somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

না পড়লে পস্তাইবেন- পর্ব ২!!:P:P সৌরজগতের বাইরে রাখা মানুষের প্রথম চিহ্ন!!

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘন্টায় ৪০ হাজার মাইল বেগে সৌরজগতের বাইরের দিকে ছুটে চলছে নভোজানটি। সন ১৯৮১, শনি গ্রহ অতিক্রম করে ছুটে চলছে ইউরেনাসের দিকে। ১৯৮৬ সনে ইউরেনাস অতিক্রম করে নেপচুন ও প্লুটো পার হতে হতে ১৯৮৯ সালও শেষ হয়ে গেল। যে নভোজানের কথা বলছি তা হলো ভয়েজার ১ এবং ২। তবে, আজ শুধু ভয়েজার ১ এর গল্পই শোনাব।


চিত্রঃ ভয়েজার ১
মাত্র ৭২২ কেজি ওজনের নভোজানটি ১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর উৎক্ষেপণ করে নাসা । সূর্য থেকে সবচেয়ে কাছের গ্রহ হচ্ছে বুধ, তারপর শুক্র, তারপর আমাদের পৃথিবী, তারপর মঙ্গল, তারপর এস্টোরয়েড বেল্ট। এইটুকুকে বলে সৌরজগতের ভেতরের দিককার গ্রহ বা Inner solar system. তারপর আসে বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো। এদেরকে বলে সৌরজগতের বাহিরের দিককার গ্রহ বা Outer solar system. ভয়েজার ১ নভোজানটি পাঠানো হয় এই Outer solar system এর তথ্য সংগ্রহের জন্য।


চিত্রঃ সূর্য থেকে ক্রমানুসারে গ্রহগুলোর অবস্থান
সভ্যতার সূচনালগ্নে মানুষ যখন সমুদ্রজয় করা শুরু করল, নাবিকরা তখন অত্যন্ত ধৈর্য, অনেক বিপদ আপদ মাথায় নিয়ে অনেক পরিশ্রম করে আমাদের দেশ-মহাদেশগুলোর মানচিত্র তৈরি করেছেন। ভূগোলবিদরা সব মানচিত্রগুলোকে এক করে পৃথিবীর মোটামুটি একটা চেহারা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। মানুষ বেলুনে চড়ে, প্লেনে চড়ে উপর থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের ছবি তুলেছে, পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করা নভোজান থেকে পৃথিবীর ছবি তুলেছে, তারপরই আমরা মোটামুটি একটা গোলকের ছবি পেয়েছি যা দেখলে আমরা এখন বুঝতে পারি কোন দেশ কোন দেশের পাশে, কোথায় কোন সাগর মহাসাগর আছে ইত্যাদি। আমরা বহু আগে থেকেই জানি পৃথিবী গোল বা কমলালেবুর মতো। কিন্তু, একটা ফ্রেমে পুরো পৃথিবীর ছবি প্রথম তোলা হয় মানুষ যখন শেষবার চাঁদে যায়, এপোলো ১৭ মিশনে।


চিত্রঃ এপোলো ১৭ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি।
এপোলো থেকে পৃথিবী যেমন দেখা যায়, সেখানে মানুষের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় না, আমাদের কোনো যন্ত্র বা কোনো স্থাপনা কিছুই বোঝা যায় না। এই অনন্ত নক্ষত্রবীথির মাঝে আমরা খুব সামান্য এক পাথর, মাটি, পানি দিয়ে তৈরি গ্রহের উপর খুব পাতলা স্পর্শকাতর প্রানের স্পন্দন।


চিত্রঃ ভয়েজারের ক্যামেরায় কাছ থেকে তোলা পৃথিবী ও চাঁদের ছবি।
নাসার বিজ্ঞানীরা ভাবলেন ভয়েজার যখন সৌরজগতের বাইরের দিকে ছুটে যাচ্ছে, নভোজানটি অকেজো হয়ে যাবার আগে এপোলো ১৭ মিশনের মতো পৃথিবীর একটা ছবি তুললে কেমন হয়! এতো দূর থেকে পৃথিবীর চিত্র হয়তো এই মহাবিশ্বের মাঝে আমাদের স্বরূপ বুঝতে কিছুটা সাহায্য করবে। ভয়েজার ১ থেকে পৃথিবীর ছবি তোলার খেয়াল যখন বিজ্ঞানীদের মাথায় চাপল, তখন ভয়েজার ১ মাত্র শনি গ্রহ অতিক্রম করছে। কিন্তু, পৃথিবী সূর্যের এতো কাছাকাছি যে, পোকা যেমন আগুনে ঝাপিয়ে পড়ার আগে আগুনের খুব কাছাকাছি উড়ে, অনেকটা সেরকম লাগে। ভয়েজারের স্পর্শকাতর ক্যামেরায় যদি তখন সূর্যকে ফ্রেমে রেখে পৃথিবীর ছবি তোলা হয়, তাহলে ভয়েজারের ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যেহেতু এটা একটা সায়েন্স প্রজেক্ট আর শুধুমাত্র দার্শনিক বোধ থেকে পৃথিবীর এই ছবি তোলার খেয়াল, তাই বিজ্ঞানীরা ঝুকি নিলেন না। তারা ঠিক করলেন ভয়েজার সৌরজগতের বাকি গ্রহগুলো থেকে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করুক, তারপর পৃথিবীর ছবি তোলা যাবে। বিজ্ঞানীরা অপেক্ষা করলেন। বাকি গ্রহগুলো থেকে যখন পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ হলো, আর তেমন কোন কাজ বাকি রইল না, তখন ভয়েজারের ক্যামেরা পৃথিবীর দিকে ঘোরানো হলো। কমান্ড সিকোয়েন্স আর ক্যামেরার এক্সপোজার ঠিক করে সংকেত পাঠানো হলো ভয়েজার ১ এ। বিজ্ঞানীরা শুধু পৃথিবীর ছবিই তুললেননা, একে একে সৌরজগতের নয়টি গ্রহের মধ্যে আরও পাচটির ছবিই তুললেন ৬ বিলিয়ন কিমি দূর থেকে।


চিত্রঃ A pale blue dot- পৃথিবী ৬ বিলিয়ন কিমি দূর থেকে!!


চিত্রঃ শুক্র, পৃথিবী, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন।
ছবিতে দেখুন, মাত্র ছয় বিলিয়ন কিমি (প্রায় সাড়ে পাঁচ আলোক ঘন্টা) দূর থেকে আমাদের পৃথিবীকে সাদা নীলচে বিন্দুর মতো লাগে। এই নীলচে আভার জন্য দায়ী পৃথিবীর বায়ুমন্ডল আর সাগর। এক গ্লাস পানি স্বচ্ছ দেখা গেলেও পানি নীল আলোর চেয়ে লাল আলো বেশি শোষণ করে। তাই পানির গভীরতা যদি ১০ মিটারের মতোও হয়, তাহলে তার উপর যত আলো পড়ে তার লালচে অংশটুকু পুরোটাই শুষে নেয়, আর নীলচে অংশ কিছুটা প্রতিফলিত করে। বাতাসও অনেকটা একই আচড়ন করে। লিওনারদো দা ভিঞ্চি তাই ছবি আঁকার সময় দূরের কিছু ফুটিয়ে তোলার জন্য নীলচে আভা দিতেন। তাই দূর থেকে পৃথিবীর নীলচে ভাবের জন্য দায়ী হল ঘন কিন্তু স্বচ্ছ বায়ুমন্ডল আর গভীর সমুদ্র। পৃথিবীর নীলচে আভার কারন আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি কারন আমরা পৃথিবীকে জানি ভালো করে। কিন্তু, অন্য কোনো গ্যালাক্সি থেকে যদি কোনো এলিয়েন বিজ্ঞানী বা নভোচারী আসে, তাহলে হয়তো এতো সহজে এরকম ব্যাখ্যা চিন্তা করবে না। নেপচুন গ্রহও নীল, কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন কারনে। এতো দূর থেকে পৃথিবীর যে দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্য তা হয়তো এলিয়েনের মনে পৃথিবী সম্পর্কে কোনো আগ্রহই জাগাবে না।
কিন্তু, আমাদের জন্য ব্যাপারটা ভিন্ন। ছবিটা আবার খেয়াল করে দেখুন। মনে হয় যেন, জানালার ফাক গলে আসা একফালি রোদের মাঝে যেন একটা ধুলোর কনা ভাসছে। হয়তো ভাবছেন, ক্যামেরাটা নিশ্চয়ই ভালো ছিল না! কিন্তু না, এটা ক্যামেরার দোষ না! এটাই প্রকৃত চিত্র। এই যে সামান্য বিন্দু, এটাই আমাদের একমাত্র আশ্রয়। আমাদের যত ভালবাসার মানুষ, যত ঘৃণার মানুষ, যত মানুষকে আমরা চিনি জানি, যত মানুষকে আমরা চিনব জানব, যত মানুষ পৃথিবীতে জন্মেছে সবাই এই ছোট্ট বিন্দুর মাঝেই। আমাদের সকল সুখ দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা আনন্দ বেদনা, হাজারো ধর্মীয় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক মতবাদ সব এখানেই, প্রতিটা শিকার আর শিকারী, প্রতিটা নায়ক আর কাপুরুষ, প্রতিটা সভ্যতার নির্মাতা আর ধ্বংসকারী, প্রতিটা রাজা-প্রজা, প্রেমিক প্রেমিকা আর নবদম্পতি, প্রতিটি স্বপ্নবিলাসী শিশু, প্রতিটা বিজ্ঞানী নভোচারী আর অনুসন্ধানকারী, কবি লেখক, সকল মহান শিক্ষক, সকল দুর্নীতিবাজ দুষ্ট রাজনীতিবিদ, ইতিহাসের সকল মহানায়ক মহাপুরুষ আর মহাপাপী, সবাই এখানেই, সূর্যের আলোয় উদ্দেশ্যহীন ভেসে থাকা এই ধূলিকনার মাঝেই......!!
এই অনন্ত নক্ষত্রবিথীর মাঝে পৃথিবীর স্থান খুবই নগন্য। ওইসব সেনাপতি আর সম্রাটদের কথা ভেবে দেখুন, যারা ক্ষণস্থায়ী গৌরব, বিত্ত আর জয়জয়কারের জন্য রক্তের নদী বইয়ে দিয়েছে আর এখনো দিচ্ছে! কিসের জন্য? এই ছোট্ট বিন্দুটির একটি ক্ষুদ্র অংশের ক্ষনস্থায়ী প্রভু হবার জন্য! একই ক্ষুদ্র পৃথিবীর বাসিন্দা আমরা, অথচ আমাদের কতো ভুল বোঝাবুঝি, কতো সামান্য স্বার্থের কারনে অনুভূতির কারনে দম্ভের কারনে আমরা খুনোখুনিতে লিপ্ত। কতো তীব্র আমাদের ঘৃণা। আমাদের এই আত্মঅহমিকা, গৌরব, মহাবিশ্বের মাঝে আমাদের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান এই যে বিভ্রম, এসবকিছুকে আজ প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে পৃথিবীর এই ছবি। জানালার ফাঁক গলে আসা আলোর রেখায় ভাসমান একটা ধুলিকনা যেমন খুবই অস্থায়ী অস্থির, বাতাসের মৃদু আলোড়নেই হারিয়ে যায় কোথায়, আমাদের পৃথিবী অবস্থা কি তার চেয়ে খুব ভিন্ন কিছু!!
লিখতে বসেছিলাম ভয়েজার ১ এর গল্প। সেখানেই আবার ফিরে যাই। ১৯৭৯ সালে ভয়েজার বৃহস্পতি গ্রহের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। বৃহস্পতি আর এর উপগ্রহগুলোর অনেক ছবি তোলে আর পৃথিবীতে পাঠায়। বৃহস্পতি আর এর উপগ্রহগুলো সম্পর্কে আমরা অনেক নতুন তথ্য পাই, যেমন বৃহস্পতির একটা উপগ্রহে একটা সক্রিয় আগ্নেয়গিরির সন্ধান পায় যা সৌরজগতে পৃথিবী ছাড়া অন্যকোথাও পাওয়া প্রথম কোন সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, এটা বিজ্ঞানীদের জন্য একটা বিশেষ ঘটনা। আরেকটি বিশেষ আবিস্কার হচ্ছে বৃহস্পতির Planetary ring যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেনি। এটা অনেকটা শনির বলয়ের মতোই। আমি বিস্তারিত বর্ণনায় যাবো না, ছবি দিয়ে দিচ্ছি। শুধু বলে দেই, এই বলয় ৪টি ভাগে ভাগ করা হয় এর গঠন উপাদানের উপর ভিত্তি করে। তারপর ১৯৮০ সালে ভয়েজার শনি গ্রহ প্রদক্ষিন করা শুরু করে। শনির বলয়ের জটিল গঠনের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে, শনি আর এর উপগ্রহ টাইটানের বায়ুমন্ডল কেমন সে সম্পর্কে আমরা বিশদ জানতে পারি।


চিত্রঃ বৃহস্পতির Planetary ring.
ভয়েজার ১ এখন কোথায় আছে? অবশ্যই ভয়েজার ১ এখন পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে থাকা মানুষের তৈরি কোনো বস্তু। তাই ভয়েজার ১ এর অবস্থান আমার মনে বিশেষ আগ্রহ জাগায়। ভয়েজার ১ কি দেখছে আমি মনের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করি। ভয়েজার ১ সৌরজগতের সবচেয়ে বাইরের গ্রহ প্লুটোকেও ছাড়িয়ে গেছে, কিন্তু সৌরজগতের ব্যাপ্তি প্লুটো ছাড়িয়েও বেশ কিছু দূর পর্যন্ত। তাই ভয়েজারের অবস্থান বোঝার জন্য সৌরজগতের শেষ সীমানা কেমন সে সম্পর্কে একটু ধারনা নিতে হবে। আসুন জেনে নেই সেটা কেমন!
সৌরজগতের প্রভাব বা ব্যাপ্তি কোন পর্যন্ত সেটা নির্দিষ্ট করা কঠিন। কারন, দুটো শক্তির উপর সেই সীমানা নির্ভর করে, তা হল সূর্যের অভিকর্ষজ বল আর সূর্যের বাতাস বা সূর্য থেকে যে প্লাজমা ধেয়ে আসে তার উপর (Solar wind). প্লুটো থেকে সূর্যের যে দূরত্ব, সূর্যের বাতাস প্রায় তার ৪ গুন দূরত্ব পর্যন্ত প্রভাব ফেলে। সেই দূরত্ব পর থেকে যে অঞ্চল শুরু হয় তা হল আন্তনক্ষত্রের মধ্যবর্তী স্থান (Interstellar medium). আমার উদ্ভট অনুবাদের জন্য ক্ষমা করবেন আশা করি! ধারনা করা হয়, সূর্যের অভিকর্ষজ প্রভাব এই দূরত্বের আরও এক হাজার গুন দূর পর্যন্ত বিস্তৃত!! এই মধ্যবর্তী স্থানে অন্য নক্ষত্রমণ্ডলী থেকে ধেয়ে আসা প্লাজমার বিপরীতমুখী সংঘর্ষ হয়, তাই সূর্যের প্লাজমার গতিবেগ অনেক কমে যায় এবং একটা দূরত্ব যাওয়ার পর সূর্যের প্লাজমার উপস্থিতি আর বোঝা যায় না। সেখান থেকে শুরু হয় Interstellar space বা নক্ষত্রমন্ডলীর মধ্যবর্তী মহাশূন্য।
২০১২ সালের অগাস্টে নাসার বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন আমাদের ভয়েজার ১ এই Interstellar space-এ প্রবেশ করেছে। যদিও এটা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক চলছে, কিন্তু ভয়েজার ১ নিয়ে যারা কাজ করছেন, তারা দাবি করছেন অবশ্যই ভয়েজার ১ এখন আমাদের সৌরজগতের বাইরে। সৌরজগতের যে সীমানা তা সূর্যের প্লাজমা দিয়ে পূর্ণ। ভয়েজারের চারপাশের প্লাজমার বিস্তারিত জানার যে যন্ত্র দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা ১৯৮০ সালেই নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু বিজ্ঞানীরা অন্য পন্থা বের করেছেন সেটা জানার জন্য। ২০১২ সালের মার্চ মাসে এক বিশাল সৌরঝড় হয়, সূর্য থেকে বিপুল পরিমান শক্তি বের হয়ে মহাশুন্যে ছড়িয়ে পড়ে। এর ১৩ মাস পর এই বিপুল পরিমান প্লাজমা ভয়েজার ১ কে অতিক্রম করে। ফলে বিজ্ঞানীরা ভয়েজার ১ এর আশে পাশের প্লাজমার ঘনত্ব পরিমাপ করেন এবং দেখতে পান যে সৌরসীমানার মধ্যে প্লাজমার যে ঘনত্ব, ভয়েজার ১ এর চারপাশের প্লাজমার ঘনত্ব তার চেয়ে ভিন্ন। আরও অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, সৌরজগতের শেষ সীমানায় প্লাজমার যে ঘনত্ব তার চেয়ে সৌরজগতের বাইরে প্লাজমার ঘনত্ব প্রায় ৪০ গুন বেশি। ২০২০ সাল পর্যন্ত ভয়েজার ১ এর চারপাশের আর গভীর মহাশুন্যের তথ্য পাঠাবে।

সৌরজগতের গ্রহগুলো ১৭৬ বছর পর পর মোটামুটি একই সরলরেখায় আসে, ঠিক সেরকম সময়েই ভয়েজার ১ এবং ২ উৎক্ষেপণ করা হয়। এজন্যই একবছর সময়ের মধ্যেই ভয়েজার দুটোর পক্ষে বৃহস্পতি, শনি গ্রহগুলোর কাছে পৌছানো সম্ভব হয়েছে । ভয়েজার মিশন যারা নিয়ন্ত্রন করছেন তারা প্রতিদিনই ভয়েজারের সাথে তথ্য আদান প্রদান করছেন। ভয়েজার যে সংকেত পৃথিবীতে পাঠায়, তা যখন পৃথিবীতে পৌঁছে তখন খুবই ক্ষীণ হয়ে যায়। ভয়েজার 160 bit/s হারে পৃথিবীতে তথ্য পাঠায় এবং সেটা আলোর গতিতে পৃথিবীতে আসতে সময় লাগে ১৭ ঘন্টা। ২০২৫ সালে ভয়েজারের সব যন্ত্রগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, তারপর বিজ্ঞানীরা আরও ১০ বছর ভয়েজার ১ থেকে শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং ডাটা পাবেন। ভয়েজার ১ ওফিকাস নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে ছুটে চলেছে। ৪০,২৭২ সালে ভয়েজার ১ উসরা মাইনর নামক এক নক্ষত্রের ১.৭ আলোকবর্ষ দূরত্বের মধ্যে আসবে, যা দ্যা লিটল বিয়ার নামেও পরিচিত!! তারপর ছায়াপথকে কেন্দ্র করে হয়তো ছুটে চলতেই থাকবে যদি না কোনো এলিয়েনের মুখোমুখি হয় বা কোনো গ্রহ নক্ষত্রে আছড়ে পড়ে। নাসার বিজ্ঞানীরা একটা রেকর্ড রেখে দিয়েছেন ভয়েজার ১ এর ভেতরে, কোনো এলিয়েন যদি কখনো ভয়েজারে কি আছে পরীক্ষা করে দেখতে চায়, তাহলে তাদের জন্য পৃথিবীর মানুষের পক্ষ থেকে কিছু তথ্য পাঠানো হয়েছে। এই রেকর্ডে আছে বিভিন্ন ধরনের ১১৬টি চিত্র, বিভিন্ন ধরনের সুর, শব্দ ইত্যাদি। পাখি আর তিমির শব্দও রেকর্ড করা আছে এখানে। বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর বিভিন্ন গান, আধুনিক ও প্রাচীন ৫৫ টি ভাষায় স্বাগত জানানো হয়েছে আর সেসময়কার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও ইউএন সেক্রেটারি জেনারেল কার্ট ওয়াল্ডহেইম এর লিখিত বক্তব্য আছে। মানুষের বৈজ্ঞানিক গবেষণা, গানিতিক পারদর্শিতা, সৌরজগতের বিভিন্ন তথ্য, মানুষ, পশু পাখির বায়লজিক্যাল বিভিন্ন তথ্য ছবি আরও অনেক কিছু আছে সেখানে।
ভয়েজারের মাধ্যমে আমরা কখনো কোনো এলিয়েনের সাথে যোগাযোগ বা কোনো এলিয়েনের সন্ধান পাব কিনা জানি না, তবে মহাকাশের অনেক নতুন দিক যেন আমরা একদম কাছ থেকে দেখতে স্বচক্ষে পাচ্ছি ভয়েজারের মাধ্যমে। সময়ই বলতে পারবে ভয়েজারের সেই রেকর্ড কি কোনো এলিয়েনের হাতে পড়বে, নাকি হারিয়ে যাবে, নাকি পৃথিবীর মানুষ সুদূর কোনো এক ভবিষ্যতে ওয়ার্ম হোল বা কোনো আধুনিক নভোযানের মাধ্যমে ভয়েজার অতিক্রম করবে আর প্রাচীন পৃথিবীর মুছে যাওয়া ইতিহাস আবার নতুন করে আবিস্কার করবে!
পর্ব ১ এখানে
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:০৬
১৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার শিশুদের উদ্দেশ্যে - আমরা তোমাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


তোমরা এসেছিলে মাথার উপর বোমা পড়ার ভয়ার্ত গল্প নিয়ে। যে বোমা তোমাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে, লোকালয় ধ্বংস করেছে। আমরা কান বন্ধ করে উদাসীন হয়ে বসে ছিলাম। তোমরা এসেছিলে ছররা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবিতে গণতন্ত্রের নামে মবতন্ত্র

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১০



তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের পীর আল্লামা পিনাকী এবং ছোট হুজুর ইলিয়াস মোল্লার উস্কানীতে দেশজুড়ে চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মবতন্ত্র। আল্লামা পিংকুর যুক্তি হচ্ছে- যে বা যারাই তাদের (গণতন্ত্রকামীদের) সূরে কথা না... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×