somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিনিস্টার চশমা

১৮ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর এক বিশাল আবিষ্কার নোবেল কমিটিকে পর্যন্ত তাক লাগিয়ে দিলো! একবিংশ শতাব্দী তো বটেই, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা আবিষ্কার এটি। নোবেল কমিটি কোন ক্যাটাগরিতে তাকে নোবেল দিবে এ নিয়ে জরুরি এক বৈঠক ডাকতে বাধ্য হলো।

আবিষ্কারটা সাদা চোখে খুব ছোটই মনে হবে। একটা চশমা। কিন্তু, এটাকে আর দশটা সাধারণ চশমা ভাবলে ভুল হবে। এই চশমার বৈশিষ্ট্য বুঝতে হলে থাকতে হবে অসীম চেতনা! চশমার নাম, "মিনিস্টার চশমা!" এই চশমার আবিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্ব থেকে দারিদ্রতা, বেকারত্ব, খুন, গুম, ধর্ষণের মতো সব নেগেটিভ খবরের বিদায়ধ্বনি বেজে উঠল। এই আবিষ্কারের ক্রেডিট আসলে যতটা না সেই বিজ্ঞানীর তারচেয়েও বেশি বাংলাদেশি মন্ত্রী-এমপিদের। কীভাবে? চলুন তাহলে খুলেই বলি গল্পটা।

সে এক বেখাপ্পা সময়। দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম আলোর গতিতে না হলেও, মেট্রোরেলের গতিতে বেড়ে চলছিল। এলাকার পাতি নেতা, চামচা কিংবা ভার্সিটির সহমত ভাইয়েরা তেল দিতে দিতে তেলের দাম বাড়িয়ে ফেলল কয়েকগুণ। যেই দেশে একসময় পেয়াজ উৎপাদন হতো পর্যাপ্ত পরিমাণে সেই দেশে পেয়াজের দুর্ভিক্ষ লেগে গেল। মানুষের জীবনের দাম না বাড়লেও, বেড়ে গেল বাসের ভাড়া। সুযোগ পেয়ে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দামও বেড়ে গেল হুড়মুড় করে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানুষের আহাজারি দেখা গেল। ন্যায্য মূল্যের পণ্য বিক্রির ট্রাকে বাঁদরের মতো ঝুলতে দেখা গেল অসহায় খেটে খাওয়া নারীদের। কম দামে তেল-নুন কিনতে গিয়ে নারীতে-নারীতে চুলোচুলি হলো, পুরুষে-পুরুষে হলো লুঙ্গোলুঙ্গি (একে অপরের লুঙ্গি ধরে টানাটানি)। কিন্তু মজার ব্যাপার যেটা হলো, এই বিষয়গুলো অসাধারণ দেশের সাধারণ মানুষেরাই শুধু দেখতে পেলো! অসাধারণ ব্যক্তি যারা, অর্থাৎ দেশটির মন্ত্রী-এমপিরা এসবের কিছুই দেখতে পেলেন না! তারা বললেন, দেশের কোথাও কোনো হাহাকার নেই, কেউ কোনো কষ্টে নেই, দ্রব্যমূল্যের দাম মানুষের নাগালেই আছে। সব মানুষ খেয়ে-পরে সুখে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছে। এমনকি, তাদের সুখের পরিমাণ এতটাই বেশি যে মন্ত্রীরা ধারণা করলেন দেশটি থেকে ভবিষ্যতে বাইরের দেশে সুখ রপ্তানিও করা যাবে!
অবাক করা ব্যাপার! একই দেশে থেকে সাধারণ মানুষ দেখছে এক অবস্থা অথচ মন্ত্রী এমপিরা দেখছে ভিন্ন অবস্থা! এই "অবস্থা" জিনিসটাকে তখন আর সাধারণ বিষয় মনে হলো না। মনে হলো এটা শ্রোডিঙ্গারের "অবস্থা," নিজে গিয়ে দেখার আগ অবধি বোঝার উপায় নেই "অবস্থা" নিজে কোন অবস্থায় আছে!

এসব দেখে আমাদের পদার্থবিজ্ঞানী হাবলা হাসান সাহেবের চক্ষু তো চড়কগাছ! তিনি নিজে সরেজমিনে তদন্ত করে দেখলেন সাধারণ মানুষের দেখাটাই আসলে ঠিক। দেশের মন্ত্রী-এমপিরা কি তবে কোনো এক অদৃশ্য চশমা পরে সবকিছু ভিন্নভাবে দেখছেন? তাই হবে হয়তো৷ এখান থেকেই তিনি আইডিয়া পেলেন নতুন এক চশমা বানানোর। চশমার নাম হবে "মিনিস্টার চশমা।"

তিনি মহাগুরু নিউটনের নাম নিয়ে কাজ শুরু করে দিলেন। ফিজিক্সের আবিষ্কৃত-অনাবিষ্কৃত যত ল-থিওরি-হাইপোথিসিস আছে সবগুলো ব্লেন্ডারে বসিয়ে দিলেন। এরপরও মিনিস্টার চশমার কূলকিনারা বের করতে পারলেন না। রাগে-অস্থিরতায় যখন তার চুল (এবং অন্যান্য চুল) ছেড়ার অবস্থা তখনই হঠাৎ তার মাথায় এলো কেন তিনি চশমাটা বানাতে পারছেন না! আসল উপাদানটাই তো তিনি দেননি! ব্লেন্ডারের ঢাকনা খুলে তিনি ঢেলে দিলেন এক গামলা "চেতনা।" এবার কাজ না হয়ে যাবে কই? ঠিক তাই, কাজ হতেই হলো। চেতনা বলে কথা! ফিজিক্সের অলীক ল আর দেশে চলতে থাকা চেতনার ব্লেন্ডে তৈরি হলো এক বিশেষ চশমা! হাবলা হাসান সাহেব চশমাটি চোখে দিয়েই তাজ্জব বনে গেলেন!
তিনি দেখলেন মিরপুরের রাস্তা আর মিরপুর নেই, হয়ে গেছে ভেনিস শহরের রাস্তা! ফার্মগেট হয়ে গেছে সিঙ্গাপুর, কাওরান বাজার হয়ে গেছে ব্যাংকক, মোহাম্মদপুর হয়ে গেছে প্যারিস! মেট্রোরেলের খাম্বাগুলো হয়ে গেছে আইফেল টাওয়ার! বুড়িগঙ্গার কালো পানিকে দেখলেন নীলনদের চেয়েও নীল! ঢাকার ধুলাবালি ওড়া রাস্তাকে দেখে তার মনে হলো হীরার চেয়েও স্বচ্ছ, এতই স্বচ্ছ যে তিনি মিরপুর বারো নাম্বার দাঁড়িয়ে পদ্মাসেতু দেখতে পেলেন! ঢাকার রাস্তায় "ভাইজান, দুইডা ট্যাকা দেন" বলে চেঁচাতে থাকা ভিক্ষুকদের চশমা দিয়ে দেখতে পেলেন স্যুট-টাই পরা ব্যবসায়ী রূপে! টিসিবির ট্র‍্যাক নামের জিনিসটাকেই আর খুঁজে পেলেন না! সবার মুখে মুখে হাসি আর হাসি। দুঃখ বলতে কোনো জিনিস নেই। হাসতে হাসতে লোকজন রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে! ফেসবুকে ঢুকে দেখলেন পত্রিকায় কোনো নেগেটিভ নিউজ নেই। চশমা ছাড়া যেটিকে দেখলেন ধর্ষণের খবর, চশমা পরে সেটিকে দেখলেন নারীদের সম্মান রক্ষায় প্রসাশনের অভূতপূর্ব ভূমিকার খবর! কমেন্টবক্সে সবাই সরকার বন্দনায় পঞ্চমুখ। অবশ্য চশমা খোলার পর সেখানে ম এবং চ বর্গীয় বিভিন্ন গালিগালাজ দেখা যাচ্ছিল!

হাবলা হাসান নিজের আবিষ্কারে নিজেই অবাক টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি হয়ে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, যুগান্তকারী এই আবিষ্কারই পারবে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ বানিয়ে ফেলতে। তিনি সরকারের কাছে তার এই আবিষ্কার জমা দিলেন।

************

হাবলা হাসানকে শান্তি এবং পদার্থবিজ্ঞান ক্যাটাগরিতে দুইটা নোবেল দেয়া হলো। বাংলাদেশে তাকে স্বাধীনতা পদক, একুশে পদকসহ জানা-অজানা আরো হাজারখানেক পদক দেওয়া হলো। এমনকি তার উদ্ভাবনের গুরুত্ব অনুধাবন করে নতুন এক পদক তৈরি করা হলো, যেটির নাম দেয়া হলো "হাহা পদক", হাবলা হাসান নামের আদ্যক্ষর নিয়ে "হাহা"। মোটকথা সম্মানে সম্মানে তাকে একদম ভরে দেয়া হলো!

এদিকে সরকার সিদ্ধান্ত নিলেন দেশের প্রতিটা ঘরে ঘরে, সবার হাতে হাতে পৌঁছে দিবেন এই চশমা। যেই ভাবা সেই কাজ। ট্রাক ভর্তি করে দেশের জেলায়-উপজেলায়-ইউনিয়নে পাঠানো হলে মণকে মণ চশমা।
কিন্তু, দেখা গেল মুষ্টিমেয় কয়েকজন বাদে তেমন কেউই "মিনিস্টার চশমা" পেলো না! কারণ, দেশের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের আগের সেই অভ্যাস তো তারা মুছে ফেলতে পারেনি। তারা কয়েক বস্তা চশমা নিজেদের ঘরে লুকিয়ে রাখল, পরে ব্যবহারের জন্য। হাতে গোণা কয়েকজন চশমা পেল।

এদিকে অখ্যাত পাড়াগাঁয়ের এক বৃদ্ধ ট্রাকভর্তি ত্রাণ এসেছে খবর শুনে কয়েক মাইল পারি দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে হাজির হলেন। সকাল থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে হাতে পেলেন একখানা চশমা! তিনি কাতর কণ্ঠে বললেন, "বাবা এইডা দিয়া কী করমু! ঘরে তেল-চাউল কিছুই নাই। পারলে কয়ডা চাউল দেও, খাইয়া বাঁচি!"
বৃদ্ধের কথা শুনে এলাকার মেম্বার খ্যাকখ্যাক করে হেসে বললেন, "আরে বুড়া মিয়া, এই চশমার কেরেসমাতি তো কিছুই জানো না! এই চশমা পইরা ঘরে যাইয়া তোমার বউরে দেখবা যুবতী অইয়া গেছে! ভাঙ্গা ঘর দেখবা দালান অইয়া গেছে! আর তুমি হালায় পইড়া আছ তেল-চাউল নিয়া! মিয়া ভাগো এইহানতে!"

বৃদ্ধ আর কথা বাড়ালেন না। গোধূলির রক্তিম আলোর বিপরীতে দাঁড়িয়ে কেবল দু'ফোটা অশ্রু বিসর্জন করলেন! "মিনিষ্টার চশমা"র কেরামতিতে অবশ্য সেই অশ্রুকেও অট্টহাসি বলে মনে হলো সবার!

-------------

মিনিস্টার চশমা
বিনিয়ামীন পিয়াস
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×