কলেজ থেকে বাসায় ফিরছি। রিকশাটা গলির ভিতর ঢুকবে কিন্তু মোড় নিতে পারছে না। গলির মুখে প্রায় বিশ-ত্রিশজন লোকের জটলা আর হৈচৈ। মনে মনে বললাম-‘ব্যাপার কি? এত ভিড় কিসের? হয়ত........... মারামারি হচ্ছে’। অনেকে বলছে- ‘ভাই, ছাইড়া দেন, ছাইড়া দেন। আর করবো না’। কিন্তু লোকটা কারো কথাই শুনছে না। সামনে গিয়ে দেখি- এক লোক যেন তার সমস্ত রাগ কারো উপর ঝেড়ে অহংকারী ভঙ্গিতে সরে দাড়ালো আর পাশেই পড়ে আছে অজ্ঞান রিকশাওয়ালার শরীর। নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। ততক্ষণে আমার বুঝতে বাকি রইল না যে, মারামারিটা আসলে কার মধ্যে হয়েছে। এমনসময় এক লোক দ্রুত এসে রিকশাওয়ালার নাক চেপে ধরলো, যাতে রক্ত বন্ধ হয়। সাথে সাথে অনেকেই বললো- ভাই মিটফোর্ডে (সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালকে অনেকেই এই নামে ঢাকে) নিয়া যান। পরে রিকশাওয়ালাকে নিয়ে যাওয়া হলো। আর নিঃস্ব অবস্থায় দাঁড়িয়ে রইল তার রিকশাটি। শেষে এক ঝলক সেই নির্দয়, রাগী লোকটাকে ঘৃণা ভরে দেখলাম।
পরে জানা গেল, রিকশাওয়ালাকে যে মেরেছে সে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। রিকশাটা নাকি তাকে ধাক্কা দিয়েছিলো। কিন্তু প্রশ্ন হলো- ধাক্কা দিয়েছে বলেই কি তাকে এমন নির্মমভাবে মারতে হবে? কিসের এত রাগ? ধাক্কা লাগার কারণে বকা দিতে পারতেন। কিন্তু তাই বলে- এমন করবেন? এটা ঠিক যে, কোন বিষয়ে আমরা রেগে গেলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। নিজেকে শান্ত করার কৌশল ভুলে যাই। অপরপক্ষকে মুখ দিয়ে হোক বা শারীরিকভাবেই হোক নিজের শক্তি প্রদর্শন করি। লক্ষ্যণীয়, আজ পৃথিবীতে যত হত্যা, মারামারি, ঝগড়া-ঝাটি হচ্ছে সব রাগের বশেই। এই মানবজাতি- যে এক বিন্দু রক্ত উৎপন্ন করতে পারে না সেই আজ একে অপরের রক্ত ঝরাচ্ছে। আজ আমাদের অস্তিত্বে উপর রাগ- এতই প্রকট বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে যে, ভাই ভাইকে, ছেলে বাবাকে খুন করছে, আত্মীয়তার সম্পর্কোচ্ছেদ হচ্ছে। ফলে সমাজে বিশৃংখলা বাড়ছে।
পরিশেষে, কাউকে আঘাত করার মধ্যে শক্তিশালী হওয়ার পরিচয় ফুটে উঠে না। বরং যে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, চুপ থেকে নিজেকে শান্ত করতে পারে সেই সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। সেই সফল ব্যক্তি।