somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“স্বাধীনতা আমার ভালো লাগেনা”/ সুখপাঠ্য নয় তবে প্রয়োজনীয় পাঠ্য

০১ লা জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সংগ্রহ পর্ব


এটিএন নিউজের নিউজ এবং কারেন্ট এ্যফেয়ার্স এডিটর প্রভাষ আমিনের লেখা বইয়ের নাম “স্বাধীনতা আমার ভালো লাগেনা” যদিও নামটি পড়ে কারোই বোঝার সাধ্য নেই এটা আসলে কিসের বই‍!!! নামের মধ্যেই দারুন নাটকীয়তা। তার চেয়েও বড় নাটকের জন্মদিয়ে বইটি আমার হস্তগত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে ২০১৩’র একুশে বই মেলায়, কিন্তু আমার তখন বইটি কেনা হয়ে ওঠেনি। এরপর প্রভাষ’দার নিয়মিত রিমাইন্ডারের ফলে একদিন সত্যি সত্যি বইটি কেনার জন্য হাজির হলাম আজিজ সুপার মার্কেটের বইয়ের দোকানে। কিন্তু হাজির হলেই তো আর হবেনা, সেখানে তো বইটি পেতে হবে! সব দোকান খুঁজে পেতে যখন প্রায় কনফিউজড (এরই মধ্যে আমি আরো দুটো বই কিনে ফেলেছি এবং নির্ধারিত বই কেনার টাকা প্রায় শেষ করে ফেলেছি। তখন প্রভাষ’দা জানালেন তার বইটি আজিজে পাওয়া যাবেনা। একটি এজেন্সির নাম জানিয়ে বললেন, অনলাইনে অর্ডার দিলে তাঁরা পৌছে দেবে। কিন্তু আমার তক্ষুনি বইটি চাই চাই… কারন আমার আশংকা ছিল সেই বই আমার হাতে আসতে আসতে হয়তো আমি বাকি টাকা শেষ করে ফেলবো :P । শেষে দাদা জানালেন, হয়তো কাঁটাবনের কনকর্ড এম্পোরিয়ামে ঐতিহ্যের শোরুম আছে যেখানে বইটি পাওয়া যেতে পারে। এরপর অভিযান কাটাঁবনের কনকর্ড এম্পোরিয়ামে…ধান ভানতে শিবের গীত গাইছি! আপনারা হয়তো ভাবছেন, কি আছে সেই বইএ? কি জানতে পারবেন বইটি পড়ে? হ্যাঁ ক্যনভাসারদের মত বলতে পারি, এই বইটি পড়লে জানতে পারবেন…

থাক, সে প্রসঙ্গে একটু পরেই আসি। আগে সেই বই কেনার কাহিনী শেষ করি। কনকর্ড এম্পোরিয়ামে পৌছে, এই দোকান সেই দোকান ঘুরে (বই এর দোকানে ঘুরতে খুব একটা খারাপ লাগেনা। দোকান পুরোনো হলে একটু হাচিঁ টাচি হয়, তবে এই মার্কেটের দোকান গুলো ঝা চকচকে) আমি যখন ঐতিহ্যের দরজায় পৌছালাম তখন দেখি দরজা বন্ধ :( পাশের দোকানী বললেন, বন্ধনা, ওই দোকানের লোক নামাজ পড়তে গেছে। আমি আর কি করি, যে দোকানগুলো ঘোরা বাকি ছিল সেগুলো ঘুরে দেখতে লাগলাম। ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে গেলাম পরিচিত এক ভাইকে, যার সঙ্গে অনেক বছর পর দেখা। অনেক অনেক গালগল্প শেষে আবার ফিরলাম ঐতিহ্যে এবং বইটিও খুঁজে পেলাম… :)

যারা ভাবছেন যাক!!! শিবেরগীত অবশেষে শেষ হলো তাদের আশাহত করে জানাচ্ছি পিকচার আবভিবাকি মেরে দোস্ত ;)

বইতো পেলাম, কিন্তু বই’র দাম দেখেতো আমার চক্ষুস্থির ৩ শত ৭৫ টাকা মাত্র। কমিশন টমিশন কি কি সব বাদ দিয়ে, ২ শত ৮০ টাকা। আচ্ছা ঠিক আছে মারি তো গন্ডার লুটিতো ভান্ডার এই ভেবে মানি ব্যাগে হাত দিয়ে দেখি আমি ইতোপূর্বে আরো ৩ টি বই কিনে টাকা খরচ করে ফেলায়, কিছু টাকা কম পড়ে যাচ্ছে। আর বইটারও এমনই কপাল,সবসময় ব্যাগের বিভিন্ন চিপা চাপায় খুঁজলে কিছু না কিছু বের হয় অথচ সেদিন একটি ফুটো পয়সাও বেরোলোনা। কয়েকটি টাকার অভাবে বইখানি আবার শেলফ’এ রেখে ফিরে এলাম আর দোকানীকে কথা দিয়ে এলাম পর দিন অবশ্যই আমি বইটি সংগ্রহ করবো। এর মধ্যে আবার প্রভাষ’দা :( … জানালাম বিশেষ জটিলতার কারনে বইটি সংগ্রহ করা হয়নি এবং তাকেও একই আশ্বাস দিলাম পরদিন নিশ্চই আমি বইটি সংগ্রহ করবো। ভদ্রলোকের ১ জবান, নড়চড় নাই। সেজন্যই বইটি আজ আমার আশে পাশেই মহা আনন্দে গড়াগড়ি খায়।

অবশেষে আমি বইটি শেষ করেছি

বইটি কিনে বাসায় পৌছাতে যতটুকু সময় ঠিক ততটুকু সময় পরেই বইটি পড়া শুরু করেছিলাম... নাহ্ একটু ভুল হলো, পড়তে শুরু করার আগে বেশ খানিকটা সময় হাতে নিয়ে বইটি উল্টে পাল্টে গবেষণা করেছি। গবেষণা করার অনেক কারন ছিল। এটা সেই বই, যে বই আমি রীতিমত অনুসন্ধানী অভিযান চালিয়ে কিনেছি :D ... যেই বইটার জন্য কেবল বইয়ের লেখক নন আমার জানা চেনা আরো অনেকেই প্রচার চালিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম চ্যানেল আই’র নিউজ এডিটর জাহিদ নেওয়াজ খান। প্রথমে তাদের বন্ধুত্বের গভীরতা খানিকটা আন্দাজ করেছি। কিন্তু বইটিতে লেখকের ভুমিকা পড়ে বুঝলাম আমার আন্দাজ ভুল নয়। মুখবন্ধে মুন্নী সাহার লেখাটি পড়ে বুঝতে পারলাম প্রভাষ’দাকে আসলে সবাই ভীষন পছন্দ করে। তিনি যে মিশুক, বন্ধুবৎসল এটা আগেই জানা ছিল। দারুন সেন্স অব হিউমারের অধিকারী এটাও আন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু তা যে এতটা তা আগে বুঝতে পারিনি। পড়া শুরু করতেই বুঝলাম এই বইয়ে স্থান পাওয়া অনেক গুলো লেখা আমি আগেই পড়ে ফেলেছি। এখানে প্রশ্ন করাই যেতে পারে তাহলে… তাহলে শুধু শুধু আমি বইটি কেন কিনলাম!?! এই প্রশ্ন মনে আসাই স্বাভাবিক। এই উত্তরের আগে ছোট্ট করে বলে রাখি অটোগ্রাফ কাহিনীটা। বইটি কিনে আগে প্রভাস'দা কে একটা ধন্যবাদ দেই কারন তাঁর কল্যাণেই বইএর একটা চমৎকার মার্কেট খুঁজে পেলা। জবাবে তিনি জানান, "বেশতো রথ দেখা এবং কলা বেচা দুটোই হলো।" আমি উত্তর দেই " নাহ কলা কিনতে গিয়ে পুরো কলা বাগান পেয়ে গেলাম B-) ।" এ কথা কেন বললাম সেটা প্রভাষ'দার অটোগ্রাফ নোটটা দেখলেই বোঝা যাবে।



পড়তে পড়তে বুঝতে পারলাম এতো কাহিনী করে বইটি কিনে আমি একটুও ভুল করিনি। এই বইকে মোটেও কাঁচকলা বলে অবজ্ঞা করার অবকাশ নেই… বরং আমাদের প্রজন্মের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় একটি বই। আজ থেকে দুই দশকেরও বেশি সময় আগে একজন তরুণ তার সময়টাকে কিভাবে দেখতো বিচার করতো সেটা যেমন বোঝা যায় তেমনি সেই সময়টা কেমন ছিল সেটাও জানতে পারা যায়। পড়তে পড়তে আমার চোখে গণমাধ্যম, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা, সচেতনতার তখন আর এখন ঠিক যতটা ধরা পড়েছে, তেমনটাই জেনেছি, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, সেই আন্দোলনে গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা, এবং এই বিষয়গুলো নিয়ে এক তরুণ গণমাধ্যম কর্মীর ভাবনা। আবার চিত্রপটের ভিন্নতায় সেই তরুণকে দেখতে পাই একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে মানসিক ভাবে যথেষ্ট পরিপক্ক অবস্থায় আমাদের বয়সের তার সময়কে বিচার বিশ্লেষন করতে।

কেবল সেই সময় এই সময়ই না, সমসাময়ীক বিভিন্ন ঘটনার বিশ্লেষন খুঁজে পাই একজন সচেতন মানুষ এবং সমান্তরাল ভাবে একজন সাংবাদিকের চোখে। এসব ঘটনার খুটিনাটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি এমন আরো বিভিন্ন বিষয়কে তুলে এনেছেন যা কিনা একজন সংবাদকর্মীর জানা থাকা আবশ্যক। বিভিন্ন সময়ে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকতেই, প্রতিটি সংবাদকর্মীর পালন করা উচিত এই বিষয়গুলো।লেখক বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে মিডিয়ার অসচেতনতার যেমন কড়া সমালোচনা করেছেন পাশাপাশি মিডিয়া সচেতন এবং শক্তিশালী হলে কি কি অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলা যায় সেটাও উদাহারণসহ ব্যাখ্যা করেছেন। তথ্য বহুল এই বইটি তাই কেবল পড়লেই হবেনা, সংগ্রহেও রাখতে হবে।

সাংবাদিকতা পেশাকে তীব্র ভাবে ভালোবেসে এক তরুণের সংবাদকর্মী হয়ে ওঠার অনেক ছোট ছোট গল্পের সঙ্গে সেই তরুণের শিশুকাল থেকে গড়ে ওঠা অনেক ভাবনা এবং জীবন দর্শনও বিভিন্ন অলিগলি আর চোরা পথে এসে মিলে গেছে লেখার মাঝে। এই বৈচিত্রর ফলে বইটি পড়তে যেমন ভালো লেগেছে, তেমনি জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোকে লেখক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা থেকে আনন্দ নিংড়ে নেয়ার যে অসাধারণ বর্ণনা আছে তাতে কেবল লেখকের উদার দৃষ্টি ভঙ্গি প্রকাশ পায় তা নয়, বোঝা যায় তাঁর অসামান্য প্রাণ শক্তি।

তাই ব্যক্তিগত যায়গা থেকে আমি বলতে পারি বর্তমান সময়ে যেকোন অনাকাংঙ্খিত পরিস্থিতিতে প্রভাষ আমিনের একটি বিশ্লেষন ধর্মী লেখার জন্য আমি যেমন করে অপেক্ষায় থাকি, ঠিক সেভাবেই অপেক্ষা করছি পরের বইটির জন্য।

পুণশ্চ: বইটি পড়া শুরু করলেই বোঝা যাবে, বইটি পড়তে আমি এত সময় কেন নিয়েছি.... এটা গোগ্রাসে গেলার মত কোন বই না। এটা অনেক ধীরে সুস্থে পড়তে হবে। কারন এই বইয়ের অনেক কিছু মাথায় রাখতে হবে.... :)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×