somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশু শিক্ষা ও বাস্তবতা

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন, “ Mere literated learning is not Education; trained habits which induce intelligence with every consistency and make the system habituated accordingly is education. ( The Message. Vol :7, 60)

কিন্তু আজকের চলমান বিশ্ব সমাজে, যে সমাজে স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্টানের উচ্চ ডিগ্রী অজর্নকে শিক্ষার মাপকাঠি হিসেবে দেখা হয়, যেখানে এসব প্রতিষ্টানে একটি মাত্র আসন লাভের জন্য কঠিন যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষক-ছাত্র ও অভিভাবকের সম্পর্ক অন্যসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দিয়ে ঘুরপাক খায় ভাল নম্বর অর্জনের দিকে।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন, “মা-কেন্দ্রিক শিশুরা নম্র,শান্ত ও উদার প্রকৃতির হয়”। শিশুকাল থেকেই ভালবাসার চর্চা করতে হবে। পিতার খেয়াল রাখতে হবে মায়ের প্রতি সন্তানের ঝোঁক যেন বাড়ে। মাও চেষ্টা করবেন পিতার সাথে সম্পর্ক যেন নিরবচ্ছিন্ন হয়। সন্তানের সামনে মা, পিতার ও পিতা, মা’র প্রশংসা করবেন। পিতা-মাতা উভয়েই একে অন্যের স্থান যেন সন্তানের অন্তরে স্থান করে নেই সেই চেষ্টায় করবেন। পিতা-মাতার চেষ্টা করা উচিত যাতে শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের শ্রদ্ধা বাড়ে। (আলোচনা প্রসঙ্গে,৭ম খন্ড, ৯/৫/১৯৪৬)

শ্রীশ্রীঠাকুরের দর্শন অনুসারে, শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য, শিক্ষা অর্জন প্রক্রিয়ার মূল চাবিকাঠি। তিনি বলেছেন, শিক্ষা হলো আচার, ব্যবহার ও চরিত্র। কিন্তু এ বিষয়গুলো স্কুলের পাঠ্যপুস্তকেও থাকে না এবং শিক্ষা প্রতিষ্টানের ক্যাম্পাসেও থাকে না। আচরণশীল আচার্য্যরে প্রতি ভালবাসার ভিতর দিয়ে তা লাভ করা যায়। (আলোচনা প্রসঙ্গে, খন্ড:৮, ১৮/৫/১৯৪৬)
তাই শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, “ The teacher needs to be a person of majestic stature, one of character and love ” (আলোচনা প্রসঙ্গে, খন্ড:১৩, ২৫/৭/১৯৪৮)

শ্রীশ্রীঠাকুর চাইতেন যেন শেশব থেকেই শিশুদের মধ্যে সবধরনের চর্চার সঞ্চারন ঘটানো হয়। তাই তিনি বলেছেন, “আধো কথার সময় হতে/ করে করিয়ে যা শিখাবি/ সেটাই ছেলের মোক্ষম শিক্ষা / হিসাবে চল, না হয় পস্তাবি”
যদি কোন শিশুর অন্তরে অভ্যাস, ব্যবহার, উপলব্দি করার ক্ষমতা, অনুরাগ, সেবা, সমস্যা সমাধানের মনোভাব, ভাবা ও করার সুসাঞ্জস্যতা ইত্যাদি ৫-৭ বছর বয়স থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে তার পড়ালেখা তরান্বিত হয়। (আলোচনা প্রসঙ্গে, খন্ড:৭, ১১/৪/১৯৪৬)
তিনি শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আমি তোমাদেরকে একটা মন্ত্র বলব। তোমার বাবা-মা’কে ভালবাস; তাদের ভক্ত হও, তাদেরকে মান্য করতে শেখো এবং তাদের খুশি রাখতে চেষ্টা কর। তাহলে তোমরা দেখতে পাবে, সুসমন্বয়তা তোমার জীবনে অভ্যর্থনা জানাবে। (আলোচনা প্রসঙ্গে, খন্ড:৭, ৬/৪/১৯৪৬)

শ্রীশ্রীঠাকুর তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদানের ভিত্তি হিসেবে হাতে-কলমে করার ভিতর দিয়ে দক্ষতা, জ্ঞান ও চাওয়ার যে অভিজ্ঞতা তার উপরে প্রাথমিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন।
(আলোচনা প্রসঙ্গে, ৮ম খন্ড, ১১/৫/১৯৪৬)

তিনি বলেছেন, আমরা শিক্ষাকে পড়া-লেখার সামর্থ্য হিসেবে বিবেচনা করছি কিন্তু শারিরীকভাবে বাস্তব কাজ করার ভিতর দিয়ে যে মানের জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব তা বুঝতে পারছিনা। গৃহপালিত পশু যেমন: গরু, কুকুর, পাখি ইত্যাদির লালন পালনের ভিতর দিয়ে আমাদের উপলব্দি করার ক্ষমতা অবিশ্বাস্য পরিমানে বৃদ্ধি পায়। যদি তোমাদের গৃহে কোন অতিথি আসেন, তাহলে তাদের সেবা যতেœ তোমাদের সন্তানদেরকে যুক্ত করা উচিত। যদি প্রতিবেশীর গৃহে কোন অনুষ্ঠান থাকে, তাহলে তাদের সাহায্য করার জন্য তোমাদের সন্তানদের পাঠাবে। যদি বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি বাগান থাকে, সেখানে সবজি উৎপাদনে নিজের সাথে সন্তানদেরকেও যুক্ত করবে। যদি বাজারে কিছু কেনা কাটা করতে যাও, তাহলে সাথে শিশুদেরকেও নিয়ে যাও। এর ফলে তারাও আস্তে আস্তে কেনা-কাটা শিখে যাবে। তাদেরকেও শিক্ষা দাও কিভাবে রোগীর সেবা করতে হয় কিংবা কিভাবে ঘর-দোড় পরিষ্কার রাখতে হয়। যদি কোন বই ছিঁড়ে যায়, তাদেরকে বলুন সূঁচ দিয়ে বইটা সেলাই করে একটা কাভার লাগানোর জন্য। যদি বাড়ির আঙ্গিনায় কোন বেড়া ভেঙ্গে যায়, তাহলে ছোটদের বলুন নতুন বেড়া তৈরিতে সাহায্য করার জন্য এবং এভাবে যতই শিশুদের হাত, পা, চোখ ও মস্তিষ্ক শক্তি লাভ করবে, ততই তারা আরো বেশী আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। যদি একটা মানুষের সক্রিয় অভ্যাস, আত্মবিশ্বাস ও অনুসন্ধিৎসু সেবাপ্রবণতা থাকে, তাহলে সে কখনই বেকার হতে পারে না। যতই দিন-দিন আমরা শিক্ষার প্রধান উপাদান হিসেবে পাঠ্যপুস্তক পড়াকে গ্রহন করছি, ততই আমরা প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের পথ থেকে সরে যাচ্ছি।
(আলোচনা প্রসঙ্গে, খন্ড:৫, ১০/৭/১৯৪৪)

তিনি আরো বলেন, যদি শিক্ষা অর্জনের প্রক্রিয়ার মধ্যে উদ্ভাবনী ও গবেষণামূখী মনোভাব থাকে, তাহলে
শিক্ষা গ্রহন ক্লান্তিকর মনে হবে না। আপনি যদি অন্যকে কোন বিষয়ে শিক্ষা দিতে চান, ফলে আপনার নিজের ধারণাও আরো পরিষ্কার হবে। যেখানে ভূলে যাবার সম্ভাবনা আছে, সেটাই পুন: পুন: বলতে হবে এবং পূনরাবৃত্তি করতে হবে। [ “Wherever there is a possibility to forget, then it needs to be repeated and recapitulated” The Message, Vol: VIII, 57 ]

শ্রীশ্রীঠাকুর একটি শিশুর একাধিক অভিভাবকের বিরোধী ছিলেন। কারণ, এটা শিশুর মধ্যে ভাল ও মন্দের পার্থক্য তৈরিতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তিনি শারীরিক শাস্তি প্রদানেরও ঘোর বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, মানুষ গুহার অভ্যন্তরে থেকে পাঠ গ্রহনের মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন করতে পারে না। বাস্তব পৃথিবীতে সে প্রতারিত হয় এবং এর থেকে জ্ঞান লাভ করে। আবারো প্রতারিত হয়, আবারো জ্ঞান লাভ করে, এভাবেই জীবন এগিয়ে চলে। কেউ রাতারাতি সব শিখে ফেলবে এরকম আশা করা অনুচিত।
তিনি বলেছেন, তোমাদের সাহায্য করতে হবে এবং ধৈর্য্যশীলতার সাথে সহ্য করতে হবে যাতে ধীরে ধীরে প্রতি-প্রত্যেকে তাদের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের ভিতর দিয়ে মহৎ মানুষে পরিণত হতে সক্ষম হয়।
(আলোচনা প্রসঙ্গে, খন্ড:৭, ১৯/৩/১৯৪৬)


লেখক: শ্রী রিন্টু কুমার চৌধুরী, কম্পিউটার প্রকৌশলী
পরিচালক, শ্রেয় অন্বেষা (Center for research on Srisrithakur Anukul Chandra)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×