ছন্দে ওদের প্রতিবাদের সুর। বুকজুড়ে আত্মবিশ্বাস। ভাঙনকে ভাঙেন আর সৃষ্টিকে গড়েন তারা। শুভ্র সফেদ কারাতে ড্রেস পড়া এদের দেখলে মনে হবে যেন আকাশের সাদা পরী । শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ওরা। সাথে রয়েছেন বেশ ক’জন শিক্ষিকাও।
ইভটিজিং নিয়ে আতঙ্ক, বখাটেদের নানা উৎপাত, প্রেমে ব্যর্থতা, হতাশা, সামাজিক কুসংস্কারসহ নানা বিষয়ে নিজেদের শারীরিক দূর্বলতা ও বিভিন্ন প্রতিকুলতার কথা ভেবে মেয়েরা ছোট করে ফেলে তাদের নিজস্ব পৃথিবীটাকে। প্রতিরোধ কিংবা প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে নির্বাক চেয়ে থাকে পুরুষের সহযোগিতার প্রতি, তুচ্ছ ঘটনায় তারা বেছে নেয় আত্মহননের পথ ।
২০১০ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের পড়াশুনার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় কারাতে (মার্শাল আর্ট) প্রশিক্ষণ কোর্সের। প্রশিক্ষণ নিতে প্রতিমাসেই বাড়ছে ছাত্রীদের সংখ্যা। সপ্তাহের প্রতি রবি ও সোমবার, সকাল/ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে চলে এ প্রশিক্ষণ। এতে ইনস্ট্রাকটর হিসেবে কারাতে শেখান ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাকটর আশরাফুল ইসলাম। প্রথমদিকে মোট দেড় শতাধিক ছাত্রী অংশ নেন এ প্রশিক্ষণে ।
দীর্ঘ ৬ মাস প্রশিক্ষণ শেষে (১০ জানুয়ারী, ২০১১) ৫ জন শিক্ষিকা এবং একজন ক্ষুদে শিক্ষার্থীসহ ৩০ জন শিক্ষার্থী পেয়েছেন ইয়েলো ব্যাল্ট। ব্যাল্ট প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় লেখক, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড.মুহম্মদ জাফর ইকবাল। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও কারাতে প্রশিক্ষণের স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যাপক ড.ইয়সমীন হক, ড.নাজিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
কারাতে প্রশিক্ষণে শুরু থেকেই ছাত্রীদেরকে প্রবল উৎসাহ দিয়ে আসছেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমীন হক। সেদিন ড. জাফর ইকবাল ঘোষনা দেন, কারাতে প্রশিক্ষণে প্রথম ব্ল্যাক ব্যাল্ট পাওয়া শিক্ষার্থীকে তিনি একটি সায়েন্স ফিকশন উৎসর্গ করবেন ।
ড.ইয়াসমীন হক বলেন, ক্যারাতে প্রশিক্ষণ মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে। আমি সেদিনের আশায় আছি যেদিন আমাদের মেয়েরা ব্ল্যাকবেল্ট পাবে। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাকে সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করার আহবান জানান তিনি।
‘প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলেও মেয়েরা নিজেদের শরীরের ফিটনেসের কথা চিন্তা করে অনেক সময় প্রতিরোধ না করে নীরবে সহ্য করে যায়। এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। কারাতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর মেয়েদের সে ভয়টা কেটে যাবে। আত্মবিশ্বাস বাড়বে’—বললেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের ছাত্রী প্রমিতা।
বি. দ্র:
এখনো পর্যন্ত এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য প্রযোজ্য।
সিলেট নগরীর অথবা বাহিরের কেউ যদি এ সংক্রান্ত হেল্প পেতে চান তাহলে যোগাযোগ করতে পারেন-
প্রভোস্ট
প্রথম ছাত্রী হল
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়
নারীর প্রতি সহিংসতা: প্রতিবাদে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন, সমাবেশ
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৭