শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার হলেও জঙ্গী তৎপরতা থেমে নেই
মিছিল থেকে তিন হিযবুত গ্রেফতার
গাফফার খান চৌধুরী ॥ জামায়াতে ইসলামীসহ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি ও হিযবুত তাহ্রীরের শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার হলেও ঢাকায় জঙ্গীদের তৎপরতা থেমে নেই। সারাদেশের জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীরা ঢাকায় একত্রিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। তারা ঢাকায় ঝটিকা জঙ্গী মিছিল বের করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা সম্পর্কে আগাম ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করছে। এমনই জঙ্গী মিছিল থেকে শনিবার আনত্মর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের তিন জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমানকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, সাইদুর রহমান ও জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ড ভাগ্নে শহীদকে বিভিন্ন সময় পরস্পরের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জঙ্গীরা ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পূর্ব প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে।
শনিবার বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আচমকা ১০/১২ যুবক জঙ্গী মিছিল বের করে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই রাসত্মাঘাট বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ পথচারী হতচকিত অবস্থায় দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন। খবর পেয়ে দ্রম্নত পুলিশ ঘটনাস্থলে পেঁৗছলে মিছিলকারীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ফজলে হাদি (২৮), রিপন মিয়া (২২) ও আহসান মিয়া (৩০) তিন যুবককে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশবিরোধী বক্তব্যসংবলিত বেশ কয়েকটি লিফলেট উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশের ব্যাপক জেরার মুখে গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সক্রিয় জঙ্গী বলে স্বীকার করেছে। শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল করিম জানান, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে সরকার ও দেশবিরোধী বক্তব্যসংবলিত একটি ব্যানারও উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সক্রিয় জঙ্গী। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে প্রেসক্লাবে একত্রিত হয়েছিল। গ্রেফতারকৃতদের কোন ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জামায়াতের সঙ্গে দেশী-বিদেশী জঙ্গী সংগঠনগুলোর যোগাযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দেশ থেকে জঙ্গীবাদ দূর করতে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনী।
তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১৯ মে রাত ৩টার দিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানাধীন গ্রীন রোড়ের ১৪০ নম্বর ৫তলা বাড়ির ৪তলা থেকে নিষিদ্ধ আনত্মর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের মুখপাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিৰক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে সন্ত্রাস দমন আইনে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কয়েক দফায় রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডে বাংলাদেশের জঙ্গীবাদ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন তিনি।
জঙ্গীবাদ নিমর্ূলে চলমান অভিযানের ধারাবাহিকতায় গত ২৩ মে রাতে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন ধনিয়া এলাকা থেকে জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে নজরম্নল ওরফে শিবলুকে গ্রেফতার করে পুলিশের একটি বিশেষ স্কোয়াড। শিবলুর তথ্য মতে, ২৫ মে নারায়ণগঞ্জের পাইনাদী এলাকা থেকে জেএমবির শামরিক শাখার সমন্বয়ক আমির হোসেন ওরফে শরীফ ও এহসার সদস্য নূর হোসেন ওরফে সবুজকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতদের তথ্যমতে, একই দিন জেএমবির এহসার সদস্য আব্দুলাহর রাজধানীর পূর্ব ধনিয়ার বাসা থেকে তৃতীয় স্ত্রী নাইমা আক্তার ও সহচর আব্দুলস্নাহেল কাফীসহ জেএমবি প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমান জাফরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে জেএমবির ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ৯ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে ওই বাসা থেকে ৯টি হাতে তৈরি শক্তিশালী গ্রেনেডসহ আত্মঘাতী হামলা চালানোর তাজা গ্রেনেড, বিস্ফোরক, কোমরে গ্রেনেড রাখার বিশেষ বেল্ট, একটি বিদেশী পিসত্মল, দু'টি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন, জেএমবির সামরিক সদস্যদের তৈরি কিছু গুলি, গুলি তৈরির সরঞ্জাম, লেদ মেশিন, গ্রেনেড রাখার বিশেষ বেল্ট তৈরির উপকরণসহ বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও জেএমবির আমির মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান রিমান্ডে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। সাইদুর রহমান গোয়েন্দাদের জানায়, এদেশে জঙ্গীবাদের কারিগর জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের সঙ্গে জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহ্রীরসহ বহু দেশী-বিদেশী জঙ্গী সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে। পরে হিযবুত তাহ্রীরের প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিৰক অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দারা।
এসব তথ্য যাচাই-বাছাই ও বেশ ক'টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ার কারণে গত ২৯ জুন জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ গত ১৩ জুলাই জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারম্নজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোলস্নাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে তাদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইসলামপন্থী সব দলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর যোগাযোগ থাকার বিষয়টি স্বীকৃত। বিভিন্ন সময় গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য সেটিই প্রমাণ করে। জঙ্গীবাদের মূল শেকড় জামায়াতে নিহিত। মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদেও সে বিষয়টি স্পষ্ট। জামায়াত ও জঙ্গীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এ জন্য বড় ধরনের শোডাউন দিতে ঢাকামুখী করা হচ্ছে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের। ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ জন্য সরকারের শক্তিমত্তা ও তৎপরতা সম্পর্কে ধারণা পেতে চেষ্টা করছে জঙ্গী সংগঠনগুলো। তারই অংশ হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গীরা মাঝে মধ্যেই জঙ্গী মিছিল বের করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা যাচাই করছে। হঠাৎ মিছিল করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যসত্ম রেখে অন্যদিকে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। এটি জঙ্গীদের নয়া কৌশল। তবে এ কৌশল সহসাই কাজে লাগাবে না জঙ্গীরা। সুযোগ বুঝে হামলা করার পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




