somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষামন্ত্রীর প্রলাপ প্রসঙ্গ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষামন্ত্রীর প্রলাপ প্রসঙ্গ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা
বোরহান উদ্দিন রুবেল

আওয়ামীলীগের কোন মন্ত্রীই যেন বিতর্কের বা সমালোচনার বাহিরে থাকতে চান না , তাহলে ওনারো থাকা উচিৎ না তাই ইতি মধ্যে লেটেস্ট সংযোজন হলেন আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী । তাও আবার এমন একটি বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন যে বিষয় নিয়ে যে কেউ মন্তব্য করতে একটু ভেবে চিন্তে করে , করে না তা নয় করা উচিৎ না তাও না , তা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ত্রুটিপূর্ণ । কিন্তু প্রশ্ন হলো শিক্ষামন্ত্রী কেন এই বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন ? তাঁর চেয়েও আরও বড় ত্রুটি হলো মাদরাসার শিক্ষার্থীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে বঞ্চিত করা অথচ তিনি এই বিষয়টি নিয়ে কেন প্রশ্ন তুলেন না ? তিনিতো শুধু কলেজ শিক্ষার্থীদের মন্ত্রী না তিনিতো মাদরাসা শিক্ষার্থীদেরও মন্ত্রী । বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কেন কথা বলেন না ? হলগুলোতে ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব নিয়ে কেন বলেন না ? বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়তি করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা অথবা UCC কচিং সেন্টার যখন জড়িত থাকে তখন কেন কিছু বলেন না ? এই প্রশ্নগুলো হয়তো আমার মতো অনেকের মনে অন্তত শিক্ষামন্ত্রী সম্পর্কে জাগতোনা । তাহলে কেনইবা এই ফুলের মতো প্রবিত্র মন্ত্রী সম্পর্কে এই প্রশ্নগুলো জাগলো তাঁর উত্তর পরে দিবো । এবার যদি শিক্ষামন্ত্রীর সুবাদে জিপিএ ৫ পাওয়া কোন ছাত্র তাঁর প্রতি তাঁর ফলাফলের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাঁর প্রতি দয়া করে পক্ষনিয়ে বলে বিশ্ববিদ্যালয়তো একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান তিনি কেন মাদরাসা ছাত্রদের অধিকারের কথা বলবেন , অবৈধভাবে কুলাঙ্গার বা অযোগ্যদের শিক্ষক নিয়োগের বিরুদ্ধে কথা বলবেন , হলগুলোতে ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কথা বলবেন অথবা ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলবেন । এগুলো নিয়ে যিনি কথা বলেননা অথবা বলার অধিকার বা সাহস রাখেন না তিনি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কথা বললেন কেন ? তাতে তাঁর লাভ কি ? না বললে কি ক্ষতি হতো ? তা বলার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৪-১৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষার সিনোপসিস টা দিয়ে নেই । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৫ টি ইউনিটে পরীক্ষা হয় । ‘ক’ ইউনিটের ফলাফল নিয়ে কোন কথা নেই কারন এখানে পাশের হার মোটামোটি ভালো । ‘খ’ ইউনিতে ২ হাজার ২২১ টি সিটের জন্য পরীক্ষা দিয়েছে ৪২ হাজার ৪১৭ জন । সেখানে পাসের হার হলো ৯.৫৫% । এটা স্মরণ কালের সর্বনিন্ম পাশের হার । তাও আবার ইংরেজিতে ভর্তির জন্য মাত্র ২ জন উপযুক্ত । ‘গ’ ইউনিটের ১১৭০ সিটের জন্য ৪৮ হাজার ৫৭ জন পরীক্ষা দিয়েছে , পাস করেছে ৯ হাজার ৯০৭ জন , পাসের হার হলো ২০.৬১% । ‘ঘ’ ইউনিটে ৮৭ হাজার ২০৩ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে মাত্র ১৬.৫৫% । ‘চ’ ইউনিটে ১৩৫ সিটের বিপরিতে পরীক্ষা দিয়েছে ৮ হাজার ৯৮৩ জন , পাস করেছে ২২৬ জন । পাসের হার হলো ৩.১০% । এই হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার বেহাল অবস্থা । এখন পাসের এই করুণ অবস্থা যদি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হতো তাহলে শিক্ষা মন্ত্রীর কথার সম্মান কিছুটা থাকতো যখন দেখা গেল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও ‘ডি’ ইউনিটে পাশের হার ৮.২% । তখন তাঁর কথার সম্মান রইলো কোথায় অবশ্যই আমাদের মন্ত্রীদের পাহাড় সমান মান তাতে কিছু হবে না । আওয়ামী পাচাটা বিদেশী দালাল এই মন্ত্রী কেন ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে কথা বলা ছাড়া তাঁর কোন উপায় ছিল না । কারন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা ধ্বংসের যে প্যাকেজ হাতে নিয়েছে তা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এই ততাকথিত মন্ত্রীর উপর । তাতে আমাদের আওয়ামী সরকারের লাভ কি ? লাভ হল পাসের হার এবং জিপিএ ৫ বেশী হলে এই সরকারের আমলে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ভোটের রাজনীতিটা করা যাবে । ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে তারা যোগ্য অযোগ্য সবাইকে জিপিএ ৫ দিতে গিয়ে ২০১৪ সালে ৫৭ হাজার ৭৮৯ জনকে জিপিএ ৫ দিয়ে দিয়েছেন । কিভাবে দিলেন এই জিপিএ ৫ ? তাঁর দায়িত্ব দিলেন সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে প্রশ্নফাঁসের লাইসেন্সের মাধ্যমে । ২০১৪ সালে পিএসসি থেকে এইচএসসি সব পরীক্ষায় প্রশ্নপ্রত্রফাঁস তাঁর প্রমান ।
এখানে যদি হেগেলের সেই দ্বন্দ্বমূলক তত্ত্বের মানদণ্ডে রাখা হয় তাহলে থিসিস (thesis) হলো প্রশ্নপ্রত্রফাঁস আর এন্ট্রিথিসিস (antithesis) হলো পাসের হার বৃদ্ধিরসাথে বিশাল সংখ্যার জিপিএ ৫ আর সিনথিসিস (synthesis) হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাসের চেয়ে জিপিএ ৫ এর হার কয়েকগুণ বেশী । শিক্ষামন্ত্রী সাহেব এতো পার হার বৃদ্ধি করার পর যখন দেখলেন তাঁর প্রযোজনায় ছাত্রলীগের পরিচালনায় প্রশ্নপ্রত্রফাঁস হওয়া শিক্ষার্থীরা তো দূরের কথা জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাও যখন বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার যুদ্ধে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে নাস্তানাভুদ হয়েছেন । তখন ছাত্রলীগ দিয়ে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়তির মাধ্যমে পাসের হার বাড়াতে চাইলেন তাতেও কোন কাজ হলোনা । যখন এসবকিছু করেও কোন কাজ হয়নি পাসের হার বাড়ানো যায়নি তখন তিনি প্রশ্ন তুললেন ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে । কারন ঢাবির ভর্তি পরিক্ষায়তো আর প্রশ্নপ্রত্রপাশ করা যায় না । প্রশ্নপত্রফাঁস করা গেলে হয়তো বিসিএস সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের অযোগ্য সন্তানদের কোটায় চাকরি দেয়া হয় তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অযোগ্যদের প্রবেশের মাধ্যমে বিদিশিদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা যেত । এভাবে বিদিশীদের টাকা খেয়ে যেভাবে দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার বারোটা বাজাচ্ছে আগামি প্রজন্ম কোন দিকে যাবে যদি এই শিক্ষাব্যাবস্থা এভাবে চলতে থাকে । আমাদের শিক্ষাব্যাবস্থার আর কতটা বাজলে আমরা প্রতিবাদ করবো , আর কত জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে আমরা প্রশ্নফাঁসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো । এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশে কোন বুদ্ধিজীবী তৈরি হবেনা , দেশ চালানোর মতো লোক থাকবেনা , যারা থাকবে তারা হলো মন্ত্রীদের ছেলেরা যারা তাঁদের অবৈধ টাকায় বিদেশে পড়ালেখা করে আসবে । আর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জন্মনিবে তাঁদের পাচাটা কিছু গোলাম । যারা আজীবন পাচেটে যাবে আর বাংলাদেশে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে এই পরিবারতন্ত্র ও পাচাটাতন্ত্র ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×