বিবিসি'র সাবেক সংবাদ কর্মী- সিরাজুর রহমান কে মোটামুটি সবাই চিনে । লন্ডন প্রবাসী এই বাংলাদেশী সাংবাদিকের লেখায় আবেগ এর চেয়ে যুক্তির ব্যাবহারের কারনে তার লেখা আমার ভালো লাগে । তাই যখনই কোন পত্রিকায় তার লেখা পাই তা অবশ্যই পড়ি । আজ তার ''বাংলাদেশকে ব্যবহারের গোপন চুক্তি'' শিরোনামে লেখা প্রবন্ধ টি পড়লাম । তার সেই প্রবন্ধে তিনি যা উস্থাপন করেছেন তা অনেক টা এই রকম -
গত ১০ই সেপ্টেম্বর ভারতীয় সংবাদ সংস্থা IBNG আগরতলা থেকে সংবাদ দেয় যে, ভারত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর সাথে দেশের বৃহত্তর অংশের টেলি-সংযোগ উন্নত জন্য শিগগির বাংলাদেশের মাটির নীচ দিয়ে ফাইবার-অপটিক ক্যাবল স্থাপন করতে যাচ্ছে । প্রথমে আগরতলা থেকে আখাউড়া এবং পরে ভারতের সাব্রুম থেকে প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দর ও তারপর আশুগঞ্জ নদীবন্দর পর্যন্ত ক্যাবল বসবে ।
সম্প্রতি ভারতের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়া পর্যন্ত রেল সংযোগের কাজ দ্রুততার সাথে করার জন্য দুই দেশের মধ্যে মতৈক্য হয়েছে ।
বর্তমান বাংলাদেশ সরকার ক্ষমতায় আরোহনের পরপর ই এশিয়ান হাইওয়ের দু'টি ধারাকে বেনাপোল আর বাংলাবান্ধা থেকে ভারতের প্রায়-বিচ্ছিন্ন উত্তর-পূর্বের সাথে করিডোর হিসাবে সংযুক্ত করার ব্যাপারে বাংলাদেশ রাজি হয়েছে ।
তারও পরে হাসিনা সরকার ভারতকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারের অধিকার দিতে রাজি হয় । তারই জের ধরে ভারতের একটি ব্যাঙ্ক থেকে ১.৭৫% সুদ হারে বাংলাদেশের ১০০ কোটি ডলার ঋণ গ্রহন করা এবং বন্দরদ্বয় ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় অবোকাঠামো উন্নয়ন ও নির্মান করা হবে ।
বর্তমান সরকার ঘোষনা দিয়েছে যে, শিগগির ই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মান করা হবে । এই প্রকল্পের ব্যায় ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা আর এই বন্দর নির্মানের জন্য ৬ হাজার একর জমির প্রয়োজন হবে । বন্দরটি নির্মিত হবে ঢাকার আশেপাশেই । তিন টি স্থানের প্রস্তাব করা হয়েছে যার প্রতিটি ই বর্তমানে ধান ও অন্যান্য ফসল ফলানোর কাযে ব্যবহ্রত হচ্ছে ।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য , প্রধানমন্ত্রি বলেছেন - '' এই বিমান বন্দর প্রতিবেশি দেশ সমুহ ও ব্যবহার করতে পারবে ''।
এখন দুটি প্রশ্ন -
১. বর্তমান প্রস্থিতিতে যেখানে আমাদের বিদ্যুত ও জ্বালানী সমস্যা সমাধান করা অনেক জরুরি সেখানে এত ব্যায় বহুল ও কম প্রয়োজনীয় অথবা এক দৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় একটি প্রকল্প হাতে নেয়ার কি প্রয়োজন ।
২. সাম্প্রতিক সময়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ যারা প্রতি বছর প্রচুর খাদ্য শস্য রপ্তানি করে তারা এ বছর নিজেদের খাদ্য উতপাদনে ঘাটতির আশংকা করছে । বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ও দূর্ভিক্ষের আশংকার কথা বার বার প্রকাশ করছে। আর বাংলাদেশের বিরাট জনসংখ্যার জন্য খাদ্যের যোগান নিয়ে সমস্যা তো নিত্য বছর ই হচ্ছে । সেখানে ৬ হাজার একর ফসলি জমির অধিগ্রহন কতটা যুক্তিযুক্ত ।
এ তো গেল বাংলাদেশের ভিতরের ঘটনা । এবার একটি ভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবো এবং পরে দুটি বষয় কে এক করে দেখলে কেমন দেখায় তা দেখব ।
চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক যে ভালো নয় তা সবাই জানে । সাম্প্রতিক সময়ে তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে ।
বর্তমান সময়ে পরাশক্তির দিক দিয়ে আমেরিকা'র পরে ই চীনের অবস্থান । তাই কৌশল গত কারনে ই আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করছে । সেই কৌশলেরই অংশ হিসাবে আমেরিকা ভারতের মিত্র হিসাবে বর্তমানে আলোচিত ।
ভারত ও চীনের সিমান্ত নিয়ে দ্বন্দ যেকোন সময় ফেটে পড়তে পারে ।
তার আভাষ পাওয়া যাচ্ছে ভারতের দ্বায়িত্বশীল নানা ব্যাক্তির করা মন্তব্যে ।
ভারতের প্রধামন্ত্রী মনমোহন সিং গত ৭ই সেপ্টেম্বর Times Of India কে বলেছেন - '' চীন এশিয়ার মাটিতে পা রাখার চেষ্টা করছে, আমাদের সে সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে । ...দু'বছর পরে চীনের নেতৃত্বে পরিবর্তন হবে । চীনাদের মধ্যে নিজেদের শক্তি-সামর্থ জাহির করার নতুন একটা প্রবনতা দেখা দিয়েছে । সেটি কোন দিকে যায় বলা কঠিন । সুতরাং আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে ।'' প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে যে, ''এ অঞ্চলে (দক্ষিন এশিয়ায়) চীনের ক্রমবর্ধ্মান উপস্থিতির দিকে ভারত সতর্ক দৃষ্টি রাখছে । এ উপস্থিতির মধ্যে আছে বাংলাদেশ , শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে বন্দর নির্মানে চীনের গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ ।''
কিছুদিন আগে চীন একজন ভারতীয় জেনারেলকে ভিসা দিরে অস্বীকৃতী জানায় । বেইজিং বলেছে, ঐ জেনারেল ' বিতর্কিত কাশ্মীরে সেনাধ্যক্ষ ছিলেন ' বলেই তাকে ভিসা দেয়া হয় নি । ভারত সরকার এ ব্যাপারে অস্বাভাবিক রকম ক্রুব্ধ হয়েছে । এক্ষেত্রে মনে করিয়ে দেইঃ পাকিস্তান ১৯৬৩ সালে চীন কে আজাদ কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলে দুই হাজার বর্গমাইল পার্বত্য অংশ ছেড়ে দিয়েছিল যা নিয়ে এখন ভারত ও চীনের মধ্যে সংঘাত চলছে ।
একাত্তরে পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতের সেনাধ্যক্ষ লে. যে. যে. এফ আর জ্যাকব ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিভিঊ সাময়ীকিতে এক প্রবন্ধে জরুরী ভাবে চীন-ভারত সীমান্তের কোথায় কত সৈন্য, কোথায় কত শত ১৫৫ মিলিমিটার কামান, কোথায় কত হেলিকপ্টের মোতায়েন করতে হবে এবং কোথায় কতগুলো বিমানঘাটি স্থাপন করতে হবে তার ফিরিস্তি দিয়েছেন ।
জেনারেল জ্যাকব স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, সঙ্ঘাত দেখা দিলে চীন প্রথমে "শিলিগুড়ি করিডোর" কেটে দেয়ে উত্তর-পুর্ব রাজ্যগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে ।
সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় এটা খুবই স্বাভাবিক যে, ভারত নিজের আত্মরক্ষার জন্য সচেষ্ট্য হবে । কিন্তু এই যুদ্ধে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ফেলা টা হল ট্রেজিডি । যা আমরা বাংলাদেশের জনগন চাই না ।
হয়তো ভাবছেন এর মধ্যে বাংলাদেশ কিভাবে জড়ালো । তাহলে দেখুন -
সঙ্ঘাতের সময় যদি শিলিগুড়ি করিডোর যদি চীন বন্ধ করে দেয় তাহলে ভারতের তার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে যোগাযগের জন্য বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই ।
তাই বাংলাদেশের জলপথ , রেলপথ ও স্থল পথ তাদের ব্যবহার করার উপযুগী করা হচ্ছে । এই সব পথে ভারি অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম নেয়া হবে।
আর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ব্যবহার করা হবে সেই সাত রাজ্যের মধ্যে বিমান যোগাযগের জন্য ।
তো কি মনে হয়, চীন এই ব্যপার গুলো চোখ বুজে দেখে যাবে । তারা কিছুই করবে না । অবশ্যই করবে । আর তারা নিজে এসে কিছুই করা লাগবে না । কারন সে ডামাডলে ঐ সাত রাজ্যের বিচ্ছিন্নতা বাদি সংগঠন গুলো সু্যোগ নিতে চাইবে । আর চীন শুধু তাদের আর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য করবে মাত্র ।
ঘটনা এটাই ঘটবে যে , 'রাজায় রাজায় যুদ্ধে উলুখাগড়ার প্রাণ যাবে' ।
এখন ট্রিগার বাংলাদেশের হাতে । কিভাবে ?
ভারত যদি বাংলাদেশের কাছ থেকে এই সুযোগ না পায় তবে তারা সংযত আচরন করবে আর যুদ্ধ বাধবে না । আর যদি এই সুযোগ গুলো পায় তবে অসংযত, উদ্ধত ও আগ্রাসী ভারত তার স-চেহেরায় আবির্ভুত হবে ।
আর যার মূল্য বাংলাদেশেকে জীবন ও সার্বভৌমত্ব দিয়ে শোধ করতে হবে ।
আমাদের মনে হয় আরেকটু ভেবে দেখা দরকার ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




