বি-বিশ বিশ্বকাপ-২০১৪ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় সামুসহ বিভিন্ন বাংলা ব্লগ ও ফেইসবুকে বেশ কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে মাইলসকে পারফর্ম করতে না দেয়ার ক্যাচাল। গতবারও অনেক ক্যাচাল হয়েছিল। সেগুলো এখন অতিত।
আমরা অতি সাধারণ মানুষ আমাগো কথা বললে ভুল হয় তাই সচরাচর চুপ থেকে দর্শকের ভূমিকাতে থাকাটাই ভাল যেমন, যখন কারো ছিনতাই হয় তখন ছিনতাইকারীদের বাধা না দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে দাড়িয়ে বিশাল এ্যাডভেঞ্চারের ঐ দৃশ্য দেখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ (!)।
কিন্তু যেভাবে ক্যাচাল শুরু হয়েছে তাতে আমার মত অধমেরও দুটো কথা বলার ইচ্ছে হচ্ছে। হয়তবা আপনারা গুণীজন-সমালোচকদের মত অত বিশ্লষণের ক্ষমতা আমার নেই, তারপরও বাঙালী তো। আমার দেশ নিয়ে কথা বলার অধিকার আমার আছে
প্রসঙ্গ এক. মূলতঃ আমরা বাঙালীরা উদূ ভাষাকে একপ্রকার ঘৃণাই করি বলা যায় এবং উর্দুর কথা শুনলে তাকে রাজাকার, বিহারী ইত্যাদি উপাধীতে ভূষিত করতে বিন্দু পরিমাণে কুণ্ঠা বোধ করি না। কিন্তু হিন্দি গানা সুননে ওয়ালাদের সংখ্যা বাংলাদেশে নেহাত কম নয়। একটু বাড়িয়ে বলি অনেক ক্ষেত্রে বাংলার চেয়ে হিন্দি গান অনেকের পছন্দ।
অথচ যাদের হিন্দি এবং উর্দু দু'টো ভাষার উপর দখল আছে তারা ভাল বলতে পারবেন যে, যদি শুদ্ধ হিন্দীতে গান লেখা হয় তা এ আর রহমান কেন এর মত বহুত গুণীকে এক করলেও সূরা তোলা অনেক কষ্টের কাজ। হিন্দী রুক্ষ্ম একটা ভাষা। আর তাই তো অধিকাংশ গান হিন্দী বলে চালিয়ে দিলেও তাতে মূলত উর্দূ ভাষারই প্রয়োগ হয়।
তো আমাদের কি এতটুক কাণ্ডজ্ঞান নেই যে, যে ভাষার জন্য আমাদের রক্ত ঝরেছে সেই ভাষাকে অপমান করে নির্লজ্জের মত উর্দু ভাষার কদর বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।
প্রসঙ্গ দুই :
শাফিন আহমেদের কথায় যেটা বুঝলাম তা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে এটা বলবো বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের নীতি পরশ্রী কাতরতা। এক কথায় বাড়ীর মুরগী ডালের মত।
গ্রীন রুম এবং সাউন্ড সিস্টেম ব্যবস্থা বৈষম্যের
যে কথা শাফিন আহমেদ বললেন তা সত্যিই লজ্জাজনক।
শুধু এ ক্ষেত্রে নয় ক্রীড়াঙ্গনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা যায় এমন বৈষম্যতা। পত্র-পত্রিকায় ইতিমধ্যে যেগুলো বিষয়ে লেখালেখি হয়েছে।
প্রসঙ্গ তিন :
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমরা যেভাবে দেশের সংস্কৃতিকে দেখালাম তাতে বিশ্বের আর বুঝতে বাকি নেই যে, এ সমাজ গান ছাড়া কিছু বোঝে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যেয়ে গানের শুরু দিনেরও শুরু। বাথরুম থেকে বের হয়ে চুল আচড়ানো কাপড় পরতে পরতে গান, সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে গান, যদি রাস্তায় পথ চলতে হয় তাহলে গান, অফিসে বসের বকা খাওয়ার ভয়ে হয়তবা গানটা বণ্ধ থাকে কিন্তু হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে দেখা যায় অনেককে... এভাবে যদি বলতে থাকি সারাটা দিনই গান। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অনেকের আবার নেশা হচ্ছে গান... যাই হোক আমরা সেটা বুঝিয়ে দিতে পেরেছি যে, গান আমাদের ভাত-পাত, জীবন-মরন এক কথায় সবকিছু।
এটা কি লজ্জা জনক নয় যে, আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে এভাবে তুলে ধরলাম বিশ্বের দরবারে।
বিশ্ব ক্রীড়া সবচেয়ে বড় আয়োজন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানগুলো থেকে আমরা কখনো শিক্ষা নেই নি। আমরা চিনি ভারতকে। ভারত যেভাবে করে সেভাবেই আমাদের করতে হবে। চীনে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মানুষকে। তাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি বিশ্ববাসীর সামনে আরো একবার দেখানোর সুযোগ পেয়েছে, আর সেটাকে লুফে নিয়েছে তারা। কিন্তু আমরা কখনই শিখিনি। শিখবোও না।
মোটা অংকের যে টাকা বিদেশী শিল্পীদের পারফর্ম করার জন্য আনা হয়েছে তার চেয়ে ঐ টাকার অর্ধেক খরচ করে যদি আমাদের স্কুলের ছেলে-মেয়েদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে হাজির করতাম তাতে টাকাও বাচতো সম্মানো বাচতো এবং দেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির কিছুটা হলেও দেখানো যেত বিশ্ববাসীকে।
কিন্তু আমরা কি পরিবেশন করলাম। পাবলিক কি মনে রাখবে ঐ গান?্বিশ্বের কোন ক্রীড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ধরনের পারফর্মেন্স দেখেছেন আমাকে কেউ বলতে পারবেন।
যাই হোক আমি একজন বাঙালী আমার দেশের যখন অপমান হয় তখন আমার বুকে শুল বিধে। যখন বিদেশের মাটিতে কেউ এ গুলো নিয়ে দেশকে কটাক্ষ করে তখন সত্যিই দেশ অপমান হয় এ ধরনের কাজ যারা করে তাদের জন্য মৃত্যু কামনা করি।
আমার এ কথা হয়তবা কারো পড়ার সময় হবে না বা পড়লেও এখানেই শেষ কিন্তু ভাববার সময় এসেছে আর কত গোলামী, আর কত? সবাই যখন দাসত্বের শৃঙখল থেকে মুক্ত হওয়ার চিন্তায় তখন আমরা শিকল হাতে মনিবের কাছে এসে বলি শিকল পরিয়ে দিন জাহাপানা।
বাংলাদেশের শুভ কামনায়, অনেক দূর থেকে একজন বাঙালী...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




