এটিএন নিউজের নিউজ এবং কারেন্ট এ্যফেয়ার্স এডিটর প্রভাষ আমিনের লেখা বইয়ের নাম “স্বাধীনতা আমার ভালো লাগেনা” যদিও নামটি পড়ে কারোই বোঝার সাধ্য নেই এটা আসলে কিসের বই!!! নামের মধ্যেই দারুন নাটকীয়তা। তার চেয়েও বড় নাটকের জন্মদিয়ে বইটি আমার হস্তগত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে ২০১৩’র একুশে বই মেলায়, কিন্তু আমার তখন বইটি কেনা হয়ে ওঠেনি। এরপর প্রভাষ’দার নিয়মিত রিমাইন্ডারের ফলে একদিন সত্যি সত্যি বইটি কেনার জন্য হাজির হলাম আজিজ সুপার মার্কেটের বইয়ের দোকানে। কিন্তু হাজির হলেই তো আর হবেনা, সেখানে তো বইটি পেতে হবে! সব দোকান খুঁজে পেতে যখন প্রায় কনফিউজড (এরই মধ্যে আমি আরো দুটো বই কিনে ফেলেছি এবং নির্ধারিত বই কেনার টাকা প্রায় শেষ করে ফেলেছি। তখন প্রভাষ’দা জানালেন তার বইটি আজিজে পাওয়া যাবেনা। একটি এজেন্সির নাম জানিয়ে বললেন, অনলাইনে অর্ডার দিলে তাঁরা পৌছে দেবে। কিন্তু আমার তক্ষুনি বইটি চাই চাই… কারন আমার আশংকা ছিল সেই বই আমার হাতে আসতে আসতে হয়তো আমি বাকি টাকা শেষ করে ফেলবো
থাক, সে প্রসঙ্গে একটু পরেই আসি। আগে সেই বই কেনার কাহিনী শেষ করি। কনকর্ড এম্পোরিয়ামে পৌছে, এই দোকান সেই দোকান ঘুরে (বই এর দোকানে ঘুরতে খুব একটা খারাপ লাগেনা। দোকান পুরোনো হলে একটু হাচিঁ টাচি হয়, তবে এই মার্কেটের দোকান গুলো ঝা চকচকে) আমি যখন ঐতিহ্যের দরজায় পৌছালাম তখন দেখি দরজা বন্ধ
যারা ভাবছেন যাক!!! শিবেরগীত অবশেষে শেষ হলো তাদের আশাহত করে জানাচ্ছি পিকচার আবভিবাকি মেরে দোস্ত
বইতো পেলাম, কিন্তু বই’র দাম দেখেতো আমার চক্ষুস্থির ৩ শত ৭৫ টাকা মাত্র। কমিশন টমিশন কি কি সব বাদ দিয়ে, ২ শত ৮০ টাকা। আচ্ছা ঠিক আছে মারি তো গন্ডার লুটিতো ভান্ডার এই ভেবে মানি ব্যাগে হাত দিয়ে দেখি আমি ইতোপূর্বে আরো ৩ টি বই কিনে টাকা খরচ করে ফেলায়, কিছু টাকা কম পড়ে যাচ্ছে। আর বইটারও এমনই কপাল,সবসময় ব্যাগের বিভিন্ন চিপা চাপায় খুঁজলে কিছু না কিছু বের হয় অথচ সেদিন একটি ফুটো পয়সাও বেরোলোনা। কয়েকটি টাকার অভাবে বইখানি আবার শেলফ’এ রেখে ফিরে এলাম আর দোকানীকে কথা দিয়ে এলাম পর দিন অবশ্যই আমি বইটি সংগ্রহ করবো। এর মধ্যে আবার প্রভাষ’দা
অবশেষে আমি বইটি শেষ করেছি
বইটি কিনে বাসায় পৌছাতে যতটুকু সময় ঠিক ততটুকু সময় পরেই বইটি পড়া শুরু করেছিলাম... নাহ্ একটু ভুল হলো, পড়তে শুরু করার আগে বেশ খানিকটা সময় হাতে নিয়ে বইটি উল্টে পাল্টে গবেষণা করেছি। গবেষণা করার অনেক কারন ছিল। এটা সেই বই, যে বই আমি রীতিমত অনুসন্ধানী অভিযান চালিয়ে কিনেছি
পড়তে পড়তে বুঝতে পারলাম এতো কাহিনী করে বইটি কিনে আমি একটুও ভুল করিনি। এই বইকে মোটেও কাঁচকলা বলে অবজ্ঞা করার অবকাশ নেই… বরং আমাদের প্রজন্মের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় একটি বই। আজ থেকে দুই দশকেরও বেশি সময় আগে একজন তরুণ তার সময়টাকে কিভাবে দেখতো বিচার করতো সেটা যেমন বোঝা যায় তেমনি সেই সময়টা কেমন ছিল সেটাও জানতে পারা যায়। পড়তে পড়তে আমার চোখে গণমাধ্যম, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা, সচেতনতার তখন আর এখন ঠিক যতটা ধরা পড়েছে, তেমনটাই জেনেছি, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, সেই আন্দোলনে গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা, এবং এই বিষয়গুলো নিয়ে এক তরুণ গণমাধ্যম কর্মীর ভাবনা। আবার চিত্রপটের ভিন্নতায় সেই তরুণকে দেখতে পাই একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে মানসিক ভাবে যথেষ্ট পরিপক্ক অবস্থায় আমাদের বয়সের তার সময়কে বিচার বিশ্লেষন করতে।
কেবল সেই সময় এই সময়ই না, সমসাময়ীক বিভিন্ন ঘটনার বিশ্লেষন খুঁজে পাই একজন সচেতন মানুষ এবং সমান্তরাল ভাবে একজন সাংবাদিকের চোখে। এসব ঘটনার খুটিনাটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি এমন আরো বিভিন্ন বিষয়কে তুলে এনেছেন যা কিনা একজন সংবাদকর্মীর জানা থাকা আবশ্যক। বিভিন্ন সময়ে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকতেই, প্রতিটি সংবাদকর্মীর পালন করা উচিত এই বিষয়গুলো।লেখক বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে মিডিয়ার অসচেতনতার যেমন কড়া সমালোচনা করেছেন পাশাপাশি মিডিয়া সচেতন এবং শক্তিশালী হলে কি কি অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলা যায় সেটাও উদাহারণসহ ব্যাখ্যা করেছেন। তথ্য বহুল এই বইটি তাই কেবল পড়লেই হবেনা, সংগ্রহেও রাখতে হবে।
সাংবাদিকতা পেশাকে তীব্র ভাবে ভালোবেসে এক তরুণের সংবাদকর্মী হয়ে ওঠার অনেক ছোট ছোট গল্পের সঙ্গে সেই তরুণের শিশুকাল থেকে গড়ে ওঠা অনেক ভাবনা এবং জীবন দর্শনও বিভিন্ন অলিগলি আর চোরা পথে এসে মিলে গেছে লেখার মাঝে। এই বৈচিত্রর ফলে বইটি পড়তে যেমন ভালো লেগেছে, তেমনি জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোকে লেখক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা থেকে আনন্দ নিংড়ে নেয়ার যে অসাধারণ বর্ণনা আছে তাতে কেবল লেখকের উদার দৃষ্টি ভঙ্গি প্রকাশ পায় তা নয়, বোঝা যায় তাঁর অসামান্য প্রাণ শক্তি।
তাই ব্যক্তিগত যায়গা থেকে আমি বলতে পারি বর্তমান সময়ে যেকোন অনাকাংঙ্খিত পরিস্থিতিতে প্রভাষ আমিনের একটি বিশ্লেষন ধর্মী লেখার জন্য আমি যেমন করে অপেক্ষায় থাকি, ঠিক সেভাবেই অপেক্ষা করছি পরের বইটির জন্য।
পুণশ্চ: বইটি পড়া শুরু করলেই বোঝা যাবে, বইটি পড়তে আমি এত সময় কেন নিয়েছি.... এটা গোগ্রাসে গেলার মত কোন বই না। এটা অনেক ধীরে সুস্থে পড়তে হবে। কারন এই বইয়ের অনেক কিছু মাথায় রাখতে হবে....
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



