somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুষখবর!

১২ ই জুন, ২০১১ সকাল ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইয়ে, মানে একটা ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করি, শেষ কবে ঘুষ দিয়েছিলেন? মানে ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় কিঞ্চিত তেলপানি দেয়া লেগেছিল? পাসপোর্ট করার সময়? বিদ্যুতের ভূতুড়ে বিল সামলানোর জন্য? কলেজের সার্টিফিকেট ইংরেজী করার সময়? বাড়ি সংক্রান্ত কোন কাজে রাজউকে? নাকি বছরশেষে ইনকাম ট্যাক্সের ঝামেলা ভদ্রলোকের মত মেটানোর জন্য আপনার ট্যাক্স লইয়ার আপনাকে বলেছিল আপনার ট্যাক্স এত টাকা, আমার ফী এত টাকা আর এই টাকার ভেতরে জান ছুটানোর জন্য ট্যাক্স অফিসের খরচ এত টাকা?

ভালো লাগুক আর না লাগুক প্রতিনিয়তই বাংলাদেশের আনাচে কানাচে আমরা নানাপদে ঘুষের পাল্লায় পড়ে থাকি। আমি সহজভাবে এই প্র্যাক্টিসকে এইভাবে দেখি, মোটামুটি এমন কোন সরকারী বিভাগ নেই, যেখানে যা আইন অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে হবার কথা সেটি কিঞ্চিত পয়সা খরচ ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে হয়ে যাবে, আর উলটো করে বললে এমন কোন বিভাগ নেই, যেখানে কিঞ্চিত পয়সা খরচ করলে, যা আইনে নাই, তা করে ফেলা যায়না। আর আমাদের সচ্চরিত্র জাতির বেসরকারী পর্যায়েও যে বিশাল আকারের টেবিলের তলায় টাকার লেনদেন হয় সেটিও বেশ ভীতিকর। ফলে সত্যি কথা হল, যারা সেবা দানকারী হিসেবে বিশেষ কোন সুবিধা দিতে চান না, অথবা গ্রাহক হিসেবে বিশেষ কোন সুবিধা নিতে চান না, তাদের জন্য দেশের মাটিতে অনেক সময়েই নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা হয়ে যায়।

আমরা জনগণ যেখানে নিয়মিত কিছু লোভী, স্বার্থপর, ধান্দাবাজ লোকের সমন্ময়ে গঠিত দুটি রাজনৈতিক দলকে উলটে পালটে আমাদের ত্রাতা হিসেবে নির্বাচিত করি, সেখানে সরকার বা রাজনৈতিকভাবে এই পরিস্থিতির থেকে উত্তরণের সুযোগ কম। আর দূর্নীতির শিকার যারা তাদের ভিন্ন ভিন্ন হয়রানীগুলোর কোন একত্রিত প্ল্যাটফর্ম বা একত্রিত কন্ঠ নেই। ফলে অবস্থা যা ছিল তাই থাকছে বছরের পর বছর। মাঝখানে কিছুদিন বিজ্ঞাপন দেখতাম র‍্যাবের, যে দূর্নীতির শিকার হলে [email protected] ধরণের ঠিকানায় ইমেইল করে জানাতে, আদৌ কেউ ইমেইল করত কিনা, বা ইমেইল করে ফল পেয়েছে কিনা সেটি সম্পর্কে তেমন জানা যায়না।

আমি নিজে প্রায়ই ভাবতাম, যে ঘুষের গল্প/বিভীষিকাগুলো যদি কোন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষণ করা যেত তাহলে সেটি কোন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য কার্যকরী টিপ হতে পারত। একই সাথে সেখানে “কি ছহি পদ্ধতি ব্যাবহার করলে” অমুক অফিসে ঘুষ দেয়া থেকে বাঁচা যাবে এই রকম বিশেষ তরিকাও দেয়া থাকবে যদি সম্ভব হয়। আর ঠিক সেই রকমেরই একটি উদ্যোগের খবর চোখে পড়ায় সেটি নিয়ে আজকে লিখছি।


দূর্নীতি আর ঘুষ বাংলাদেশের একক সমস্যা না। আমরা একসময় চ্যাম্পিয়ন থাকলেও আমাদের ভাই বেরাদেন আরো দেশও তো আছে। আমাদের প্রাক্তন জ্ঞাতি পাকিস্তান নিয়মিতই দেশে-বিদেশে ঘুষ সংস্কৃতির পথিকৃত হিসেবে নাম কুড়ানো। নিকট প্রতিবেশী ভারতের অবস্থাও সত্যি কথা বলতে খুব দূরে না। সেই ভারতেরই দুজন বিলেত ফেরত উদ্যোক্তা নিজ দেশে ফিরে ঘুষোঘুষি করতে করতে ক্লান্ত, ত্যাক্ত, বিরক্ত হয়ে খুলে ফেললেন ওয়েবসাইট “আই পেইড এ ব্রাইব ডট কম/ iPaidaBribe.Com”। মতলব আমি ঘুষ দিয়েছি ডট কম।

ওয়েবসাইটির মুল কাজ হল, হাস্যকর হলেও সত্যি – ঘুষের বাজারদর জনসমাক্ষে প্রকাশ করা। আপনি গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট আনার জন্য গেছেন? ইন্সপেক্টর আপনাকে বলে দিল গাড়ির যা অবস্থা তাতে ফী ছাড়াও আরো হাজারদুয়েক টাকা অতিরিক্ত “তেলপানি” খরচ করা লাগবে। ওয়েবসাইটে যদি দেখেন যে এই কেইসের স্বাভাবিক বাজারদর পাঁচশো টাকা, তাহলে কমপক্ষে দরাদরি করার মত সুযোগ আপনার থাকে। আর একই বিভাগের একই কর্মচারীর বিরুদ্ধে দিনের পর দিন, নিয়মিত অভিযোগ থাকলে, সেটিকে প্রমাণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের কাছেও উপস্থাপন করা যায়।

এই ওয়েবসাইটের বারংবার অভিযগের প্রেক্ষিতে ব্যাঙ্গালোরের ট্রান্সপোর্ট কমিশন তাদের বেশকিছু অফিসারদের বকুনি, শাসানী, তিরস্কার, বহিস্কার ইত্যাদি করেছে। একই সাথে এই চিন্তাধারা কিছু কর্মকর্তার মাথায় হলেও ঢুকেছে যে, আজকে আমি একটু বামহাত খরচ করলে সেই খবর শুধু গ্রাহক আর আমার মাঝেই থাকছে না, সেটি অফিস পেরিয়ে জনসমাক্ষে এমনকি অনলাইনের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর কাছে খবর হয়ে যেতে পারে। ফলে অনেকেই একটু বুঝেশুনে চলার চেষ্টা করছেন। আর মোটরবাইক চালকদের নিয়মিত অভিযোগের ভিত্তিতে পৃথিবীর প্রথম সেন্সরভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় মোটরবাইক ড্রাইভিং টেস্ট সেন্টার চালু হয়েছে ব্যাঙ্গালোরে যেখানে প্রতিদিন আটশোর বেশি পরীক্ষার্থী নিয়মিত পরীক্ষা দিচ্ছেন।

আমার কাছে আইডিয়া এবং তার এক্সিকিউশন দুটোই বেশ মানসম্মত মনে হয়েছে, যা উইকিলিকসের চেয়ে সাধারণ সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতেও কেউ যদি এরকম একটি ওয়েবসাইট খোলার উদ্যোগ নেন, তবে সেটিও ঠিকমত কাজে লাগাতে পারলে একটি কার্যকরী সাহায্যকারী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

http://ipaidabribe.com/

এই সংক্রান্ত অন্যান্য খবর সংবাদমাধ্যমে
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×