somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খান একাডেমী নিয়ে আরো দুই এক খান কথা

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছুদিন আগে মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশী সালমান খানের শিক্ষাবিষয়ক ওয়েবসাইট খান একাডেমী নিয়ে লিখেছিলাম । মনে হল, এর ফলোআপ হিসেবে আরো কিছু বিষয় মনে হয় আসা উচিৎ ছিল।

প্রথমতঃ পাঠক ও দর্শকদের আলোচনার কমন প্রশ্ন ছিল যে, সালমান খানের এই ভিডিওগুলি বাংলাদেশের ব্যাবহারের উপযোগী কিনা। আমার হিসেবে একই সাথে হ্যাঁ এবং না। না হল দুটো কারণে, প্রথমত, দেশের গড়পড়তা ছাত্রের ইংরেজী ভীতি ও অদক্ষতা, দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের আধমরা ইন্টারনেট কানেকশনের দ্বারা ইউটিউবের শত শত ভিডিও থেকে জ্ঞানলাভ করার চিন্তা করাই রীতিমত দুঃসাহস। এই পর্যন্ত এসে আমি মোটামুটি সমস্যার শেষ দেখছি। আমার হিসেবে সমস্যার দিকে না তাকিয়ে সমাধানের প্রায়োগিক দিক নিয়ে কাজ করলে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া যায়।

এইটা ধ্রুব সত্য যে বাংলাদেশে ছাত্রদের ইংরেজী শেখা, বোঝা ও বলার মান বেশ খারাপ। তবে এইটাও সত্যি যে, ঢাকা চট্টগ্রাম সহ মহানগরীগুলোতে গত দুই দশকে এক গুচ্ছের ইংরেজী স্কুল তৈরি হয়েছে যেগুলোতে ইংলিশ মিডিয়াম নামের ফার্মের মুরগী চাষ করা হয়। এইসব ছাত্রদের অনেকেরই বাপমায়ের একগুচ্ছের টাকা খরচ হলেও আসল পড়াশোনার অংশে তথৈবচ। বেশী খোঁজা লাগবে না, আপনার নিজের আত্মীয়-স্বজন চিন-পরিচিতের মধ্যেই এরকম কয়েকটা কেস পেয়ে যাবেন। সেইরকম কেস যদি থাকে তাহলে তাদেরকে এই ভিডিওগুলি মজার বস্তু হিসেবে যদি ধরিয়ে দিতে পারেন তাহলে হয়তো তার বিরাট একটা উপকার করবেন আপনি। একই সাথে বাংলা মিডিয়ামের বহু ছাত্রছাত্রী আছে যারা ক্লাস ফাইভ সিক্স থেকেই ইংরেজী মুভী, গানবাদ্যি আর টিভি প্রোগ্রামের পোকা। এদেরকে জোর করেও বাংলা বা হিন্দী গেলানো যায়না, এইরকম কেসও আমাদের পরিচিতদের মধ্যে একদম কম না। তাদের জন্যও একটা খুব ভাল এডুকেশনাল রিসোর্স হওয়া উচিৎ এই টিউটোরিয়ালগুলো। একই সাথে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে কর্মক্ষেত্রে যারা আছেন বা আরো উচ্চতর পড়াশোনা করছেন কিন্তু প্রাথমিক বা মাধ্যমিকের কোন বিষয়ে দুর্বলতা রয়ে গেছে, তাদের জন্যেও জড়তা কাটিয়ে উঠে নিজের দুর্বলতা সারিয়ে নেবার জন্য চমৎকার রিসোর্স। আরেকটি জিনিষ বিশেষভাবে খেয়াল করার জন্য বলছি তা হল, আমেরিকা ও সারা বিশ্বেই এই ভিডিওগুলি মূলত জনপ্রিয় হয়েছে কিছুটা দুর্বল ছাত্রদের কাছেই। অনেকেই আছে যে কলেজে শিক্ষক ত্রিকোনোমিতির একটি অধ্যায় পড়িয়ে চলে গেলেন কিন্তু ছাত্রের জন্য সেইটুকু সময় বা ব্যাখ্যা যথেষ্ট ছিলোনা, তাই বাড়িতে বসে নিজের সময়ে কয়েকবার দেখে নিলে হয়তো জিনিষটা স্পষ্ট হয়ে যেতে পারতো। তাই এই জ্ঞানসাগরের টার্গেট সুপার জিনিয়াসরা না হয়ে একটু দুবলা পাতলা ধরনের শিক্ষার্থী হলেও কোনো সমস্যা নেই।

দ্বিতীয় যে স্পীড ও ব্যান্ডউইথের সমস্যা সেটির ঠেকায় কাজ চালানোর মত একটি সমাধান আছে। সেটি হল, ভিডিওগুলো অফলাইনে ছড়িয়ে দেয়া। আমার বাড়িতে একটু দ্রুতগতির কানেকশন থাকায় প্রায় বারো গিগাবাইটের দেড়হাজারের মত ভিডিও আমার কম্পিউটারে ডাউনলোড করা। কেউ আগ্রহী হলে আমার থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারেন। আমার পরিকল্পনা হল, এলিফেন্ট রোডের একটি কম্পিউটারের দোকানে আমি এই খান একাডেমীর পুরো ভিডিওর কালেকশন রাখব। কেউ নিতে চাইলে হয় নিজের ল্যাপটপ ইত্যাদি নিয়ে এসে কপি করে নিয়ে যাবেন, অথবা তিনটি ভালো মানের খালি ডিভিডি দিয়ে এক সেট কালেকশন নিয়ে যেতে পারেন। তাতে জ্ঞানটুকু ফ্রি হলেও একটু নিজের গতর খাটানো লাগবে। আশা করি কিছু হলেও আগ্রহী দর্শক পাঠক এথেকে উপকৃত হবেন। আমি আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আশা করছি, আরো কয়েকজন এই প্রয়াসকে আরো বেগবান করার জন্য এগিয়ে আসবেন। আমার মনে হয় ঢাকার মধ্যে উত্তরা, মিরপুর, পুরান ঢাকা, মালিবাগ, বনানী এইরকম আট দশটা যায়গায় এক বা একাধিক দোকানে বিনামূল্যে, স্বল্পমূল্যে, নামমাত্রমূল্যে এইগুলোকে পাবার ব্যাবস্থা করে দিলেই হুজুগে বাঙ্গালী হয়তো এই থেকে অনেকটুকুই এগিয়ে নিতে পারবে। ঢাকার বাইরে হলে অবশ্য সমস্যা, তবে সেটার জন্য ভাবছি হয়তো মোবাইলে ফ্লেক্সি করে দিলে আমি কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিতে পারব। আরেকটা অপশন মনে হয়, সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রাবাসগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া। যেখানে একজনের কম্পিউটারে কোন ইন্টারেস্টিং বস্তু ঢুকলে আটচল্লিশ ঘন্টার ভেতরে সারা হলে বা ডিপার্টমেন্টে ছড়িয়ে পড়ে সেখানে এই জিনিষ চললেও চলতে পারে। তবে সব কথার শেষ কথা হল, আপনি যদি মনে করেন সারা দেশে বিলি করা আমার দায়িত্ব তবে মোটামুটি নিশ্চিত যে আসলে কিছুই হবে না, কিন্তু যদি ঠিক করেন যে আমার মেজো খালার ছোট ছেলে, পাশের বাড়ির বদমাশ পিচ্চি আর মহাখালীর চাচাতো ভাই এই তিনজনকে আমি এই বস্তু খাওয়াবো তাহলে হয়তো প্র্যাক্টিকালি করা সম্ভব। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থির করে সেটি অর্জনের চেষ্টা করাই যথেষ্ট।



আমার আগের লেখায় খান একাডেমীর ভিডিও গুলো অনুবাদ করার পক্ষে বিপক্ষে কথা হচ্ছিল। তখন অনেকেই বলেছিলেন যে, ভিডিওগুলির জনপ্রিয়তার মূল কারণ কঠিন বিষয়গুলোক সহজভাবে বুঝিয়ে দেবার জন্য সালমানের দক্ষতা। যেটি বাংলায় একই ঢঙ নিয়ে করা মুশকিল। তার বদলে বাংলায় একই বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে ভিডিও টিউটোরিয়াল করার বিষয়ে অনেকে মত দিয়েছিলেন। এইখানে আমি আপত্তি তুলব একটু অকারণেই। আমার আপত্তি এই কারণে, যে সালমান খান বাংলাদেশের ছেলে আর তাকে অলরেডী পাকিস্তানী বানানোর জন্য জোর চেষ্টা ইতোমধ্যে হয়েছে এবং এখনো চলছে। উইকিতে রেফারেন্সের এক্সটার্নাল লিঙ্কে গেলে দেখবেন অর্গানাইজেশন ফর পাকিস্তানি এন্টারপ্রেনুয়ার্সের পৃষ্ঠা থেকে সালমানের জীবনীর রেফারেন্স নেয়া হয়েছে। কদিন পরে হয়তো দেখব যে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় সম্মান ধরণের কিছু দেয়া হচ্ছে আর সেটি উনি গ্রহণও করে নিয়েছেন। তখন আমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে দেখানোর মত কিছুই থাকবে না। আশঙ্কা এই জন্য করছি যে, খান একাডেমীর ক্রেডিটস এর পাতায় গেলে স্বচ্ছাসেবীদের তালিকা পাওয়া যায়। তাতে অনুবাদের কাজের জন্য দুজনের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয়েছে, একজন স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদের জন্য আর দ্বিতীয়জন উর্দু!



ভালো হোক, মন্দ হোক, জঘন্য হোক, বাংলার ছেলের অসামান্য কীর্তির কয়েকশো ভিডিও বাংলায় থাকবেনা এটা কি হতে পারে?



খান একাডেমীর ভিডিওগুলোর জন্য অনেকেই ইমেইলে প্রাপ্তিস্থান জানতে চেয়েছেন। বর্তমানে (৮৩ ল্যাবরেটরী রোড) / এলিফেন্ট রোডের স্মার্ট কম্পিউটারে তিন ডিভিডির ভেতরে সবগুলো ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে। কেউ চাইলে সংগ্রহ করতে পারেন আর যতখুশী কপি পেস্ট করে সবাইরে ফ্রী বিলি করতে পারেন। দোকানে বলেছি তিনটা খালি ডিভিডি নিয়ে কেউ আসলে তারে ফ্রী দিয়ে দিতে আর নাহলে ১০০ টাকা খসায়ে রাখতে। চলে নাকি?



ডিভিডির জন্য যে কভারটা বানিয়েছি সেটি সবার সাথে শেয়ার করলাম

কোন স্বেচ্ছাসেবী যদি ঢাকার অন্য কোথাও দোকান ঠিক করতে পারেন অথবা যারা ডিভিডি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করেন, তাদের মাধ্যমে ছড়ানোর ব্যাবস্থা করতে পারেন তারাও মন্তব্যের ঘরে যোগ করতে পারেন


ফরিদ
প্রশ্ন থাকলে করুনঃ [email protected]

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:০৪
১১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×