somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেট্রো টু রামাদান - ২

১২ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৬:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক) খাজুরে মওলা!! খেজুর মানেই ইফতারি। ইফতারের একটা অনন্য রূপ হল খেজুর। ছোলা পিয়াজু অন্য সময়েও খাওয়া গেলেও খেজুর মানেই বাংলাদেশে রমজান। আমি প্রথম যখন খেজুরের স্বাদ পাই তখন আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল এটা কোন ফল, কারণ এত মিষ্টি মধুর তো চকোলেটই হয়। আমার কাছে এই ফলটি এত এত প্রিয় ছিল যে মনে হত রমজান ছাড়া সারাক্ষণ যদি এই ফলটাই খাওয়া যায়।

একদিন এ কথা আমার সুইটি খালাকে বলে ফেললাম। আন্টি আমাকে অনেক আদর করতেন। তাই বললেন ঠিক আছে যাও রোজাটা টিনের মধ্যে রেখে এসো। আমাদের ছোটদের রোজা রাখা হত টিনের মধ্যে – এ আইডিয়াটা আমার অপমানজনক মনে হত, কিন্তু বাসার আইন শেষমেষ মানতে হত। যাই হোক ডাইনিং টেবিলে বসলাম, আর আন্টি আমার সামনে আনলেন অনেক অনেক খেজুর। ১০০/১৫০ টা হবে কিনা জানি না। এত খেজুর যে খেতে খেতে আমি হয়রান। আন্টি এই বাড়াবাড়ি আদরের জন্য বকা খেয়েছিলেন সেদিন, কিন্তু আমার জীবনে সবচেয়ে বেশী খেজুর সে দিনই খাওয়া।

খ) ইফতার শুরু হলেই আমি পানি মুখে দিতাম। আম্মুকেও তাই দেখতাম। কিন্তু আব্বু চোখ কটমট করে বলতেন, ‘আগে খেজুর দিয়ে ইফতারি খুলতে হয়, রাসুল (সাঃ) আমাদের নবী তাই করতেন।’ আমিও তারপর দিন থেকে তাই শুরু করলাম। আমি আব্বুকে জিজ্ঞেস করতাম, ‘আমাদের নবীজী কি এই খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন’। আব্বু বলতেন, “ওগুলো সৌদি আরবে হয়।” আমি ভাবতাম ওটা না জানি কেমন মিষ্টি হতে পারে। আমার খেজুরের প্রতি আগ্রহ দেখে আব্বু আমাকে একদিন বাজারে নিলেন খেজুর দেখাতে। নেবার সময় কানে কানে বলে দিলেন, “এখানে সব খেজুরের ব্যাবসায়ী মিথ্যা কথা বলে, কোনটা কোথা থেকে আসছে জানে না – শুধু বলবে মক্কাশরীফের খেজুর।” আমাকে আগে থেকেই সাবধান করে দেয়া হত। আমিও ভাবতাম এসব অসৎলোকের কাছ থেকে নেবার দরকারটাই কি? এক খেজুর বিক্রেতার কাছে গেলাম, তার খেজুরগুলার কালার গাঢ় না। আব্বু জিজ্ঞেস করলেন, “কোথাকার খেজুর?” ব্যবসায়ীর এককথা , “মক্কাশরীফের”। আব্বু কিছু কিনলেন। আরেকটা ফলের দোকানে গেলাম – ওই লোকেরটা গোল গোল মোটা মোটা খেজুর। কালারও ভালো। আব্বু নাম দিল ইরানী খেজুর। তার কাছ থেকেই কিছু কেনা হল। আরও কয়েকটা দোকান ঘুরেও নেয়া হল – যথারীতি আমার আর আব্বুর দেয়া নাম – পাকিস্থানী, ইরাকী, ইরানী, আফগানি, কুয়েতী, সৌদি ইত্যাদি রকমারি খেজুর। তবে একপ্রকার খেজুর নেয়া হল বেশ বড় বড় – দাম অন্যগুলোএর চেয়ে বেশী। দোকানদার খুব জোর গলায় বলছিল এটাই আসল আরবের খেজুর কারণ এর ভেতরের বিচিটা ছোট। বাসায় ফিরে সব প্যাকেট খুলে আমি আর আব্বু ভাগ করলাম বিভিন্ন দেশের খেজুর। আযান দিতেই গপাগপ খেজুর খাওয়া। আমিও আবিষ্কার করলাম যত গাঢ় রঙ ততবেশী মিষ্টি। এবার মিষ্টিগুণ বিচারে দেশের নামও বদলে গেল। তবে হরেক রকম খেজুর চেনা হল।

গ) শুনেছি আমাদের দেশে খেজুর যা আসে সব ডোনেশান। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য আমাদের খেজুর কিনে খেতে হয়। আমার মেজো আংকেল একবার নিয়ে এসেছিলেন বিদেশী খেজুর – তিনি পেয়েছিলেন তার হোটেল থেকে। অভিজাত হোটেলে নাকি এসব আসে। আংকেল ডিরেক্টর – তাই ইন্টারেস্ট ফিল করে কিছু এনেছিলেন আমাদের জন্য। জাকির মামা এনেছিল একদিন ইয়েমেন এর। আমার বন্ধু হাসানও এনেছিল বিদেশী খেজুর। বিশাল এক প্যাকেটে। সেও বলেছিল একই কথা – এগুলা সব ডোনেশান কিন্তু বড় ব্যাবসায়ীরা দেশের মানুষের সাথে চিটবাজি করে নিজেদের প্রফিট লুটে। আমিও ভাবি এত এত প্রফিট করে এদেশের ব্যাবসায়ীরা তারপরও আমরা গরীব দেশ কেন? গরীব মানসিকতার জন্যে কি?

ঘ) আমি জানিনা খেজুরের ব্যাবসাটা কিভাবে হয় বা কোন দেশ থেকে আসে। বছরে একবার পুরো একমাস খেজুর পাই – মন ভরে খাই। দুষ্টামি করে খেজুরের নাম দিয়েছি – “খাজুরে মওলা”। শুনেছি Palm আর Date এর মধ্যে নাকি পার্থক্য আছে। পাম অয়েল তাই খেজুরের তেল কিনা সিউর বলতে পারবো না। তবে মালয়শিয়ার পাম অয়েল প্রডিউস করে এমন কোম্পানির সাইটে দেখেছি। আমাদের দেশে শীতকালে দেশীয় খেজুর গাছ থেকে গুড় বানায়। সৌদি খেজুর গাছের রস দিয়ে বানালে কি মিষ্টি হত – তা আমার ধারণায় নেই। আরবের লোকেরা গুড় বানায় কিনা তাও জানি না। খেজুর থেকে খোরমা হয়, আমি ও বন্ধুরা এটাকে একটা তাচ্ছিল্য ভাষা বের করেছি এমন – ধরুন একলোক মিস্টার ‘ক’ খুব বেশী দাম পাচ্ছে কোথাও কোন ‘খ’ গোষ্ঠীর কাছে – আমরা তাচ্ছিল্য করে বললাম হয়ত, ‘ওই মিস্টার ‘ক’ হল ওই ‘খ’ গোষ্ঠির এক বিশাল খোরমা খাজুর।’ এটা রমজানেই উদ্ভুত - তবে কাহিনী মনে নাই কি কারণে।

ঙ) খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত – এ কথাটা আমার নানাও বলেন ইফতারের সময়। শুধু খেজুর পানি দিয়েই তখনকার সময় মানুষ ইফতার সেরে ফেলতো। আমার কাছে খেজুর এখনও চকোলেট। এটা চকোলেটের মত করে খেতে হয় – মনে হয় না আর কোন ফল এমন করে খায়, তাই না?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৬:৪১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×