somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজ্ঞাপনের গুষ্টি উদ্ধার !! পর্ব ১ :P

১১ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আজকে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন নিয়েই চলুক গল্প-সল্প।


বাংলাদেশে মিডিয়ার যে কয়টি সেক্টর চরম সম্ভাবনাময়, তার মাঝে একটি হচ্ছে এডভার্টাইজিং ইন্ডাস্ট্রি। ফিল্ম, জার্নালিজম কিংবা নিও মিডিয়ার ঘোরপ্যাচে পড়ে অনেকেই এদিকে তাকানোর সুযোগ পাচ্ছে না। তবে তরুন সম্প্রদায় এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছে অনেক টা, সে কারনেই বিগত ৮/ ১০ বছরের মাঝে কোথা হতে কোথায় চলে গিয়েছে এই শিল্প, তা নিশ্চই আপনারা দেখতে পারছেন। :)



বিজ্ঞাপন কি, সেটা জানার আগে আপনাকে জানতে হবে ব্রান্ডিং কি ? ব্রান্ডিং কি জিনিস ? এটা কি খায়, নাকি মাথায় দেয় ?


ব্রান্ডিং মানে হচ্ছে "কমোডিটি উইথ আইডেন্টিটি"।

বুঝেন নাই ? এখানে কমোডিটি হচ্ছে পন্য, আর আইডেন্টিটি হচ্ছে পরিচিতি।

কিতাবি ভাষায় না গিয়ে নিজের মত করে বুঝানোর চেষ্টা করি। মনে করেন- আপনাকে আমি একটা লাক্স, এরোমেটিক, ডাভ আর কসকো থেকে একটি সাবান বেছে নিতে বললাম। আপনি কোন টা বেছে নিবেন ?

আমি হলে লাক্স বেছে নিবো। কারন এটার দাম, গন্ধ, কালার, কোয়ালিটি আমার সাথে যায়। আমি এটা চিনি, আমার এটা ভালো লাগে। সেই সাথে এটা সহজলভ্য। তাহলে লাক্স হচ্ছে আমার ব্রান্ড।

আবার আমার টাকা পয়সা একটু বেশি হলে আমি হয়তো ডাভ এর দিকে ঝুকতাম :D । তার মানে ক্ষেত্র বিশেষে আমার কমোডিটির চয়েস চেঞ্জ হচ্ছে। এই যে পন্যের একটা পরিচিতি আমার কাছে আছে, ইহাই ব্রান্ডিং। বলা জেতে পারে, আপনার ব্রান্ড কে আপনার কাছে পরিচিত করাই হচ্ছে ব্রান্ডিং এর মুল কথা।


আমরা প্রতিনিয়তই ব্রান্ড পছন্দ করছি, এমন কি নিজেও ব্রান্ডিং করছি। আমি ব্রান্ডিং করছি আমার লেখার, চার্চ অথবা মসজিদ ব্রান্ডিং করছে গডের, ইউনিলিভার ব্রান্ডিং করছে তার পন্যের, গ্রামীন, বাংলালিঙ্ক ব্রান্ডিং করছে তার টেলিকম সার্ভিসের ইত্যাদি ইত্যাদি। এর মাঝে যে ব্রান্ড আপনার পরিচিত হবে, যাকে আপনি চিনবেন, যাকে আপনার ভালো লাগবে, তার ব্রান্ড আইডেন্টিটিই আপনার কাছে ইস্টাবলিশ হবে।


ব্লগীয় উদাহরন দেই কিছু ;)


স্যাটায়ার এর ব্রান্ড হিসেবে আমি সবার আগে বেছে নিবো মুখফোড় অথবা দূর্যোধন কে। গল্পকার হিসেবে হামাকে। আবার টেকির ক্ষেত্রে প্রবাসী অথবা নাফিস ইফতেখার কে। তাহলে উহারাই হচ্ছে আমার কাছে ব্রান্ড। আপনার ব্রান্ড ভিন্ন হতেই পারে। কারন প্রত্যেক ব্লগার ই এক একটা ব্রান্ড। কাজেই কে আপনার কাছে কতটা প্রতিষ্ঠিত, সেটা ডিপেন্ড করছে আপনার চাহিদা, আর ব্লগারের ব্রান্ডিং প্রসেস এর উপরে।


নানা সময়ে আমরা পোস্ট দেখতে পাই, কিভাবে ব্লগে নিজের হিট বাড়াবেন। এর কিছু প্রচলিত সিস্টেম আছে। যেমন-

আপনি খায়া না খায়া মন্তব্য করে যেতে পারেন সকল পোস্টে। নিজের লিঙ্ক কপি করে আসতে পারেন ফেবুতে অথবা কোন মন্তব্যে। ইন্টারেকশন বাড়াতে পারেন ব্লগে মামা, চাচা , জ্যাঠা বানানোর মাধ্যমে, পিক আওয়ারে পোস্ট দিতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এর মাঝে ফালতু ব্রান্ডিং হলো রি-পোস্ট। কারন এতে আপনার ব্রান্ডের প্রতি মানুষ বিরক্ত হচ্ছে। আপনার ব্রান্ডের দাম কমে যাচ্ছে। তার মানে অনেক রকম ব্রান্ডিং প্রসেসের মাধ্যমে আপনি নিজ ব্রান্ডকে যেমন প্রতিষ্টিত করতে পারেন, তেমনি ফল ও করতে পারেন। ডিপেন্ড করবে আপনার ক্রিয়েটিভিটির উপরে। তবে কোয়ালিটিকে প্রাধান্য দিতে হবে সবার উপরে।


এখন চলে আসে বিজ্ঞাপনের ব্যাপার স্যাপার।


বিজ্ঞাপন কি ?

বিজ্ঞাপন হচ্ছে ব্রান্ডিং এর সবচাইতে কার্যকরি পদ্ধতি। ইহা হচ্ছে গনজোগাযোগের একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে আপনি মিডিয়া ব্যাবহার করে আপনার টার্গেট মানুষের কাছে যে কোন ম্যাসেজ পৌছে দিতে পারেন। তাকে কিছু জানাতে পারেন, কিছু করতে বলতে পারেন, কিছু কিনতে বলতে পারেন, এমন কি কিছু মানাও করতে পারেন। এডভার্টাইজিং শুধুমাত্র টিভি বিজ্ঞাপন নয়, এটা মাথায় রাখতে হবে। যে কোন ক্রিয়েটিভ এপ্রোচ হতে পারে বিজ্ঞাপনের হাতিয়ার।

আপনি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন, তাহলে লেখালেখিকেই বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন। ফটোগ্রাফি, পেইন্টিং, এক্টিং, ফিল্ম মেকিং কিংবা যে কোন কিছু- শুধু দরকার যায়গামত সৃষ্টিশীল উপস্থাপন।

আসেন দেখি বিজ্ঞাপন হতে পারে কি কি ধরনের।

আসলে প্রকার ভেদ হতে পারে অনেক ধরনের। তবে আজকে কথা বলি এটিএল আর বিটিএল নিয়ে। এটিএল মানে হচ্ছে এবভ দা লাইন, আর বিটিএল মানে হচ্ছে বিলো দা লাইন। :|

ভয় পাইসেন নাকি ? আরে, ব্যাপার না, সব বুঝায়া দিচ্ছি। :)


আগে একটা উদাহরন দেই।

হুইলের কাহিনী মনে আছে ? তারা করলো কি একবার গ্রামে গঞ্জে কতগুলা মহিলাকে ব্যাগ হাতে নামিয়ে দিলো। সবাই তাদের চিনতো হুইল আপা নামে। তারা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মানুষ কে জিজ্ঞেস করতো, আপনার বাড়িতে কি ধোয়া কাপড় আছে ? পরে তারা ধোয়া কাপড়কে হুইল দিয়ে ধুয়ে ময়লা বের করে দেখাতো। পাব্লিক দেখতো, আরে, হুইল ই তো সবচেয়ে ভালো। ধোয়া কাপড় থেকেও ময়লা বের করে ফেলে। হা হা। এই হলো বিলো দা লাইন এড।
মানে যেই ধরনের এডে আপনার টার্গেট গ্রুপ বা ক্লায়েন্টের সাথে আপনার সরাসরি যোগাজোগ হবে। সে আপনাকে বা আপনার পন্যকে টিভি অথবা বিলবোর্ডে দেখবেনা। দেখবে সরাসরি। এতে করে আপনার সাথে ক্লায়েন্ট কানেক্টেড হইবে। তৈরি হবে ব্রান্ডিং।

আরেকটা কাহিনী বলি।

গ্রামে গঞ্জে বিনোদনের একটা মাধ্যম হলো যাত্রাপালা। স্টেজ করে নাটক ও দেখানো হয় অনেক সময়ে। একবার সানসিল্ক করলো কি, মফস্বলে নাটক দেখানোর ব্যাবস্থা চালু করলো। নাটকের কাহিনী হচ্ছে ভাবি আর ননদ কে নিয়ে। ননদের এক ছেলেকে পছন্দ। কিন্ত সে দেখা করতে যেতে পারেনা কারন তার চুল অনেক জট পাকানো। সে মন খারাপ করে বসে বসে কাদে। দর্শক ও কিন্ত তার জন্য মন খারাপ করে। পরে ভাবি তাকে বলে তুমি ননদ শ্যাম্পু ইউজ কর। ননদ বলে শ্যাম্পু তো ভালা না। চুল পইড়া যায়। ভাবি তলহন বলে কি বল, সানসিল্ক ইউজ কর। এইটা তো অনেক ভালো। কি বলেন আপ্নারা- সানসিল্ক ভালা না ? দর্শক্রা বলে হ্যা হ্যা ভালো। তারপরে সে সান্সিল্ক দিয়ে চুল ধুয়ে দেখা করতে যায় প্রেমিকের সাথে। ননদ ও খুশি, দর্শক ও খুশি। যাওয়ার সময়ে দর্শক রা কম দামে বিশেষ অফারের সানসিল্ক কিনে নিয়ে যায়। =p~

এই হচ্ছে বিটিএল এডভার্টাইজিং। এখন অবশ্য মানুষ আগের মত বোকা নাই। সবাই আধুনিক হৈসে, তাই বিটিএল এর ধরন ও চেঞ্জ হইসে। এখন স্টেজে ননদ ভাবির বদলে অভিনয় করে শাহরুখ খান। মানুষ আবার পাচ দশ হাজার টাকা করে টিকেট কিনেও দেখতে যায়। যাই হোক, কথা হলো- সকল রকম ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, কনসার্ট, হুইল আপা, ইন হাইউজ এডভার্টাইজিং এই ধরনের এডের মধ্যে পড়ে।

আর এটিএল হচ্ছে এবোভ দা লাইন। মানে আমরা পরোক্ষ ভাবে যা দেখি বা শুনি। সাধারন এড বলতে যা বুঝি আরকি। এই ধরেন, বিলবোর্ড, পোস্টার, টেলিভিশন কমার্শিয়াল(টিভিসি), রেডিও কমার্শিয়াল(আরডিসি), অনলাইন এড, মোবাইল এড ইত্যাদি ইত্যাদি।


আজকাল এড এজেন্সিগুলা ব্রান্ডিং থেকে শুরু করে এটিএল, বিটিএল, প্লানিং, স্ট্রাটেজি মেকিং, মিডিয়ার কাছে তা আবার সেল করা সব ধরনের কাজ ই করে থাকে। তাই এডভার্টাইজমেন্টের এই যুগ কে বলা হয় ৩৬০ ডিগ্রি এডভার্টাইজিং। মিডিয়ার চাঙ্ক নিয়ে কিন্ত নানান রকম সমস্যাও হয়। সেইগুলা নিয়ে আস্তে ধিরে গল্প সল্প করবো।

এখন আসেন বাংলাদেশের এড এজেন্সির দুই দিকপাল এবং আমার পরম শ্রদ্ধেয় আলী জাকের (এশিয়াটিক ৩৬০) এবং গিতিয়ারা চৌধুরির একটা টক শো শুনি।( যদি ধৈর্যে কুলায়) ;)







আজকের মত একটা ব্যাপার দিয়ে শেষ করি। এড কিন্ত কিছু মিডিয়া ল এবং এথিক্স ফলো করে। অর্থাৎ আপনি চাইলেই যা খুশি দেখাতে পারবেন না, মিথ্যা বলতে পারবেন না। একি এজেন্সি থেকে দুই কম্পানির একি প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন না। কাজেই এড মানেই আগডুম বাগডুম না।

তবে এইসব বিস্তারিত আলোচনা পরের পর্বের জন্যই জমা থাকুক।

বিজ্ঞাপনের গুষ্টি উদ্ধার - পর্ব ২

--------------------------------------------------


পোস্ট উৎসর্গঃ কবি ও কাব্য , ইনার প্রানশক্তি ও উদ্যমতা আমাকে রীতিমত মুগ্ধ করে। ভাই আপনাকে এবং আপনার রেডিওকে স্যালুট।



সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৭
১০১টি মন্তব্য ৯৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×