somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দমন, না বারংবার ধর্ষিত হবে বাংলাদেশ ?

০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৩:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বারংবার ধর্ষিত হবে বাংলাদেশ ?



ধর্ষিতা বিচার না পেয়ে হেরেগেলে হেরে যাবে বাংলাদেশ। ধর্ষকদের কঠোর শাস্তি নিশ্চত করে ধর্ষণের মতো জঘণ্য অপরাধ দমন করতে না পারলে বার বার ধর্ষিত হবে বাংলাদেশ। কেউ মানেন বা না মানেন আমি এটাই মনে করি। কারণ ধর্ষণ বা ব্যভিচার। শব্দগুলো কানে আসলেই ঘৃণা আর ক্ষোভের সৃষ্টি হয় মানুষ হৃদয়ে। ধর্ম নর নারী বিভাজনের উর্ধে উঠে সভ্য মানুষেরা যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বতিত্ব ও শালীনতাকেই সমর্থন করেন। বিপরীতে ধর্ষণকে পাপ ও কঠিন অপরাধ হিসেবেই গণ্য করেন ।

তাই এ পাপ থেকে আমাদের উত্তরণের পথে এগুতেই হবে। সভ্যতার আধুনিক যুগে পৃথিবীর রাষ্ট্রীয় সংবিধান গুলোতে এই ধর্ষনকে চরম অপরাধের অন্তর্ভুক্ত করে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। অন্যসব রাষ্ট্রের কথা বাদ দেই নিজের চরকায় তেল দেই। আমাদের দেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড।

দেশের বিধানুযায়ী, যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বৎসরের অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে, অথবা ষোল বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, এর ৯ ধারা মতেঃ

৯(১) যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

(২) যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তা হলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

(৩) যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তা হলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

(৪) যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে-

(ক) ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন;

(খ) ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

(৫) যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোন নারী ধর্ষিতা হন, তা হলে যাহাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্তরূপ ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তিনি বা তারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, অনধিক দশ বছর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

তাহলে প্রশ্ন আসে এত কঠিন শাস্তির বিধান থাকলেও কেন এই অপরাধকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছেনা। বার বার সমাজের মানুষরূপী অমানুষের থাবায় স্বতিত্ব আর শালিনতার মুখ থুবড়ে পড়ছে ? আমি বলবো এজন্য দায়ী পারিবারিক অসচেতনতা, সমাজিক অবক্ষয়,রাষ্ট্রের অবহেলা,দূর্বল বিচার ব্যাবস্থা। এরচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর রাজনৈতীক শেল্টার এবং ঘটনা নিয়ে রাজনৈতীক ফায়দা লোটার পায়তারা।


আমি মনে করি এই অপরাধকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই যে মাত্র কয়েকটা কারণকে গুরত্ব দিলেই যথেষ্ট। যার যার জায়গা থেকে শুধুমাত্র দায়িত্বটা পালন করতে হবে সঠিকভাবে। প্রথমত প্রত্যেকটি পরিবারের অবিভাবকদের দায়িত্বটা পালন করতে হবে। শিশুকাল থেকেই তার নৈতিক চরিত্রটাকে গড়ে দিতে হবে। কৈশর থেকেই সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে খোলামেলা আলোচনা করে তার মানসিকতাটা গড়ে দিতে হবে। শালীনতা নিয়ে ধর্মীয় বিধিনিষেধ সম্পর্কে চর্চা করাতে হবে। আধুনিকতার সঙ্গে অশালীনতার কোন সম্পর্ক নেই ; বরং যে যত ভদ্র শালিন চরিত্রবান সে-ই  আধুনিক,মনে প্রাণে এ বিশ্বাস তৈরীসহ ধর্ষন ব্যভিচারের প্রতি ঘৃনা জন্মিয়ে দিতে হবে । প্রয়োজনে আধুনিক ডিভাইস অবশ্যই ব্যাবহার করবে ; তবে পর্নোগ্রাফিতে যেন ঝুঁকে না পড়ে সেইদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। নিজের সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পরিবার থেকে শুধুমাত্র এতটুকু দায়িত্ব পালন করা অত্যন্ত সহজ একটি ব্যাপার। এখানে কোন অর্থ ব্যায়ের বেপারও নেই। আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ সন্তানকে এভাবেই গড়তে চাই কিন্তু সমস্যা একটাই মনে মনে চাই। এই মনে মনে চাওয়া থেকে বেরিয়ে নিজের সন্তানকে গড়ে তুলতে বাস্তবিক দায়িত্বটা পালন করতে হবে। আর এই দায়িত্বশীলতাই রুখে দেবে সামাজিক অবক্ষয়।

ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের জন্য রাষ্ট্রীকে আরো একটু কঠিন হতে হবে। এইখানটাতে কোন ধরনের অবহেলা করা যাবেনা। ভুক্তভোগী বাদির দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রের। তাকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট করতে হবে দলমত নির্বিশেষে। গণতন্ত্রের চালিকাশক্তি জনগণের ঘৃণা ও ক্ষোভকে গুরুত্ব দিতে হবে। এই ধরনের অপরাধের মামলার দীর্ঘসূত্রতার লাগাম টেনে,স্বল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করে এই অপরাধের প্রতি ভিতি তৈরী করতে হবে। এই অপরাধ করার প্রয়াস মনে জাগলেও নিশ্চিত কঠোর শাস্তির কথাযেন মনে ভেসেওঠে এইরকম নজির তৈরী করতে হবে।

দেখবেন কোথাও কোন ধর্ষনের খবর প্রকাশ হলে ক্ষোভ ঘৃণা প্রকাশ করার পাশাপাশি মানুষ ধর্ষকের মৃত্যদন্ডু শাস্তির দাবি করে। স্টেটাস ভাসতে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে- ক্রসফায়ার দেয়া হউক, প্রকাশ্যে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হউক, সৌদির আইন কল্লা বিচ্ছিন্ন করা হউক ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ জেল জরিমানা নয়, মানুষ এখানে-অপরাধীর অপরাধ প্রমানীত হওয়ার পর কোন ধরনের কালক্ষেপণ নয় সঙ্গে সঙ্গে সর্বোচ্চশাস্তি মৃত্যুদন্ড কার্য্যকর করার দাবি তুলেছেন। সে ক্ষেত্রে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে ঘৃণ্য অপরাধ ধর্ষণ। আর এই ঘৃণ অপরাধীদের জন্য গোটা জাতি বিব্রত ও ক্ষুব্দ। জঘণ্য এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল নয়, নির্মূল করতে সকলেই কঠোর শাস্তি নিশ্চত করতে ঐক্যমত। এবং আমি বলবো রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব জনতার মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্র ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সে দায়িত্ব থেকেই চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিপীড়ন দমিয়ে - সুশাসন নিশ্চিত করতে, কঠোর সিদ্ধান্ত  বাস্তবায়ন করা উচিৎ । ধর্ষনের মতো অপরাধকে এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করে তাচ্ছিলতা বা অবহেলা করার সময় শেষ।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর গড়ে প্রতি মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১১ জন নারী। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮৮৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। ২০১৭ সালে ৮১৮ জন, ২০১৮ সালে ৭৩২ জন এবং ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল ৭৬ জনকে। আত্মহত্যায় বাধ্য হয়েছিলেন ১০ জন নারী।

ঘৃণ্য এই চিত্র মুছে দেয়া সম্ভব না হলেও, নতুন কোন চিত্র অঙ্কন রুখেদিতে রাষ্ট্র প্রধানদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। উল্টো যে চিত্রদেখে অপরাধীদর বুক কেঁপে উঠবে, অপরাধীর ভয়ঙ্কর শাস্তির মুখোমুখি করার সে চিত্র অঙ্কণ রাষ্ট্রের জন্য কোন কঠিন কিছু নয়। কারণ এখানে রয়েছ আপামর জনসাধারণের পূর্ণ সমর্থন। এই চিত্র অঙ্কন করতে রাষ্ট্র যন্ত্রের কোন ব্যাক পাওয়ার কথা নয়। ধর্ষণ ও গণধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এ দেশের ছাত্র সমাজ। যেখানে ছাত্রসমাজ ধর্ষণসহ নানা অপরাধের বিরুদ্ধে আপোষহীন নেতৃত্ব দেবে। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত ভীতিকর বলে মূল্যায়ন করতে হবে রাজনৈতিকদের।

ভুল হবে না, যদি বলি এই অপরাধটি দমনের ক্ষেত্রে আরেক বাঁধা রাজনৈতীক বদাভ্যাস। নরপিশাচরা যখন এই অপরাধে জড়ায় ঘটনা প্রকাশের পর পরই শুরু হয় অপরাধী কোন দলের। অপরাধী যদি কোন কারণে সরকার দলীয় সংশ্লিষ্ট হয়, তবে বিরোধী দল এমন ভাবে আলোচনা করে যে মূল অপরাধের কথা বাদ দিয়ে সে কোন দলের তা নিয়ে। যদি কোন দলীয় পদ নাও থাকে তবে দলীয় কোন লোকের সঙ্গে পরিচয় আছে কিনা তা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। অথবা অপরাধী যখন বিরোধী দলের রাজনীতিতে জড়িত থাকে তবে সরকারী দলের নতারা ওই দলকে ভৎসনা করতে থাকেন। ঘুরে যায় প্রসঙ্গ। যে কোন বিষয়েই অপ্রাসঙ্গিক কথা গুরুত্ব পেলে সেখানে মূল বিষয় হারিয়ে যায়। আমি বলবো সবকিছু নিয়ে রাজনীতি হয় না,রাজনৈতিক অপচর্চা হয়। রাজনৈতিক মহলের ভূমিকা এমনটা হওয়ার কথা নয়।

এখানে বুঝতে হবে কোন রাজনৈতীক দলই এমন ঘৃণ্য অপরাধকে সমর্থন করেনা। সব সংগঠনের গঠনতন্ত্রেই উল্লেখ রয়েছে কোন সদস্য যদি কোন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তার দায় সংগঠন নেবেনা। সদস্যপদ হারাবে ওই ব্যাক্তি। অপরাধী কোন দলের,কোন বংশের তার বিচার করা জরুরত নয়। অপরাধী অপরাধীই। এর ভিন্ন পরিচয়কে গুরুত্ব না দিয়ে অপরাধীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতি সকলের তৎপর হতে হবে। অপরাধী যদি কোন রাজনৈতীক দলের সদস্য হয় তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাকে বহিষ্কারসহ শাস্তি নিশ্চত করতে ভূমিকা রাখবে। অন্যদল সেখানে সাধুবাধ জানাবে।  তবে আলোচনা বা বিরোধী তৎপড়তা হতে পারে ওইখানে, যদিনা কোন রাজনৈতীক দল অপরাধীকে রক্ষার চেষ্টা করে। তবেই সব অপরাধ খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। অপরাধ আর অপরাধীদের নিয়ে রাজনৈতীক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা অরাজনৈতিক প্রচেষ্টা আর অপরাধীকে সুযোগ করে দেয়া,অন্য কিছু নয়। আশা করি আমাদের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক এই রাষ্ট্রের সব রাজনৈতীক দলই  অপরাধকে সমর্থন করেনা। রাজনৈতিক আদর্শ মতবাদ ভিন্ন থাকলেও অন্যায় অপরাধের বিরুদ্ধে সবাই এক মঞ্চে থেকে তা রুখে দেবে। 

তবে সর্বোপরি বলবো এই পাপ বা অপরাধ নির্মূলের জন্য পারিবারিক সচেতনতা,ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা আর রাষ্ট্রীয় কঠোরতাই যথেষ্ট। ধর্ষণ নিয়ে বিশিষ্ট জনদের মতামত থেকে যদি কোড করি - অপরাধটির ক্ষেত্রে ‘পুরুষতন্ত্র’ একটি বড় সমস্যা। ‘ক্ষমতার রাজনীতির সংস্রবে’ অপরাধের দায়মুক্তি। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রাজনৈতিক বশ্যতায়  সুবিচারের অনুপস্থিতি । এ ছাড়া ইসলাম ধর্মের বিশিষ্টজনেরা এর সঙ্গে যোগ করেন নারীর বেপর্দা চলাফেরাকে।

✪ প্রথম উক্তিটির ক্ষেত্রে বলবো পুরুষতন্ত্র থেকে বেড়িয়ে মানুষতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সারা বিশ্ব যুদ্ধে লিপ্ত। জয়ের পথে মানুষতন্ত্র। গোটা বিশ্বেই নারী নেতৃত্বের উত্থান এখন লক্ষনীয়। এ যুদ্ধে আমরা পিছিয়ে নেই। নারীরা এদেশের প্রধান ক্ষমতাধর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বিশ্ব ক্ষমতাধর নারী নেতৃত্ব হিসেবেও সুপরিচিত রয়েছ। প্রশাসনসহ সব সংস্থাতেই নারীদের অগ্রাধিকার রয়েছে। আমি বলি ভিন্ন কথা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হলেও, সেখানে নারীরা ধর্ষিত হলে কি ওই তন্ত্র কলঙ্কিত হয়না। ওই তন্ত্রকি ধর্ষনের বিরুদ্ধ রুখে দাঁড়াবেনা। নাকি পুরুষতন্ত্র ব্যভিচারি আর পাপাচারি হিসেবে তকমা অর্জন করবে।

✪বিশিষ্টজনদের  মতবাদ থেকে কোড করা দ্বিতীয় উক্তিটি হলো- ‘ক্ষমতার রাজনীতির সংস্রবে’ অপরাধের দায়মুক্তি। যে বিষয়টি সকল অপরাধের অন্তরায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 'আমি যাইকরি কে আমায় কি করবে ' ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীদের এই দম্ভোক্তির সঙ্গে আমারা কয়েক দশক ধরেই ভালোভাবে পরিচিত। দল ক্ষমতায়, ফলে ‘যা ইচ্ছা তা-ই করে পার পেয়ে যাওয়া যাবে’ বিশ্বাসের জোরে নেতা কর্মীরা সন্ত্রাসী,চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে। আর বিরোধী দল থাকা অবস্থায় অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরলেও, নির্লজ্জ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে অপরাধীদের পক্ষনিয়ে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বুলি ওড়ায় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। আর সে ক্ষেত্রে অপরাধীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে ব্যাক পেতে হয়। আবার বিরোধী দল থাকা অবস্থায় যত মামলার আসামী বা সাজাপ্রাপ্তই  হউকনা কেন ক্ষমতার পালা বদলে সবকিছু থেকে নিঃশর্ত মুক্তিসহ প্রতিশোধ নেয়ার প্রবনতাও এ দেশের পুরনো চর্চা।

আমি বলবো- রাজনৈতিক এই নির্লজ্জ দায়মুক্তির প্রবনতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সকলকে। ঘৃণ্য অপরাধের ক্ষেত্রে বেরিয়ে আসতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বী  রাজনৈতীক দলকে ঘায়েল করার অপরাধ নীতি থেকে। না হয় অপরাধ দমনতো দূরের কথা উল্টো অপরাধীরা সংখ্যা গরিষ্ঠ হিসেবে রূপ নিয়ে গোটা জাতির চৌদ্দটা বাজবে।

✪তৃতীয় উক্তি পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রাজনৈতিক বশ্যতায় সুবিচারের অনুপস্থিতি । গণতান্ত্রীক দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার সমর্থনে রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করে । পুলিশ প্রশাসন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী । তারা সরকারি হুকুমকে গুরুত্ব দেবে এটাই স্বাভাবিক যা রাজতন্ত্রে রাজার হুকুম পালন করতে বাধ্য সকল সেনাপতি শৈন্য সিপাহী । এ ক্ষেত্রে আমি বলবো পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন রাজনৈতীক বশ্যতা নয়,যখন যে দল সরকার গঠন করে তখন সে সরকারের বশ্যতা মানতে বাধ্য। না মানলে তাকে দায়িত্বে রাখবেনা সরকার এটাও স্বভাবিক। আর পুলিশ প্রশাসনসহ গোটা রাষ্ট্র, কে পরিচালনা করতেইতো সরকার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকার গঠন করা হয়। এখানে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারি বশ্যতা মেনে নিতে বাধ্য।
বিভাগের স্বধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে শুধু অপরাধ দমনের ক্ষেত্রই বাঁধাগ্রস্থ হয় না জনতার সমস্ত অধিকার খর্ব হয়ে আসে। আর সেই অধিকার খর্ব হলে ক্ষমতার উৎস জনতা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পরিবর্তন আনবে আন্দোলন ও ভোটাধিকারের মধ্য দিয়ে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা সতর্ক না থাকলে খেসারত হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত হবে। তবে হে বিচার বিভাগকে এই অপরাধের ক্ষেত্রে মামলার দীর্ঘ সূত্রিতা কমিয়ে আনতে হবে। দীর্ঘ কাল ক্ষেপণ করে শাস্তির রায় দেয়া হলেও জনমনে তেমন কোন সারা ফেলেনা। তার চেয়ে বড় কথা অপরাধীদের দমন পক্রিয়ায়
ভীতি তৈরির প্রভাব অনেকটাই কমে যায়।

✪ শেষের উক্তিটি সম্পর্কে বলবো - যে নারীরা ধর্ষনের শিকার হয় তাদের মধ্যে হয়তো ১০ হাজার জনে ১জনের চলাফেরা অশালীন হতে পারে। ৯ হাজার ৯৯৯ জন ধর্ষণের শিকার নারীই গৃহবধূ, শিশু,কিশোরী। আর তাদের চলাফেরায় কোন অশালীনতা বা উগ্রতার উদাহরন পাওয়া যায়না। নানাভাবে প্রতারণা বা সন্ত্রাসী কায়দায় তাদের সতিত্ব হরণ করা সহ হত্যা করা হয়। আর নির্যাতীতদের দোষ চিহ্নিত করে সে কারণেই তারা শিকার হচ্ছে এমন আলোচনা কিঞ্চিত পরিমান হলেও অপরাধীদের সমর্থন করা হয়। ইসলামের নেতৃত্বদের প্রতি আমার আহবান থাকবে- আলোচনায় অধিক গুরুত্ব দিতে হবে মানুষ হিসেবে চরিত্র গঠন করার প্রতি। নারী জাতিকে মায়ের স্থানদিয়ে সৃষ্টিকর্তা কতটা সম্মানিত করেছেন। ব্যভিচার বা জিনাকরা কতটা জঘন্য ও ঘৃণিত পাপ। পথ চলার ক্ষেত্রে ইসলামে চোখের হেফাজতে কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। চোখের হেফাজতকে গুরুত্ব দিলেইতো কেউ অশালীন ভাবে চললেও তা দেখার কথা নয়। আরেকটি কথা এখানে আমি কিন্তু অশালীনতাকে সমর্থন করছিনা। শালীনতাই সমস্ত সভ্য জাতির কাম্য।

ধর্ষণ ও নিপীড়ন নিয়ে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব মানবতার মা শেখ হাসিনা ঘৃণ্য এই অপরাধের বোপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন সে যেই দলের বা সংস্থারই হউকনা কেন কাউকে ছাড় নেই।গণ মাধ্যমের প্রতি তিনি আহবান করেছন ধর্ষকদের ছবি যাতে ফলাও ভাবে প্রকাশ করা হয়, যাতে সমাজের মানুষ তাদের ঘৃণিত ভাবে চিনতে পারে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন।

আর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর এডমিন দের প্রতি আমার আবেদন রইলো: ধর্ষণের খবর প্রকাশ বা ধর্ষণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের ক্ষেত্রে একটি পরিবর্তন আনি। অনেক সময় প্রতিকী কার্টুনেও-ধর্ষকের হিংস্র থাবায় অসহায় একটি নারী বিবস্ত্র বা নগ্ন বোঝানো হয়। এখানটাতে প্রতিকী ছবিগুলোর চিত্র এমন হউক যেখানে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করা হচ্ছ,ওই সময়ে জনতা ধর্ষকের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়ছে বা শাস্তি নিশ্চিত হওয়ায় উল্লসিত। ছবি দিয়ে অপরাধের ধরণটা প্রকাশ করে লাভ কি? প্রকাশ করার মতো নয় এমন ঘৃণা তৈরী করা হউক। ছবি দিয়েঅপরাধীদের প্রতি ঘৃণা ও এই অপরাধের শাস্তির কথা মনে করিয়ে দেয়া হউক সকলের অন্তরে। ধর্ষণের কথা চিন্তা করলেই যাতে মনের চোখে ভেসে ওঠে কঠিন শাস্তির চিন্তা। আমি মনে করি এতেও কিছুটা লাভ হবে।

হ্যা এখান থেকেই শুরু করতে হবে। সামাজিক ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তবে সামাজিক বিচারের মাধ্যমে লোক দেখানো বত্রাঘাত আর জরিমানা করে ধর্ষককে রক্ষা করা যাবেনা। তাকে আইনের হাতে সপোর্দ করে সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগীতা করতে হবে। কেউ যদি ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে সামাজিক বিচারের মাধ্যমে মিমাংসার কথা বলে, তাকেসহ পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে। সঠিক পন্থায় সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়তে না পরলে আমরা এই সমাজের মানুষই ধর্ষিত হবে। আমার এই সমাজের মানুষগুলোই ধর্ষকের তকমা কুড়াবো।

তবে শেষের বাক্যে বলতে চাই ভিন্ন কোন দ্বন্দের প্রতিশোধ নিতে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ এনে কাউকে ফাসানোর চেষ্টা প্রমানীত হলে বাদিকই ধর্ষক হিসেবে শাস্তির আওতায় আনার নজিরও সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের সমাজে এই ঘৃণ্য চর্চাও হয় অহরহ।  ✘
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৩৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×