somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আমি

১৮ ই মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একথা সেকথার পর গম্ভীর মুখে সে যখন আমার দিকে তাকালো
তখন ধরেই নিলাম এবার বাছাধন কাজের কথায় আসবে।
তার ভাঙাচোরা মুখ আর কঙ্কালসার দেহের দিকে তাকিয়ে
নিজের বিত্ত আর মেধ বহুল শরীরের প্রতি প্রথম
গর্বে আমার বুক ভরে গেল।
আমার দেহের প্রতিটা লোমকূপ অহঙ্কার চুইয়ে দিতে লাগলো
আমার মনের অন্দরে।
তার খাঁচায় বন্দি পাখির মতন শূন্য দৃষ্টি
আমি উপভোগ করছিলাম তারয়ে তারিয়ে।
আমার জামা থেকে ভেসে আসা দামি সেন্টের গন্ধে
তার গায়ের দুর্গন্ধও দুর করেছে ভাগ্যিস, তা নাহলে
নিজের কাছে নিজেকেই ছোট মনে হত।
পুরানো বন্ধু বলে আমার বর্তমান সমাজ তো আমায় রেয়াত করবে না,
তাদের কৌতুহলী দৃষ্টি আর নিষ্ঠুর চাপা হাসি
আমরা চোখে জ্বালা ধরিয়ে দিতে পারে একমূহুর্তে।
একটা সময় যতই গলাগলি থাক, আজ দুই মেরুতে দাঁড়িয়ে আর যাই হোক
পাশাপাশি বসা চলে না।
কি এত ভাবছিস?
বন্ধুর ভেঙে আসা গলার আওয়াজে একটু ব্যাঙ্গের সুরে বললাম
তুই বল!
তোকে অনেক দিন দেখিনা তাই মনে হল একবার……..
আর কিছু না! আমার অহঙ্কার দাম্ভিক গলায় বলল
তেমন কিছু না, তুই অনেক পাল্টে গেছিস
সেই মানুষটা আর নেই।
আমার অহঙ্কার গলা তুলে বললে,
সময় সবাইকে পালটে দেয়
তোকেই দ্যাখনা, আগেকার সেই অবস্থা তোরওতো আর নেই।
আমার কথা ছাড়, চিরকালের ভবঘুরে আজও তাই
আমার অহঙ্কার বলে,
সংসার করে দেখলি না কেন? অবশ্য এই অবস্থায় সংসারের দায়িত্ব…….
সংসারই তো করছিলাম রে। আমরা মায়ের প্রতি কর্তব্য, এবার আমার ছুটি।
হা হা করে হেসে উঠল আমার দম্ভ।
সংসার করতে বুকের পাটা চাই, চাই অর্থ
নুন আনতে পান্তা ফুরায় যার, সংসারের আসল সুখের মর্ম সে বুঝবে কেমন করে?
আমার কাছে কি চাস?
কি দিতে পারিস তুই?
আমার দম্ভ এবার মাথা তুলে দাঁড়ায়
চাইলে এখন আমি সব দিতে পারি বাছাধন
কিন্তু কেন দেবে, আমার অহঙ্কার আমায় সাবধান করে।
পারিস নাতো? আমার বন্ধুর তোবরানো গালে ইসৎ হাসি খেলে যায়,
দেওয়া যায় না রে, নিজের গড়া সাম্রাজ্যের ভাগ কাউকে দিতে নেই
একা একা ভোগ আর একা একা ভোগ, তোদের জীবনের এই মূলমন্ত্র
আমার বন্ধুর হাত এবার তার ঝোলায় ভিতর ঢোকে,
আমার দম্ভ পরিতৃপ্তির হাসি হাসে মনে মনে।
এবার হয়ত বেরোবে কোন এক চাকরির দরখাস্ত, অথবা সাহায্যের দাবীতে লেখা
কোন এক দীর্ঘ পত্র।
ছলনার নিভৃত আশ্রয়ে গোপনে লুকিয়ে রাখা ভিক্ষার ঝুলি।
তুই আচার খেতে ভালোবাসতিস, মনে আছে তোর?
ফুঃ! কত বাহানাই করতে হয় তোদের, মনে মনে
রাগ হয় খুব। আচার বেচবার জন্য আমাকে ডাকিয়ে আনার কি মানে
আমার পরিচয় না দিয়ে বাড়ি গিয়ে বেচে এলেই তো হত।
দাম্ভিক আমি বলি,
আচার এখন আর খাই না সেভাবে, তবে তুই যখন বেচতে এলি না বলি কেন,
দে একটা চট করে।
বেচতে নয়, আমার কোন এক সময়ের ঘনিষ্ট বন্ধু একটু ধরা গলায় বলে
মা দিয়ে গিয়েছে যাওয়ার আগে, তোকেই যে কেন তার মনে পড়ল।
হয়ত তুই খুব ভালোবাসতিস বলে।

রাত এখন কটা হবে?
হাতের তালুতে বাধা দামী ঘড়িটাও যেন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে
কোন এক অজ্ঞাত কারণে।
যে চেয়ারটাতে আমার প্রাণের বন্ধু বসেছিল,
সেটা এখন খালি।
তার গায়ের দূর্গন্ধ আর বাতাস দূষিত করছেনা বহুক্ষণ,
তার নোংরা জামার কালির দাগ দেখে কেউ আর মুখ ফিরিয়ে আমাকে দেখছে না।
এখন ঐ চেয়ার জুরে বসে আসে আমার অহঙ্কার, যে আমাকে বোঝাচ্ছে,
চোখে আঙুল দিয়ে আমার বর্তমান সামাজিক প্রতিষ্ঠাকে, আমার
বিত্ত-বাসনাকে জাগ্রত করতে চাইছে অক্লান্ত পরিশ্রমে।
আমি এক মনে তার কথা শুনছি আর বার বার বলছি, হ্যাঁ হ্যাঁ তাইতো।
কিন্তু ভেতরে কে যেন বলে উঠছে, তাই কি? সত্যিই কি তাই?

রাজ
১৮ই মে ২০০৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×