মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টোটল বলেছেন, সে সমাজে বসবাস করে না সে হয় দেবতা না হয় পশু। তাই সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই মানুষ দলগতভাবে বসবাস করে আসছে। সমাজ যেন সামাজিক বন্ধনের এক জটাজাল। প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ সমাজ জীবন গড়ে তোলে। কারণ মানুষ একাকী অসহায়। পারস্পরিক সাহায্য-সহায়তা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। আর এ সূত্র ধরেই সেবার জন্ম। এ সেবা ধর্মই পরম ধর্ম।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মহাপুরুষগণ সব মানুষকে ভাই বলে ভালোবাসার শিক্ষা দিয়ে গেছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স) বলেছেন, মানুষের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ, যিনি অন্যের জন্য নিজ স্বার্থ ত্যাগ করে সেবাকাজ সম্পাদন করেন। সাধক কবি চণ্ডিদাস যথার্থ বলেছেন –“শুন হে মানুষ ভাই সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই।” অতএব এটা স্পষ্ট যে সব ধর্মের সার বস্তুই হলো মানব সেবা। স্রষ্টার সৃষ্টির সেবা করতে পারলেই স্রষ্টার সেবা করা হয়। কারণ সব সৃষ্টির মধ্যেই স্রষ্টার অধিষ্ঠান। তাই তো হিন্দু ধর্মে বলা হয়েছে—“যত্র জীব তত্র শিব”। অর্থাত্ জীবের মধ্যেই শিব ( স্রষ্টার ) বিরাজমান। অসহায়, আর্ত পীড়িতের সেবা পরম ধর্ম। ঘৃণা নয় বিদ্বেষ নয় দরকার শুধু সামর্থ্য অনুযায়ী সেবার মনোভাব। দারিদ্র্যপীড়িত, নিপীড়িত, অসহায় মানুষের জন্য এগিয়ে না এলে অন্তর্যামী স্রষ্টাই অপমানিত হন। সৃষ্টির সেবা না করে স্রষ্টার প্রসাদ লাভ করা যায় না। এ প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, “বহু রূপে সম্মুখে তোমার কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর, জীবে প্রেম করে সেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।” তাই জীবে দয়ার মতো আর ধর্ম নেই। হাজার প্রহরের লাখো উপাসনা থেকে এক মুহূর্তের মানব সেবা বেশি গুরুত্ব বহন করে। কারণ জীবমাত্রই স্রষ্টার সৃষ্টি। আর এ সৃষ্টিকে ভালোবাসলে স্রষ্টার নৈকট্য লাভ সম্ভব। এ অমৃত বাণী সবার অন্তরে জাগ্রত হোক।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




