উগ্র ইসলামী জোট
জামায়াত হিযবুত ও জঙ্গী শীর্ষ নেতাদের গুলশানে গোপন বৈঠকে সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত
গাফফার খান চৌদুরী ॥ ভবিষ্যতে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত দলগুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হবে_ এমন আশ্বাসের মুখে উগ্র মৌলবাদী দল ও জঙ্গী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে 'ইসলামী ঐক্য আন্দোলন' গড়ে তুলেছে জামায়াতে ইসলামী। নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদী গ্রেফতার হওয়ার তিনদিন পর গুলশানের একটি অভিজাত বাড়িতে জামায়াত-শিবির-জঙ্গী ও ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নতুন এই জোট গঠন করা হয়। বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। নতুন এই জোট সরকার উৎখাতে সব ধরনের কার্যক্রম চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে জানিয়ে এ ব্যাপারে বিএনপির সহযোগিতা চাওয়া হয়। হিযবুত তাহরীর দেশে ইসলামী শাসন কায়েম করার কথা বললেও দলটির শীর্ষ নেতাদের পারিবারিক চালচলন পশ্চিমা ধাঁচের। দলটির থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসাবে পরিচিত অধ্যাপক গোলাম মাওলার পরিবারে আরবি তো দূরের কথা বাংলায় কথোপকথন হয় না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ইংরেজীতে কথোপকথন শুরু হয়। হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশ জড়িত। জড়িতদের মধ্যে ৩ জনের নাম প্রকাশ করেছে অধ্যাপক মাওলা।
নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ভবিষ্যতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ৰমতায় গেলে হিযবুত তাহরীরের রাজনীতি এদেশে বৈধ করে দেয়া হবে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ কামারুজ্জামানের এমন আশ্বাসের পর হিযবুত তাহ্রীরের প্রতিনিধি পাঠানো হয় গোপন বৈঠকে। পুরো বৈঠক সমন্বয় করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ কামারুজ্জামান। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় সরকার উৎখাতে সব রকমের চেষ্টা চালানো হবে। এটি জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী শাসন কায়েমের পক্ষের দলগুলোর জন্য অস্তিত্বের লড়াই। এ লড়াইয়ে টিকতে না পারলে সোজা আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যেতে হবে। ভবিষ্যতে বাঁচার আর কোন পথ থাকবে না। প্রয়োজনে গোটা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে হবে। সরকার উৎখাতে প্রয়োজনে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্দোলনে বিএনপি পাশে না থাকলেও অসুবিধা নেই। শুধু কৌশলে বিএনপির কাছ থেকে সরকারবিরোধী নানা কর্মসূচী আদায় করে নিতে হবে। এমন পরিকল্পনা থেকেই জামায়াতে সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে 'ইসলামী ঐক্য আন্দোলন' নামে জোট গঠন করা হয়।
এরপর থেকেই আটঘাট বেঁধে জামায়াত-শিবিরের পাশাপাশি হিযবুত তাহ্রীর সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে রয়েছে। এজন্য চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবিবের পাশাপাশি হিযবুত তাহ্রীরের জঙ্গীরা ঝটিকা মিছিল করে। পুলিশ প্রায় ২শ' জনকে গ্রেফতার করে। চট্টগ্রামে সুবিধা করতে না পেরে জঙ্গীরা ঢাকায় আসতে থাকে। বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ জঙ্গীই ঢাকামুখী। শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামে হিযবুত তাহ্রীরের পক্ষে জঙ্গী মিছিলের নেতৃত্বদানকারী ৪জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের ভবিষ্যত রোডম্যাপ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদিকে বিডিআরে স্মরণকালের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের পর হিযবুত তাহরীর ও জামায়াত পরিকল্পিতভাবে মাঠে সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতে লিফলেট বিতরণ করেছিল। তবে মাঠ পর্যায়ে লিফলেট বিতরণের দায়িত্ব পালন করেছিল হিযবুত তাহরীর। হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশ সরাসরি জড়িত। জড়িতদের মধ্যে জুলফিকার, সালেহ ও ফিরোজ নামে তিন প্রবাসী হিযবুত তাহরীরকে নানাভাবে সহায়তা করে আসছে।
প্রসঙ্গত, গত ২০ এপ্রিল দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর দিন ২১ এপ্রিল জঙ্গী সংগঠনটির যুগ্ম সমন্বয়কারী কাজী মোরশেদুল আলমকে গ্রেফতার করে র্যাব। সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল দলটির প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের ডিসি মাহবুবর রহমান ও এডিসি মোল্লা নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, নিষিদ্ধ আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশে ইসলামী শাসন কায়েম করার পক্ষে। অথচ দলটির শীর্ষ নেতাদের চালচলন পশ্চিমা ধাঁচের। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলার বাড়ি কুমিলস্না সদরের দক্ষিণ পাড়ায়। তিনি ১৯৭৩ সালে কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে এসএসসিতে কুমিল্লা বোর্ডে মেধা তালিকায় প্রথম হন। ১৯৭৫ সালে এইচএসসিতেও চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে সম্মান ও এমকম শ্রেণীতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৩ সালে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। এরপর কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে ১৯৮৭ সালে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল ব্রেডফোর্ড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। সেখানে পড়াশুনাকালীন সময়ে জড়িয়ে পড়েন আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে। ১৯৮৭ সালে জেনিফার আহমেদ নামে মেয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে গোয়েন্দাদের অস্বাভাবিক নজরদারির কারণে ১৯৯৪ সালে তিনি দেশে ফিরে পুরনো কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ২০০২ সালে প্রচার শুরু করে ২০০৩ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশে দলটির কার্যকম চালু করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। মার্চ মাস থেকে দলটি বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে নামে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর সরকার দলটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অধ্যাপক মাওলার স্ত্রী ধানমণ্ডি লেকহেড গ্রামার নামের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রধান শিৰিকা ছিলেন। তাঁর কোন ছেলে সন্তান নেই। ৪ মেয়ে ঢাকায় ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশুনা করেছে। তাঁর স্ত্রী ও চার মেয়ে লন্ডনের নাগরিক। তাদের বাড়িতে আরবি তো দূরে থাক, বাংলা ভাষার ব্যবহার হয় না। মেয়েরা সকালে ঘুম থেকে উঠে গুডমর্নিং বলে। অথচ দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের চেষ্টা করছে অধ্যাপক মাওলা। এ সবই বিদেশ থেকে আসা এবং জামায়াতসহ এদেশীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাওয়া টাকা আত্মসাত করার অপকৌশল।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




