ঘটনা আজ সকালের। বাসে আসছিলাম মিরপুর থেকে, যাবো মহাখালি। আমার সামনের তিনজনের সিটে জানালার পাশে একজন মহিলা বসলেন, বয়স ৩০-৩২ হবে, দেখতে বেশ সুন্দরী। তার পাশে বসলো এক লোক, তারো বয়স ৩০হবে এবং দেখতে বেশ ভদ্র, আঁতেল টাইপের, চোখে চশমা। তিনজনের সিট হওয়াতে একটু চাপাচাপি। চাপাচাপি হলেও মহিলা বসাতে সাধারনত মহিলার পাশে বসা কোন লোকের যেভাবে বসা উচিত ওই ভদ্র লোক সেভাবেই বসেছেন, অর্থাৎ সামান্য যায়গা রেখেছেন। রাস্তায় অনেক জ্যাম, একটু পরে শুরু হলো বৃষ্টি। অত্যাধিক গরমের মধ্যে সামান্য শান্তি। খেয়াল করলাম মহিলা ঝিমুচ্ছেন, মাথা এদিক ওদিক হেলানো-দুলানো শুরু করেছে।
তার আগে বলে নেই, আমার এক বদ-অভ্যাসের কথা। রাস্তাঘাটে, বাসে বা পাব্লিক প্লেসে আমি যখনি কোন সুন্দরি বা আকর্ষনীয় মহিলা দেখি, আমার অভ্যাস হল তখনি আশে পাশের পুরুষদের দিকে চোখ বুলানো, কে কিভাবে কতক্ষন ধরে কত মনোযোগ দিয়ে মহিলাটিকে দেখছে? মাঝে মাঝে মজা পাই, মাঝে মাঝে রাগে গা জ্বলতে থাকে। যখন খুব রেগে যাই তখন এক দৃষ্টিতে ওই লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকি, তার সাথে চোখাচোখি হবার আশায়। যখনি চোখাচোখি হয়, তখন কিছুনা, একটা অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে, ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করি, কিরে ব্যাটা, কি করতেছিস? ওই মুহুর্তে ওই লোকের থতমত খেয়ে যাওয়াটা দারুন উপভোগ্য।
লক্ষ করলাম মহিলাটির পাশে বসা ভদ্র লোকটি খুব ঘন ঘন তাকাচ্ছে মহিলাটির দিকে। অভ্যাসবশত লোকটির কর্মকান্ড লক্ষ করতে থাকলাম। মহিলাটি যখন ভালোভাবেই ঘুমিয়ে পরেছে, তখন বাসের একটি বাঁক ঘুরানোর সুযোগে লোকটি মহিলাটির গাঁ ঘেঁষে বসলো, মেয়েটা সামান্য ইতঃস্থত করে আবারো ঝিমানো শুরু করলো। এবার আমার অবাক হবার পালা। লোকটি তার বাহু দিয়ে খুব ঘন ঘন মহিলাটির বাহুতে ঘষাঘষি (যদিও ওয়ার্ড টা খুবি বিশ্রি, কিন্তু এর চেয়ে পারফেক্ট ওয়ার্ড আর পেলাম না !) শুরু করলো, এমন একটা ভাব যে, বাস খুব ব্রেক করছে আর রাস্তা খারাপ এজন্য এমন হচ্ছে। কিন্তু আমি স্পষ্টতই বুঝতে পারছি যে সে ইচ্ছাকৃত এমন করছে কারন সে বারবার মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে আর লক্ষ রাখছে যে মেয়েটি তাকে খেয়াল করছে কিনা। এভাবে বেশ কিছুক্ষন চলার পর মহিলাটি সামনের সিটে হাত দিয়ে তার উপর মাথা দিয়ে ঘুমানো শুরু করলো, এতে তার বাম পাশের বুক কিছুটা উন্মুক্ত হয়ে যায় (যদিও ওড়না দিয়ে পুরাপুরি ঢাকা)। এই সুযোগে লোকটি তার হাত তার বুকে ভাঁজ করে বসলো, আর এক হাত আরেক হাতের নিচ দিয়ে নিয়ে দুটো আঙ্গুল সোজা করে সরাসরি মেয়েটির বুকে ঠেকিয়ে দিলো ! আমি চরম ভাবে অবাক হয়ে গেলাম, লোকটা কি একবারো চিন্তা করছে না, পেছনে বা দাঁড়ানো কোন যাত্রি ব্যাপারটা দেখতে পারে, বা মেয়েটা জেগে উঠতে পারে !! তবে সে তার আঙ্গুল সবসময় ওভাবে রাখলো না, যখনি বাস একটু হেলে-দুলে চলে সাথে সাথে সে তার আঙ্গুল সোজা করে মেয়েটির বুকে স্পর্শ করে নেয় !! এভাবে বেশ কিছুক্ষন পর মেয়েটি আবার সোজা হয়ে বসে, সোজা হবার সময়ও বেশ আরামে এদিক সেদিক স্পর্শ করে নেয়। রাগে আমার মাথা গরম হতে থাকে, মনে হয় পেছন থেকে তার কানের উপর হঠাত করে চড় বসিয়ে দিবো নাকি। বেশ কয়েকবার প্রায় ডিসিশন নিয়েই ফেলেছিলাম, কিন্তু খুব কষ্টে নিজেকে সংবরন করি। এর পিছনের কারন হলো প্রায় একি ধরনের একটি ঘটনায় এক লোক কে ধরতে গিয়ে একবার আমি নিজেই কোনঠাঁসা হয়ে পরছিলাম, এমনকি ঘটনার শিকার মেয়েটিও কোন রেসপন্স করেনি ! পাশের লোক গুলিও তেমন সহায়তা করেনি !
আজো আমার পাসে বসা লোকটিকে ব্যাপারটা আস্তে করে ডেকে সিটের ফাঁক দিয়ে ওই ব্যাটার হাতটা কোথায় তা দেখালাম, কিন্তু তার কোন ভ্রুক্ষেপি লক্ষ্য করলাম না। এজন্য আমিও দমে গেলাম ! এর মধ্যে বাস গন্তব্যে চলে এলো, সব যাত্রী মহাখালী নামবে, নামার সময়ও নড়াচরার মধ্যে বিভিন্ন ভাবে তাকে স্পর্শ করতে দেখলাম তখন আর মাথাটা ঠিক রাখতে পারলাম না। নামার পরে সে দেখি অত্যন্ত লোভাতূর দৃষ্টিতে মেয়েটির চলে যাওয়া দেখছে।
আমি লোকটার ঠিক মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার দুই কাঁধে আমার দুই হাত রাখলাম। আস্তে করে বললাম, “কি ভাই, রাস্তাটা খুব তারাতারি শেষ হয়ে গেলো? বিয়ে করছেন?”
দেখার মত হয়ে গেলো লোকটা, মুহুর্তে চুপসে গেলো লোভাতুর দৃষ্টি। ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললো, “কেন ভাই?”
আমি বললাম, “যা করলেন, এটা কি ঠিক হইলো?” সে সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললো।
আমি বললাম, “ভাই, চরিত্রটা একটু ঠিক কইরেন, আপনাদের জন্য কি আমাদের বোন, বউরা রাস্তা ঘাটে বের হবে না। বিয়ে করে ফেলেন, আল্লাহ্ খুশি হবেন, বয়স তো হইছে মনে হয়। আপনার ভাগ্যটা ভালো যে আমি মেজাজটা ঠিক রাখতে পারছি, বাসে কিছু করি নাই। থাপড়াইয়া কান লাল কইরা দিলে কিছু বলতে পারতেন? কিছু করলাম না, খালি একটা উপদেশ দেই, এরকম আর ভবিষ্যতে কইরেন না” সে ওইভাবেই মাথাটা নিচু করে থাকলো।
আসার সময় আমি ভাবলাম, আমি কি আমার দায়িত্ব পালন করলাম, নাকি ভুল করলাম? লোকটাকে বাসে সবার সামনে অপমান করলে কি ভালো হইতো না? ওই ধরনের আরো অনেকেই নিশ্চই ছিলো বাসের মধ্যে, তাদেরও একটা ভয় ঢুকে যেতো। ডিসিশন নিছি এরপর থেকে এরকম দেখলে সাথে সাথে রিয়েক্ট করবো, কারন এধরনের লোকেরা হাতে নাতে ধরা খেলে ব্যাপক ভয় পেয়ে যায়। আর বাসে নিশ্চই তার দল বল নাই। সবাইকে একি অনুরোধ করবো। তবে পাশের লোক কেও ব্যাপারটা সামান্য ধরিয়ে দিতে হবে, তাহলে সাপোর্ট পাওয়া যাবে।
প্রতিদিন যে কত মেয়েকে এভাবে লাঞ্চিত হতে হয়, আল্লাহ্ই জানেন। আমাদের আরো সচেতন হয়া জরুরী মনে হয় !