somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষকের সম্মান ও বাস্তবতা

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আমার বেশ কয়েকজন শিক্ষক আছেন। আবার, আমার লিস্টে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের আমি একটা সময় পড়িয়েছি। সে হিসেবে আমিও একজন শিক্ষক।

শিক্ষকতাকে বলা নোবেল প্রোফেশন। কিন্তু আমাদের দেশে এটাকে দ্বিতীয় শ্রেণীর পেশারও পদমর্যাদা দেয়া হয়না। এর জন্য আমি কখনো সাধারণদের দোষ দেই না। দোষটা মূলত শিক্ষকদেরই। শিক্ষকেরা নিজেরাই নিজেদের মূল্য মাটিতে নামিয়ে এনেছে। কিভাবে? বলছি।

আমি যখন হাইস্কুলে পড়তাম তখন আমাদের গণিতের একজন শিক্ষক ছিলেন। তার কাজ ছিলো সকাল-বিকাল আমাকে বিভিন্ন অযুহাতে শাস্তি দেয়া। অনেকগুলো অপরাধের মধ্যে আমার একটা অপরাধ ছিলো আমি তার বাসায় প্রাইভেট পড়তাম না। তার শাস্তির প্রক্রিয়াও ছিলাম অভিনব। ক্লাসে কোন অরাজকতা হয়েছে কি প্রথম পিটুনি আমার কপালেই ছিলো। স্কুলে থাকতে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম একদিন তাকে পিটাবো। এখন যদিও চাইলেই তাকে পিটাতে পারি কিন্তু তাকে কোন এক কারণে ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু তার সম্মান আমার কাছে নেই। তাকে রাস্তায় দেখলে পাত্তা দেই না। আমার সামনে দিয়ে তাকে এখন মাথা নিচু করে যেতে হয়। এর জন্য দায়ী কে? কেন তাকে দেখলে আমি সম্মান করছি না?

ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক হওয়া উচিৎ বইকেন্দ্রিক। সেই সম্পর্ক যদি বিনিময় মূল্যে চলে যায় তাহলে সম্মানীর সম্মানের তলায় পিষে যায়। কলেজে থাকতে আমি দেখতাম বেশীরভাগ শিক্ষক টাকার বিনিময়ে ব্যাচ করে পড়াচ্ছে। আমি নিজেও পড়তাম। এমনও হয়েছে স্যারের বাসায় গিয়ে আমরা পড়ছি অথচ স্যার আমাদের চিনেন না। মাসে মাসে টাকা নিচ্ছেন আর পড়িয়ে যাচ্ছেন। আমি বলছিনা শিক্ষকদের টাকার দরকার নেই, কিন্তু ব্যাপারটা যদি এমন আমি শুধু টাকা নিলাম আর পড়ালাম, ছাত্র চিনলাম না, আচার চিনলাম না, রিভিউ বিবেচনা করলাম না তাহলে তো সেটা বাণিজ্য হয়ে গেল। আর আমাদের দেশে হচ্ছেই সেটা। টাকার বিনিময়ে শিক্ষা আমরা পেয়ে গেলে আমরা কেন শিক্ষা পেয়ে যাওয়ার পর আর তাকে সম্মান করবো। তাকে তো আমাদের আর প্রয়োজন নেই।সে টাকা পেয়েছে আমাদের একাডেমিক শিক্ষা দিয়েছে।ব্যস, তার সাথে আমাদের সম্পর্ক এটুকুই।এখানে সম্মানের আর বালাই নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা এসব দিক থেকে এক কাঠি উপরে। এরা লড়াই করে ইগোর জন্য, টাকার জন্য নয়। আমি দেখেছি প্রায় বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষকেরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে হেয় করতে পছন্দ করে। তাদের দৃষ্টিতে তারাই সেরা,দেশের আর কোথাও তাদের মত সার্ভিস দেয়া হয়না। বাস্তবতা এই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ হলে ভালো ছিলো কিন্তু বাস্তবতায় এরা অন্য ডিপার্টমেন্টকেও পাত্তা দিতে নারাজ। একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষকের নামে দূর্নাম করছে। সেটা চেম্বারে, ক্লাসে এমনকি সমাবেশে! তারা এটা বুঝতেছে না এই যে তারা আরেকজন শিক্ষককে অসম্মান করে কথা বলছে এতে তাদের সম্মানও কমছে। ছাত্ররা তার সম্পর্কেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ধারণ করছে। কাউকে অমর্যাদা করে মর্যাদা পাওয়া যায় না। তারপর কিছু শিক্ষক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আছেন। রাজনৈতিক আদর্শ এক ব্যাপার আর ছত্রছায়ায় থাকা আরেক ব্যাপার। কেউ যদি রাজনীতিকে ব্যবহার করে বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিল করে বা করতে চায় সেটা সে হাসিল করলেও কিন্তু সত্যটা সাধারণ ছাত্রদের কাছে বের হয়ে আসেই। ফলে, তাদের ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিল হলেও তাদের জন্য বরাদ্দ সম্মানের ঘরটা সংকীর্ণ হয়ে যায়।

মজার একটা ব্যাপার বলি। এই তিন ধরনের শিক্ষকেরাই বাইরের দেশে যখন যান, কিভাবে যেন ভুজংভাজাং ছেড়ে আদর্শিক হয়ে পড়েন।বাইরের দেশে তো আর আমাদের দেশের মত পেশা বেচে খাওয়ার সুযোগ নেই, ওখানে খেতে হয় খেটে,যোগ্যতায়,মেধা দিয়ে, পরিশ্রম করে।

আমি বলছিনা সব শিক্ষকেরাই এমন। এমন স্কুল শিক্ষক আছেন যাকে দেখলে এখনো আমরা দাঁড়িয়ে পড়ি, এমন কলেজ শিক্ষক আছেন যিনি। রাস্তায় আমাদের দেখলে হয়তো চিনতে পারেন না এবং নিজ হতে আগ বাড়িয়ে সালাম দিয়ে বলি আমরা আপনার কলেজের অমুক শেসনের ছাত্র ছিলাম,এমন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আছেন যাদের আমরা শিক্ষক নয় ভাই হিসেবে শ্রদ্ধা করি। এরাই এখনো শিক্ষতাকে আমাদের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখেছে। নাহলে হয়তো একজন মুদি ব্যবসায়ী আর শিক্ষকের পার্থক্যটা আমরা কখনোই জানতে পারতামনা।

জগতের সকল শিক্ষকেরা ভাল থাকুক।
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×