একথা সেকথার পর গম্ভীর মুখে সে যখন আমার দিকে তাকালো
তখন ধরেই নিলাম এবার বাছাধন কাজের কথায় আসবে।
তার ভাঙাচোরা মুখ আর কঙ্কালসার দেহের দিকে তাকিয়ে
নিজের বিত্ত আর মেধ বহুল শরীরের প্রতি প্রথম
গর্বে আমার বুক ভরে গেল।
আমার দেহের প্রতিটা লোমকূপ অহঙ্কার চুইয়ে দিতে লাগলো
আমার মনের অন্দরে।
তার খাঁচায় বন্দি পাখির মতন শূন্য দৃষ্টি
আমি উপভোগ করছিলাম তারয়ে তারিয়ে।
আমার জামা থেকে ভেসে আসা দামি সেন্টের গন্ধে
তার গায়ের দুর্গন্ধও দুর করেছে ভাগ্যিস, তা নাহলে
নিজের কাছে নিজেকেই ছোট মনে হত।
পুরানো বন্ধু বলে আমার বর্তমান সমাজ তো আমায় রেয়াত করবে না,
তাদের কৌতুহলী দৃষ্টি আর নিষ্ঠুর চাপা হাসি
আমরা চোখে জ্বালা ধরিয়ে দিতে পারে একমূহুর্তে।
একটা সময় যতই গলাগলি থাক, আজ দুই মেরুতে দাঁড়িয়ে আর যাই হোক
পাশাপাশি বসা চলে না।
কি এত ভাবছিস?
বন্ধুর ভেঙে আসা গলার আওয়াজে একটু ব্যাঙ্গের সুরে বললাম
তুই বল!
তোকে অনেক দিন দেখিনা তাই মনে হল একবার……..
আর কিছু না! আমার অহঙ্কার দাম্ভিক গলায় বলল
তেমন কিছু না, তুই অনেক পাল্টে গেছিস
সেই মানুষটা আর নেই।
আমার অহঙ্কার গলা তুলে বললে,
সময় সবাইকে পালটে দেয়
তোকেই দ্যাখনা, আগেকার সেই অবস্থা তোরওতো আর নেই।
আমার কথা ছাড়, চিরকালের ভবঘুরে আজও তাই
আমার অহঙ্কার বলে,
সংসার করে দেখলি না কেন? অবশ্য এই অবস্থায় সংসারের দায়িত্ব…….
সংসারই তো করছিলাম রে। আমরা মায়ের প্রতি কর্তব্য, এবার আমার ছুটি।
হা হা করে হেসে উঠল আমার দম্ভ।
সংসার করতে বুকের পাটা চাই, চাই অর্থ
নুন আনতে পান্তা ফুরায় যার, সংসারের আসল সুখের মর্ম সে বুঝবে কেমন করে?
আমার কাছে কি চাস?
কি দিতে পারিস তুই?
আমার দম্ভ এবার মাথা তুলে দাঁড়ায়
চাইলে এখন আমি সব দিতে পারি বাছাধন
কিন্তু কেন দেবে, আমার অহঙ্কার আমায় সাবধান করে।
পারিস নাতো? আমার বন্ধুর তোবরানো গালে ইসৎ হাসি খেলে যায়,
দেওয়া যায় না রে, নিজের গড়া সাম্রাজ্যের ভাগ কাউকে দিতে নেই
একা একা ভোগ আর একা একা ভোগ, তোদের জীবনের এই মূলমন্ত্র
আমার বন্ধুর হাত এবার তার ঝোলায় ভিতর ঢোকে,
আমার দম্ভ পরিতৃপ্তির হাসি হাসে মনে মনে।
এবার হয়ত বেরোবে কোন এক চাকরির দরখাস্ত, অথবা সাহায্যের দাবীতে লেখা
কোন এক দীর্ঘ পত্র।
ছলনার নিভৃত আশ্রয়ে গোপনে লুকিয়ে রাখা ভিক্ষার ঝুলি।
তুই আচার খেতে ভালোবাসতিস, মনে আছে তোর?
ফুঃ! কত বাহানাই করতে হয় তোদের, মনে মনে
রাগ হয় খুব। আচার বেচবার জন্য আমাকে ডাকিয়ে আনার কি মানে
আমার পরিচয় না দিয়ে বাড়ি গিয়ে বেচে এলেই তো হত।
দাম্ভিক আমি বলি,
আচার এখন আর খাই না সেভাবে, তবে তুই যখন বেচতে এলি না বলি কেন,
দে একটা চট করে।
বেচতে নয়, আমার কোন এক সময়ের ঘনিষ্ট বন্ধু একটু ধরা গলায় বলে
মা দিয়ে গিয়েছে যাওয়ার আগে, তোকেই যে কেন তার মনে পড়ল।
হয়ত তুই খুব ভালোবাসতিস বলে।
রাত এখন কটা হবে?
হাতের তালুতে বাধা দামী ঘড়িটাও যেন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে
কোন এক অজ্ঞাত কারণে।
যে চেয়ারটাতে আমার প্রাণের বন্ধু বসেছিল,
সেটা এখন খালি।
তার গায়ের দূর্গন্ধ আর বাতাস দূষিত করছেনা বহুক্ষণ,
তার নোংরা জামার কালির দাগ দেখে কেউ আর মুখ ফিরিয়ে আমাকে দেখছে না।
এখন ঐ চেয়ার জুরে বসে আসে আমার অহঙ্কার, যে আমাকে বোঝাচ্ছে,
চোখে আঙুল দিয়ে আমার বর্তমান সামাজিক প্রতিষ্ঠাকে, আমার
বিত্ত-বাসনাকে জাগ্রত করতে চাইছে অক্লান্ত পরিশ্রমে।
আমি এক মনে তার কথা শুনছি আর বার বার বলছি, হ্যাঁ হ্যাঁ তাইতো।
কিন্তু ভেতরে কে যেন বলে উঠছে, তাই কি? সত্যিই কি তাই?
রাজ
১৮ই মে ২০০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




