
কোন এক সূত্রে আপনি জানতে পারলেন গত এক সপ্তাহে পৃথিবীতে দশ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রথমে উড়ো খবর মনে করে আপনি এর সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করলেন এবং বিভিন্ন সূত্রে খবর নিয়ে জানতে পারলেন ঘটনা সত্য এবং এই দশ লক্ষ মানুষের একজন হবার আপনার যথেষ্ট কারণ ছিল। এখন চিন্তা করুন আপনার নিজের মনের অবস্থা কেমন হবে।
বস্তবতা এই যে পরিসংখ্যান বলে যে, প্রতিদিন গড়পড়তা দেড় লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। এর মাঝে প্রায় এক লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় বার্ধক্য ও সেই সংক্রান্ত জটিলতায়। এই ছাড়া রোগ, দূর্ঘটনা, অপরাধ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, যুদ্ধ ও অন্যান্য কারনে প্রতিদিনই পঞ্চাশ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
আজকে আনুষ্ঠানিক হিসেব অনুসারে করোনা সংক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা দেড় লক্ষে পৌঁছাবে। প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা এর চেয়ে বেশীই হবে হয়তো কয়েক গুণ হবে কিন্তু উহান বা নিউ ইয়র্ক শহর ছাড়া পৃথিবীর বেশীরভাগ যায়গায় এই সংক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা আসলে তেমন বিরাট কিছু নয়। তাহলে আমরা বিশ্বব্যাপী এর আতঙ্কে স্বেচ্ছা বন্দী হয়ে আছি কেন? আমি যেটা বুঝি, মূলত করোনার কারণে কি ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে এই বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ না নিলে কি হতে পারে সেই আশঙ্কায়। আমরা দেখেছি এই ভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তারের ফলে আমরা যাদের পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত ও প্রস্তুত স্বাস্থ্যব্যবস্থা হিসেবে জানি, কিভাবে সেইসব দেশের চিকিৎসাব্যবস্থাকে কিভাবে একেবারে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন উন্নয়নশীল দেশে ব্যাপক আকারে সংক্রমণ শুরু হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হল যদি হয় না যখন হয়।
মূলত তিনটি কারণে আমি একে বিপদজনক মনে করি।
১) খুব সহজে সংক্রামক। ২) আপনি সংক্রামিত হবার পরে ১০-১৫ দিন দিব্যি কোন লক্ষণ ছাড়াই থাকতে পারবেন ৩) এই পর্যন্ত কোন কার্যকরী ঔষধ বা টীকা আবিষ্কার হয় নাই।
বাংলাদেশের মত অত্যান্ত ঘনবসতিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রকৃতপক্ষে সকল নাগরিকের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব। আমাদের ভঙ্গূর প্রচেষ্টা হয়ত দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়াকে বিলম্বিত করবে কিন্তু আজ থেকে আরো মাসখানেক পর আজকের চেয়ে দুরূহ দিনেরই আশঙ্কা করি।
অণূজীব গবেষকদের হিসেব অনুসারে আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে আমরা বেশীরভাগ পৃথিবীবাসিই করোনার ছোঁয়া পাব, তার মাঝে বেশীরভাগ মানুষের জন্যই তেমন সংকটপূর্ণ অবস্থা ছাড়াই তা পার হয়ে যাবে। কিন্তু যাদের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হবে, বিশেষ করে বাংলাদেশে থেকে যাদের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হবে, পরম করুণাময় তাদের সহয় হন। এই ছাড়া তাদের সান্তনা দেবার মত বিশেষ কিছু বলার নেই। আশা করি সকলে ভাল থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


