somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে : হুমায়ুন আজাদ

২২ শে মে, ২০১০ রাত ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সক্রেটিস দিয়েই শুরু করি . . . . সক্রেটিস ছিলেন সৎ, নির্ভীক, আপোষহীন, সত্যান্বেষী এবং বিশ্বাসী। সক্রেটিস বিশ্বাসী ছিলেন কিন্তু প্রথাগত ধারায় বিশ্বাসী ছিলেননা; অর্থাৎ তাঁর বিশ্বাস কোন প্রথাগত ধ্যান, ধারনা বা তপস্বার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। নিজস্ব চিন্তাশক্তির সীমাবদ্ধতার জন্যই, নিজস্ব আঙ্গিকে, নিজের ভিতর মূর্তি গড়েন। আর হুমায়ুন আজাদের ধর্ম মূর্তি ভাঙা । শুধুমাত্র এই জায়গাতেই হুমায়ুন আজাদের সাথে সক্রেটিসের ব্যাপক পার্থক্য করা যায়। এছাড়া সক্রেটিসের মত হুমায়ুন আজাদও ছিলেন সৎ, নির্ভীক, আপোষহীন, সত্যান্বেষী এবং একক ভাবে সবচেয়ে বেশি প্রথাবিরোধী। সক্রেটিস যেমন তাঁর সময়ের থেকে অনেক বেশি অগ্রসর ছিলেন, হুমায়ুন আজাদও তেমনি তাঁর সময়ের থেকে অনেক বেশি অগ্রসর ছিলেন। আমাদের দেশে কখনো কোন সক্রেটিস জন্মাননি কিন্তু জন্মেছিলেন হুমায়ুন আজাদ; যিনি সক্রেটিসের মত সত্য প্রকাশের জন্য হেমলক পান করতেও দ্বিধা করেননি। হুমায়ুন আজাদই আমাদের সক্রেটিস।

হুমায়ুন আজাদ ছিলেন কবি, কিশোরসাহিত্যিক, প্রবন্ধকার, ওপন্যাসিক, সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী; এবং সর্বাশে আধুনিক। হুমায়ুন আজাদের সৃষ্টিশীল এবং মননশীল রচনাগুলো মানুষের অন্তরলোকে কি আশ্চর্য রকমের দ্যুতি ফেলে তা ব্লগিং করে বোঝানো অত্যন্ত দুরূহ। হুমায়ুন আজাদকে বোঝতে হলে যেতে হবে তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিশীল বাক্যের কাছে; তাঁকে বোঝতে হলে যেতে হবে তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিশীল কবিতার কাছে; তাঁকে বোঝতে হলে তাঁর রচনার প্রতীক-রূপক-চিত্রকল্পের সমন্বয়কে বোঝতে হবে। তাঁকে বোঝতে হলে নগরকেন্দ্রিক যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি ও নৈরাশ্যবোধকে বোঝতে হবে। তাঁকে বোঝতে হলে দেহজ কামনা-বাসনার অনুভূতিকে স্বীকার কর‌তে হবে এবং প্রেমের শরীরী রূপকে প্রত্যক্ষ করতে হবে। আর না হলে বছরের পর বছর ধরে দেখে আসা প্রথায় ঘা লাগায় আপনিও চিৎকার করে উঠতে পারেন।

হুমায়ুন আজাদ বদলেয়ারের কাব্যময়তায় দীক্ষিত ছিলেন। বদলেয়ার কাব্যময়তার ওপর জোর দিতেন এবং বলতেন নিয়তই কবিত্বময় হোন, গদ্যও হোক কাব্যময়। হুমায়ুন আজাদের প্রায় প্রতিটি কবিতায় পদ্যের আলো-আধাঁরি অতিক্রম করে কাব্যিক ও বিশুদ্ধ শিল্প হয়ে উঠেছে । এমনকি গদ্যগুলোও একজন আধুনিক কবির ছোয়াঁয় কাব্যিক ও আধুনিক হয়ে উঠেছে। ইচ্ছে ছিল কয়েকপর্বে স্যারকে নিয়ে বিশদ আকারে লিখব। কিন্তু সময়, কম্পিউটার আর বইয়ের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। আমি সাধারণত প্রায় প্রতি মাসেই বই কিনি এবং যেগুলো পড়ে শেষ করি বাসায় গেলে সেগুলো রেখে আসি। বাসায় এক সপ্তাহ ছিলাম; এই একসপ্তাহে যেটুকু সম্ভব হলো তা আপনাদের কাছে প্রকাশ করার ইচ্ছা হচ্ছে বলেই এই পোষ্ট। যদি সব অনুকূলে থাকে তাহলে আমার মূল ইচ্ছে আপনাদের কাছে প্রকাশ করব অন্যকোন সময়ে। তা কালের উপর ছেড়ে দিলাম।

কবিতায় ভরপুর এই ছোট্ট দেশে স্যার খুব কমই কবিতা লিখেছেন। মাত্র সাতটি কাব্যগ্রন্থ উনার; যার প্রথম দু'টিকে (অলোকিক ইষ্টিমার: ১৯৭৩, জ্বলো চিতাবাঘ: ১৯৮০) তিনি প্রায় অস্বীকারই করেছেন। বলেছেন ওগুলো কচি হাতের লেখা এবং মাত্রাতিরিক্ত আবেগে পূর্ন, যা বিশুদ্ধ নয়। কিন্তু আমার প্রিয় কবিতাগুলোর কয়েকটি (আমার সন্তান, রোদনের স্মৃতি, টয়লেট, রাত্রি, আত্মহত্যার অস্ত্রাবলি, ধর্ষন) চৈত্রের গোলাপের মত রক্তিম হয়ে এখনো ফুটে আছে ও-দু'টিতে। বাকি পাঁচটি কাব্যগ্রন্থের সবগুলো কবিতাই অসাধারণ এবং অসামান্য; যা দশকের পর দশক ধরে পাঠককে বিশুদ্ধ কবিতার স্বাদ আহোরনে সাহায্য করবে। আধুনিক শিল্পীর মত হুমায়ুন আজাদ প্রেম, ভালোবাসা, আবেগ, যুগ-যন্ত্রনাকে নিজের ভিতর নিয়ে আসেন। সেই যন্ত্রনার আগুনে নিজে দ্গ্ধ হোন এবং সেই দগ্ধ যন্ত্রনা থকেই বেরিয়ে আসে অগ্নিঝরা সব পংক্তিমালা। সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে - র মত রূপকতা; বাঙলা ভাষা: শেকলে বাঁধা শ্যামল রূপসী, তুমি আমি, দুর্বিনীত দাসদাসী-/ একই শেকলে বাঁধা পড়ে আছি শতাব্দীর পর শতাব্দী - র বিশুদ্ধ আবেগ; পৃথিবীতে একটিও বন্দুক থাকবেনা: আমাদের গোরব আমরা আজ সভ্যতার অমানবিক স্বর্ণযুগে উপনীত হয়েছি - র মত চরম সত্যতা ; যতোবার জন্ম নিই : কিন্তু প্রত্যেক জন্মে আমার জন্যই থাকে রূঢ় রাস্তা আর ফাঁসিকাঠ - এ সমাজের অশ্লীলতার সঙ্গে খাপ না খাওয়া একজন কবির কথা; আমাদের ভালোবাসা : দিনের পর দিন অবিরাম চলতে পারে না ভূমিকম্প। / মাটি ও মানুষকে কয়েক মুহূর্তে থরথর করে থেমে যায়- / যে রকম আমাদের ভালোবাসা - এ নারী পুরুষের প্রেম ভালোবাসার স্বীকারোক্তিমূলক নির্মম সত্য পাওয়া যাবে না রবীন্দ্রনাথের রোম্যান্টিকতায়, এমনকি শামসুর রহমানের আধুনিকতায়ও।

হুমায়ুন আজাদ এখন শুধুই মহাকালের অন্তর্ভুক্ত। জীবনের রূপময় তাৎপর্যহীনতা পেরিয়ে তিনি চিরশূন্যতায় প্রবেশ করেছেন কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর অমর রচনাগুলো। দুর্দশাগ্রস্থ পৃথিবীর এই ভূ-খন্ডে হুমায়ুন আজাদ ছিলেন এটা আমাদের জন্য অর্থপূর্ণতা। এখন তিনি নেই তা আমাদের হৃদয়ে হাহাকারের ঘন্টা বাজিয়ে যায়। সময় যত অতিক্রান্ত হবে হাহাকারের ঘন্টা ততো তীব্র হবে এবং বড় হয়ে দেখা দিবে তাঁর অনুপস্থিতি। তাঁর অনুপস্থিতিতে হৃদয় ও মন পূর্ণ নমিত হয়। তাঁর অনুপস্থিতি আমাদেরকে আরো কয়েকটি ঋদ্ধ গ্রন্থ থেকে বঞ্চিত করে। উনার অনুপস্থিতি, আমার প্রতিটি লোমকে শিউরে দেয়। উনার অনুপস্থিতি আমার মেঘাচ্ছন্ন চোখ দু'টিতে অবিরাম বর্ষন এনে দিতে চায়; এবং আমার সামনের দৃশ্য ঝাপসা হয়ে আসে . . . . .
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×