somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শী লাভস মি, শী লাভস মি নট......... পর্ব- ১

২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

''বাবু খেতে আয়''
এই নিয়ে ১৭ বার হলো রাতের খাবার খেতে ডাকছেন মা। অন্যান্য দিন কখনো এমন হয় না।
আহসান খুব শান্ত একটা ছেলে, কখনো কোনো উচ্চবাচ্য করে না। কখনো তাকে এভাবে বারবার ডাকতে হয় না। এক ডাকেই চলে আসে। আজ হঠাৎ কি হলো ছেলেটার!


আহসান ছোটবেলা থেকেই খুব চুপচাপ, শান্ত-শিষ্ট একটা ছেলে। জীবনের সবচেয়ে স্বর্নালি সময়টাই কেঁটেছে তার ক্যাডেট কলেজের কড়া শাষন আর নিয়ম-কানুনের মাঝে। তার শৈশব জুড়ে আছে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ।

একজন ক্যাডেট হিসেবে যতটুকু গর্ব, অহংকার নিজের মাঝে থাকা দরকার, সেটার অর্ধেকও তার মাঝে নেই। সে গর্ব বা অহংকারের জায়গাটা দখল করে রেখেছে বহুদিনের জমে থাকা পাহাড় সমান অভিমান।

যে সময়ে তার পরিবারের সাথে হেসে খেলে থাকার কথা, সে সময় তার থাকতে হয়েছে ক্যাডেট কলেজের হোস্টেলে। যে সময়ে মার হাতে ভাত খাবার কথা, মার সাথে আহ্লাদ করার কথা, সে সময় ডাইনিং হলে বসে বৃটিশ জেন্টেল ম্যান এর ভাব ধরে তাকে ফর্ক আর নাইফ নিয়ে খাবারের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে। যখন তার সমবয়সী অন্য ছেলেরা হৈহৈ করে মাঠে ফুটবল খেলে বেড়ায়, তখন তাকে প্রখর রোদে প্যারেড করতে হয়েছে। আর দশটা ছেলের জ্বর হলে তাদের মা রাতজেগে তাদের মাথার কাছে বসে থাকে, আর ক্যাডেট আহসান অসুস্থ হলে কাউকে কিছু না বলে নিরবে চুপচাপ সহ্য করে যেত। ছোট ছোট ভুলের জন্য তাকে পেতে হয়েছে বিশাল বিশাল শাস্তি......


এরকম অজস্র কারনে একটু একটু করে তার ভিতর জন্ম নেয় অভিমানের বিশাল এক হিমালয়......

এ নিয়ে কখনো সে কাউকে কিছু বলে নি, কোনো প্রতিবাদ করেনি। নিজের কষ্ট নিজের মাঝেই চেপে রেখেছে সবসময়।

সে যখন ক্যাডেট কলেজে ছিল তখন প্রায়ই ভীষন অভিমান করে ভাবতো, কলেজ পাসিং আউট এর পর সে অনেক দূরে কোথাও চলে যাবে সবাইকে ছেড়ে। সে আর ঘরে ফিরবে না, যে ঘর তাকে পর করে পাঠিয়ে দিয়েছিল এই বন্দিশালায় সেখানে সে আর ফিরবে না।
এই ভাবনা থেকেই সে স্বপ্ন দেখতো মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। স্বপ্ন দেখতো, জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে বাইনোকুলার দিয়ে বহুদূরের কোনো দ্বীপ দেখার.........

ভাগ্য এখানেও তার সাথে দাবা খেললো। তার মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরন হলো না।
এইচএসি শেষে বিভিন্ন ভার্সিটিতে এডমিশন টেস্ট দিলো। মেরিনেও পরীক্ষা দিলো। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় সে টিকে গেলো, প্রথম পঞ্চাশজনের মধ্যেই সে ছিল। অথচ BMA এর পরীক্ষায় সে টিকলো না।
তারপর ভেবেছিল ঢাকার বাইরে কোনো পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে সে ভর্তি হবে। সেখানেও বাঁধা, তার বাবার কড়া নিষেধ। যেহেতু বুয়েটে চান্স পেয়েছে সেহেতু সেখানেই তাকে পড়তে হবে। এরপর ভর্তি হয়ে গেলো বুয়েটের EEE তে। তার আর ঘর ছেড়ে যাওয়া হলো না........

ভার্সিটির অনেক মেয়েই তাকে পছন্দ করে, এককথায় তার জন্য পাগল! সে ওসব ব্যাপারে কখনো কোনো পাত্তাই দেয় না। সে চুপচাপ তার মত থাকে, তার নিজের জগৎ নিয়ে........


আজ দুপুরের ছোট্ট একটা ঘটনা যেন তার সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে.........

ক্লাস শেষে গিয়েছিলো ঢাকা ভার্সিটিতে কার্জন হলে, এক বন্ধুর পেনড্রাইভ দেয়ার জন্য। মাঠে বসে কয়েক বন্ধু মিলে গল্প করছিল তারা। হঠাৎ ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের নিচতলায় দাঁড়ানো একটা মেয়ের দিকে চোখ আটকে গেল তার। মেয়েটা সুন্দর তবে খুব একেবারে আহামরি সুন্দর না। কিন্তু এর মাঝে অদ্ভুত কিছু হয়তো আছে, যার কারনে চোখ ফেরানো যায় না। হঠাৎ চোখ পড়লে মনে হবে মেয়েটা বোধহয় ফরেনার, তবে কিছুক্ষন ভালো করে দেখলে বোঝা যাবে এর মাঝে বাঙালিয়ানা আছে। মেয়েটা ফরেনারদের মত ফর্সা, চুল সোনালি, তবে চেহারা অনেকটা বাঙালি মেয়েদের মত। তবে ভার্সিটির আর দশটা মেয়ের মত হয়তো সে রোজ রোজ একইরকম গেটআপে আসে না, মেয়েটাকে দেখে তাই মনে হলো আহসানের। মেয়েটা তখন একটা সাদা রঙের স্কার্ট আর আকাশী রঙের টপস পড়া ছিল, গলায় একটা কালারফুল স্কার্ফ ঝুলছিল। মেয়েটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খুব মনযোগ সহকারে খাতায় কি যেন লিখে যাচ্ছিল।
তার পাশ দিয়ে অনেক ছেলেই হেঁটে যাচ্ছিল। কেউ কেউ তাকে দেখে টিজ করছিল, আজেবাজে কমেন্ট পাস করছিল। সেদিকে মেয়েটা কোনো পাত্তাই দিচ্ছিল না, সে তার কাজ করে যাচ্ছিল। অন্য কোনো মেয়ে হলে নির্ঘাত মন খারাপ করে ওখান থেকে সরে পড়তো অথবা কাঁদতে কাঁদতে চলে যেত।
এই ব্যাপারটা দেখে আহসানের খুব ভালো লাগলো। কেন যেন মেয়েটাকেও তার বেশ ভালো লেগে গেলো.........

সেই দুপুর থেকে মেয়েটার চেহারা তার চোখের সামনে ভাসছে। কোনভাবেই মেয়েটার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা যাচ্ছে না, আহসান আসলে ঝেড়ে ফেলতে চাচ্ছেও না। মেয়েটার কথা ভাবতে তার বেশ ভালো লাগছে। তার মাঝে অন্যরকম এক আনন্দ, অন্যরকম এক ভালোলাগার সৃষ্টি হয়েছে যা আগে কখনো হয়নি।

তার মনে হচ্ছে এই মেয়েটার মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে দেয়া যায়, এই মেয়েটার মাঝে হারিয়ে যাওয়া যায়। এই মেয়েটার হাত ধরে যেখানে খুশি সেখানে হারিয়ে যাওয়া যায়.........


(চলবে...) :)
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×