somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিসেস অমুক কিংবা মিসেস তমুক... আমার নারীভাবনা।

১৭ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আমি বরাবরি নারী স্বাধীনতা এবং নারী পুরুষের সমান অধিকারে বিশ্বাসী। কিন্ত এ ব্যাপারটা চিন্তা করতে গিয়ে কিছু এলোমেলো চিন্তা আসছে মাথার ভিতরে। ব্যাপারটা শেয়ার করি আপনাদের সাথে। তবে বলে রাখি নারী বিষয়ক অহেতুক চুলকানি আছে, এমন কেউ লেখাটা পড়া থেকে বিরত থাকলে ভালো হয়।

নারী যতই প্রগতিশিল হোক না কেন , নিজের সার্বিক আত্মসন্মানের ব্যাপারে যদি সচেতন না হন, তবে স্বকীয়তা বজায় রেখে অস্তিত্ব নিয়ে মাথা উচু করে দাড়ানোটা সমস্যা হয়েন যাবে। সমাযে শিক্ষার হার যতটা বাড়ছে, নারীর স্বাধীনতাবোধ এবং মেধার জাগরন ও বাড়ছে। কিন্ত মজার ব্যাপার হচ্ছে, একই তালে বেড়ে চলছে তাদের অবচেতন মনে পরাধীনতার প্রবনতা। তারা কিছুতেই পুরুষের ছায়াতল হতে পুরোপুরি বের হতে পারছেনা।

উদাহরন দিলে বুঝতে সুবিধা হবে।

আমরা যদি সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারীদের দিকে তাকাই তবে দেখতে পাব নারীর ক্ষমতায়নের গন্ডি বড় হচ্ছে, তবে ইন্টারনাল সাইকোলজির দিক থেকে তারা এখনো মুক্তমনা হতে পারেন নি। প্রসংক্রমে বলা যায়, নিজে প্রধান্মন্ত্রী হয়েছেন, প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রি হয়েছেন, কিন্ত তারপরেও খালেদা নামটির অস্তিত্ব থাকেনা, তা রুপান্তরিত হয় বেগম জিয়াতে। এ যেন নিজের যোগ্যতায় নয়, স্বমীর প্রতিনিধি হয়ে তিনি দেশের দায়িত্ব গ্রহন করেছিলেন। একই ব্যাপার আরো অনেকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শিল্প সাহিত্যের জগতে, গানের জগতে, নাটকে সিনেমায়, সর্বত্র স্বামীর লেবাসে আটা প্রগতিশীল নারীদের পদচারনা।

এভাবে ব্যাপারটা ভাবা যায়, মেয়েদের আকীকা হয় দুবার। একবার জন্মের পর খাসি বা গরু জবাই দিয়ে, অন্যবার স্বামীগৃহে নিজের স্বকীয়তা বিলিয়ে দেবার মাধ্যমে। একজন মেয়ের জন্মের সময় নিজের নাম নির্ধারনের কোন সুযোগ থাকেনা। তার পিতামাতা কিংবা আত্মিয় স্বজন পছন্দ করে নাম রাখেন। কিন্ত মেয়েটি যখন পিতার ঘর ছেড়ে স্বামীর গৃহে পদার্পন করে, তখন তিনি অত্যন্ত অহংকারের সাথেই নিজের নামের সাথে স্বামীর নামের শেষাংশ জুড়ে দেন। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার যেটি, তা হলো- বিশ্বজুড়ে প্রগগতিশীল নারিরাই কিন্ত এটি চালু করেছেন।

তাহলে কি সত্য এই যে, নারী যতই আধুনিক কিংবা প্রগতিশীল হোক, সে তার চিরদাসত্বের যায়গা থেকে বের হতে পারেছেনা? আমাদের অধিকাংশ নারীদের কথা বাদ দিলাম, উন্নত বিশ্বে, পশ্চিমা রাষ্ট্র গুলোতেও কি তাই ঘটছেনা ? কাজের প্রতিটা ক্ষেত্রে তারা পুরুষের সাথে একই সমান্তরালে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক ক্ষেরেই নারীরা তাদের স্বামীদের চাইতেও প্রতিভাবান। কিন্ত দুক্ষজনক সেই প্রতিভাবান নারীর প্রতিভার প্রতিনিধিত্ব করে তার স্বামীর নামের পদবী। হিলারি কি নিজের যায়গাতে যথেষ্ট সক্ষম নয় ? তারপরেও কেন নামের শেষাংসে জুড়ে দিতে হবে ক্লিনটন নামটি ?

সবচাইতে মজার ব্যাপার আমাদের দরিদ্র অশিক্ষিত মূর্খ নারীদের বেলায় কিন্ত এই নিয়ম খাটেনা। গ্রামের আমেনা খাতুন আমেনা রহমান হয়ে যায় না। সে আজীবন আমেনা খাতুন ই থাকে। স্বামীর নাম নিজের নামের সাথে জুড়ে দেবার ব্যাপারে তার মধ্যে এক রকম লজ্জাও কাজ করে। যে কাজটি আমাদের গ্রাম্য সমাজে অবাধে হচ্ছে, তা কেন সুশিল শিক্ষিত সমাজে প্রশ্নের জন্ম দেয় ?

তবে এই লিজ্জাবোধ টা কিন্ত পুরোপুরি স্বাধীনতা বোধ থেকে নয়। সে কখোনই জানতে পারেনা, নিজ নাম নিয়ে বেচে থাকার মধ্যে মর্যাদা কতটুকু। বরং তার লজ্জা- এতে করে সে আধুনিক নারীদের দলে পড়ে যাবে। অসম্ভব প্রতিভাময়ী ইন্দিরা গান্ধিও কিন্ত এই পাক থেকে বের হতে পারেন নি।

প্রায়শ জন্মের পর থেকে বহন করা নিজের নাম পরিবর্তিত হয়ে যায় মিসেস আকবর, মিসেস তরফদারেরে। উচ্চবিত সমাজে বিশাল পার্টির মধ্যে চলতে থাকে মিসেস অমুক তমুকের খেলা। এবং আমাদের মিসেস আকবর, বাস্তবে যিনি হয়তো সাবিহা আখতার , এই সম্বোধনে দ্বিগুন গর্বে ফুলে গিয়ে হাসিতে মত্ত হয়ে পড়ে। আধুনিকতার বিশাল স্তম্ভের নিচে চাপা পড়ে যায় একজন সাবিহা, মালিহা কিংবা নিশিতা, সেই সাথে চাপা পড়ে তাদের স্বকীয়তা। একে কোনভাবেই আধুনিক নারী মানসিকতা বলা যায় না। আমার সন্দেহ আছে, তথাকথিত সেই সব নারীদের নিয়ে , যারা স্বাধীনতার বুলি কপচায় সোশাল পার্টিতে, কিন্ত নিজেই ধারন করে আছে আরেকজনের আইডেন্টিটি, তারা কতটা বুঝে নারীর সার্বিক স্বাধীনতার অর্থ।

আরেক্লটি অস্বস্তিকর অবস্থা হচ্ছে , আমাদের শিক্ষিত সমাজে প্রায় ই দেখা যায় একজন নারীর নামের অর্ধাংশ জুড়ে থাকে তার বাবার নাম। সেই শ্রৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে বিয়ের পর সে পড়ে যায় আরেক শৃংখলে। কদাচিত কেউ যদি নাম পরিবর্তন না করে, তবে তাকে পড়তে হয় আরেক রকম বিভ্রাটে। যেমন মহিলার নাম মিসেস আনিকা মহিউদ্দীন। মহিউদ্দীন তার বাবার নামের অংশ। কিন্ত বিয়ের পর নাম পরিবর্তন না করায় তাকে অনেকেই ভুল করে মিসেস মহিউদ্দীন ডেকে ফেলেন। ব্যাপারটা কিন্ত মোটেই হাস্যকর নয়। বরং একটি প্রশ্নের সন্মুখীন করে দেয় নারী সমাজকে।

প্রশ্নটি হচ্ছে, "আপনি মিসেস মহিউদ্দীন বা মিসেস রহমান, আপনি নারী স্বাধীনতার বুলি কপচান কথায় কথায়, আপনার বাস সমাজের সবচাইতে উচু মহলে, আপনিই নির্ধারন করেন নারী সমজের উন্নতির পলিসি, অথচ আপনার চেয়ে গ্রামের সেই আমেনা খাতুন - যে আধুনিকতা কিংবা নারি স্বাধীনতার অর্থ না জেনেই আমেনা রহমান হতে লজ্জাবোধ করে, সেই কি বেশি প্রগতিশিল নয় ??

কলেজ লাইফের একটা ঘটনা দিয়েশেষ করি। নটরডেমের বায়োলজির শিক্ষক গাজী আজমল স্যার। একবার দেখলাম তার মন খুব খারাপ। জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে স্যার ? কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন- আজকে মেয়ের জন্য একটা ফরম ফিলাপ করতে গিয়ে পিতার নাম/স্বামীর নাম এর যায়গাতে , পিতার নামে ক্রস চিহ্ন দিয়ে স্বামীর নাম বসাতে হয়েছে। আমি কি মেয়ের বিয়ের পর এত বছরের অভিভাবকত্ব, পিতৃত্বের অধিকার হারিয়ে ফেলেছি ?

আসলেই মনে প্রশ্ন জাগে, নারীর কি নিজস্ব কোন আইডেন্টিটি থাকবেনা , তাকে কি আজীবন ই ফরম ফিলাপ করতে গেলে পিতার নাম আর স্বামীর নাম ফিলাপের প্রহসনে পড়ে থাকতে হবে ?

নারী স্বাধীনতা এবং জেন্ডার ইকুয়েলিটি প্রতিষ্ঠা করতে গেলে বেগম রোকেয়ার মত দূরদর্শী এবং চিরাধুনিক কিছু নারীর বড্ড দরকার এই সমাজে। যারা নিজেরাই গড়ে নিতে পারবে নিজেদের আইডেন্টিটি।



-----------------------------------------------------------



আমার ভাবনাগুলো আমি ক্লিয়ার করতে পারলাম কিনা বুঝতে পারছিনা, তবে আপনাদের মোটামুটি চিন্তার খোরাক জন্মালেই বুঝবো লেখাটি স্বার্থক। আর এই লেখাটা উৎসর্গ করলাম ব্লগার আরজুপনি কে, জিনি জেন্ডার ইস্যুতে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সাথে সমস্ত সাহসী নারী ব্লগারদের প্রতি থাকলো আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা

এই জনরায় আমার আরো কিছু লেখা-

সতীত্ব ও সততা- নারীর অনুভূতি ও আমাদের সমাজ।

ছেলে মেয়ের সম্পর্কের পিছনের দ্বন্দ......

সামুপিডিয়া......(পর্ব ২)


সবাইকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:১৪
৯৭টি মন্তব্য ৯৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×