাসক-শোষকের বিরুদ্ধে। তাঁর সমস্ত জীবনই ছিল এক আদর্শের অনুবর্তিতায়, নিজের দেশকে নিজের ঐতিহ্যকে রক্ষা করে তিনি স্বকীয় মর্যাদা রক্ষা করেছেন। মনে-প্রাণে তিনি ছিলেন বাঙ্গালী, তাঁর চাল-চলন, পোষাক-আশাক এবং জীবনযাপনের মধ্যে ছিল নিজস্ব সত্ত্বার বলিষ্ঠ পরিচয়। কর্মজীবন তাঁর ছিল ন্যায়নিষ্ঠ, নির্ভিক দৃঢ়, সততায় সমুজ্জ্বল। সদা হাস্যময় সহৃদয় সেই মানুষকে আমরা চিরদিন স্মরণ করব। তাঁর আদর্শ গ্রহণ করে আমাদের দেশের মানুষ কর্মী, দেশপ্রেমিক হয়ে উঠবে এই আশা করব।”

বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে অগ্রজতুল্য অগ্নিযুগের বিপ্লবী পঞ্চানন চক্রবর্তী বয়সে ফণিদার চেয়ে বছর দুয়েকের বড় হলেও বেঁচে ছিলেন ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। ১৯৮৪ সালে ফণিদার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণিকা প্রকাশের কথা জানালে তিনি ‘ফণি: জেলে জেলে’ শিরোনামাঙ্কিত যে-প্রবন্ধটি লিখে পাঠালেন তাতে লেখার মুন্সিয়ানাসহ দুর্ভল তথ্যাবলী দেখে সবাই তাজ্জব গেলেন। প্রবন্ধের উপ-শিরোনামগুলো ছিল- ‘ফরিদপুর জেল, ১৯৩০’, ‘বক্সাদুর্গ, ১৯৩২’ এবং ‘দেউলি বন্দীনিবাস, ১৯৩৭’। শিরোনাম এবং উপ-শিরোনামগুলোই বলে দেয় এই দুই বিপ্লবী একসাথে কতটা বছর বিভিন্ন কারাগারে বন্দী ছিলেন। পঞ্চানন চক্রবর্তী’র লেখা গোটা প্রবন্ধটি ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় পুনর্মুদ্রিত হয়। এখানে প্রবন্ধের অংশবিশেষ উল্লেখ করা হলো মাত্র।

১৯৩০ সালে ফরিদপুর জেলে থাকাকালীন সেখাকার জেলারকে যৌক্তিকভাবে নাজেহাল করার ঘটনা পঞ্চানন চক্রবর্তী বর্ণনা করেছেন এভাবে- “ক্ষিতীশ বাবু আমাদের গার্হস্থ্যের গৃহিণী। হিসাব নিকাশ তাহারই হাতে। মাসের শেষে জেলার সুরেন ঘোষ অভিযোগ করিল ষোল টাকা কয়েক আনা বরাদ্দের বেশী খরচ হইয়াছে, ওটাত কাটিতে হইবে। ক্ষিতীশ বাবু ত রাগিয়া আগুন। সুপারিনটেন্ডেন্ট ডাঃ এ, কে, দত্ত সকালে রাউন্ডে আসিলে যতীনদা গড় মিলের হিসাবের প্রসঙ্গ তুললেন। ফণি এবার অগ্রণী হইয়া সুপারকে বলিল- ষোল টাকার ফারাক অথচ জেলার বলেছেন ক্ষিতীশ বাবুর হিসাব ঠিক। হিসাবটা এবার আপনি একটু বুঝাইয়া দেন মিঃ দ্ত্ত। সবাই হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল। জেলার কিন্তু মাথা নিচু করিয়া রহিল”। অন্যদিকে, ইংরেজ সৈনিকদের পরিত্যক্ত কলকাতায় আলীপুরের বক্সাদুর্গে ১৯৩২ সালে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় যুগান্তর এবং অনুশীলন দলের সদস্যদের মধ্যে ছলচাতুরি ও রেশারেশিতে ফণিদার সার্বজনীন ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে পঞ্চানন চক্রবর্তী লিখেছেন- “এই ছলনার খেলায় সকলেই সাবধানে পা ফেলিয়ে চললেও ফণি যেন সকল পরদা তুলিয়া দিয়া সকলের আপন হইয়া গেল। বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সকল শাখা মনে ও কর্মে এক হলেও পরিচয়ের অবয়বে ছিল ভিন্ন। সে ব্যবধান ভাঙ্গিয়া সহসা ফণি সকলের আপন হইয়া গেল। যুগান্তর নেতা মহলে ফণির আদর হইতেই পারে, কিন্তু অনুশীলন নেতাদের আসরেও ফণির খাতির বেশ জমিয়া উঠিল। বিদ্রোহী নেতা প্রতুল ভট্টাচার্য জিজ্ঞাসা করিলেন পঞ্চাননবাবু- ব্যাপার কি বলুন ত, ফণিবাবুর হালচাল কেমন কেমন ঠেকছে না”? তাছাড়া, পঞ্চানন চক্রবর্তী এবং ফণিদা ১৯৩৭ সালে রাজস্থানের মরুভূমিতে অবস্থিত দেউলী বন্দীনিবাসে একসাথে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় এক ইংরেজ কর্নেলকে চাকুরী থেকে ইস্তফা দেয়ার ঘটনা বর্ণনায় পঞ্চানন চক্রবর্তী লিখেছেন- “বাংলার বহরমপুর বন্দীনিবাসের কর্ত্তা ছিল কর্নেল টবিন। উগ্র আবাসিকদের ঠ্যেঙ্গাইয়া কীর্ত্তি অর্জন করিয়াছিল। সুতরাং দেউলী বন্দীদের সম্ভাব্য উষ্ণতা শীতল করিতে প্রমোশন পাইয়া আসিল কর্নেল টবিন। তাহার অফিসে প্রতিনিধিদের বসিতে চেয়ার দেওয়া লইয়া বিতণ্ডার শুরু। সে দিন কথায় কথায় কর্নেল টবিন বলিয়া ফেলিল- তোমরা এখানে শিক্ষিত ও ভদ্র মানুষ, কিন্তু বহরমপুরের ওসব গেঁয়া ও গোয়াড়। ফণি সাপের মতই ফণি তোলার ভঙ্গীতে দাঁড়াইয়া বলিল- এই মুহূর্তে তোমার মন্তব্য প্রত্যাহর কর। পাঁচ নম্বর ক্যাম্পের প্রতিনিধি আমিও উপস্থিত ছিলাম সেইখানে। খুসী হইলাম। কর্নেল টবিন কথা প্রত্যাহার করিল না। চাকুরীতেই ইস্তয়া দিয়া চলিয়া গেল”। পঞ্চানন চক্রবর্তী তাঁর প্রবন্ধ শেষ করেছেন এই বলে- “ফণি তেজে ব্যক্তি মর্যাদা, দুঃসাহসে সহকর্মীদের মর্যাদা এবং সংগ্রামী নির্দেশে জাতির মর্যাদা উচাইয়া ধরিল। নেতৃত্বের এইত আবাহন। এই আমাদের ফণি।”

এ পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাক্তন প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন কর্তৃক ফনিদা’ সম্পর্কে স্মৃতিচারণের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আগেই বলে নেয়া দরকার পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের মহাদুর্যোগপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশে এই দুই মহান ব্যক্তিত্বের এক অনন্য রাজনৈতিক জুটি গড়ে উঠেছিল। সামরিক এবং বেসামরিক গোয়েন্দাদের চোখ এড়িয়ে সন্তর্পণে সাক্ষাতে পরামর্শ, ফোনালাপ এবং বার্তাবাহক মারফত যোগাযোগের মাধ্যমে তাঁরা বহু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ঘাতকের বুলেট আর বেয়োনেটের নির্মম আঘাতে ক্ষতবিক্ষত তৃষিত স্বামীহত্যার রাজনৈতিকভাবে বদলা নিতে সে সময়ে সদ্য রাজনীতিতে পা-রাখা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন তাঁর পরামর্শদাতাকে সঠিকভাবেই খুঁজে পেয়েছিলেন। তাই খুব কাছে থেকে দেখা ফনিদা’কে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক লেখা প্রবন্ধের এক জায়গায় যেমনটি তিনি বিবৃত করেছেন- “অকুতোভয়ী ফণিভূষণ মজুমদারের আদর্শের প্রতি ছিলো ইস্পাত কঠিন আনুগত্য। দেশ ও জনগণকে তিনি সব কিছুর উর্দ্ধে স্থান দিয়েছেন। জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে বার বার মনে পড়ছে মহান ফণিভূষণ মজুমদারকে। অতীতে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনই তাঁর মোহনীয় ব্যক্তিত্ব কাজ করেছে আলোক প্রদীপ হিসাবে। ১৯৭৭ সালে আওয়ামী লীগের আহ্বায়িকার দায়িত্বে থাকাকালীন সেই সময়গুলিতে কাছে থেকে ফণিদার দৈনন্দিন রাজনৈতিক ক্রিয়াকর্মের নিরলস ভূমিকা চোখে দেখার এবং উপলব্ধি করার আমার সৌভাগ্য হয়েছিল। যাঁর প্রতিটি কাজের সাথে এক গভীর দেশ প্রেমবোধ সদা জাগ্রত থাকত।”

ফণিদা সম্পর্কে অনেকটা আবেদতাড়িত হয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। আওয়ামী লীগের এক সময়ের জনপ্রিয় এই নেতাকে ফণিদা পুত্রবৎ স্নেহ করতেন বলে সর্বজন বিদিত। আব্দুর রাজ্জাকও ‘দাদা’ বলতে পাগল ছিলেন- যিনি তাঁর কৈশোর ও যৌবনকাল থেকেই ফণিদার সান্নিধ্যে এসেছিলেন। তিনি ফণিদার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা উল্লেখ করে লিখেছেন- “ত্যাগী রাজনীতিবিদ হিসাবে ফণিদার তুলনা ফণিদা নিজেই। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ফণিদা নেতাজী সুভাষ বসু, ত্রৈলক্ষ্যনাথ চক্রবর্তী এবং পাকিস্তানী নির্যাতনের দিনগুলিতে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে এসেছিলেন। এসব বরেণ্য বিপ্লবীদের আপোষহীন রাজনৈতিক মতাদর্শ স্বাধীনতা ও শোষণ মুক্তির সংগ্রামে চিরযুবা ফণিদাকে নিয়ত উজ্জীবিত করত। বিত্তশালী পরিবারের সন্তান ফণিদাকে সম্পত্তির মোহ আটকে রাখতে পারে নাই। বরং সকল সম্পদ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে অর্থনৈতিক মোহমুক্তি অর্জন করেছেন ফণিদা। জীবনের ২৯টি মূল্যবান বছর কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে কাটিয়ে দিয়েছেন, তবে সে জন্য তাঁকে কোন দিন দুঃখ করতে দেখিনি। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথেই ফিরে গেছেন বঞ্চিত মানুষের পাশে। ফণিদা নেই- আমরা আছি। জাতিগত ভাবে আমরা সবাই তাঁর কাছে ঋণী। ফণিদা শুধু বাংলাদেশের নয়, উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরও একজন। কিন্তু ফণিদার মত এত বড় নেতার কী মূল্যায়ন আজ বাংলাদেশে! আমরা সবাই কি ব্যর্থ হইনি ফণিদার যোগ্য মর্যাদা দিতে?”

পূর্বে উল্লেখিত স্মরণিকায় ফণিদাকে নিয়ে প্রথিতযশা সমাজি বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রংগলাল সেন লিখিত স্বল্পবিস্তর একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ মুদ্রিত হয়। তাতে অন্যান্য আনুসঙ্গিক বিষয়াদসিহ পারিবারিক এবং আঞ্চলিক প্রভাবে ফণিদার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়টি ফুটে ওঠে। জনপ্রিয় শিক্ষক ড. রংগলাল সেন তাঁর প্রবন্ধের পূর্ব জের টেনে এক জায়গায় লিখেছেন- “সে যা হোক উপরের বিবরণ থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ফণিভূষণ মজুমদার বাংলাদেশের যে সামাজিক শ্রেণীর পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন সে পরিবারে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনৈতিক নেতার ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। ঐ পরিবারেই তিনি বড় হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর পিতামহের মতো কংগ্রেসের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে এতটা বিশ্বাসী ছিলেন না। ফলে এতে তিনি সম্পূর্ণভাবে দীক্ষিত হননি। মূলতঃ ফণিভূষণ মজুমদার ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ বিপ্লবী রাজনৈতিক নেতা। তিনি যে সময়ে জন্ম গ্রহণ করেন তখন বাংলায় বৃটিশ বিরোধী বিভিন্ন বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠে। বস্তুতঃ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বাংলায় বিপ্লব বাদের বিকাশ ঘটে। এসব বিপ্লবী সংগঠনের মধ্যে অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর গোষ্ঠীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উক্ত সংগঠন দু’টির শাখা-প্রশাখা বাংলার বিভিন্ন জেলায় বিস্তৃত হয়। ‘বাংলার চিতোর’ বলে পরিচিত মাদারীপুরে এসব সংগঠনের শক্ত ঘাঁটি ছিল। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে ফণিভূষণ মজুমদার যুগান্তর গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত হলেও অনুশীলন সমিতির নেতাদের সাথে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। উদ্দাম ছন্দে বহমান আড়িয়াল খাঁ নদীটি যে মাদারীপুরের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রতীক ছিল তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছিল ফণিভূষণ মজুমদারের চিন্তা-চেতনায়। ফণিভূষণ মজুমদার এমনই একজন দুঃসাহসী যুবক ছিলেন যার ফলে তখনকার বিভিন্ন বিপ্লবী সংগঠনের ভেতর সেতুবন্ধ রচনায় সক্ষম হয়েছিলেন।”

পাকিস্তানী সামরিক শাসনামলে দীর্ঘদিন ফণিদার সাথে জেলখানায় ছিলেন স্বনামখ্যাত সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত। বিপ্লবী নেতার নিবিড় সান্নিধ্যে থাকার সেই অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধে একেবারেই আত্মপ্রচারবিমুখ ফণিভূষণ মজুমদারকে তিনি চিত্রায়িত করেছেন এভাবে- “এ ধরণের কাহিনী বলার সময় তিনি ‘আমি’ কী ভূমিকা নিয়েছিলাম বলে একবারও নিজের কথা বলতেন না। জেলখানায় একবার কারানির্যাতন তাঁর উপর কী রকম হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, ও কিছু না, কিছু না, বলার মত কিছু না। অতীতের স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে দেখা যায়, সবাই রাজনীতির নির্ভুল লাইন, মোক্ষম ভবিষ্যদ্বাণী কি রকম হয়েছে, নিজের ত্যাগ নির্যাতন সম্পর্কে বলেন, সবাই যে বাড়িয়ে বলেন তা নয় কিংবা তাদের ভূমিকা যে নির্ভুল ছিল, সে কথাও হয়তো যথার্থ। কিন্তু এর আত্মপ্রচারের দিকটি তারা মুখ্য বলে হাজির করেন। আর ফণিদা ছিলেন একেবারে বিপরীত। তিনি বড়জোর বৃটিশ কারাগারে নির্যাতনের কথা উঠলে বলতেন, আমাদের এ রকমভাবে চলতে হতো, প্রতিবাদ করার পর এই ফল দাঁড়িয়েছে। আর অন্যেরা কী ভূমিকা নিয়েছে, তাদের সাহস, দৃঢ়তার কথা বলতেন। সেখানে তাঁর ‘আমি’কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যেত না। ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের মুখে ফণিদা আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি বুঝেছিলেন যে, আন্দোলনের প্রধান স্রোতধারা, মূলভিত্তি জাতীয়তাবাদ অর্থাৎ নিজেকে চেনার পর্ব সম্পন্ন না হলে সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। আজ যখন নিজেকে চেনার এবং সত্ত্বার সূর্যকে আড়াল করার চক্রান্ত গভীর হচ্ছে, যখন রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মূল্যবোধ রাহুগ্রস্থ হচ্ছে, তখন পথের দিশার জন্য জাতি কি ফণিদার প্রজ্ঞার আলোকে আর একবার আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি হবে না?”

একত্রিশ বছর পূর্বে উপরোল্লিখিত প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গের তর্পণকৃত স্মৃতিগুচ্ছের মর্মবাণী ফণিভূষণ মজুমদারের মতো ত্যাগী, নিরহঙ্কারী, সৎ, নিষ্ঠাবান, আত্মপ্রচারবিমুখ, আদর্শবান, নির্ভিক এবং দেশ ও জনদরদী এক মহান বিপ্লবী জননেতার অভাবের কথা আজও বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। তাইতো মৃত্যুর পরেও তিনি যুগ-যুগ বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্তৃক সাধনকৃত মহান সব কর্মগুণের মাঝে । বিপ্লবী ফণিভূষণ মজুমদারের প্রতি প্রণতি ও শ্রদ্ধাঞ্জলি। আজ ৩১ অক্টোবর অগ্নিযুগের বিপ্লবী ফণিভূষণ মজুমদারের ৩৪তম মৃত্যু বার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিনে তিনি পরলোক গমন করেন। বৃটিশ-ভারত, পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশ- এই ত্রিকালজুড়ে রাজনৈতিক ভুবনে প্রবল পদচারণা ছিল ফণিদার। আর ১৯৮১ সালে যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাঁকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিশেষ মাত্রার আবাহ বিরাজমান ছিল। কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন তখন বিশ্বাসঘাতক ও ষড়যন্ত্রকারী এবং সামরিক-স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুর রোষানলে নিপতিত ছিল। স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী মূল রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং অন্যান্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা দিশেহারা, ঘরছাড়া এবং শত-শত ছিলেন কারান্তরীণ। ফণিদাকেও ১৯৭৭ সালে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারপূর্বক কারাগারে নিক্ষেপ করে সামরিক-স্বৈরাচার। তবে এক বছরের অধিক সময় পর হাইকোর্টের আদেশবলে ১৯৭৮ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন। জেলের ভিতরে কি বাইরে সে সময়ে আওয়ামী লীগের অন্যতম মূল নীতি নির্ধারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদকে। পিপিআর-এর অধীনে সীমিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের দেখভাল করা, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনে কমিটি গঠন, ১৯৭৮ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ১৯৭৯ সালে সংসদ নির্বাচন এবং ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন- এসবের প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ডে ফণিদার ইতিবাচক ভূমিকা নিজ দলের ভেতরে এবং দলীয় গণ্ডি পেরিয়ে তাঁকে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এবং জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত করে তুলে। ফলে চিকিৎসারত ফণিদার প্রতি চিকিৎসকদের পূর্ণমাত্রায় বিশ্রামের কঠোর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০ নম্বর কেবিন হয়ে ওঠে তৎকালীন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের তীর্থভূমি। দলীয় সর্বোচ্চ ফোরামের সভা অনুষ্ঠানসহ তৎকালীন রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক সশরীরে খোঁজ-খবর নেয়া, দলমত নির্বিশেষে সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক প্রমুখের ভিড় লেগেই থাকতো তাঁর শয্যাপাশে। ফণিদার বয়স উন-আশি বছর হওয়া সত্ত্বেও তাঁর শারীরিক গঠন, মনের জোর এবং রোগশয্যায় রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা দেখে কউ কল্পনাও করতে পারেননি তিনি সহসাই না ফেরার দেশে চলে যাবেন, বরঞ্চ তিনি সুস্থ হয়ে সবার মাঝে ফিরে এসে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড শুরু করবেন- এটাই ছিল সকলের প্রাণের প্রত্যাশা। কিন্তু ঐ বছর ৩১ অক্টোবর সকাল ৯টা ৪০মিনিটে মারাত্মকভাবে হৃদরোগাক্রান্ত হয়ে অনেকটা হঠাৎ করেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ফণিদার মতো জনপ্রিয় বিপ্লবী ও সর্বত্যাগী জননেতার মৃত্যুতে সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। ফলে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ জীবনাচার নিয়ে একাধিক শোক ও স্মরণসভা আয়োজিত হয়। বিদুষী কবি বেগম সুফিয়া কামালকে সভাপতি এবং প্রথিতযশা সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্তকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় ‘ফণিভূষণ মজুমদার স্মৃতি সংসদ’। সোৎসাহে প্রতি বছর স্মরণসভা আয়োজনসহ উক্ত স্মৃতি সংসদ ১৯৮৪ সালে ‘ফণিদা: চেতনার অনির্বাণ শিখা’ নামের উৎকৃষ্টমানের একটি স্মরণিকা প্রকাশ করে। এতে ফণিদাকে নিয়ে বেগম সুফিয়া কামাল, পঞ্চানন চক্রবর্তী, সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন, আব্দুর রাজ্জাক, রংগলাল সেন, সন্তোষ গুপ্ত প্রমুখ স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের স্মৃতিচারণমূলক লেখা প্রকাশিত হয়। তিন দশক আগে প্রকাশিত সেই খেঁড়ো খাতায় প্রখ্যাত এই সকল ব্যক্তিবর্গ বিপ্লবী ফণিভূষণ মজুমদারকে নিয়ে যেসব মূল্যবান স্মৃতিচারণ করে গেছেন পর্যায়ক্রমে সেসবের মুখ্যাংশ এখানে উদ্ধৃত করা হলো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্মানীয় এই ছয় ব্যক্তিও ইতোমধ্যে একে-একে পরলোক গমন করেছেন।

‘ফণিভূষণ মজুমদার স্মৃতি সংসদ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং অধুনা নারী জাগরণের মূর্ত প্রতীক বেগম সুফিয়া কামাল তাঁর সংক্ষিপ্ত লেখায় বলেন- “ফণিভূষণ মজুমদার ছিলেন একজন হৃদয়বান সত্যনিষ্ঠ ও কর্তব্যপরায়ণ মানুষ। তাঁর আড়ম্বরহীন জীবনযাপন, অথচ দেশেকে ভালবেসে তিনি দেশের মঙ্গল কামনায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে এগিয়ে এসেছেন শাসক-শোষকের বিরুদ্ধে। তাঁর সমস্ত জীবনই ছিল এক আদর্শের অনুবর্তিতায়, নিজের দেশকে নিজের ঐতিহ্যকে রক্ষা করে তিনি স্বকীয় মর্যাদা রক্ষা করেছেন। মনে-প্রাণে তিনি ছিলেন বাঙ্গালী, তাঁর চাল-চলন, পোষাক-আশাক এবং জীবনযাপনের মধ্যে ছিল নিজস্ব সত্ত্বার বলিষ্ঠ পরিচয়। কর্মজীবন তাঁর ছিল ন্যায়নিষ্ঠ, নির্ভিক দৃঢ়, সততায় সমুজ্জ্বল। সদা হাস্যময় সহৃদয় সেই মানুষকে আমরা চিরদিন স্মরণ করব। তাঁর আদর্শ গ্রহণ করে আমাদের দেশের মানুষ কর্মী, দেশপ্রেমিক হয়ে উঠবে এই আশা করব।”

বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে অগ্রজতুল্য অগ্নিযুগের বিপ্লবী পঞ্চানন চক্রবর্তী বয়সে ফণিদার চেয়ে বছর দুয়েকের বড় হলেও বেঁচে ছিলেন ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। ১৯৮৪ সালে ফণিদার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণিকা প্রকাশের কথা জানালে তিনি ‘ফণি: জেলে জেলে’ শিরোনামাঙ্কিত যে-প্রবন্ধটি লিখে পাঠালেন তাতে লেখার মুন্সিয়ানাসহ দুর্ভল তথ্যাবলী দেখে সবাই তাজ্জব গেলেন। প্রবন্ধের উপ-শিরোনামগুলো ছিল- ‘ফরিদপুর জেল, ১৯৩০’, ‘বক্সাদুর্গ, ১৯৩২’ এবং ‘দেউলি বন্দীনিবাস, ১৯৩৭’। শিরোনাম এবং উপ-শিরোনামগুলোই বলে দেয় এই দুই বিপ্লবী একসাথে কতটা বছর বিভিন্ন কারাগারে বন্দী ছিলেন। পঞ্চানন চক্রবর্তী’র লেখা গোটা প্রবন্ধটি ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় পুনর্মুদ্রিত হয়। এখানে প্রবন্ধের অংশবিশেষ উল্লেখ করা হলো মাত্র।

১৯৩০ সালে ফরিদপুর জেলে থাকাকালীন সেখাকার জেলারকে যৌক্তিকভাবে নাজেহাল করার ঘটনা পঞ্চানন চক্রবর্তী বর্ণনা করেছেন এভাবে- “ক্ষিতীশ বাবু আমাদের গার্হস্থ্যের গৃহিণী। হিসাব নিকাশ তাহারই হাতে। মাসের শেষে জেলার সুরেন ঘোষ অভিযোগ করিল ষোল টাকা কয়েক আনা বরাদ্দের বেশী খরচ হইয়াছে, ওটাত কাটিতে হইবে। ক্ষিতীশ বাবু ত রাগিয়া আগুন। সুপারিনটেন্ডেন্ট ডাঃ এ, কে, দত্ত সকালে রাউন্ডে আসিলে যতীনদা গড় মিলের হিসাবের প্রসঙ্গ তুললেন। ফণি এবার অগ্রণী হইয়া সুপারকে বলিল- ষোল টাকার ফারাক অথচ জেলার বলেছেন ক্ষিতীশ বাবুর হিসাব ঠিক। হিসাবটা এবার আপনি একটু বুঝাইয়া দেন মিঃ দ্ত্ত। সবাই হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল। জেলার কিন্তু মাথা নিচু করিয়া রহিল”। অন্যদিকে, ইংরেজ সৈনিকদের পরিত্যক্ত কলকাতায় আলীপুরের বক্সাদুর্গে ১৯৩২ সালে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় যুগান্তর এবং অনুশীলন দলের সদস্যদের মধ্যে ছলচাতুরি ও রেশারেশিতে ফণিদার সার্বজনীন ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে পঞ্চানন চক্রবর্তী লিখেছেন- “এই ছলনার খেলায় সকলেই সাবধানে পা ফেলিয়ে চললেও ফণি যেন সকল পরদা তুলিয়া দিয়া সকলের আপন হইয়া গেল। বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সকল শাখা মনে ও কর্মে এক হলেও পরিচয়ের অবয়বে ছিল ভিন্ন। সে ব্যবধান ভাঙ্গিয়া সহসা ফণি সকলের আপন হইয়া গেল। যুগান্তর নেতা মহলে ফণির আদর হইতেই পারে, কিন্তু অনুশীলন নেতাদের আসরেও ফণির খাতির বেশ জমিয়া উঠিল। বিদ্রোহী নেতা প্রতুল ভট্টাচার্য জিজ্ঞাসা করিলেন পঞ্চাননবাবু- ব্যাপার কি বলুন ত, ফণিবাবুর হালচাল কেমন কেমন ঠেকছে না”? তাছাড়া, পঞ্চানন চক্রবর্তী এবং ফণিদা ১৯৩৭ সালে রাজস্থানের মরুভূমিতে অবস্থিত দেউলী বন্দীনিবাসে একসাথে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় এক ইংরেজ কর্নেলকে চাকুরী থেকে ইস্তফা দেয়ার ঘটনা বর্ণনায় পঞ্চানন চক্রবর্তী লিখেছেন- “বাংলার বহরমপুর বন্দীনিবাসের কর্ত্তা ছিল কর্নেল টবিন। উগ্র আবাসিকদের ঠ্যেঙ্গাইয়া কীর্ত্তি অর্জন করিয়াছিল। সুতরাং দেউলী বন্দীদের সম্ভাব্য উষ্ণতা শীতল করিতে প্রমোশন পাইয়া আসিল কর্নেল টবিন। তাহার অফিসে প্রতিনিধিদের বসিতে চেয়ার দেওয়া লইয়া বিতণ্ডার শুরু। সে দিন কথায় কথায় কর্নেল টবিন বলিয়া ফেলিল- তোমরা এখানে শিক্ষিত ও ভদ্র মানুষ, কিন্তু বহরমপুরের ওসব গেঁয়া ও গোয়াড়। ফণি সাপের মতই ফণি তোলার ভঙ্গীতে দাঁড়াইয়া বলিল- এই মুহূর্তে তোমার মন্তব্য প্রত্যাহর কর। পাঁচ নম্বর ক্যাম্পের প্রতিনিধি আমিও উপস্থিত ছিলাম সেইখানে। খুসী হইলাম। কর্নেল টবিন কথা প্রত্যাহার করিল না। চাকুরীতেই ইস্তয়া দিয়া চলিয়া গেল”। পঞ্চানন চক্রবর্তী তাঁর প্রবন্ধ শেষ করেছেন এই বলে- “ফণি তেজে ব্যক্তি মর্যাদা, দুঃসাহসে সহকর্মীদের মর্যাদা এবং সংগ্রামী নির্দেশে জাতির মর্যাদা উচাইয়া ধরিল। নেতৃত্বের এইত আবাহন। এই আমাদের ফণি।”

এ পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাক্তন প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন কর্তৃক ফনিদা’ সম্পর্কে স্মৃতিচারণের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আগেই বলে নেয়া দরকার পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের মহাদুর্যোগপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশে এই দুই মহান ব্যক্তিত্বের এক অনন্য রাজনৈতিক জুটি গড়ে উঠেছিল। সামরিক এবং বেসামরিক গোয়েন্দাদের চোখ এড়িয়ে সন্তর্পণে সাক্ষাতে পরামর্শ, ফোনালাপ এবং বার্তাবাহক মারফত যোগাযোগের মাধ্যমে তাঁরা বহু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ঘাতকের বুলেট আর বেয়োনেটের নির্মম আঘাতে ক্ষতবিক্ষত তৃষিত স্বামীহত্যার রাজনৈতিকভাবে বদলা নিতে সে সময়ে সদ্য রাজনীতিতে পা-রাখা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন তাঁর পরামর্শদাতাকে সঠিকভাবেই খুঁজে পেয়েছিলেন। তাই খুব কাছে থেকে দেখা ফনিদা’কে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক লেখা প্রবন্ধের এক জায়গায় যেমনটি তিনি বিবৃত করেছেন- “অকুতোভয়ী ফণিভূষণ মজুমদারের আদর্শের প্রতি ছিলো ইস্পাত কঠিন আনুগত্য। দেশ ও জনগণকে তিনি সব কিছুর উর্দ্ধে স্থান দিয়েছেন। জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে বার বার মনে পড়ছে মহান ফণিভূষণ মজুমদারকে। অতীতে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনই তাঁর মোহনীয় ব্যক্তিত্ব কাজ করেছে আলোক প্রদীপ হিসাবে। ১৯৭৭ সালে আওয়ামী লীগের আহ্বায়িকার দায়িত্বে থাকাকালীন সেই সময়গুলিতে কাছে থেকে ফণিদার দৈনন্দিন রাজনৈতিক ক্রিয়াকর্মের নিরলস ভূমিকা চোখে দেখার এবং উপলব্ধি করার আমার সৌভাগ্য হয়েছিল। যাঁর প্রতিটি কাজের সাথে এক গভীর দেশ প্রেমবোধ সদা জাগ্রত থাকত।”

ফণিদা সম্পর্কে অনেকটা আবেদতাড়িত হয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। আওয়ামী লীগের এক সময়ের জনপ্রিয় এই নেতাকে ফণিদা পুত্রবৎ স্নেহ করতেন বলে সর্বজন বিদিত। আব্দুর রাজ্জাকও ‘দাদা’ বলতে পাগল ছিলেন- যিনি তাঁর কৈশোর ও যৌবনকাল থেকেই ফণিদার সান্নিধ্যে এসেছিলেন। তিনি ফণিদার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা উল্লেখ করে লিখেছেন- “ত্যাগী রাজনীতিবিদ হিসাবে ফণিদার তুলনা ফণিদা নিজেই। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ফণিদা নেতাজী সুভাষ বসু, ত্রৈলক্ষ্যনাথ চক্রবর্তী এবং পাকিস্তানী নির্যাতনের দিনগুলিতে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে এসেছিলেন। এসব বরেণ্য বিপ্লবীদের আপোষহীন রাজনৈতিক মতাদর্শ স্বাধীনতা ও শোষণ মুক্তির সংগ্রামে চিরযুবা ফণিদাকে নিয়ত উজ্জীবিত করত। বিত্তশালী পরিবারের সন্তান ফণিদাকে সম্পত্তির মোহ আটকে রাখতে পারে নাই। বরং সকল সম্পদ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে অর্থনৈতিক মোহমুক্তি অর্জন করেছেন ফণিদা। জীবনের ২৯টি মূল্যবান বছর কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে কাটিয়ে দিয়েছেন, তবে সে জন্য তাঁকে কোন দিন দুঃখ করতে দেখিনি। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথেই ফিরে গেছেন বঞ্চিত মানুষের পাশে। ফণিদা নেই- আমরা আছি। জাতিগত ভাবে আমরা সবাই তাঁর কাছে ঋণী। ফণিদা শুধু বাংলাদেশের নয়, উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরও একজন। কিন্তু ফণিদার মত এত বড় নেতার কী মূল্যায়ন আজ বাংলাদেশে! আমরা সবাই কি ব্যর্থ হইনি ফণিদার যোগ্য মর্যাদা দিতে?”

পূর্বে উল্লেখিত স্মরণিকায় ফণিদাকে নিয়ে প্রথিতযশা সমাজি বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রংগলাল সেন লিখিত স্বল্পবিস্তর একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ মুদ্রিত হয়। তাতে অন্যান্য আনুসঙ্গিক বিষয়াদসিহ পারিবারিক এবং আঞ্চলিক প্রভাবে ফণিদার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়টি ফুটে ওঠে। জনপ্রিয় শিক্ষক ড. রংগলাল সেন তাঁর প্রবন্ধের পূর্ব জের টেনে এক জায়গায় লিখেছেন- “সে যা হোক উপরের বিবরণ থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ফণিভূষণ মজুমদার বাংলাদেশের যে সামাজিক শ্রেণীর পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন সে পরিবারে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনৈতিক নেতার ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। ঐ পরিবারেই তিনি বড় হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর পিতামহের মতো কংগ্রেসের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে এতটা বিশ্বাসী ছিলেন না। ফলে এতে তিনি সম্পূর্ণভাবে দীক্ষিত হননি। মূলতঃ ফণিভূষণ মজুমদার ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ বিপ্লবী রাজনৈতিক নেতা। তিনি যে সময়ে জন্ম গ্রহণ করেন তখন বাংলায় বৃটিশ বিরোধী বিভিন্ন বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠে। বস্তুতঃ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বাংলায় বিপ্লব বাদের বিকাশ ঘটে। এসব বিপ্লবী সংগঠনের মধ্যে অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর গোষ্ঠীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উক্ত সংগঠন দু’টির শাখা-প্রশাখা বাংলার বিভিন্ন জেলায় বিস্তৃত হয়। ‘বাংলার চিতোর’ বলে পরিচিত মাদারীপুরে এসব সংগঠনের শক্ত ঘাঁটি ছিল। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে ফণিভূষণ মজুমদার যুগান্তর গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত হলেও অনুশীলন সমিতির নেতাদের সাথে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। উদ্দাম ছন্দে বহমান আড়িয়াল খাঁ নদীটি যে মাদারীপুরের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রতীক ছিল তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছিল ফণিভূষণ মজুমদারের চিন্তা-চেতনায়। ফণিভূষণ মজুমদার এমনই একজন দুঃসাহসী যুবক ছিলেন যার ফলে তখনকার বিভিন্ন বিপ্লবী সংগঠনের ভেতর সেতুবন্ধ রচনায় সক্ষম হয়েছিলেন।”

পাকিস্তানী সামরিক শাসনামলে দীর্ঘদিন ফণিদার সাথে জেলখানায় ছিলেন স্বনামখ্যাত সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত। বিপ্লবী নেতার নিবিড় সান্নিধ্যে থাকার সেই অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধে একেবারেই আত্মপ্রচারবিমুখ ফণিভূষণ মজুমদারকে তিনি চিত্রায়িত করেছেন এভাবে- “এ ধরণের কাহিনী বলার সময় তিনি ‘আমি’ কী ভূমিকা নিয়েছিলাম বলে একবারও নিজের কথা বলতেন না। জেলখানায় একবার কারানির্যাতন তাঁর উপর কী রকম হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, ও কিছু না, কিছু না, বলার মত কিছু না। অতীতের স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে দেখা যায়, সবাই রাজনীতির নির্ভুল লাইন, মোক্ষম ভবিষ্যদ্বাণী কি রকম হয়েছে, নিজের ত্যাগ নির্যাতন সম্পর্কে বলেন, সবাই যে বাড়িয়ে বলেন তা নয় কিংবা তাদের ভূমিকা যে নির্ভুল ছিল, সে কথাও হয়তো যথার্থ। কিন্তু এর আত্মপ্রচারের দিকটি তারা মুখ্য বলে হাজির করেন। আর ফণিদা ছিলেন একেবারে বিপরীত। তিনি বড়জোর বৃটিশ কারাগারে নির্যাতনের কথা উঠলে বলতেন, আমাদের এ রকমভাবে চলতে হতো, প্রতিবাদ করার পর এই ফল দাঁড়িয়েছে। আর অন্যেরা কী ভূমিকা নিয়েছে, তাদের সাহস, দৃঢ়তার কথা বলতেন। সেখানে তাঁর ‘আমি’কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যেত না। ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের মুখে ফণিদা আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি বুঝেছিলেন যে, আন্দোলনের প্রধান স্রোতধারা, মূলভিত্তি জাতীয়তাবাদ অর্থাৎ নিজেকে চেনার পর্ব সম্পন্ন না হলে সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। আজ যখন নিজেকে চেনার এবং সত্ত্বার সূর্যকে আড়াল করার চক্রান্ত গভীর হচ্ছে, যখন রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মূল্যবোধ রাহুগ্রস্থ হচ্ছে, তখন পথের দিশার জন্য জাতি কি ফণিদার প্রজ্ঞার আলোকে আর একবার আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি হবে না?”

একত্রিশ বছর পূর্বে উপরোল্লিখিত প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গের তর্পণকৃত স্মৃতিগুচ্ছের মর্মবাণী ফণিভূষণ মজুমদারের মতো ত্যাগী, নিরহঙ্কারী, সৎ, নিষ্ঠাবান, আত্মপ্রচারবিমুখ, আদর্শবান, নির্ভিক এবং দেশ ও জনদরদী এক মহান বিপ্লবী জননেতার অভাবের কথা আজও বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। তাইতো মৃত্যুর পরেও তিনি যুগ-যুগ বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্তৃক সাধনকৃত মহান সব কর্মগুণের মাঝে । বিপ্লবী ফণিভূষণ মজুমদারের প্রতি প্রণতি ও শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৫৫
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×