ভাংচুর ও লুটপাট পূর্ব পরিকল্পিত, ভিডিও ফুটেজ দেখে ১২ ব্যক্তি চিহ্নিত
মহাখালী, গুলশান, বনানী
গাফফার খান চৌধুরী ॥ দাবি আদায়ের নামে গত শুক্রবার মহাখালী, গুলশান, বনানী ও তেজগাঁওসহ আশপাশের এলাকায় ভাংচুর লুটপাটের ঘটনা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারকে চাপে রেখে গার্মেন্টস খাতকে অন্য দেশে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দোসররা। মোটা অঙ্কের টাকা পেয়ে তথাকথিত কতিপয় শ্রমিক নেতাও এর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। মালিকদের কাছ থেকে চাহিদামতো মোটা টাকা না পেয়ে পোশাক শিল্পে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির ইন্ধনও যোগাচ্ছেন এসব শ্রমিক নেতা। নির্বিচারে ভাংচুর লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হচ্ছে। হামলা ভাংচুরের ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও গুলশান থানায় পৃথক ৪টি মামলা হয়েছে। পোশাক শিল্প অচল করে দেয়ার ইন্ধনদাতা হিসাবে প্রাথমিকভাবে ১২ জনকে শনাক্ত করেছে গোয়েন্দারা। এছাড়াও ২০ শ্রমিক নেতার বিষয়ে তদনত্ম চলছে। ইতোমধ্যে এক ইন্ধনদাতা গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পোশাক শিল্পে পরিকল্পিতভাবে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
এ পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত পাকিসত্মানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও এ দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কতিপয় সদস্য। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে নানাভাবে চেষ্টা করছে স্বাধীনতা বিরোধীরা। নির্মমতা বুঝিয়ে সরকারকে ভড়কে দিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা ফারম্নক হোসেনকে হত্যার পর তার লাশ ম্যানহোলে ফেলে দিয়েছিল জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীরা। এরপর শুষ্ক মৌসুমে পানি, বিদু্যত ও গ্যাসের দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছিল। এজন্য রাজশাহী ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনা হয়েছিল সাংগঠনিক কাজে দৰ জামায়াত-শিবিরের ৫ শতাধিক চৌকস নেতাকর্মীকে। তারা গুলশান, বারিধারা, কুড়িল, বিশ্বরোড, মহাখালী, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, বাড্ডাসহ আশপাশের এলাকায় গোপনে ব্যাপক জনসংযোগ করে। সরকারকে চাপে রাখতে এলাকাবাসীকে পানি, বিদু্যত ও গ্যাসের দাবিতে রাসত্মায় নামানোর চেষ্টাও করেছিল। এজন্য মোটা অঙ্কের টাকাও খরচ করে। পানি, বিদু্যত ও গ্যাস সেক্টরে থাকা স্বাধীনতাবিরোধীরা ইচ্ছাকৃতভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তীতে পানির সংযোগ লাইনের চাবি ঘুরিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিকারী ১২ জনকে হাতেনাতে শনাক্ত করা হয়েছিল। সরকার বিরোধী আন্দোলনের মাঠ তৈরি করে দিতে মহাখালী টিবি গেটের কাছে ব্যাপক ভাংচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছিল জামায়াত-শিবির কর্মীরা। সর্বশেষ গত ২৭ জুন বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা ছিল। এজন্য মোটা টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল বসত্মিবাসীদের। হরতালে বসত্মিবাসীদের লাশ ফেলে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বিএনপির কাছ থেকে সরকারবিরোধী কঠোর কর্মসূচী আদায়ের চেষ্টা করেছিল জামায়াত-শিবির। পুরো পরিকল্পনা বাসত্মবায়নের দায়িত্বে ছিল জামায়াত-শিবির, জেএমবি ও নিষিদ্ধ আনত্মর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের জঙ্গীরা। এজন্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ও নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির আমির মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফরকে আগাম ঢাকায় আনা হয়েছিল। গত ২৪ মে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ও নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমান জাফরসহ জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে নজরম্নল ওরফে শিবলু, সামরিক শাখার সমন্বয়ক আমির হোসেন ওরফে শরীফ, এহসার সদস্য নূর হোসেন ওরফে সবুজ ও নাইমা নামে জেএমবির এক মহিলা সদস্য গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার হয়। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ হাতে তৈরি শক্তিশালী গ্রেনেড, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, গ্রেনেড তৈরির বিস্ফোরক, আত্মঘাতী হামলা চালানোর নানা সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়।
সাইদুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তার কাছে এক হাজার হাতে তৈরি শক্তিশালী গ্রেনেড ছিল। সে পরিকল্পনাও ভেসত্মে যায়। পরবর্তীতে হরতালের আগের রাতে আগুন ধরিয়ে জীবনত্ম পুড়িয়ে মেরে বিএনপির কাছ থেকে সরকারবিরোধী কঠোর কর্মসূচী আদায়ের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। বর্তমানে গার্মেন্টস সেক্টরে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে তারা।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সরকার নির্ধারিত ৩ হাজার টাকার পরিবর্তে নূ্যনতম বেতন মাসিক ৫ হাজার টাকার দাবি দাওয়াকে ইসু্য করে যে আন্দোলন চলছে তাই পুঁজি করে সরকারকে চাপে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে যুু্দ্ধাপরাধীদের দোসররা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার গার্মেন্টস রম্নটিন মাফিক বন্ধ রাখা হয়। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন গার্মেন্টসগুলো রম্নটিন অনুযায়ী প্রতি রবিবার বন্ধ থাকে। মিরপুর এলাকার গার্মেন্টসগুলো রম্নটিন মাফিক প্রতি বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে খবর জানানো হয়, শুক্রবার মিরপুর এলাকায় ব্যাপক বিৰোভ করতে পারে গার্মেন্টস কর্মীরা। এজন্য সকাল থেকেই মিরপুর এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রাজধানীর অন্যান্য জায়গায় স্বাভাবিক নিরাপত্তা থাকে। ঘটে ঠিক তার উল্টো। শুক্রবার সকালে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কর্মরত প্রায় লাখখানেক শ্রমিকের মধ্যে মাত্র প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক একত্রিত হয় মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। বাকিরা শ্রমিক নেতাদের নির্দেশ অমান্য করে নিজ নিজ বাসস্থান বা নিরাপদ জায়গায় চলে যায়। অনেক শ্রমিক সুযোগ বুঝে কারখানায় ঢুকে কাজ করতে থাকে। এরপর আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে সোজা মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে গিয়ে রাসত্মায় যানবাহনে ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ করে। এছাড়া আশপাশের বাসাবাড়ি, সরকারী-বেসরকারী ভবনে ব্যাপক ভাংচুর করে মূল্যবান মালামাল লুটপাট করে। এ সময় অনত্মত ২০টি ভবনের ব্যাপক ৰতিসাধন করে তারা। এরপর গুলশান সড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস ও অনত্মত ১০টি দোকানপাট ভাংচুর করে তাতে লুটপাট চালায়। অথচ ওই এলাকায় কমপৰে ৩০টি গার্মেন্টস রয়েছে। এসব গার্মেন্টসের কোন শ্রমিক দাঙ্গাহাঙ্গামায় ছিল না। তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগও দেয়নি।
মহাখালীতে থাকা আন্দোলনকারীদের একটি গ্রম্নপ নাবিস্কো-গুলশান লিংক রোডে অবস্থান নিয়ে রাসত্মাঘাট বন্ধ করে যানবাহনে ভাংচুর চালায়। পরে তারা গুলশান লিংক রোডের ২৩৮ নম্বর নজরম্নল ইসলাম মজুমদারের মালিকানাধীন নাসা গ্রম্নপের দু'তলা হেড অফিসের সামনের পুরো কাঁচঘেরা দেয়াল, দরজা-জানালা, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, সিকিউরিটি রম্নম, অফিসের সামনে পার্ক করে রাখা ৫টি গাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। পরে তারা অফিসের মূল্যবান মালামাল লুটপাট করে। এরপর শুরম্ন হয় আশপাশের সরকারী-বেসরকারী ভবনগুলোর ওপর হামলা। ইটপাটকেল ছুড়ে প্রতিটি ভবনের কাঁচের তৈরি দরজা-জানালা থেকে শুরম্ন করে সব কিছু ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় মহাখালী-গুলশান লিংক রোডের দু'পাশে থাকা অনত্মত ৭০/৮০টি ভবনে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায় বিৰোভকারীরা। অপর একটি গ্রম্নপ বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি টিপু মুন্সীর মালিকানাধীন শেফাল গার্মেন্টসে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এককথায় পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হামলার সময় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে। হামলার সময় বেশ কিছু জামায়াত-শিবির ও নিষিদ্ধ আনত্মর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের জঙ্গীরা উপস্থিত ছিল। তারা আন্দোলনকারী গার্মেন্টস শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে হামলা, ভাংচুর, অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটিয়ে কেটে পড়ে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রসত্ম করতেই তারা এ ইসু্যকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। টার্গেট বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটিয়ে সরকারকে বেকায়দায় রাখা। পাশাপাশি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গার্মেন্টস খাতকে অন্য দেশে স্থানানত্মরের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দোসররা। এছাড়া কতিপয় শ্রমিক নেতা শ্রমিককে পূজি করে ব্যবসা করছে। তারা গার্মেন্টস মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে থাকে। চাঁদা না দিলে সুযোগ বুঝে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের সময় শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে চাহিদামতো টাকা দিতে রাজি না হওয়া গার্মেন্টস মালিকদের মালিকানাধীন কারাখানায় ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করায়। গার্মেন্টস সেক্টরে অরাজক পরিস্থিতির ইন্ধনদাতা হিসাবে মন্টু ঘোষ নামে এক শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। অন্যদিকে ২০ শ্রমিক নেতার বিষয়ে তদনত্ম চলছে। তদনত্ম চলা শ্রমিক নেতাদের মধ্যে অনেকেই ২৫/৩০বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এসব নেতা বিদেশী কোন এজেন্ট বা যুদ্ধাপরাধীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা পেয়ে গার্মেন্টস সেক্টরে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব নেতার অনেকেই বাসার গৃহকর্মীর নূ্যনতম মাসিক বেতনও ঠিকমতো পরিশোধ করেন না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




