somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন ও আমার কিছু কথা- একটি বিশ্লেষণধর্মী পোস্ট

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনেক দিন ধরেই ভাবছি দেশের প্রচলিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর পরীক্ষা ও শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু বলবো। সমালোচনা ও প্রতিকার। তবে শেষ পর্যন্ত যখন দেখলাম শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করার কথা তাই না লিখে আর পারলাম না।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পদ্ধতির উপর পলিসি ও গাইড লাইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাতিত্বে একটি সভা আহ্বান করা হয়েছে।

আগামী ৭ জুলাই রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও দেশের ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং একজন ডিন অথবা অভিজ্ঞ অধ্যাপকের উপস্থিতিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি পত্র বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পাঠানো হয়।
উৎস

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার বর্তমান প্রচলিত পদ্ধতি পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পৃথক পরীক্ষার পরিবর্তে “ক্লাস্টার পদ্ধতি”-তে কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে।

ক্লাস্টার পদ্ধতি এর ফলে যা যা ঘটবেঃ

১) বহু নির্বাচনি প্রশ্ন আর থাকবে না।

২) এসসিকিউ এবং বর্ণনামূলক প্রশ্নের সমন্বয়ে ৩ ঘন্টার পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে

৩) ভর্তিচ্ছুরা নিজ বিভাগীয় শহরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে

৪) ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক সঙ্গে গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রেও পরীক্ষা হবে একটি।

৫) অনুষদ ভিত্তিক সব মিলিয়ে ৪ থেকে ৫টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে


ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা ভোগান্তি লাঘব হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা।

আমার বিশ্লেষণ ঃ

"বহু নির্বাচনি প্রশ্ন আর থাকবে না"

ব্যক্তিগত ভাবে আমি বহুনির্বাচনী পরীক্ষা পছন্দ করি। এর পিছনে যুক্তি হল ঃ

১) এর ফলে বিষয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারনা রাখতে হয়। যেমনঃ আমি যদি ইংরেজির বহুনির্বাচনী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেই তাহলে প্রথমত আমাকে ইংরেজি গ্রামারের গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয় সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত আমার কম্প্রিহেনশন এর জন্য ইংরেজি ভাল মত বুঝবার ক্ষমতাও লাগবে ।

২) কম সময়ের মধ্যে নিজের বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে উত্তর দিতে হয়। ভুল উত্তর পরিহার করা আমাদের নিখুদ সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতার পরিচয় দেয়।

"এসসিকিউ এবং বর্ণনামূলক প্রশ্নের সমন্বয়ে ৩ ঘন্টার পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে"

আমি এখানে কিছুটা এক মত পোষণ করবো। কারন লেখার দক্ষতা যাচাই করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা খুব ভাল করেই জানি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অনেকে খুব ভাল নাম্বার পেয়ে ভর্তি হলেই পরে দেখা যায় ভাল সিজিপিএ পায় না। এর পিছনে কারন হল দুর্বল লেখার মান। বর্ণনামূলক প্রশ্ন অনেক সাহায্য করবে এই দক্ষতাকে যাচাই করতে।

এসসিকিউ সম্পর্কে আমরা আগে থেকেই কিছুটা জানি। এটা অনেকটা সৃজনশীল পরীক্ষার মত। এই ধরণের পরীক্ষা থাকলে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা যাচাই করা যাবে। আমি এটার সাথেও এক মত। তবে আমি মনে করি, এসসিকিউ এবং বর্ণনামূলক প্রশ্নের সাথে সাথে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন দেয়াও উচিত। মেধা যাচাই যখন করতেই হবে তখন সব দক্ষতাই যাচাই করা উচিত।

"ভর্তিচ্ছুরা নিজ বিভাগীয় শহরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে"

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাস করার জন্য এই পদ্ধতি অনেক কাজে দিবে। এর সম্পূর্ণ সপক্ষে ও বিরোধিতায় নিচে কিছু যুক্তি দার করালামঃ

পক্ষেঃ
১) দেশের ৭টি বিভাগে পরীক্ষা হলে আমরা দেশের বিভিন্ন কোনায় থাকা মেধাবি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে পারব। তাদের কাজে লাগাতে পারব।
২) যারা অর্থনৈতিক কারন বা দূরত্ব বা অন্য যেকোনো প্রতিবন্ধকতায় দূর দুরান্তে গিয়ে পরীক্ষা দিতে পারছে না তাদের জন্য একটা সুযোগ করে দিবে।

বিপক্ষেঃ
১) যেখানে হাতে গোনা কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রে দুর্নীতি ও অসদুপায় অবলম্বন করা হয়ে থাকে, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরীক্ষা নিয়ে কি অবস্থা হতে পারে চিন্তা করে দেখেন
২) এমনেই একটা ভাল ঠাই পাওয়ার জন্য অনেকে লাখ লাখ টাকা খরচ করে গোপনে প্রশ্ন ফাস করে নিচ্ছে তাদের একটা ভাল সুযোগ করে দিবে। যখন প্রশ্ন সারাদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। বণ্টন প্রক্রিয়া যত জটিল তবে যত বেশি সম্ভাবনা থাকবে ফাস হবার।

এখন এটা দুইভাবে দেখতে পারেন, প্রথমত এটা সব যোগ্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারবে। অন্য দিকে জটিল বণ্টন ব্যবস্থা অনেক অযোগ্য সিক্ষাথিদের টাকার প্রতিধ্বনিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে দিতে পারে।

"........বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক সঙ্গে গ্রহণ করা হবে........"

সপক্ষেঃ
সরল পরীক্ষা ব্যবস্থা। অনেক সময় ও শ্রম সাশ্রয় হবে

বিপক্ষেঃ
দেখা যাবে সব ভাল ভাল শিক্ষার্থীরা ( যারা মেধা তালিকায় প্রথম দিকে আছে) তারা সবচেয়ে ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাবে। ফলে প্রতিযোগিতা আর থাকবে না। পিছনের দিকে থাকা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভাল ছাত্রের সঙ্কটে ভুগবে আর মান হারাবে


"অনুষদ ভিত্তিক সব মিলিয়ে ৪ থেকে ৫টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে"

সপক্ষে ঃ
সরল পরীক্ষা ব্যবস্থা। অনেক সময় ও শ্রম সাশ্রয় হবে

বিপক্ষেঃ
১) বাংলালিংক দামের পরীক্ষা হয়ে যাবে। দেখা যাবে পিছনের দিকে থাকা ডিপার্টমেন্ট গুলো শিক্ষার্থী সংকতে ভুগবে।
২) পিছনের দিকে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর কিছু কিছু অনুষদ এক বারে শূন্য আসন হয়ে যেতে পারে

আমার দৃষ্টিতে কিছু সংযোজনঃ

ভাইভা পরীক্ষা ঃ
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকে বলে আনস্মার্ট। কথাটা কিছুটা ঠিক আছে। তবে আমাদের মাঝে বিশ্বমানের হীরকখণ্ডও আছে যা অন্য জায়গায় খুব কম। এখন সময় এসেছে এই কলঙ্ক দূর করার। এর একমাত্র উপায় হচ্ছে ভাইভা পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব, তাদের কথা বলার ধরন, স্মার্টনেস বলতে গেলে সব বাহ্যিক গুনগন যাচাই করা হবে।

এখন কথা আসতে পারে অনেকে অনেক দুরদুরান্ত থেকে এসেছে। সুন্দর করে কথা বলতে না পানা বা স্থানীয় টান প্রথম প্রথম থাকতে পারে। আমিও এই কথা অনেক চিন্তা করেছি। আমি এখানে দোষ দিব আমাদের দেশের সিক্ষাব্যবস্থার। আমরা ছোটবেলা থেকে শুধু বই মুখস্ত করে নিজেদের মেধাবি বলতে পারি, যুগউপযোগী না। আর এখন মেধার চেয়ে যুগোপযোগীর অনেক বেশি দরকার। এই সব গুন আমাদের ছোটবেলা থেকে শিখতে হবে।

দুইটা ইংরেজি শব্দ বলাকে আমি স্মার্টনেস বলছি না। বলছি বডি ল্যাঙ্গুয়েজকে। এটা জানার জন্য উচ্চবিত্তের মানুষ হতে হয় না। থাকতে হয় একটু সচেতন আর খেয়াল রাখতে হয় চারপাশে কি হচ্ছে।

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তৈরি হয়েছে দেশের মহান মহান ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু, মুনির চৌধুরী থেকে শুরু করে নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস পর্যন্ত। তৈরি হয়েছে, হচ্ছে আর হতে থাকবে। তবে প্রশাসনকে সঠিকভাবে যাচাই করতে হবে কারা আসলে যোগ্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের তৈরি করার জন্য। ধন্যবাদ, সবাইকে।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×