somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেলে মেয়ের সম্পর্কের পিছনের দ্বন্দ......

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আগে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন- "ছেলে ও মেয়ের মাঝে কি সতস্ফুর্ত এবং সহজ বন্ধুক্ত হয়া সম্ভব ?"


এবার প্রশ্নের উত্তর ভাবতে ভাবতে আমার কিছু চিন্তা ভাবনা শুনে নিন।



শুরু করি বিখ্যাত এক লেখকের অভিজ্ঞতা দিয়ে।

" আমি তখন সবে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছি। আমার প্রতিবেশী একজন ছেলে আমার ক্লাশেই অন্য এক স্কুলে পড়তো। পড়াশোনায় সাহায্য, ঘুরে বেড়ানো, গল্প করা- সবি তার সাথে এমন অনায়াসে ঘটতো, আমরা কখনোই বুঝে উঠার অবকাশ পাইনি, আমরা দুজন ছেলে এবং মেয়ে - এরকম আলাদা দুটি সত্তা। সেই সময় আমার এক যায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব এলো। যে প্রস্তাব নিয়ে এসেছে সে আমার পাশে দাঁড়ানো সেই ছেলেকে দেখে প্রশ্ন করে উঠলো, "ও তোমার কে হয় ?"

আমার অবচেতন মন আড়ষ্ট কন্ঠে বলে উঠে- "ও আমার প্রতিবেশি, আমার ভাই।"


-----------------------------------------




ছেলে মেয়ের বন্ধুক্তকে আমরা বাঙ্গালীরা কখনোই সহজ ভাবে মেনে নিতে পারিনি। অন্তত বেশিরভাগ মানুষের বেলাতেই। জাতিগতভাবেই আমরা হিপোক্রেট। হয়ত মেনে নিতে পারি- ছেলে মেয়ের মাঝে পিওর বন্ধুক্ত সম্ভব। অথচ তার পরেই কোন বন্ধুকে তার বান্ধবীর সাথে রিক্সায় যেতে দেখলে বাকা চোখে তাকাতেও দ্বিধাবোধ করিনা। তার মানে নিজেকে প্রগতিশিল বা মুক্তমনা ভাবতে আমাদের ভালো লাগে, তবে ইমপ্লিমেন্টেশনের যায়গায় আমরা ব্যার্থ।




ছেলে এবং মেয়েতে কখনোই বন্ধুক্ত হতে পারেনা, এই কথাটি যারা বিশ্বাস করেন, তারা এই বিশ্বাসের পিছনে অবচেতন এক আকর্ষন কে দায়ী করেন। এ আকর্ষন কি শারিরিক, নাকি প্রচলিত সমাজ ব্যাবস্থার মানসিক ম্যানুপুলেশন, তার উত্তর নিয়ে সন্দেহ আছে।
আমার দু এক জেনারেশন আগেও বন্ধুক্ত ব্যাপারটি শুধু সমলিঙ্গে সীমাবদ্ধ ছিলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। গ্রামে কিংবা মফস্বলে আমরা এখনো দেখি একই গ্রামে বড় হওয়া, একই বাতাস আর ধুলাবালিতে গড়ানো কোন এক পুরুষকে দেখে গ্রাম্য বধু মাথায় টেনে দেয় ঘোমটা। অথচ সম্পর্ক টা হতে পারত নির্মল এক বন্ধুক্তের। "বন্ধু " শব্দটার মত পবিত্র একটা সম্পর্ককে আমরা "বন্ধ" করে রাখছি। যে মেয়ের একাধিক ছেলে বন্ধু, তাকে নিয়ে আমরা সন্দেহ প্রকাশ করছি। সেইম ব্যাপার ছেলেদের বেলায় ও খাটে, যদিও কিছুটা কম।

এই সমস্যার একেবারে বেসিক দিকে অবজার্ভ করলে দেখা যায়, সমস্যার সূত্রপাত হচ্ছে শৈশবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছেলে মেয়ে আলাদা স্কুলে পড়ে, আলাদা নিয়ম নীতিতে বড় হয়, আলাদা যাপিত জীবনে অভ্যস্ত হয়। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয় অথবা ক্যারিয়ার লাইফে এক হলেও তাদের মাঝে থেকে যায় চিন্তা চেতনার বিরাট এক পার্থক্য। এই পার্থক্য তাদের এক হতে বাধা দেয়, বাধা দেয় তাদের কমিউনিকেশন পারফরমেন্সেও।

বলা হয়- "ছেলেমেয়ের মাঝে বেশি মেলামিশা ঠিক নয়।" দুইটা শিশুকে শিশু হিসেবে না দেখে ছেলে বাচ্চা মেয়ে বাচ্চা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা তাদের মাঝে সৃষ্টি করে এক বৈষম্য। এই বৈষম্যই পরবর্তীতে তৈরি করে আড়ষ্ঠতা, জড়তা। তারা নিজেদের নিয়ে অন্যরকম করে ভাববার প্রয়াস পায়। " ও আচ্ছা, আমরা তাহলে দুইটা আলাদা সত্তা ! " বাস, চিরদিন ধরে দেখা মেয়েটা ছেলেটার কাছে হয়ে উঠে রহস্যময়ী, অন্যরকম আকাঙ্খার। আর ছেলেটা মেয়েটার কাছে হয়ে উঠে বাইরের মানুষ, পরপুরুষ।

দুটি ভিন্নস্থানে , ভিন্ন পার্পেক্টিভে বড় হয়া ছেলেমেয়েদের মাঝে এ আকর্ষন কে কি বলে অভিহিত করা যায় ? একে না বলা যায় প্রেম, না বলা যায় সহজ বন্ধুক্ত। এ সম্পর্কের নাম কি তবে ?

দ্বিতীয়বার ধাক্কাটা আসে অন্যদিক থেকে। বলছি-

আমি আগে যে উদাহরন টা দিলাম, তার শুরু হয় নিজ পরিবার থেকে। সোশালাইজেশনের প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র পরিবার হলেও , এখানে পরিবার কাজ করে স্পন্টেনিয়াস সোশালাইজেশনের বিপক্ষে।

কো এডুকেশনে পড়া ছেলেমেয়ের মাঝে এই সমস্যা কম দেখা যায়। তারা সাধারনত অনেক সতস্ফুর্ত হয়। তারা ছেলে- মেয়ের বাধা ডিঙ্গিয়ে আগে নিজেদের মানুষ ভাবার সুযোগ পায়। পরে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে তাদের মাঝে আর কোন জড়তা কাজ করেনা। একসাথে স্টাডি, হ্যাং আউট আর ফান চলে সমানতালে। এই সাবলিলতার যায়গাটা রুদ্ধ হয়ে যায় দ্বিতীয় ধাক্কায়। সেটা হলো- বিয়ে। সেই জন্মের পর থেকে একই বৃত্তে বড় হয়া ছেলেদের সাথে মেয়েটি তার স্বামীদের পরিচয় করিয়ে দেয়- সহপাঠী বলে, বন্ধু বলে নয়।

ব্লগে আমার বয়সী যারা আছেন, অর্থাৎ সদ্য গ্রাজুয়েশন করা বা করছে, এমন বয়সী- তারা এটা খুব ভালো বুঝতে পারবেন। কারন এই সময়টাতে বেশিরভাগ মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। নিজের ভার্সিটির বন্ধুবান্ধবের মাঝেই এই উদাহরন অনেক দেখা যাবে। কত বন্ধুদের যে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, সেই সাথে ফ্রেন্ডশিপের সীমানার বাইরে চলে যাচ্ছে কত জন......

কখনো কখনো স্বামী নিজেকে উদার প্রমান করতে স্ত্রির বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যোগ দিলেও স্ত্রী অবচেতনভাবেই সতর্ক হয়ে উঠে।সেই ধাক্কাধাক্কি, বকাঝকা আর ফ্রেন্ডশিপের সম্পর্কটা গিয়ে দাঁড়ায় ফরমাল এক পরিমিতবোধের যায়গায়।



অন্যদিক দিয়ে চিন্তা করি।


অনেক সময় দেখা যায়, তিনজন ছেলে বন্ধু একজন মেয়ে বন্ধুর কাছে কতটা গুরুত্বপুর্ন, এই সহজ ইর্ষায় জড়িয়ে পড়ে নিজেদের, মেয়েটার এবং বন্ধুক্তের যায়গাটা সঙ্কটাপন্ন করে তুলে। নিজেরা একজন আরেকজনকে ভুল বুঝে। এই সন্দেহ প্রকাশ করে- হয়তো কেউ একজন মেয়েটির বন্ধু নয়, বরং প্রেমানুরাগী। এতে করে বন্ধুক্তের যে মূল যায়গা, পরস্পরের প্রতি মমতা, সহমর্মিতা, তা নষ্ট হয়ে যায়।

গভীর বন্ধুক্ত যে প্রেমে গড়ায় না, তা নয়, বরং সেই সম্পর্ক প্রেমে গড়ালে তা অনেক সহজ হয়ে যায়। বন্ধু হিসেবে আগে থেকেই দুজন দুজনকে জানার সুযোগ থাকায় বিয়ে পরবর্তি অনেক ঝঞ্জাট এড়ানো যায়। কিন্ত সব সম্পর্ক প্রেমে গড়াবে এমন একটা ধারনা থেকে যখন অভিভাবকগন একটি নির্মল বন্ধুক্তের ক্ষেত্রে সতর্কতা তৈরি করেন, তখন সেই নির্মলতার মধ্যে কিছুটা অসস্তি চলে আসে।





এত সব কিছুর ভিড়েও ছেলেমেয়েতে নির্মল বন্ধুক্ত হয়, অভিভাবকদের ঢুকিয়ে দেয়া তারা সশিক্ষায় উপড়াতে পারে বলেই সেই বন্ধুক্তটা হতে পারে। কোথাও বন্ধুক্তের ক্ষেত্রে জন্ম নেয় অন্যরকম এক দুর্বলতা। কিন্ত সব বিষয় কে এক ছকে ফেলে ছেলেবেলা থেকেই তাদের মধ্যে সন্দেহের বীজ ঢুকিয়ে দুটি সত্তাকে সারা জীবনের জন্য সরলতামুক্ত করে তোলার কোন অর্থ নেই।



আমি এই পোস্টে শুধু সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করলাম। তবে এর পিছে ধর্মের অনেক গুরুত্বপুর্ন একটা ভুমিকা উল্লেখ করা হলোনা । উল্লেখ করা হলোনা বায়োলজিকাল এবং সাইকোলজেকাল পার্স্পেকটিভ। পরে অন্য কোন পোস্টে হয়তো অন্য কোন পয়েন্ট অফ ভিউ আসবে।




এগুলো সব ই আমার একান্ত অনুভূতি, দ্বিমত থাকতে পারে, তবে তাতে করে মূল ব্যাপারটা মনে হয় খুব একটা পরিবর্তন হবেনা।
আপনাদের মতামতের অপেক্ষায়।


উৎসর্গঃ বন্ধু নাফিজ মুনতাসির ,ছেলেটা মনে হয় অনেক বিক্ষপ্ত একটা সময় পার করছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩২
৭৪টি মন্তব্য ৭৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×