somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দীর্ঘতম শিল্পকলা প্রদর্শনী

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইউরোপের দেশগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নিঃসন্দেহে অসাধারন! সুইডেনও এর বাইরে নয়| বাস, ট্রাম, কমিউটার ট্রেন ছাড়াও মেট্রো সার্ভিস| যা মাটির নিচে তিনটি স্তরে চলাচল করে। তবে, দেশটির প্রধান শহর স্টকহোমের বাইরে মেট্রো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই| তবে সেটা মূল আলোচনার বিষয় না| আগের একটি লেখায় বলেছিলাম, পৃথিবীর দীর্ঘতম শিল্পকর্মের প্রদর্শণী বলা হয় এই মেট্রো স্টেশন গুলোকে| স্টকহোম ভাইকিং ভিলেজআজ সেটা নিয়েই লিখবো
স্টকহোমের মূল কেন্দ্র টি-সেন্ট্রাল থেকে বিভিন্ন দিকে প্রায় একশো বিশ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সাবওয়ে বা মেট্রো সিসেস্টেম| এর একশোটি স্টেশনের মধ্যে ৫৩টি মাটির উপরে আর ৪৭টি মাটির নিচে| উনিশ শতকের শুরুর দিকে ট্রাম চালু হলেও মেট্রো যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হয় ১৯৫০ সালের শেষ দিকে| সেসময় সুইডেনে বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন সমস্যা কাটিয়ে উঠতে নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে| ঠিক সেই পরিস্থিতিতে সেসময়ে ক্ষমতাসীন সোশাল ডেমোক্রেট সিদ্ধান্ত নেয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশের মত শিল্পকলাকে অভিজাত শ্রেনীর ড্রইংরুম, আর্টগ্যলারী আর বড় বড় রেস্টুরেন্টের দেয়াল থেকে তুলে এনে সাধারনের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই স্টেশনগুলোকেই এক একটি শিল্পকলার প্রদর্শনী হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়| কখন কিভাবে সেই প্রক্রিয়া শুরু হলো এবং সেজন্য কি উপায়ে শিল্পীদের খুঁজে প্যনেল করা হলো সে ইতিহাস গুগল করলেই পাওয়া যায়| আমি বরং আমার দেখা আর্ট এক্সিবিশনের কথা লিখি|
মেট্রোর লাইনগুলো লাল, সবুজ এবং নীল তিনটি রং দিয়ে ম্যাপে দেখানো হয়। লাল লাইন সবচে পুরোনো এবং কম গভীর। নীল লাইন সবচে নতুন এবং সবচে গভীর। সেন্ট্রাল স্টেশন এবং এর আশেপাশের স্টেশনগুলো মাটির নিচে এবং দূরেরগুলো বেশিরভাগই মাটির উপরে| কিছু কিছু স্টেশনে এই লাইনগুলো, একটা আরেকটাকে ক্রস করেছে।


লম্বা চলন্ত সিড়ি দিয়ে মাটির নিচে নামতে নামতে চারপাশের পাথুরে দেয়ালের গায়ে রংবেরংয়ের চিত্র ফুটে ওঠে, অথবা কোথাও কোথাও কিছুই না, কেবলই খাপছাড়া পাথুরে দেয়াল তখন বোঝা যায়, শিল্পকলা আসলেই জীবনের সাথে কতটা জড়িয়ে থাকে।


সোলনা স্টেশনটা নীল লাইনে পড়ে। কোন একদিন নীল ট্রেনে করে যাবার সময় স্টেশনে যখন ট্রেনটা থামলো আমি জানালা দিয়ে অবাক হয়ে দেখছিলাম এর রং| সিঁদুর লাল আকাশ আর গাঢ় সবুজের পটভূমিতে আঁকা চিত্রগুলো বেশির ভাগই ছিল আমার দৃষ্টি সীমার বাইরে| এরপরে অবশ্য আরো অনেকবার গিয়েছি, তখন ঘুরে ঘুরে দেখেছি এমাথা থেকে ওমাথা। বন জঙ্গল পার হয়ে কি করে নগর সভ্যতার বিকাশ হলো সেটা চিত্রিত ছিল সেই লাল সবুজ পটভূমিতে। এছাড়াও সুইডেনের সবচে বড় পশু ‘এলি’ যাকে এরা বলে বনের রাজা, তার একটি রেপ্লিকা, ঐতিহ্যবাহী সুইডিশ বাড়ির রেপ্লকা দেখা যাবে পাথরের দেয়ালের মাঝে|



রঅদহুসেত এ নামলে মনে হবে কোন প্রাচীন দূর্গে চলে এলাম! পুরো স্টেশনটাকেই একটি ভগ্নদূর্গের আদল দেয়া হয়েছে। গাঢ় নীল ছাদ এবং চারপাশের দেয়াল পার হয়ে এক পাল তোলা ভাইকিং নৌকা দেখতে পাবেন ফ্রিদেমসপ্লনে। পাশেই ভাইকিং সভ্যতার আরেক নিদর্শণ বিশাল এক এঙ্কর।



টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির স্টেশনটার নাম টেকনিসকা হগসকোলান



সেখানে টেকনোলজি এবং মহাজাগতিক বিভিন্ন বস্তু এবং সাংকেতিক চিহ্নের পাশাপাশি এক মাথায় ছাদে ঝুলানো আছে এক লাল আপেল। এটাই একমাত্র বস্তু যা আমার বোধগম্য এবং আমি ওটার নাম দিয়েছি ‘নিউটনের আপেল’!


এরকম অনেক রেপ্লিকা দেখেছি বিভিন্ন স্টেশনে| কোথাও আছে রুটির ঝুড়ি তো কোথাও হোস্তের(শরত) ঝুড়ি। শরতের খাওয়া হয় এমন ফল এবং ফুলে সাজানো এরকম ঝুড়ি দোকানেও কিনতে পাওয়া যায়| মধ্য সামারে একটা গুরুত্বপূর্ণ উতসব হলো মিডসামার ফেস্টিভেল। সেই উতসবে ব্যবহৃত মাথার গোল মুকুট এবং এসংক্রন্ত আরো অনুসঙ্গ দেখা যাবে মিডসোম্মারস্ক্রানসেন স্টেশনে।



টাইলস আর্ট আর পিক্সেল আর্টও পিছিয়ে নেই| কোথাও টাইলস কেটে শিল্পকর্ম ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে, কোথাও চিত্রিত টাইলস সেট করে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে দীর্ঘ চিত্র। একই কথা যায় পিক্সেল আর্টের সাথেও|


কোথাও স্থাপন করা হয়েছে ভাস্কর্য আবার কোথাও বসার বেঞ্চগুলোকেই ভাস্কর্যের রূপ দেয়া হয়েছে।



বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিল্পকর্মের স্রষ্টা এবং এর ব্যাখ্যা থাকলেও সুইডিশ না জানার কারনে শুরুতে বুঝতাম না| ট্রান্সলেটরের সাহায্য নিয়ে অর্থ হয়তো পেতাম কিন্তু মর্মার্থ পেতে হলে এদেশের সাংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে হবে| অথবা, চলতি ট্রেনে বেখায়ালে চোখে পড়া কোন জিনিস হয়তো, পরে জানতে পারা কোন বিষয়ের সাথে রিলেট করলেন! সেটাও এক ধরনের মজা| আর সেটা যদি হয় ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক কোন বিষয় তবে তো কথাই নেই! এই যেমন কিছুদিন আগে হক্যেরিঙ্গেন যাচ্ছিলাম, ওদিকটায় মেট্রো মাটির উপরে উঠে এসেছে। স্যন্ডসবোরি পার হতে হতে ট্রেনের জানালা দিয়ে চোখ পড়লো সারি সারি কবর! এত পুরোনো, এত সবুজ, এত দীর্ঘ আর এত সুন্দর যে মনোযোগ না আটকে পারেই না! পরে একদিন অন্য কাজে ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখলাম ওদের ঘোষনা করা একটা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ আছে স্টকহোমে| গুগল ম্যাপে খুঁজে পেলাম সেই গ্রেভইয়ার্ড! সেটার বিস্তারিত না হয় আরেকদিন বলবো
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:০৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×