ব্লগার লুকার বলেছিল যারা লিনাক্স ডেভেলপ করে তারা সবাইকেই তাদের সমপর্যায়ের জ্ঞানী মনে করে। কথা সত্য। লিনাক্সের অনেক কিছুই আমার মতো সাধারণ ব্যবহারকারীর কাছে অবোধ্য। ব্যবহার তো পরের কথা, এটা ইন্সষ্টল করার যে হ্যাপা, সেটা ভেবেও অনেক ব্যবহারকারী পিছিয়ে যান। আমি অনেককাল আগে রেডহ্যাট ইন্সষ্টল করতে যেয়ে ব্যর্থ হয়েছিলাম। পরে কোন একটা কম্পিউটার মেলা থেকে অংকুর এর লাইভ সিডি নিয়ে সেটা টুকটাক ব্যবহার করেছিলাম। ব্যস এই পর্যন্তই আমার লিনাক্সের দৌড়।

কপিরাইট আইন নিয়ে বর্তমানে সারা বিশ্বেই একটা দৌড়াদৌড়ি চলতেসে। বিভিন্ন পাইরেটেড সফটওয়্যার বা গান / মূভির সোর্স বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একে একে। বাংলাদেশে অবস্থা ততোটা খারাপ না হলেও কবে আবার হয়ে যায় বলা যায় না। বলা চলে এই চিন্তা থেকেই লিনাক্স ব্যবহার নিয়ে আবার ভাবলাম। ব্লগেই খবর পেলাম উবুন্টু ৯.১০ কারমিক কোয়ালা রিলিজ হয়েছে। ঠিক করলাম এটা দিয়েই ট্রাই করবো।

প্রথম কাজ এর একটা সিডি জোগার করা নয়তো সরাসরি নেট থেকে নামানো। সিডি এই মূহুর্তে পাওয়া যাচ্ছে না, আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। সুতরাং ডাউনলোড ই ভরসা। শুরু করলাম ডাউনলোড। মোট ৩ বারে ডাউনলোড হলো ৬৮৯.৯৭ মেগাবাইটের আইএসও ফাইলটি। মোট সময় কতো লেগেছিল সেটা আর পরে লিখে রাখিনি, তবে ১০-১২ ঘন্টার মতো সব মিলিয়ে। লোকাল প্রোভাইডারের লাইন ছাড়াও ব্যবহার করেছিলাম জিপির পি৬ প‌্যাকেজ। ডাউনলোড স্পিড ৫ কেবি/সে থেকে ৩০ কেবি/সে পর্যন্ত উঠানামা করেছে। একটা ভয় ছিল ৩বারে ডাউনলোড করায় ফাইলটা করাপ্ট হয়ে যাওয়ার। সেটা হয়নি আর এটার কৃতিত্ব ড্যাপ ৯.৩ এর।

এবার সিডি তৈরীর পালা। এটার জন্য ব্যবহার করলাম ফ্রি আইএসও বার্নার নামে একটা সফটওয়্যার। ভ্লগার লেনিন কোন একটা পোষ্টে বা কমেন্টে বলেছিল মিনিমাম স্পিডে বার্ন করলে রাইট করা ভাল হয়। তার কথা মাথায় রেখেই বার্ন করলাম ১৬এক্স স্পিডে।

এবার আসল কাজ - ইন্সষ্টল করা। ইন্সষ্টল করতে যেয়ে প্রথম সূযোগেই ব্যর্থ হলাম। কোন পার্টিশনে ইন্সষ্টল করবো সেটা ঠিক করে পার্টিশন নিয়ে গুবলেট পাকিয়ে গেল। দোষটা অবশ্য আমারই। শুরুর আগে একটু হোমওয়ার্ক করার দরকার ছিল সেটা করিনি। এবার ইন্টানেটে একটু ঘাটাঘাটি করলাম এ নিয়ে। পেয়েও গেলাম একটা চমৎকার ষ্টেপ বাই ষ্টেপ গাইড । কিন্তু পার্টিশন সংক্রান্ত অংশটা একটু জটিলই মনে হলো। তবে গাইডে বলা ছিল আমি উইন্ডোজ থেকেও এই ইন্সষ্টলের কাজটা করতে পারি। ঠিক করলাম এই পথেই এগুবো।

ইউন্ডোজ চালু অবস্থায় সিডিটা ঢোকালাম ড্রাইভে, কয়েক সেকেন্ড পরেই ভেসে উঠলো একটা উইন্ডো। সেখানে বেশ কয়েকটা বাটন ছিল। আমি বেছে নিলাম "Install inside Windows" লেখা বাটনটি। বাটনের নিচে লেখা ছিল আমি অন্যান্য এপ্লিকেশনের মতোই উবুন্টু এখানে ইন্সষ্টল / আনইন্সষ্টল করতে পারবো। এটার জন্য আলাদা ডেডিকেটেড কোন পার্টিশনের প্রযোজন নেই। তবে হাইবারনেশন এর সুবিথা পাব না আর ডিস্ক পারফরমেন্স কিছুটা কম হবে। চিন্তা করে দেখলাম আমার মতো নভিসের জন্য এটাই ঠিক আছে।

সেই বাটনে ক্লিক করার পর আসলো এর পরের অংশটি। এখানে মূলত কনফিগার করা হয় কিভাবে কোথায় ইন্সষ্টল হবে। আমি আলাদা একটা ড্রাইভ সিলেক্ট করলাম। ভাষা প্রথমে বাংলা সিলেক্ট করেছিলাম, কিন্তু এটার জন্য যে ফাইলটা দরকার সেটা নেই। তাই ইংরেজী টাই থাকলো। বাকিসব যাছিল তাই থাকলো। পাসওয়ার্ড অংশে পাসওয়ার্ড দিতে হবে দুবার। আমি "Install" লেখা বাটনে ক্লিক করলাম।

একে একে সব কিছু কপি হয়ে গেল। সিডি অটো ইজেক্ট হয়ে স্ক্রিন আসলো রিবুট করার জন্য। রিবুট দিলাম। তার আগে সিডিটা সরিয়ে নিলাম।

রিবুট হওয়ার পর উইন্ডোজের মাল্টিবুট অপশনটা আসলো। উবুন্টু সিলেক্ট করে এন্টার দিলাম। এবার্‌ উবুন্টু চালু হয়ে প্রথমে চেক করলো সবকিছু এরপর সিস্টেম ইন্সষ্টল হলো। অটো রিবুটের পর আবার উইন্ডোজের সেই মাল্টি বুট অপশন। উবুন্টুতে বুট করার পর এলো উবুন্টুর মাল্টিবুট অপশন। প্রথমটা সিলেক্ট করে দিতেই চলে এলো লগইন অপশন। পাসওয়ার্ড দিয়ে ক্লিক করতেই উবুন্টুর ডেস্কটপটা চলে আসলো। ইন্সষ্টল কমপ্লিট। সব মিলিয়ে সময় লাগলো ১০ মিনিটেরও কম।

আমার মতো যারা নভিস, তারা এই পদ্ধতিতে উবুন্টু ইন্সষ্টল করে দেখতে পারেন। আর ডারা এডভান্স লেভেলে আছেন তারা ফলো করুন এভাবে ।