আমার দু:সম্পর্কের এক চাচি আমার বিয়ের পর জানতে চাইল, বউয়ের শিক্ষা কি?
আমি বললাম MBA করেছে।
আর তোমার শিক্ষা কি?
আমি BBA পাশ
কোনটা বড়?
MBA
আমার চাচি লাফ দিয়ে উঠে বলল হায় হায় কও কি! বউ তো তোমার থেকে বেশী শিক্ষিত তোমারে মানে তো?
আমার মা তখন চাচির পাশেই ছিলেন। আমি তার দিকে তাকালাম বোঝার জন্য। দেখলাম তার চোখেও সমান জিজ্ঞাসা।
আমি বোঝার চেষ্টা করেছিলাম কেন উনি এমনটা বলছেন? তখন বুঝিনি।
আমার বউ চাকরি করবে কিন্তু আমার বাবা নারাজি। কি ব্যাপার? বাবা মোটামুটি অবস্থা সম্পন্ন তাই উনার যুক্তি আমার ছেলের বউ চাকুরী করবে কেন? তার কেন টাকা দরকার?
তানি মানে আমার বউয়ের জেদ সে চাকরি করবেই। মাঝখানে আমার ত্রাহি অবস্থা। শেষে মাকে বললাম তানির যুক্তিটা শোনা দরকার। মা, বাবাকে রাজী করালেন।
বল তোমার কি কারণে চাকরি করতে হবে? আমাদের কি কোন অভাব আছে বা আমার ছেলে কি তোমার কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রেখেছে।
না বাবা।
তাহলে?
আমি শিক্ষিত একজন মেয়ে। আমার স্বামীর দিক থেকে আমার ভরণপোষণের কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আমি MBA করা একটা মেয়ে ঘরে বসে থাকবো, এটা কেমন কথা!
কেন? তোমার মা, তোমার শাশুড়ি, তোমার মায়ের শাশুড়ি সবাইতো এ জীবন বেঁচে নিয়েছে। তুমি পারবেনা কেন?
তাহলে তো আমার পড়ালেখার কোন দরকার ছিলনা। রঙ ফর্সা ছিল অনেক আগেই বিয়ে বসতে পারতাম।
আমার বাবাকে দেখে মনে হল তিনি যথেষ্ট হতাশ। তিনি কোন যুক্তি না দিয়ে উঠে গেলেন। আমি বোঝার চেষ্টা করেছিলাম কেন উনি এমনটা করছেন? এটাও তখন বুঝিনি।
এখন বুঝি। যুগের পর যুগ আমাদের মোল্লারা এটাই আমাদের পূর্বপুরুষদের শিখিয়েছে বুঝিয়েছে, আমাদের পূর্ব-পুরুষদের ধর্মীয় মূল্যবোধকে পুঁজি করে এদের ভয় দেখিয়েছে, যে মেয়েদের শিক্ষার দরকার নেই। তারা জায়গা অন্দর ঘরে, রান্না ঘরে। তারা কেন কাজ করবে।
ভয়ের কথা: ২০১৩ সালে এসে আমাদের আবার ১৯১৩ তে চলে যাওয়ার হুংকার শুনতে হচ্ছে। এখনো ধর্মীয় মোড়কে আমাদের মেয়েদের বোতল-বন্ধী করার তীব্র চীৎকার সহ্য করতে হচ্ছে।
আশার কথা: আমার বউ এখনো আমার সাথেই আছে। আমার চাচি এখনো বোঝার চেষ্টা করেন সমস্যা কোথায়? কি-করে আমার বউ আমার সাথে প্রায় ৫ বছর সংসার করলো এবং করে যাচ্ছে। আমার বাবা অবশেষে বুঝতে পেরেছেন সময়ের বিরুদ্ধে কখনো কেউ যুক্তি দিতে পারেনা। তানি এখন চাকরি করে, আমার সংসার সামলায়, আমার বাচ্চা দেখে, সবার দেখভাল করে। আমার বাবা দু-চোখ ভরে দেখেন।
পুনশ্চ: মোল্লারা চাইলেই সবকিছু হবে এমন ভাবার কারণ নেই। তাদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে, তীব্র হুংকারের মধ্যেই আমাদের গার্মেন্টসের মেয়েরা কাজ করেছে। সহকর্মী পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বুনে গেছে স্বপ্নের আগামী।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




