somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বজ্রধ্বনি সশস্ত্র গোঁফ শূন্যে উঠছে তেড়ে;

২০ শে অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবির প্রস্তুতিকাল কতদিন? কবির কাছে তার সারাটা জীবনই তার প্রস্তুতির সময়। কিন্তু পাঠকের কাছে? পাঠকেরও তো নিজস্ব বিচার বিবেচনা রয়েছে। আমাদের চারপাশে অনেক কবির উজ্জ্বল উপস্থিতি। কবিতা পড়তে পড়তেই তো আমরা বুঝি কে কে তার প্রস্তুতির সময়টা পেরিয়ে এসেছে। নব্বই দশকের অধিকাংশ কবিই যখন প্রস্তুতিকাল অতিক্রম করছে তখন রহমান হেনরী আমাদের উপহার দিয়েছে তার প্রস্তুতিঅতিক্রান্ত এক উজ্জ্বল কবিতাবই। সেই বইটির নাম ‘সার্কাস মুখরিত গ্রাম’। এরপর বেরিয়েছে তার আরো ৪টি কবিতাবই। ‘খুনঝরা নদী’, 'তোমাকে বাসনা করি’, ‘গোত্রভূমিকাহীন’ ও ‘ত্রাণসুন্দরী’। প্রতিটি বইয়েই তিনি নিজেকে ক্রমশ একজন পরিণত মনষ্কের কবি হিসেবে প্রমান করে চলছেন। তার আর সমসাময়িকেরা যখন একটি ভাষা নির্মাণের জন্য হয়রান হয়ে কবিতার ভাষা খুঁজে বেড়াচ্ছেন তখন তিনি আয়ত্ত্ব করে বসে আছেন এক আশ্চর্য, জাদুকরী কবিভাষা। তীর্যক, ব্যাঙ্গাত্মক, সাবলীল এবং একইসঙ্গে তা রোম্যান্টিক এক কাব্যভাষা। উদাহরণ দিচ্ছি-

প্রশ্ন তো ওঠেনি বেজে- ঠাকুর ঘরে কে রে!
বজ্রধ্বনি সশস্ত্র গোঁফ শূন্যে উঠছে তেড়ে;

কলাও নেই, ফলারও নেই, ছেলে ঘুর ঘুর করে

ঝড় ওঠেনি, বাতাসও নয়,- কেন্দ্রস্থলে নড়ে
কেন পাটের ক্ষেত?

ভোলেনাথের কৃপায় কাঁপছে বাঁশবাগানে বেত!
(ঠাকুরঘর/ ত্রাণসুন্দরী)


রহমান হেনরীর কাব্যভাষা যেমনী স্বাদু তেমনি তার কবিতা পরিণতবোধের জাতকও। সমকালীন বাংলা কবিতায় সবচেয়ে বড় প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যে, অধিকাংশ কবিই তার কবিতায় বোধের জায়গাটি স্পষ্ট করতে পারে না। ফলশ্রুতিতে একধরণের রহস্যময় ধোয়াশাপূর্ণ কাব্যভাষার সাহায্যে পাঠকদের সাথে চাতুর্যের মাধ্যমে কমুনিকেট করার চেষ্টা করেন। হেনরী তা করেননি। ফলে তার ভাষা হয়ে উঠেছে সরল ও সাবলীল এবং তার বোধের জায়গাটি পাঠককে নাড়া দিতে সক্ষম হযেছে। ত্রাণসুন্দরী গ্রন্থের ‘গার্হস্থ্য গীতিকা’, ‘সবুজ বেষ্টনী’, ‘কাশবতী কন্যা’, ‘প্রতি পৃথিবীর গান’ ‘মৈত্রী ট্রেন’, ‘তোমার শব্দার্থগুলি’ প্রভৃতি কবিতায় কবি রহমান হেনরী তার বোধের জায়গাটি সম্পর্কে নিজে যেমন সচেতন তেমনি পাঠককেও সচেতন করতে পেরেছেন বলেই মনে হয়। ফলে পাঠক সহজেই তার কবিতার সাথে কমুনিকেট করতে পারে।

সমকালীন বাংলা কবিতার প্রাণ হচ্ছে লিরিক সজলতা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে খুব কম কবির হাতেই সেই লিরিক যথার্থভাবে ফুটতে পেরেছে। আমাদের কবি রহমান হেনরী এই বইয়ে কয়েকটি লিরিক ফুটিয়ে তুলেছেন অসাধারণভাবে। একটি তুলে ধরছি-
উল্টে তাকায় চোখের আড়ে আড়ে
একটি মেয়ে; হৃদয়ে টান মারে-
ধরতে গেলেই
দৌড়ে পালায়
স্তনের অহংকারে!

(অহংকার/ ত্রাণসুন্দরী)

তবে এই লিরিকের বিপরীতে ‘কবি-পরম্পরা’ কবিতায় লিরিক সাজাতে গিয়ে কবিতাকে তিনি যেভাবে হালকা করে ছেড়েছেন তাতে করে সিরিয়াস পাঠক একটু হোঁচট খায় বৈকি।

আগেই বলেছি কবি রহমান হেনরী ক্রমশ পরিণত মনষ্কের এক কবিতে রূপান্তরিত হচ্ছেন। আর তার উজ্জ্বল উদাহরণ গ্রন্থের শেষ কবিতাটি ‘তোমাদের দুঃখের সমান’। এখানে কবি বোধিপ্রাপ্ত বৌদ্ধের মত, রবীন্দ্রনাথের স্নিগ্ধতায়, স্থির অচঞ্চল হয়ে নিজের ভাবনাগুলোকে এক রোম্যান্টিক বেদনায় প্রকাশ করেছেন। শেষ স্তবকে তিনি বলেন-

সেই গল্প- সেই আলো- গান
কোনওদিনও না পেয়ে সম্মান
তবু সুখি, তবু মুগ্ধপ্রাণ, অম্লান...
ঊকেয়া প্রেমের সুদেমূলে- একদিন-
তোমাদেরই দুঃখের সমান!

জয়তু কবিতা। জয় রহমান হেনরীর। কবিতার।

ত্রাণসুন্দরী : রহমান হেনরী; প্রকাশক : ভাষাচিত্র; প্রচ্ছদ : অভিজিৎ চৌধুরী; প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০০৯; পৃষ্ঠাসংখ্যা : ৪৮ মূল্য : ৬০ টাকা।



সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৫:৪৯
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×