মৃত্যুবিলাস- মৃত্যু কিংবা ভালবাসার গল্প
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
দেহটা সাদা...কেমন জানি ফ্যাকাশে রঙয়ের।চোখ গুলো টানা টানা,তাকিয়ে আছে,যেন সহস্রকাল ধরে এক নাগাড়ে তাকিয়ে আছে শূন্যদৃষ্টিতে।অসম্ভব সুন্দর মেয়েটা,ফুটফুটে,পরনে লাল-সাদা শাড়ী।
এত সুন্দর মেয়ে কখনও দেখেছি কিনা মনে নেই।সৃষ্টির সবগুলো সৌন্দর্যের মাঝে ও বোধহয় অন্যতম।
আমি হঠাৎ থমকে গেছি এমন কারো সামনে পড়ে।এত কিছু দেখলাম প্রায় ১০-১২ সেকেন্ডের মধ্যে।বাস্তবে ফিরে এলাম।কি করছি আমি! মেয়েটা পড়ে আছে!দৌড়ে কাছে গেলাম।পালস দেখা দরকার। ছোব কি ছোব না সংশয় নিয়ে শেষে ছুয়ে ফেললাম হাতটা।পালস নেই!! নাকের সামনে হাত দিলাম।নিঃশ্বাস নিচ্ছে না। মারা গেছে মেয়েটা,বেশিক্ষন হয়নি। ঘাবড়ে গেলাম।এই নির্জন জায়গায় একটা মেয়ের লাশ,আশে পাশে কেউ নেই! প্রথম মনে এল পুলিশের কথা।পুলিশ কে জানানো দরকার।পকেট থেকে সেলফোন টা বের করলাম।একি!! নেটওয়ার্ক নেই কেন?দুটো সীম,একটাতে ও নেই।কিন্তু আমি তো সভ্যতা থেকে বেশি দূরে না!!এখন কি করা যায়?আচ্ছা,আশে পাশে তো মানুষ থাকতে পারে! চিৎকার দিয়ে উঠলাম,
"কেউ আছেন???""কেউ আছেন??"
দূরের পাহাড়ে প্রতিধ্বনি দিয়ে উঠল আমার চিতকার।কিন্তু কেউ সাড়া দিল না।ভাল বিপদে পড়লাম দেখছি!ও কে ফেলে চলে যাব?গেলে ই বা কি?কেউ তো জানবে না।উটকো বিপদ থেকে বাঁচা যাবে।
কিন্তু মনটা সায় দিল না।একটা লাশ চোখের সামনে দেখে ও এর সৎকার এর ব্যবস্থা না করে চলে যাব? এতক্ষন মনটা প্রশ্নটা চাপা দিয়ে রেখেছিল এবার করল,মেয়েটা মারা গেল কিভাবে??এরকম বয়সে তো তার মরার কথা না! তার মানে!! কেউ ওকে মেরেছে আর মেরে ফেলে চলে গিয়েছে।
এতক্ষন আমি ওর পাশে বসে ছিলাম।এবার উঠে দাঁড়ানো দরকার! কাউকে না কাউকে ডাকতে হবে।এদিক সেদিক গেলে
মোবাইলের নেটওয়ার্ক ও ফিরে আসতে পারে।কিংবা কারও সাথে দেখা ও হতে পারে।তাই উঠে দাঁড়ালাম।
দাড়াতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম মেয়েটা আমার হাত টান দিয়ে ধরে রেখেছে! কখন ধরল?কিভাবে সম্ভব?ও তো মৃত!! সারা শরীর হঠাৎ রীরী করে উঠল। একটা লাশ আমার হাত ধরে আছে।হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করলাম।শক্ত মুঠি।এই মেয়ের গায়ে এত শক্তি??!কিভাবে সম্ভব?আমি ঘেমে উঠেছি এরই মধ্যে। অসহায় বোধ করছি।এরকম একটা নির্জন জায়গায় একা আমি একটা লাশের সাথে,লাশটা আমার হাত ধরে আছে।ওর স্পর্শ খুব কমল।কিন্তু ছাড়াতে গেলেই ব্রজ্রমুষ্ঠি হয়ে যাচ্ছে।কি করি এখন?? নাকি মেয়েটা বেচে আছে?কোমায়-টোমায় যায়নি তো??এসব চিন্তা করে মাথায় হাজারথিওরী দাড় করানো চিন্তা করলাম।র্যাশনাল কিছু পেলাম না। "এই,শুনতে পাচ্ছেন আপনি?""হ্যালো??আপনি বেচে আছেন?আমাকে শুনছেন?"কোন আওয়াজ নেই।বুঝলাম বোকার মতন কাজ করেছি।লাশের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি আমি!!আচ্ছা,আমি তো হাল্কা ফ্রাস্ট এইড জানি।মৃত প্রায় ব্যক্তি কে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দিলে বেচে উঠে।তাই করব নাকি??নাহ।মেয়েটা বেচে নাই।করে লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না।এখন কি করব আমি??!!আরেকবার কথা বলার চেষ্টা করলাম।
-এই,শুনতে পাচ্ছেন আপনি?
-তুমি আমাকে কবে থেকে আপনি বলা শুরু করলে??
-আপনি বেচে আছেন!!
-না
-মানে??
-আমি মরে গেছি।
-তাহলে কথা কিভাবে বলছেন?
-আপনি বলা বন্ধ করবে?বাজে শোনাচ্ছে তোমার মুখে।
-ওকেওকে... তুমি কি মৃত?
-হুম
-সত্যি?!
-কি মনে হয়?
-তুমি বেচে আছ।না হলে কথা বলতে না।
-আমি মৃত।একটু আগে মারা গেছি।
-কিভাবে?
-তুমি ভুলে গেছ?
-আমি ভুলে গেছি মানে?আমি কিভাবে জানব?
-নিজের হাতেই তো গলা টিপে ধরলে...
-মানে?কখন?তুমি কে?আমি তোমার গলা টিপতে যাব কেন?
-আমি??হাহাহা...আমি কে তাও ভুলে গেছ?আমি তন্বী।
-তন্বী কে?
-তোমার ভালবাসা।
-এসব তুমি কি বলছ?আমি কি সপ্ন দেখছি?তোমাকে আমি চিনি না।আমার হাত ছাড়।
-এখন আমার শক্তি তোমার চেয়ে অনেক বেশি,আমি মৃত।
-তুমি ভুল করছ,আমি সাকিব,এখানে এসেছি......আচ্ছা আমি এখানে কেন?এটা কোন জাগা?
-হাহাহা,সবই দেখছি ভুলে গেছ।এটা শাল্বপাহাড়।মনে নেই।আজ সকালে কত দোহাই দিয়ে নিয়ে এলে।
-না!!! আমি কাউকে আনিনি।আমি একা এসেছি...উফফ মাথা ব্যাথা করছে খুব।
-এসেই তো হঠাৎ গলা টিপে ধরলে,বললে আমি নাকি তোমার ক্ষতি করেছি।,জানো ওই ছেলেটার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।খালি জ্বালাত।তাই সেদিন রাস্তায় ধরে বকা দিলাম।
তুমি দেখে ভাবলে কি না কি।কাল আমি ভেবেছিলাম তোমাকে বলব।কিন্তু তুমি রেগে গেলে।আজ তো আমায় মেরেই ফেললে!
-না,আমি তোমাকে চিনি না।চিনি না!!তুমি কে??প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও।-ওকে,চলে যাও তুমি।শুধু মনে রেখ,আমি তোমারই ছিলাম,থাকব।
............................................................
............................................................
............................................................
............................................................
............................................................
এভাবে শেষ হতে পারত...কিন্তু আমার ঘুম ভাঙ্গে প্রায় ৩ দিন পর।উঠে দেখলাম আমি আমার রুমে।পাশে অনেক ঔষধ পত্র,ফলমূল।কিন্তু প্রথমেই মনে আসল তন্বীর কথা!! তন্বীকে আমি খুন করেছি রাগের মাথায়!!ও কোথায় এখন!! আমি তো জেলে থাকার কথা।বাসায় কেন??বাইরে বের হতে গেলাম কিন্তু বা বা মা দিল না।ডাক্তার নাকি ৭ দিনের বেডরেস্ট দিয়েছে।প্রায় আর ও চারদিন পর...আমি তন্বীদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।ওর কবর কোথায় জানতে চাই।কাউকে জিজ্ঞেস করতে ভয় লাগছে।অনেকক্ষন কেটে গেল,কেউ বের হল না।হঠাত,ভূত দেখার মতন চমকে উঠলাম!! আমার সামনে তন্বী দাঁড়িয়ে আছে!! আমাকে দেখেনি এখন ও।লুকোতে মন চাইল,ভয় ও পেলাম,ওর ভূত নয়ত আবার!!এর মাঝেই ও আমাকে দেখে ফেলল।আমি স্থির দাঁড়িয়ে আছি।দেখেই সেই ভুবন ভোলানো হাসিটা দিল।আমি কিছু টা বোকার মত হাসি দিলাম।তারপর ও আমাকে ফোন সাইন দেখাল।বুঝলাম কল করতে বলছে...করলাম ভয়ে ভয়ে।
-হ্যালো
-হ্যালো জান।
-তু তুমি বেচে আছ?-বহাল তবিয়তে
-কিভাবে?তুমি না সেদিন মারা গেলে?
-না তো!
-তাহলে ওটা কার লাশ ছিল?
-সেদিন তুমি আমার গলা চেপে ধরেছিলে কিন্তু মারতে পারনি।
-মানে
-মানে,আমি মরিনি...আমি পড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু মারা যাই নি।একটু পর দেখলাম তুমি আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছ।তারপর পাগলের মতন আচরন শুরু করলে।চিৎকার করলে আবার আমার হাত ধরে দেখলে।আমি খুব দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম।তাই পালস পাওনি,কিন্তু মরিনি।মানুষ এত সহজে মরে না।পরে তোমার হাত ধরে ফেলি।ভাবলাম বুঝবে,কিন্তু তুমি আমাকে চিনতেই পারনি।তাই একটু অভিনয় করি তোমার সাথে।কিন্তু তুমি কেমন যেন হয়ে যাও।একটু পর অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাও।পরে কি আর করা তোমার ফোন থেকে তোমার আব্বুকে ফোন দিয়ে তোমার অবস্থার কথা বলি।এরপর তো জানই।
-তন্বী...
-বল
-তুমি পুলিশের কাছে যাও নি কেন?
-বা রে?গেলে খুশি হতে?
-আমার সাজা পাওয়া উচিত।
-আচ্ছা।
-এক্ষুনি যেতে পার।
-না...তোমার সাজা এত সহজ না।
-তবে?
-আরও অনেক ভয়ঙ্ক্রর
-কি সাজা?
-সেটা পরে বলব?আচ্ছা কাল আমার সাথে বের হবে?
-কোথায়?
-তোমাকে একটা জিনিস দেখাব-
-কি?
-আমার কবর।
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।
হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।
ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে
ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি
গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন
জানা আপুর আপডেট
জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।
বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন
বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।
এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন