somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধোঁয়া ধোঁয়া ভালোবাসা................... পর্ব- ৪

১২ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব- ১
পর্ব- ২
পর্ব- ৩


তিতলী বেশ সুন্দর করেই সেজেছে। তাকে অনেকটা দেবী দেবী লাগছে। খুব সুন্দর একটা সাদা জামা পড়েছে সে। কপালে লাল টিপ পড়েছে, দুহাত ভর্তি করে চুড়ি পড়েছে। চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়েছে। চুল গুলো ছেড়ে রেখেছে...............


বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মেইন-রোড পর্যন্ত গেলো সে। কোথায় যাবে ঠিক করতে পারছে না। কিছুক্ষন পর শাহবাগ পর্যন্ত রিক্সা ভাড়া করলো।

আজকে সবকিছু কেমন যেন লাগছে। অন্যদিনের চেয়ে একটু অন্যরকম। সবকিছুর মাঝে একটু অন্যরকম ভালোলাগা মিশে আছে। হালকা হালকা বৈকালিক বাতাস বইছে। হুশ করে পর পর দুটো বিয়েবাড়ির গাড়ী তিতলির রিক্সার পাশ ঘেসে চলে গেলো। বেশ সুন্দর করেই সাজানো হয়েছে। একবার দেখলে শুধু তাঁকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।


শাহবাগে এসে রিক্সা থেকে নেমে ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে সে ফুলের দোকানগুলোর দিকে গেল। দেখা গেল অনেক ফুল বিক্রেতাই বিয়েবাড়ীর গাড়ী সাজাতে মহাব্যাস্ত। বেশীরভাগ বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো শুক্রবারেই হয়, সপ্তাহের এই দিনটিতে তাই ফুল বিক্রেতারা দম ফেলবার সময়টুকু পান না।
এক দোকানের সামনে প্রায় ১০/১২টা ঘোড়ার গাড়ী সাজাতে দেখা গেল। ঐ গাড়ীগুলোর মধ্যে একটা গাড়ীকে একটু বেশী সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে এই গাড়ীটা বর-কণের জন্য স্পেশালভাবে সাজানো হচ্ছে।

একটুপর হাঁটতে হাঁটতে তিতলি আজিজ সুপার মার্কেটের দিকে গেল। ভেতরে গিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিভিন্ন দোকানে সাঁজিয়ে রাখা জিনিষগুলো দেখছিল।

একটা বইয়ের দোকানে গিয়ে তিতলি কিছু বই নেড়েচেড় দেখছিল। হঠাৎ পেছন থেকে একটা মেয়ে তাকে ডাক দিলো, "আরে তিতলি না........"
তিতলি পেছন ঘুড়ে দেখে তার স্কুলের বান্ধবি বুশরা দাড়িয়ে আছে।
> আরে বুশি, কি খবর তোর? আছিস কেমন?
> আমাদের খবর রাখার সময় আছে নাকি তোর.....!?! তোর ছায়াও তো দেখা যায় না.....!!!
> কি যে বলিস না তুই! বাসায় তো আসিস না অনেকদিন হলো। ফোনও তো করিস না। তোদের অনেকের নাম্বারই আমি হারিয়ে ফেলেছি। এজন্য ফোন করতে পারিনি।
> আচ্ছা যাকগে। তোর মোবাইল নাম্বারটা দে তো
> আচ্ছা নে 01681...........
[বুশরা তিতলির নাম্বারে একটা মিসড কল দিলো। দুজন দুজনের নাম্বার মোবাইলে সেভ করে নিলো।]
> এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না। চল কোথাও গিয়ে বসি।
> ঠিক আছে। চল টি.এস.সি. তে যাই। ওখানে বসে চা খেতে খেতে গল্প করা যাবে।
> আচ্ছা চল..............


বুশরা সবসময় একটু চঞ্চল প্রকৃতির। স্কুলে পড়ার সময় ভীষন দুষ্টু ছিল। ও হালকা মোটা, গুল্লু-গাল্লু, কিন্তু দেখতে ভীষন কিউট। সব বন্ধুরা তাকে পছন্দ করে, ভীষন ভালোবাসে। ওকে বন্ধুরা আদর করে বুশি, বুশিবাবু, বুশিমনি বলে ডাকে। বুশরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওগ্রাফিতে পড়ছে।

তারা হাঁটতে হাঁটতে টি.এস.সি. তে গেলো। একটা ওভালটিন চায়ের দোকানের পাশে বসে চা খেতে খেতে গল্প করতে থাকলো।
> কিরে তিতলি তুই দেখি দিন দিন আগের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়ে যাচ্ছিস।
> ধুর কি যে যা তা বলিস তুই........!!!
> উঁহু, যা তা না। আসল রহস্যটা কি খুলে বল। প্রেমে টেমে পড়েছিস নাকি............???
> আরে না। আমি পড়বো প্রেমে আর আমার সাথে কেউ প্রেম করবে, তাহলেই সেরেছে.........!!!
> এইসব সাধু সাধু কথা বাদ দে। আচ্ছা ভালো কথা, একটা খবর জানিস?
> কি খবর?
> ডিসম্বরে তো স্কুলের রিইউনিয়ন।
> তাই নাকি!!!
> হুম তাই। তোকে অবশ্যই আসতে হবে।
> তা তো অবশ্যই আসবো
> এই শাড়ি পড়ে আসিস। আমরা সবাই শাড়ি পড়বো।
> আচ্ছা ঠিক আছে। আচ্ছা বুশি শোন, তোর কি একটা ছেলের কথা মনে আছে?
> কোন ছেলে?
> বর্ষন।
> ঐযে ফর্সা, কিউট, লম্বা ছেলেটা, চশমা পড়তো? তোর সাথে যে খুব ঘুরঘুর করতো?
> হ্যা ওর কথাই বলছি।
> তা হঠাৎ করে বর্ষনের কথা কেন? আমাদের চেয়ে তো তোরই ওর ব্যাপারে বেশী খবর রাখার কথা।
> আসলে ওর সাথে আমার ৮ বছর যাবৎ কোন যোগাযোগ নেই। ও স্কুল পাল্টাবার পর থেকে ওর সাথে আর যোগাযোগ হয়নি। আচ্ছা ও কি রিইউনিয়নে আসবে?
> না আসার সম্ভাবনাই বেশী। ও তো আমাদের স্কুল থেকে SSC পাশ করেনি। বলা যায় না, হয়তো চলেও আসতে পারে
> হুম ও আসলে ভালো হয়। অনেক দিন ওকে দেখি না।

রাত ৮টা পর্যন্ত তিতলি আর বুশরা একসাথে ছিল। তিতলি খুব হাশি খুশি মুড নিয়েই বাসায় ফিরলো। ওর কেন যেন আজকে খুব খুশি খুশি লাগছে।

বাসায় আসার পর সবকিছুতেই সে বেশ আনন্দ পাচ্ছিল। মাঝে মাঝে শুধু শুধু হাশছিল।

মেয়ের এই ব্যাপারটা ইকবাল সাহেবের চোখ এড়িয়ে যায়নি। রাতে খাওয়ার সময় তিনি মেয়ের সাথে কথা বললেন---
> কিরে মা, তোর মনটা কি আজকে খুব ভালো?
> হঠাৎ একথা কেন বাবা?
> বাসায় ফেরার পর থেকেই তোকে খুব হাসি-খুশি দেখছি.......
> আজকে একটা কান্ড হয়েছে। বুশিবাবুর সাথে দেখা হয়েছে। আমার স্কুলের বন্ধু বুশরা, মনে আছে তোমার?
> হ্যা হ্যা মনে আছে।
> ওর সাথে অনেক আড্ডা মারলাম। ডিসম্বরে নাকি স্কুলের রিইউনিয়ন।
> যাবি নাকি?
> যাবো না আবার! একশ বার যাবো, হাজারবার যাবো!!!


তিতলির সারাক্ষনই মনে হতে লাগলো, যদি সত্যি সত্যি বর্ষন রিইউনিয়নে আসে..............
এতদিন পর দেখা হলে কি বলবে, কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।
তার মধ্যে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতে থাকলো............


(চলবে...........)
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×