চার
পাঁচ
ইদানিং নিলয় আর রুবির এটা প্রায় অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। ক্লাসের ফাঁকে কিংবা ক্লাস শেষ হলে দু'জনে বেশ কিছুক্ষন রিকশা করে ঘুরবে। রুবি যদিও কোন রেষ্টুরেন্টে কিংবা পার্কে বসতে চয়ে। কিন্তু নিলয় বসতে চায় না। রেষ্টুরেন্টগুলোতে তার কেমন দমবন্ধ দমবন্ধ লাগে। আর মিনি চাইনিজগুলোতে ছেলেমেয়েরা যা করে তা তার কাছে চরম অস্বস্তিকর লাগে। এমনকি পার্কেও একই অবস্থা। এইসব ইঁচড়ে পাকা ছেলেমেয়েগুলোর এমনকি কিছু নির্লজ্জ্ব মধ্যবয়সীদের আচরণ নিলয়ের কাছে অসহ্য লাগে। তাই তারা হুডফেলা রিকশায় ঘুরে সময় পার করতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। এভাবে ঘুরতে ঘুরতেই রুবি হঠাৎই প্রশ্নটা করে-
-আচ্ছা নিলয় তুই বিবিএ পড়ছিস্ কেন?
-মানে?
-না মানে স্কুল কলেজের সাইন্স ফেয়ারে তোর করা কম্পিউটারবেইজড প্রজেক্টগুলো দেখে আমাদের ব্যাচের সবাইই কম্পিউটার সাইন্স পড়তে ইন্টারেষ্টেড হলাম। অথচ তুই কিনা বিবিএ নিয়ে পড়ছিস্। আমি তো প্রথমদিন শুনে বিশ্বাসই করিনি। এমনকি আম্মুকে বলেছি। তিনিও বিশ্বাস করেননি।
-আন্টিকে বলছো মানে? আন্টি কি আমাকে চিনে?
-চিনবে না মানে? বাসায় তো আমি সবসময় তোর কথা আলোচনা করি। এমনকি আমি তোর যা যা জানি আম্মু ও তা জানে।
-তাই নাকি!
-হু। এখন বল তুই কম্পিউটার সাইন্স এ না পড়ে বিবিএ পড়ছিস্ কেন?
-আসলে একসময় স্বপ্ন দেখতাম নাসার বিজ্ঞানী হবো কিংবা মাইক্রোসফটে চাকুরী করবো। তাই ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করি।
-এখন স্বপ্ন দেখিস্ না?
-না মানে মাঝে দু'একবার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু একছেলে দেখে বাসা থেকে বাইরে যেতে দিলো না। তাই মাইন্ড সেট আপ চেইঞ্জ করলাম।
-তাই সরাসরি ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে সিইও হওয়ার প্রচেষ্টা?
-না মানে ভেবে দেখলাম ব্যক্তিজীবনেও তোর পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট, টাইম ম্যানেজমেন্ট, এ্যাকাউন্টিং, ফিন্যান্স, সেলফ মার্কেটিং, ইকনোমিক্স এসবের ব্যপক ব্যবহার আছে।
-মানে?
-এই ধর তুই সকালে বাসা থেকে বের হচ্ছিস্। রিকশাওয়ালা ভাড়া দশটাকার জায়গায় পনেরো টাকা চাচ্ছে। তুই তখন খুব দর কষাকষি করছিস্ পাঁচ টাকা কমানোর জন্য। একই জায়গায় তুই আবার ট্যাক্সি করে যাচ্ছিস্ পঞ্চাশ টাকা দিয়ে। এর মানে কি তুই তোর মনের অজান্তেই কস্ট্ আর ইউটিলিটি কম্পেয়ার করিছস্।
-পুরাই আতলামি।
-আতলামি না। এইটা ই ঘটনা।
-যা! সিরিয়াসলি বল না তুই বিবিএ তে ভর্তি হলি কেন?
-আসলে ভার্সিটিতে ভর্তি হতে গিয়ে দেখলাম ফিজিক্স বল আর কম্পিউটার সাইন্স বল তুই অনার্স মাস্টার্স বললেই এ্যাকাউন্টিং ডিপার্টমেন্টে চাকুরী। কম্পিউটার সাইন্স বললে ওরা বুঝে ভাল টাইপিষ্ট। স্টেটমেন্টগুলো দ্রুত পাওয়া যাবে। আর বাংলা ইংলিশে পড়া মানে মার্কেটিং এর জব। কারণ গুছিয়ে কথা বলতে পারে।
-ওম্মা অনেক গভীর গবেষণা করে ফেলেছিস্ দেখছি। তা তুই বিবিএ তে পড়ছিস্ কেন?
-না ভাবলাম কাজ যখন সেই কেরাণীরই করতে হবে তবে জেনেশুনে বুঝেই করার চেষ্টা করি। আর বিবিএ পড়তে গিয়ে একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম।
-কি?
-আসলে বিবিএ না পড়লে আমার পুরো জীবনটা ই বৃথা হতো।
-মানে?
-তখন ভাবতাম ক্রিয়েটিভ প্রোগ্রামার কিংবা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবো। আর এখন এটলিষ্ট ভাবতে পারছি ক্রিয়েটিভ বিজনেসম্যান বা এক্সিকিউটিভ হবো। মাইক্রোসফটে চাকুরী করতে না পারি বিল গেটস এর মত ক্রিয়েটিভ অ্যান্টারপ্রেনিউর তো হতে পারবো।
-বাব্বা জটিল স্বপ্ন!
-স্বপ্ন দেখতে তো ট্যাক্স লাগে না।
-সে স্বপ্নের পথে আমাকে কি সাথে নিবি?
-তুই পাশে আছিস্ বলেই তো স্বপ্ন এমন ডানা মেলেছে।
-ভেসে ভেসে কোথায় যাচ্ছি? অজানায়?
-তা কেন? ঐ তো দূরের সবুজ দ্বীপে। বলেই নিলয় আকাশের একরাশ মেঘের পাহাড়কে দেখায় তার স্বপ্নের সবুজ সীমানা হিসেবে।