somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা - ৪০০ বছরের পূরানো এক শহর - পর্ব ৩

২২ শে মে, ২০০৮ সকাল ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভগ্নপ্রায় বড় কাটরা (বাংলাপিডিয়া থেকে)

প্রাচীন ঢাকা শহরটি পাকুড়তলি'র (বর্তমান বাবুবাজার এলাকা) সীমিত এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছিল, মূঘল সুবে বাংলার রাজধানী হওয়ার পর শহরটি প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক প্রয়োজনেই প্রসারিত হতে থাকে। বুড়িগঙ্গার তীর ঘেষে গড়ে উঠা এই শহরটি সেসময় পশ্চিমে দূর্গ থেকে পূর্বে বর্তমানের সদরঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ঢাকা'র বিভিন্ন স্থানের নাম (যা এখনও আছে) থেকে এর বিকাশ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। দেওয়ান বাজার, বকশী বাজার, মূগলটুলি, হাজারিবাগ, পিলখানা, অতীশখানা, মাহুৎটুলি ইত্যাদি নাম থেকে বুঝা যায় যে মূঘল সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তা এবং তাদের অধীনস্থ কর্মচারীরা এসব এলাকায় বসতি গড়ে তুলে। মূঘল প্রশাসনের হিন্দু কায়েৎ বা কায়স্থ (writer) দের আবাসস্থল ছিল বর্তমানের কায়েৎটুলি এলাকা। 'গঞ্জ' যুক্ত নামের স্হানগুলি গড়ে উঠে বানিজ্যিক প্রয়োজনে যেমন নবাবগঞ্জ, আলমগঞ্জ। বেঁচারাম দেউড়ি, মীর জামাল দেউড়ি ইত্যাদি দেউড়ি যুক্ত এলাকাগুলি গড়ে উঠে জমিদারী কর্মকান্ডের প্রয়োজনে। প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন হিন্দু পেশাজীবিরা বাস করতো তাঁতীবাজার, শাঁখারিবাজার, বানিয়ানগর, গোয়ালনগর প্রভৃতি এলাকায়।

সুবেদার ইসলাম খান ঢাকা শহরে যে সব স্থাপনা তৈরী করেন, তার কোন কিছুই আর তেমনভাবে নেই। তিনি আফগানদের তৈরী করা 'ঢাকা দূর্গ' কে সংস্কার করে সুবেদারের বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করেন। এর আগে পর্যন্ত সুবেদাররা তাদের কাজের ধরন (সাময়িক ও বদলিযোগ্য) অনুযায়ী তাবুতে বাস করতেন। এই 'ঢাকা দূর্গ' এর অবস্থান ছিল বর্তমান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে, যদিও কালের বিবর্তনে এর আর কোন অস্তিত্ব নেই। এটি ইট নির্মিত ছিল নাকি মাটির সেটাও এখন আর স্পষ্ট নয়। সুবেদার ইসলাম খানের সময়ের আরেকটি স্থাপনা হলো বুড়িগঙ্গার তীরে চাঁদনী ঘাট। এখানে রাজকীয় নৌবহরের আনাগোনা ছিল এবং নৌসেনাদের অবতরনের ব্যবস্থা ছিল। সৈয়দ আওলাদ হোসেন লেনের মসজিদটি ইসলাম খান নির্মাণ করেছিলেন বলে অনুমান করা হয়। রমনার একাংশ একসময় তার বংশের নামানুসারে মহল্লা চিশতিয়ান বলে পরিচিত ছিল। পূরান ঢাকার ইসলামপুর তার নামানুসারেই হয়েছে।

মূঘল আমলের ঢাকা (বাংলাপিডিয়া থেকে)

পরবর্তী সুবেদার শাহজাদা শাহ সূজা তার ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক কারণে সুবে বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে উড়িষ্যার রাজমহলে নিয়ে যান। এখানে বলে রাখা ভাল যে, শাহ সূজা একই সাথে বাংলা ও উড়িষ্যার সুবেদার ছিলেন। তিনি রাজধানী সরিয়ে নিলেও তার পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় ব্যাপক নির্মান কাজ হয়েছিল। তার সময়ের উল্লেখযোগ্য স্খাপনাগুলো হলো - বড় কাটরা, ধানমন্ডি ঈদগাহ, চুড়িহাট্টা মসজিদ, মুকিম কাটরা এবং হোসেনি দালান।

চকবাজার থেকে একটু দক্ষিন দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে শাহ সূজার বসবাসের জন্য ১৬৪৫ সালে তৈরী করা হয়েছিল বড় কাটরা। এটি তৈরী করেন তাঁর দেওয়ান মীর আবুল কাশেম। কিন্তু শাহ সূজা রাজমহলে চলে গেলে এটি ঢাকায় আগত বণিকদের থাকা-খাওয়ার জন্য দান করা হয়। কাটরা শব্দের মানে হলো সরাইখানা। এটি এখন ভগ্নপ্রায় অবস্থায় আছে। মীর আবুল কাশেম ঈদের সামাজ আদায়ের জন্য ধানমস্ডিতে একটি বড় ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৬৪৯ সালে মোহাম্মদ বেগ নামের এক মূঘল কর্মকর্তা চকবাজারের কাছে চুড়িহাট্টায় একটি মসজিদ স্থাপন করেন। নাওয়ারা'র (নৌবাহিনী) দারোগা মুহাম্মদ মুকিম ১৬৬১ সালে আরো একটি কাটরা বা সরাইখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এটির অবস্থান ছিল বর্তমান কেন্দ্রীয় কারাগারের পূর্বপাশে, কারাগারের প্রধান ফটকের ঠিক পিছনেই। কালের বিবর্তনে এটি ধ্বংস হয়ে গেছে। যদিও চকবাজারের এই অংশটি এখনও মুকিম কাটরা হিসেবে পরিচিত।

শাহ সূজার মা আর দুই স্ত্রী ছিলেন শিয়া মতালম্বী। ফলে তিনি ছিলেন শিয়াদের ব্যাপারে কিছুটা সংবেদনশীল। কথিত আছে শাহ সূজা সুবেদার নিযুক্ত হয়ে ঢাকা আসার সময় প্রায় ৩০০ জন শিয়া মুসলমান কে সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন। এদেরকে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাসের ব্যবস্থা করে দেন। ১৬৪২-৪৩ সালে শিয়া সম্প্রদায়ের জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য সৈয়দ মুরাদ তৈরী করেন হোসেনী দালান।
(ক্রমশ....)

ঢাকা - ৪০০ বছরের পূরানো এক শহর - পর্ব ১
ঢাকা - ৪০০ বছরের পূরানো এক শহর - পর্ব ২
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:০৫
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×