somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্র সরোবরের সেই আড্ডাটা ......

০৩ রা অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি আড্ডায় যাচ্ছি বলে একটা পোষ্ট দিয়েই বের হলাম বাসা থেকে। রাজলক্ষীর কাছে যেতেই ফোন। ১৩ নাম্বার সেক্টর থেকে নতুন এক ব্লগারের ফোন। আমি রাজলক্ষীতে চলে এসেছি শুনে বললেন আপনি যান, আমি আসছি একটু পরে। বাসে যাব নাকি অন্য কিছুতে চিন্তা করছি এমন সময় আবার ফোন। ধরতেই ওপাশ থেকে প্রশ্ন ভেসে আসলো আপনারা কখন আসবেন। আমি আমার রওনা হবার খবর দিয়ে বললাম যে আমি ৫ টার মধ্যেই পৌছে যাব, তিনি যেন সাড়ে ৫ টার মধ্যেই চলে আসেন। আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি বললেন তিনি রবীন্দ্র সরোবরেই আছেন। মোবাইলের ঘড়িতে তখন সোয়া ৩ টার মতো বাজে। অপেক্ষা করতে বলে আমি আমি সিএনজি নিলাম একটা। কলাবাগানের কাছে আসতেই নামলো তুমুল বৃষ্টি। রবীন্দ্র সরোবরের কাছে এসে সমস্যায় পড়লাম কোথায় নামবো এই নিয়ে। শেষে সিএনজি ড্রাইভারই বুদ্ধি করে অন্য পাশে একটা বন্ধ দোকানের সামনে নামিয়ে দিল। ঘড়িতে তখন ৪:১০ বাজে। অপেক্ষারত ব্লগার'কে ফোন দিলাম, দেখি ধরে না। মনসুরকে ফোন দিলাম, সে অন দ্য ওয়ে। রাতমজুর অন দ্য ওয়ে। এরমধ্যে আরো কয়েকটা ফোন পেলাম। সবার এক প্রশ্ন আড্ডাতো তাহলে হচ্ছেনা। আমি জানালাম আমি স্পটে আছি, আরো ৫/৬ জন অন দ্য ওয়ে (আসলে ২ জন)। বৃষ্টি দেখতে দেখতে ঠ্যাং ব্যাথা হয়ে গেল, বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই। মনে মনে শাপশাপান্ত করতেছি পানি জম্য রবীন্দ্র সরোবরের ছবি দেয়া এক ব্লগারকে। এই লোকের জন্যই এই দূরবস্থা।


আরিয়ানা আর শ্রাবণসন্ধ্যা, মাঝে জাফনা

একসময় দয়া করে বৃষ্টিটা থামলো। আমি আস্তে ধীরে ভিতরে গেলাম। গিয়েই আবার সেই অপেক্ষারত ব্লগারকে ফোন করলাম। এইবার ফোন ধরলেন এবং বললেন যে তিনি বাসে উঠে পড়েছেন, ফেরত চলে যাচ্ছেন। কি আর করা। আমার কেন জানি মনে হলো এটা মোতাব্বির কাগু। বদরুন্নেসা মহিলা কলেজে পরীক্ষা দিয়ে মনে হয় চলে এসেছিলেন আড্ডা দিতে।

প্রথমে আসলেন মনসুর। এরপর মিল্টন ভাই আর মূখ ও মূখোশ। এরপর বৃত্তবন্দী, আড্ডা না দিলে যার পেটের ভাত হজম হয়না। এরপর রাতমজুর আর শামিম। এরপর মনে হয় ব্লগারদের ঢল নামলো। আর এমনই ঢল যে আমার আর মনে রাখা সম্ভব হচ্ছিলো না কোনটা কে। আর ফোন তো বাজছিলো অনবরত, আপনারা কই। কালপুরুষ আসলেন আরিয়ানা আর শ্রাবণসন্ধ্যাকে নিয়ে, সাথে জাফনা। জাফনার ছবি দেখে কেন জানি মনে হয়েছিল শ্রাবণসন্ধ্যা ক্ষীনাঙ্গি আর খিটমিটে মহিলা, দেখা গেল উনি তার পূরো বিপরীত।

ব্লগারদের একাংশ

এক চাচা হাড়িতে করে কুলফি আইসক্রিম নিয়ে এসেছিলেন। আরিয়ানা অর্ডার দিচ্ছে দেখে দাদা বললেন নোংরা কিন্তু। আরিয়ানা হেসে উত্তর দিলো পঁচা জিনিস খেতে বেশী মজা। চাচা দেখলাম পলিথিন ছিড়ে কুলফি বের করে কলার পাতায় নিলেন, এরপর ছুড়ি দিয়ে ছোট ছোট করে কেটে টুকরা করলেন। এবার খাওয়ার পালা। ওমা !!! পঁচা জিনিস খাওয়ার ব্যাপারে দেখি কেউ পিছপা না। শেষে আমিও নিলাম এক টুকরা মূখে। সুপার্ব !!! তবে দাম একটু বেশী, ২০ টাকা।

এরপর সবাই মিলে বসলাম সিড়ির মতো অংশে। আড্ডা কিন্তু চলছে সেই শুরু থেকেই। এবার চাঁদাবাজি। শামিম আর রাতমজুর মিলে তুলে ফেললো ৪২০০ টাকা। আমার কেন জানি মনে হলো সবাই টাকা দেয় নাই। মনসুরকে আস্তে করে বললাম মাথা গুনে ফেলতে। গুনে বললো ৫০+। এরমধ্যে চাঁদা দিয়ে কয়েকজন চলেও গেছে। শেষে শামিম, দন্ডিত পূরুষ আর আরো দূজন ব্লগার গেলেন সেই ৪২০০ টাকা নিয়েই খাবার আনতে।

আরো কিছু ব্লগার

দূর্ভাষী দেখি একহাতে ফোন ধরে আরেক হাত তুলে কাকে জানি ডাকছে। জিজ্ঞাসা করতেই বললো গোবলা। আমি মনে মনে একটা হাসি দিলাম। ওর কাছিমটা লেকের পানিতে কেমন সাঁতরায় সেটা টেষ্ট করতে হবে ঠিক করলাম। কিন্তু ছেমড়ি মহা চালাক, কাছিমটা রেখে এসেছে। ২ দিন আগে নাকি আরেকবার হারিয়েছিলো কাছিমটা, তাই আনতে নাকি সাহস পায় নাই। বলার সময় আবার দেখি মিটমিট করে হাসতেছে। বুঝলাম অরিজিনাল গোয়েবলসের সাথর্ক বাংলাদেশী সংস্করণ।

আড্ডারত ব্লগাদের দেখছেন দর্শকরা

এরমধ্যে টিপটিপ করে আবার বৃষ্টি শুরু হলো। আমরা সবাই আশ্রয় নিলাম গাছের নিচে। বৃষ্টি মাথায় করেই সবাই তুমুল আড্ডা দিচ্ছে। এক-আধ জন করে ব্লগাররা আসছেন তখনও। সুনীল সমূদ্র'দা বললেন ছোট একটা পরিচিতি হয়ে যাক। সবাইকে গোল করে দাঁড় করিয়ে দু'একটা কথা বলে সুনীল'দাকেই দাড় করিয়ে দিলাম, কারণ এই কাজে উনি পটু। আলো বেশ কমে এসেছে। এদিকে আমি আবার চোখে দেখি কম, রাত্রে তো সমস্যা হয়ই। আমি খালি মানুষের অবয়ব দেখছিলাম, চেহারা বুঝতেছিলাম না। কিঞ্চিত মোটামতো এক মহিলা হাতে ছাতা নিয়ে জটলার বাইরে দাড়িয়ে একটু ইতস্তত করতেছেন। আমি মনে করলাম ওয়াকওয়ে ধরে উনি হয়তো ওপাশে যেতে চাইছেন। আমি এগিয়ে গিয়ে সেটাই জানতে চাইলাম। উত্তরে উনি বললেন শুনতেছি কি বলে। আর ঠিক তখনই কে যেন বলে উঠলো আরে আইরিন যে। আ মর জ্বালা !!! এতোদিন জেনে আসলাম বিয়ের পর সবাই একটু মুটায়, এতো দেখি বিয়ে ঠিক হওয়ার খবরেই মুটিয়ে গেল। কতক্ষণ পর দেখলাম শফিকুল ভাই এর মেয়ে জাইমাকে এক হাতে কোলে নিয়ে আরেক হাতে ছাতা ধরে দাড়িয়ে আছে আইরিন। অদূর ভবিষ্যতের আগাম প্র্যাকটিস।

এই সেই ছাতা হাতে কিঞ্চিত মোটা মহিলা (ছবি শরৎ)

অবশেষে খাবার এলো। একটা করে নান আর শিক কাবাব। আর একটা করে মোজো। শেষের দিকে আরো অনেক ব্লগার আসায় খাবার একটু কম পড়েছিল। কালপুরুষ আর মনসুর একেবারেই খায় নাই। শামিম সহ আরো কয়েকজন শেয়ার করে খেয়েছে। আর কেউ বাদ গেছেন কিনা জানিনা। তবে ভবিষ্যতে কোন আড্ডা হলে এই খাওয়া-দাওয়া পবর্টি বাদ থাকবে।

আড্ডার জন্য শুরুতেই ধন্যবাদ দিতে হয় মনসুর আর রাতমজুরকে। এরপর শামিম, দন্ডিত পূরুষ এবং আরো দু'জন ব্লগার যাদের নাম আমি ভুলে গেছি, যারা আড্ডার মজা উপেক্ষা করে খাবার এরেঞ্জমেন্ট করেছেন এবং নিজেরা না খেয়ে অন্যদের খাইয়েছেন।

আর যারা বৃষ্টি উপেক্ষা করে এসেছিলেন এই আড্ডাকে প্রাণবন্ত করতে তাদেরকে শুধূই বলি - ধন্যবাদ

-------------------------------------------------------------------------------
"অত:পর একজন ব্যক্তির প্রতি আমার মনোযোগ আকর্ষিত হইল, তিনি সকল বক্ত্যব্যের শুরুতেই হ্যান্ডসআপ ভঙ্গিমা দিয়া শুরু করেন, আমার মনে হইল বলক একটি দু:সাহসিক কাজও বটে। তা না হইলে উদ্র্ধহস্ত ভঙ্গিমা হইবে কেন? নিশ্চয় পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে একটি নিবিড় যোগাযোগ ইহার রহিয়াছে।"

ছাত্র তো পূরাই ল্যাবেনডিশ, আবার বলক করা শিখতে চায়। ওহে ছবির ব্যক্তিটি অনমনস্ক শরৎ এর ভূড়ি ক্যামনে বলক করতে হইবেক সেইটা শিখাইতেছেন।
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×