somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোয়ান্টাম জগতের ভূতুড়ে ঘটনা

০১ লা জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা দেখলে মনে হয় ভুতূড়েই বটে! কিন্তু, বারবার পরীক্ষা করলেও একই ফল পাওয়া যায়!
আমি ভাবতাম, বিজ্ঞানের কাজ হচ্ছে রহস্যের সমাধান করা, বিজ্ঞানে রহস্যের কোনো স্থান নেই। কিন্তু, কোয়ান্টাম মেকানিক্স সম্পর্কে পড়ার পর মনে হচ্ছে, বিজ্ঞান জগতকে আরো রহস্যময় করে তুলছে। পদার্থ বিজ্ঞানের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে, কোয়ান্টাম মেকানিক্স আর আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। এই দুটো তত্ত্ব দিয়েই বস্তুজগতের সবকিছু ব্যাখ্যা করা হয় বা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, এই দুটো তত্ত্বের মধ্যে রয়েছে চরম বিরোধ। যদিও দুটো তত্ত্বই সঠিক ও পরীক্ষা দ্বারা প্রমানিত।
আইনস্টাইন মনে করতেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব অসম্পূর্ণ। কোয়ান্টাম দুনিয়ায় আক্ষরিক অর্থেই সব ভৌতিক ব্যাপার স্যাপার ঘটে। যেমন, আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুযায়ী এই জগতে কোনো কিছু আলোর চেয়ে দ্রুত গতিতে চলতে পারবে না। কিন্তু, কোয়ান্টাম জগতে দেখা যায়, এক জোড়া কোয়ার্ক (কোয়ার্ক হলো অতিপারমানবিক কণা যা দিয়ে প্রোটন, নিউট্রন গঠিত) যদি এমনভাবে সম্পর্কিত থাকে যে, একটার স্পিন/ঘূর্ণন পরিবর্তন করলে তার সঙ্গী কোয়ার্কেরও স্পিন পরিবর্তন হবে। এখন ধরা যাক, এই কোয়ার্ক জোড়াকে এমন দূরত্বে পৃথক করা হলো, যে সে দূরত্ব অতিক্রম করতে এক আলোকবর্ষ লাগে। এই অবস্থায় কেউ যদি প্রথম কোয়ার্কের স্পিন পরিবর্তন করে, তবে আইনস্টাইনের তত্ত্ব মতে সঙ্গী কোয়ার্কের স্পিন কমপক্ষে একবছর পর পরিবর্তন হবে। কারন, প্রথম কোয়ার্কের স্পিন যে পরিবর্তিত হয়েছে, সে খবর দ্বিতীয় কোয়ার্কের কাছে পৌঁছাতে এক বছর সময় তো লাগাই উচিত, যেহেতু আলোর চেয়ে দ্রুত কিছু চলতে পারে না। কিন্তু, পরীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রথম কোয়ার্কের স্পিন পরিবর্তনের সাথে সাথেই দ্বিতীয়টির স্পিনও পরিবর্তিত হয়ে গেছে। তাদের দূরত্বের কোনো প্রভাবই নেই এখানে।
মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান (আমি এখনকার সিলেবাস জানি না) নিয়ে পড়লে ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্টের কথা পড়ার কথা। কেউ না পড়ে থাকলে বা ভুলে গেলে, আমি একটু বলে নেই এটা সম্পর্কে। ধরা যাক, এক টুকরা লোহার পাত, যেটা মাঝখানে সূক্ষ্ম দু’টি চিড় বা ফাটল আছে। এটাকে একটা লেজার লাইট আর একটা ক্যামেরার ফিল্মের মাঝখানে রেখে ক্যামেরার সাটারের মতো যদি লেজার লাইট থেকে ফিল্মের দিকে আলো ফেলা হয়, অর্থাৎ আলো সেই লোহার পাতের চিড়ের মধ্য দিয়ে খুব অল্প সময়ের জন্য সেই ফিল্মের উপর পড়বে। তাহলে, সেই ফিল্ম থেকে ছবি প্রিন্ট করলে নিচের চিত্রের মতো ব্যতিচারের ছবি পাওয়া যাবে।


এখান থেকে ধারনা করা যায় যে আলো ঢেউ বা তরঙ্গ আকারে চলে। একই পরীক্ষা যদি ইলেক্ট্রন দিয়ে করা হয়, তবে কি ফল পাওয়া যাবে? ইলেক্ট্রনের তো ভর আছে, ইলেক্ট্রনকে আমরা তো কনা হিসেবেই ধরতে পারি! একই রকম পরীক্ষার ব্যবস্থা যদি আমরা ইলেক্ট্রনের জন্য করি (আমি বিশদ বিবরনে যাচ্ছি না) এবং একটা একটা করে ইলেক্ট্রন যদি ছাড়ি, তাহলেও দেখা যায় একই রকম ফল পাওয়া যায়। অর্থাৎ, প্রতি ১০ সেকেন্ডে যদি আমরা একটা করে ইলেক্ট্রন ছাড়ি, তবে ঘন্টাখানেক পর, ইলেক্ট্রন ডিটেক্টরের উপর ইলেক্ট্রনের যে ছাপ পাওয়া যাবে, সেটা নিচের এই চিত্রের মতোই ব্যতিচার তৈরি করবে।


কিন্তু, এটা কিভাবে সম্ভব! কারন, একসাথে যদি হাজার খানেক ইলেক্ট্রন ছাড়া হয়, তবে না হয় একেক সংখ্যক ইলেক্ট্রন একেক স্থানে পড়বে। অথবা যেহেতু, দু’টি চিড়ের মাঝ দিয়ে ইলেক্ট্রন যাচ্ছে, ডিটেক্টরের উপর শুধু দু’টি জায়গায় ইলেক্ট্রনের উপস্থিতি পাওয়া যাবে! কিন্তু, ইলেক্ট্রন কেন আলোর মতোই তরঙ্গ বা ঢেউ আকৃতিতে চলছে বলে মনে হচ্ছে! বিজ্ঞানীরা একে ব্যাখ্যা করার জন্য প্রবাবিলিটি ওয়েভ ধারনার প্রস্তাব করলেন। শ্রডিঞ্জার, নীলস বোর, হাইজেনবার্গ, পল ডিরেক এবং আরো অনেক বিজ্ঞানীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটা গানিতিক সমীকরন দাঁড় করানো হয়েছে, যেটা দিয়ে প্রবাবিলিটি ওয়েভ কেমন হবে সেটা ধারনা করা যায়। মোট কথা, এই সমীকরনের সাহায্যে একটা ইলেক্ট্রন ছোড়া হলে, সেটা ডিটেক্টরের কোন জায়গায় গিয়ে পড়বে সে সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করা যায়! নিউটনের সূত্রের সাথে দ্বিমত করে কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে যে, কোনো পরীক্ষার শুরুতে একই রকম পরিস্থিতি আর আয়োজন থাকলেও, একাধিক পরীক্ষার ফল ভিন্ন হতে পারে। মানে আপনি ঢাকা থেকে চিটাগাং রোড ধরে চিটাগাঙের দিকে যাত্রা করলেও রংপুরে গিয়ে পৌঁছাতে পারেন! আপনার কোথায় গিয়ে পৌঁছানোর সম্ভাব্যতা কতটুকু, সেটা এই প্রবাবিলিটি ওয়েভ সমীকরণ বলে দেবে। কোয়ান্টাম দুনিয়ায় জগত সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধ্যান ধারনা অচল! আপনার ঢাকা থেকে চিটাগাং রোড হয়ে রংপুর পৌঁছানোর এই অদ্ভূত ব্যাপারটা কোয়ান্টাম জগতের আরেকটা বৈশিষ্ট্যের কথা বলে। সেটা হলো, আপনি ঢাকা থেকে রংপুর পৌঁছানোর আগে সেখানে যাবার সম্ভাব্য সবরকম রাস্তা ব্যবহার করেই যাবেন! সেজন্যই রংপুর পৌঁছানোর আগে আপনার চিটাগাং রোড ব্যবহার করার প্রমান বা ইতিহাস পাওয়া যায়। ডাবল স্লিট পরীক্ষার ক্ষেত্রে মনে হবে যে, একটা ইলেক্ট্রন ডান পাশ ও বাম পাশের উভয় স্লিট বা ফাটল অতিক্রম করেই ডিটেক্টরে গিয়ে পৌঁছবে, যেন একই সাথে দুই স্থানে অবস্থান করা!
এই অসম্ভব ব্যাপার যেকোনো মানুষের পক্ষেই মেনে নেয়া বা অনুধাবন করা কষ্টকর। তাই, বিজ্ঞানীরা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন ব্যাপারটা নিয়ে। কিন্তু, আরো ভূতুড়ে ব্যাপার হলো, যদি আপনি খুব চালাকি করে দেখার চেষ্টা করেন ইলেক্ট্রন কোন পথে যাচ্ছে (ডান, বাম নাকি উভয় ফাটল দিয়ে), তাহলে পরীক্ষার ফলাফল নিউটনের সূত্র মেনেই পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, আপনার কোনো বন্ধু যদি আপনাকে চিটাগাং রোড ধরে যেতে দেখে ফেলে, তাহলে আপনাকে রংপুরে না, চিটাগাঙেই পাওয়া যাবে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এই পরীক্ষাগুলো থেকে আরও কিছু অসম্ভব বিষয় পাওয়া যায়। যেমন, ভবিষ্যতের কোনো কাজ কি অতীত বদলে দিতে পারে? ধরুন, আপনি টিকেট ছাড়া ট্রেনে উঠেছেন! এমন কি ঘটতে পারে যে, টিটি যদি ট্রেনে আপনার টিকেট চেক করে, তাহলে আপনার পকেটে টিকেট পাওয়া যাবে আর যদি চেক না করে তাহলে ট্রেন থেকে নামার পর আপনার পকেটে টিকেট পাওয়া যাবে না। মানে টিটি যদি আপনার টিকেট চেক করে, তবে আপনার অতীত বদলে যাবে, দেখা যাবে আপনি অতীতের কোনো এক সময়ে টিকেট কেটেছেন, কিন্তু যদি আপনার টিকেট না চেক হয়, তবে ট্রেনে আপনি টিকেট ছাড়া অবস্থান করছেন!
এই ব্যাপারটা ডাবল স্লিট পরীক্ষা একটু অন্যরকমভাবে করে প্রমান পাওয়া যায়। ধরুন ডাবল স্লিটের ডান পাশের বা বাম পাশের চিড়ে এমন এক যন্ত্র বসানো হলো যেটার কাজ হলো সেই চিড় দিয়ে কোনো ইলেক্ট্রন বা ফোটন গেলে তার উপর এমন এক চিহ্ন করা যেন ডিটেক্টরে সেই ইলেক্ট্রন বা ফোটন পৌঁছার পর আমরা বুঝতে পারি সেটা কোন পথ দিয়ে এসেছে। সে ক্ষেত্রে আমরা দেখব যে ডিটেক্টরের উপর কোনো ব্যতিচার তৈরি হয় নি, অর্থাৎ ইলেক্ট্রন বা ফোটন তরঙ্গের মতো আচরন করেছে। ধরি ডাবল স্লিট আর ডিটেক্টরের দূরত্ব এক আলোকবর্ষ। ডাবল স্লিট পার হয়ে সেই ইলেক্ট্রন বা ফোটনের ডিটেক্টরে পৌঁছাতে কমপক্ষে এক বছর লাগবে তাহলে। যদি ডিটেক্টরে পৌঁছানোর ঠিক আগে এমন এক যন্ত্র বসানো হয় যেটা অন করলে সেই ইলেক্ট্রন বা ফোটন কোন স্লিট দিয়ে এসেছে সেই চিহ্ন মুছে যায়। তাহলে দেখা যাবে, ডিটেক্টরে ইলেক্ট্রন বা ফোটন ব্যতিচার তৈরি করেছে বা তরঙ্গ আকারে এসেছে। যদি সেই যন্ত্র বন্ধ রাখা হয়, তবে দেখা যায় ইলেক্ট্রন বা ফোটন কনা আকারেই এসেছে। লক্ষ্যনীয় যে, ডাবল স্লিট অতিক্রম করার সময় সেই ইলেক্ট্রন বা ফোটন কিন্তু জানে না যে , তার গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে তার গায়ে এঁকে দেয়া সেই চিহ্ন মুছবে কিনা! সেই চিহ্ন যদি মুছে দেয়া হয়, তবে তারা তরঙ্গরুপ ধারন করবে, যদি চিহ্ন না মোছা হয় তবে তারা কনারূপ ধারন করবে। প্রকৃতির এক অদ্ভুত লুকোচুরি খেলা!
সবাইকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা!!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:০১
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার শিশুদের উদ্দেশ্যে - আমরা তোমাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


তোমরা এসেছিলে মাথার উপর বোমা পড়ার ভয়ার্ত গল্প নিয়ে। যে বোমা তোমাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে, লোকালয় ধ্বংস করেছে। আমরা কান বন্ধ করে উদাসীন হয়ে বসে ছিলাম। তোমরা এসেছিলে ছররা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবিতে গণতন্ত্রের নামে মবতন্ত্র

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১০



তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের পীর আল্লামা পিনাকী এবং ছোট হুজুর ইলিয়াস মোল্লার উস্কানীতে দেশজুড়ে চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মবতন্ত্র। আল্লামা পিংকুর যুক্তি হচ্ছে- যে বা যারাই তাদের (গণতন্ত্রকামীদের) সূরে কথা না... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×