লিবিয়ার বেনগাজি শহরে মার্কিন কনস্যুলেটে সশস্ত্র হামলায় লিবিয়ায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জন ক্রিস্টোফার স্টিভেন্স এবং আরও তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, বেনগাজির কনস্যুলেটে এই হামলার সময় ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রদূত মারা যান। এক সংক্ষিপ্ত সফরে মঙ্গলবার রাতে ত্রিপোলি থেকে বেনগাজিতে গিয়েছিলেন স্টিভেন্স। এ সময় রকেটচালিত গ্রেনেড এবং অন্যান্য অস্ত্রে সজ্জিত বন্দুকধারীরা বেনগাজির মার্কিন কনস্যুলেটে হামলা চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় স্টিভেন্স ও অন্যরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
মহানবী হজরত মুহম্মদকে (সা.) অবমাননা করে যুক্তরাষ্ট্রে একজন ইহুদি নির্মিত একটি সিনেমা তৈরির প্রতিবাদে এই হামলা চালানো হয়। পার্শ্ববর্তী মিসরেও ওই সিনেমা তৈরির প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন হয়েছে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পতাকায় আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
ইসলামপন্থী মিলিশিয়া বাহিনী আক্রমণ চালিয়ে বেনগাজির ওই দূতাবাস ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। বন্দুকধারীরা আক্রমণের জন্য সেখানে রকেটচালিত গ্রেনেড ব্যবহার করেছে। এদিকে লিবিয়ার ওই হামলার ঘটনার আগে কায়রোতে মার্কিন দূতাবাসের সামনে, শত শত মানুষ ওই সিনেমার প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হয়েছেন। প্রতিবাদকারীরা দূতাবাস ভবনের দেয়ালে উঠে পড়ে এবং মার্কিন পতাকা ছিঁড়ে ফেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মিসরের গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, সেখানে প্রতিবাদে মুসলিমদের সঙ্গে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরাও অংশ নিয়েছেন। আমেরিকায় মহানবী (সা.)-এর অবমাননা করে নির্মিত সিনেমা মুক্তি দেয়ার জন্য বিশ্বের মুসলমানদের কাছে মার্কিন সরকারকে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তবে লিবিয়া ও মিসর সরকার এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
বেনগাজীতে ওই হামলার পর বিশ্বব্যাপী মার্কিন দূতাবাসগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন ওবামা। হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, লিবিয়ায় মার্কিনীদের রক্ষায় তিনি লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মাগারিয়াফের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এডলফ ডাবস নিহত হওয়ার তিন দশকেরও বেশি সময় পর আবারও কোনো কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে হত্যা করা হলো।
নিহত রাষ্ট্রদূত স্টিভেন্স দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে কূটনীতিক হিসেবে কাজ করেছেন। গত মে মাসে তাকে লিবিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। গাদ্দাফি নিহত হওয়ার আগে এবং পরে লিবিয়াতেও তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, ‘আমরা এই ঘৃণ্য ও ভয়াবহ হামলায় প্রাণহানির ঘটনার নিন্দা জানাই। লিবীয়দের উন্নত ভবিষ্যত্ নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছিলেন তারা।’ হিলারি বলেছেন, কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়াকে তিনি সমর্থন করেন না। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলার মতো ঘটনাও সমর্থনযোগ্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মার্কিন কনস্যুলেটের ওপর এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চত করে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, রাষ্ট্রদূত জন ক্রিস্টোফার স্টিভেন্স ছিলেন একজন সাহসী এবং অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। রাষ্ট্রদূত স্টিভেন্সের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘লিবিয়া বিপ্লবের পুরো সময়টাজুড়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও লিবিয়ার জনগণের স্বার্থরক্ষায় নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন। ত্রিপোলিতে রাষ্ট্রদূত নিয়োজিত হওয়ার পর তিনি লিবিয়ায় গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তা করেছেন। মানবজাতি যখনই স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করবে তখনই স্টিভেন্সের উত্তরাধিকার খুঁজবে তারা। আমার প্রশাসনের সেবা করার জন্য আমি তার প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ এবং তার মৃত্যুতে গভীর শোকাহত।’
যে সিনেমা নিয়ে এই বিতর্ক : মহানবীকে (সা.) নিয়ে নির্মিত ‘দ্য ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ নামের একটি অপেশাদার সিনেমা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে। ওই সিনেমায় মহানবীকে (সা.) একজন প্রতারক এবং তাকে দাম্পত্য কর্মে নিয়োজিত অবস্থায় (নাউযুবিল্লাহ) দেখানো হয়েছে। মিসরের একটি ইসলামী টেলিভিশনে ওই সিনেমার অংশ বিশেষ দেখানোর পর তা অনলাইনে পোস্ট করা হয়। ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, সাম বাসাইল নামের একজন ইসরাইলি ইহুদি ওই সিনেমাটি তৈরি করেন। রাষ্ট্রদূত নিহত হওয়ার পর সাম আত্মগোপন করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, এ ঘটনায় তিনি অনুতপ্ত নন।
সূত্র : বিবিসি, আল জাজিরা ও ওয়াশিংটন পোস্ট (Click This Link)