somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারীর অধিকার : নারীবাদী বনাম ইসলামপন্থীরা প্রসঙ্গ বাংলাদেশ

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নারীর অধিকার : নারীবাদী বনাম ইসলামপন্থীরা প্রসঙ্গ বাংলাদেশ
বোরহান উদ্দিন রুবেল

বর্তমান বিশ্বের কয়েকটি আলোচিত বিষয়ের মধ্যে অন্যতম একটি আলোচিত বিষয় হলো নারী অধিকার (Women Rights ) । পুরুষ শাসিত সমাজের কারনে (Human Rights) মানবাধিকারের পরেও বিশ্বসংস্থাগুলো নারীর অধিকারের কথা বলে । প্রশ্ন থাকে তাহলে কি মানবাধিকার শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য ? পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা অবহেলিত বা প্রাপ্ত অধিকার পাচ্ছে না কথাটি সত্য না হলেও মিথ্যা নয় । কিন্তু এই অধিকার না পাওয়া বা অবেহেলার জন্য শুধু ধর্ম দায়ী , তাও আবার অন্য কোন ধর্ম নয় শুধু ইসলাম ধর্মই দায়ী । বিশ্বায়নের খাতিরে এই কথাগুলো পশ্চিমাদের থেকে বাংলাদেশের মতো ৯০% মুসলমানদের দেশেও চলে এসেছে আর নারীবাদীরাও তা প্রচার করছে । তারা তা সমাজ তথা রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও লিপ্ত । এখন প্রশ্ন থাকে আসলেই কি ইসলাম নারী অধিকারের বিপক্ষে ? পক্ষে হয়ে থাকলে তার বাস্তবায়ন কতটুকু ? তাতে নারীবাদীদের সাথে ইসলামের বিরোধ কোথায় ? বিরোধ সমাধানের ক্ষেত্রে ইসলামপন্থীদের ভুমিকা কি ?
ইসলামে যে নারীর অধিকার দিয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করলে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে তাই আমি শুধু যে যে বিষয়গুলো বাংলাদেশের নারীবাদীরা(Faminist) বেশী সমালোচনা করে থাকে সেগুলো নিয়ে কথা বলবো ।

উত্তরাধিকার আইন :
বাংলাদেশের নারীবাদীরা যে বিষয়টি নিয়ে বেশী দ্বিমত পোষণ করে তা হলো ইসলামের উত্তরাধিকার আইন নিয়ে । এই বিষয়টি আলোচনার আগে একটি বিষয় পরিষ্কার করা উচিত তা হল ,ইসলামে অধিকারের( Rights) সাথে আরেকটি বিষয় আঙ্গাআঙ্গিভাবে জড়িত তা হল দায়িত্ব ( Responsibility )। । ইসলাম নারীকে কতটুকু অধিকার দিয়েছে সেটা সবসময় তার দায়-দায়িত্বের বিপরীতে ওজন করে দেখতে হবে । দায়-দায়িত্বের পরিমানের সাথে অধিকারকে ওজন করে দেখতে হবে নতুবা অধিকারের যোগ-বিয়োগে মারাত্মক ভুল হয়ে যাবার আশঙ্কা থেকে যাবে । উত্তারাধিকারের ক্ষেত্রে আল-কুরআনের সূরা নিসায় বলা হয়েছে “নারীরা পুরুষের অর্ধেক সম্পদ পাবে” । নারীবাদীদের প্রশ্ন হল অর্ধেক কেন সমান পেতে হবে । অথচ তারা এটা চিন্তা করেনা এই অর্ধেক খরচ করার কোন দায়িত্ব ইসলাম তাকে দিয়েছে কিনা আর যে পুরুষ দ্বিগুণ সম্পদ পেল তার খরচের কতগুলো খাত ইসলাম দিয়েছে । অন্যদিকে চিন্তা করলে ইসলামের উত্তরাধিকার আইনে ১২ জনের সম্পদের নির্দিষ্ট পরিমাণ বর্ণনা করেছে তার মধ্যে নারী ৮ জন আর পুরুষ ৪ জন । নারীর দায়িত্ব বিয়ের আগে বাবার উপর , বিয়ের পর স্বামীর উপর আর স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেদের উপর দিয়েছে ইসলাম । ইসলামে তারা শুধু পাবেই তাদের খরচের জায়গা দেয়া হয়নি । ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম নারীদের উত্তারাধিকার প্রদান করেনি কিন্তু তানিয়ে নারীবাদীদের কোন কথা নেই । তবে এই কথাটি সত্য ইসলাম নারীদের অধিকার দিলেও আমরা তথাকথিত মুসলমানরা তাদের অধিকার দেয়নি একজন স্ত্রী হিসেবে,মা হিসেবে অথবা বোন হিসেবে ।
এতক্ষন তো নারীবাদীদের কথা বললাম আমাদের দেশের ইসলামপন্থী যারা আছেন তাদের আবার কিছু রহস্যজনক ভুমিকা আছে । নারীবাদীরা যখন সম্পদে সমান অধিকার চায় তখন তারা সারা দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে । কারন তা ইসলাম বিরোধী বা কুরআনের আইনের পরিপন্থী । এটা নিয়ে মুসলমানদের মনে কোন প্রশ্ন নেই কিন্তু প্রশ্ন হল যখন কুরআনে বর্ণিত অর্ধেক সম্পদ নারীদের এই সমাজ বা রাষ্ট্র নিশ্চিত করেনা তখন তারা আন্দোলন করে কি না ? কারন অর্ধেক না দেয়াটা তো কুরআন বিরোদ্ধতা । যারা নারীবাদীদের বিপক্ষে আন্দোলন করে তারা তাদের বোনদের বা ফুফুদের সম্পদ কুরআনের আইন অনুযায়ী বন্টন করে কিনা । তারা নিজেরা না করুক যারা ইসলামপন্থী দল আছে তারা তাদের পন্থী নারীদের দ্বারা কোন সবাদ সম্মেলন করে বলিয়েছে কিনা ইসলামে যে অর্ধেক সম্পদের কথা বলেছে তার বাস্তবায়ন চাই । আমার জানা মতে বলে নি । তাদের এই বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে একটা সমাধানে আসা দরকার ।

ইসলামে পর্দা প্রথা :
বাংলাদেশের নারীবাদীরা ইসলামের যে বিষয়টি নিয়েও চরম বিরোধিতা করে তা হলো ইসলামে নারীদের পর্দা প্রথা । তারা মনে করে পর্দা নারীদের সকল উন্নতির অন্তরায় । তাদের এই দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কিছু সেকুলার বুদ্ধিজীবী তাদের সাথে গলা মিলিয়েছে । তাতে তাদের লাভ হল তসলিমা নাসরিন দ্বারা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শামসুর রহমানের যে ধরনের লাভ হয়েছে । তারা বাংলাদেশে এই আন্দোলনে প্রায় সফলতার ধারপ্রান্তে আওয়ামীলীগ সরকারের সহযোগিতায় । ইতিপূর্বে কয়েকটি স্কুল ,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব পরা নারীদের বের করে দেয়া হয়েছে , মেয়েদের ফুলহাতা কেটে ছোট করে দিয়েছে । আর কয়েকজন মন্ত্রিতো বলেই ফেলেছে নারীরা কুৎসিত চেহারা ঢাকতে হিজাব পরে ।

এই ক্ষেত্রে ইসলামপন্থীদের ভুমিকা স্ট্রং না হলে নারীবাদীদের পর্দা বিরোধী মতামত সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে , তাতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হবে এই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা । ইসলামপন্থীদের উচিত নারীবাদীদের সমালোচনা না করে পর্দা পরিধান করেও যে নারীরা উন্নতি করতে পারে তার উদহারন পেশ করা নারী জাতির সামনে , যেমনি ব্যাংকিং জগতে ইসলামি ব্যাংক করেছে । নারীদের জন্য উন্নতমানের স্কুল , কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে সাথে সাথে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে । ব্যাংক , বীমা , মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি ,হাসপাতাল ,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের জন্য আলাদা বিভাগ করে কর্ম সংস্থানের ব্যেবস্থা করতে হবে । অন্যদিকে বাংলাদেশের বিশাল একটি সংখ্যক নারী গার্মেন্টসে কাজ করে । তাদেরকে তেঁতুল না বলে তারা যাতে পর্দার সহিত কাজ করতে পারে সে জন্য ব্যেবস্থা করতে হবে। তাঁদের জন্য আলাদা গার্মেন্টস করতে হবে যেখানে ম্যানেজার , সুপার ভাইজার সহ সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থকবে মহিলা ।
প্রাইভেটেজাইশনের যুগের কারনে বিতরের জিনিসগুলো বাহিরে চলে এসেছে আর বাহিরের জিনিসগুলো বিতরে চলে গেছে বিশেষ করে মার্কেটের ক্ষেত্রে । এই ক্ষেত্রে ইসলামপন্থীদের কাজ হলো নারী উদ্যোক্তা তৈরি করে নারীদের জন্য আলাদা মার্কেট তৈরি করা যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা এমনকি সিকুরিটি গার্ডও নারী হবে । তাহলে যেমনি নারীবাদীদের গালে চপেটাঘাত হবে তেমনি পর্দা যে নারীর উন্নয়নের অন্তরায় নয় সেটিও প্রতিষ্ঠিত হবে ।
অন্যান্য ;
যে বিষয়গুলো নিয়ে ইসলামপন্থিদের কাজ করার সুযোগ আছে তা হলো ......
১. যৌতুক প্রথা ইসলামের না এটা হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলমানদের মধ্যে এসেছে বরং ইসলাম নারীকে মহরানা দিতে বলেছে । ইসলামপন্থীদের যৌতুকের বিপক্ষে আর মহরানার পক্ষে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে । তবে সর্বপ্রথম নিজেদের মধ্যে তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।
২. ইসলাম নারীকে একজন মা , বোন ও স্ত্রী হিসেবে যে অধিকার দিয়েছে তা বাস্তবায়নের প্রদক্ষেপ নিতে হবে ।
৩. বিজ্ঞাপনের নামে যেভাবে নারীকে পণ্য বানানো হচ্ছে তা নিয়ে নারীদের দিয়ে প্রতিবাদ করাতে হবে । হিজাবের নতুন নতুন ফ্যাশন নিয়ে আসতে হবে যাতে সাধারণ মেয়ে হিজাবে আকৃষ্ট হয় ।
৪. কাজের মেয়েদের উপর যে অমানবিক অত্যাচার করা হয় তাতে আধুনিক নারীরাই বেশী জড়িত । এমনকি যারা নিজেদের নারীবাদী তাদের ঘরের কাজের মেয়ে আরো বেশী নির্যাতিত । এই ক্ষেত্রে ইসলামপন্থী নারীদের কাজের মেয়েদের সাথে ব্যাবহারের ক্ষেত্রে উদহারন পেশ করতে হবে ।
৫. গ্রামাঞ্চলে নারীরা সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত হয় নারীদের দ্বারা , হোক তার ননদ বা শাশুড়ি । প্রত্রিকায় আসা অধিকাংশ খুন তার প্রমান বহন করে । এই ক্ষেত্রে ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রচার করতে হবে । ভাবির প্রতি ননদের , ননদের প্রতি ভাবির , শাশুড়ির প্রতি ছেলের বউয়ের আর ছেলের বউয়ের প্রতি শাশুড়ির দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে নাটক , ছবি বা সেমিনার করে তাদেরকে সতর্ক করতে হবে ।

সর্বশেষ যে কথাটি বলবো তা হলো ,ইসলামপন্থীরা যদি নারীদের প্রতি ইসলাম যে অধিকার দিয়েছে তা বাস্তবায়নে সক্রিয় না হয় তা হলে নারীবাদীদের অবৈধ আবধারে ইসলামি মূল্যবোধ বঙ্গোপসাগরে পতিত হবে ।
শিক্ষার্থী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×