somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিউমার সব সময় কিছুটা হলেও কাজ করে।

১৭ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুযোগ পেলে আমি একটু হিউমার মিউমার করার চেষ্টা করি, প্রায়ই কাজ করে; কিন্তু ২/১ জায়গায় সমস্যা হয়ে যায়। বছর খানেক আগে, এক যায়গায় একটু হিউমার করতে গিয়ে অনেকটা ধরা খেয়ে গিয়েছিলাম; যাক, শেষ রক্ষা হয়েছিলো।

এক পারিবারিক বন্ধুর কাছে সামান্য টাকা পাওনা ছিলো; তিনি অন্য শহরে থাকেন; উনার এক চাচাতো ভাই আমাদের শহরে আসছে, উনি ওর মারফত টাকা পাঠিয়ে দিয়ে, আমাকে ফোনে জানায়েছেন: চাচাতো ভাইয়ের নাম হান্নান, আমার বাসায় এসে টাকা দিয়ে যাবে; হান্নানকে আমার ঠিকানা, ফোন সব দেয়া হয়েছে। ২ দিন পর হান্নানের ফোন পেলাম, সে জানালো যে, আমাদের রাস্তা ও ২২ নং এভেনিউর কোনায় একটা বাসায় সে বেড়াতে এসেছে, নিজের গাড়ী আনেনি; আমি ইচ্ছে করলে, টাকাটা ওখান থেকে নিতে পারি। আমি জানালাম, আমি আসছি। সে বললো, আমাদের রাস্তা ও ২২ এভেনিউর কোণায় একটা মাত্র ৪ তলা বাড়ী আছে, সে সেই বাড়ীর ৪তলায়; নীচে গিয়ে ফোন দিলেই হবে। আমি বাড়ীর নম্বর নেয়ার আগেই সে ফোন রেখে দিলো।

হান্নান ল্যান্ড ফোনে কল করেছিলো; আমি একটা কাগজে ফোনটা টুকে নিয়ে, ২২ নং এভেনিউর কোনায় এলাম; পার্কিং নেই। খেয়াল করে দেখলাম, চারিপাশের ৪ কোনায়, কিংবা আশপােশে কোন ৪ তলা বাড়ীই নেই; সবচেয়ে উঁচু যেটা, সেটা ৩ তলা। আমি ৩ তলা বাড়ীটার ড্রাইভ-ওয়য়েতে গাড়ীটা রাখলাম, ইন্জিন বন্ধ না করে বের হলাম; সুন্দর এলাকা, সাগরের কাছে, বেশ বাতাস। বাড়ীটার ছোট আংগিনা, কোমর অবধি তারের বেড়া দিয়ে ঘেরাও, গেইটে তালা। আমি বেড়ার কাছে দাঁড়িয়ে চারিদিক দেখছি; হান্নান কি ৩ তলা বাড়ীকে ৪ তলা বললো! এমন সময়, আমার ঘাঁড়ে উষ্ণ পানির মত কিছু ল্যাপ্টে গেলো! দেখি, এক বিশাল বুলডগ বেড়ার ভিতর থেকে দু'পায়ে আমার পাশে দাঁড়ায়ে, খুবই রাগান্বিত চোখে আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে; আমি একটু সরে গেলাম, কোন লোকজন নেই! আমার ঘাঁড়ে কুকুরের শ্লেষা, মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো; কুকুরকে একটা ঘুষি দেখায়ে, ঘাঁড়টা মুছে অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। কুকুরটা বেশ রাগান্বিত ভংগিতে হেঁটে গিয়ে সিড়িতে শুয়ে আমাকে দেখছে।

হান্নানকে ফোন করার জন্য বুক পকেটে রাখা কাগজটি বের করলাম; কাগজ থেকে আরেকটা কাগজ যেন বেরিয়ে বাতাসে উড়ে আংগিনার মাঝামাঝি গিয়ে পড়লো, ঘাসের মাঝে আটকা পড়েছে; তাকিয়ে দেখি, ১০০ ডলারের নোট; পায়খানা, বুক পকেটে টাকা আসলো কোথা থেকে? আমার স্ত্রীর কাজ; আমার প্যান্টের পেছনের পকেটে আমি কিছু টাকা রাখি বিপদে আপদের কথা ভেবে; স্ত্রী প্যান্ট ধোয়ার সময়, এই শার্টের বুক পকেটে রেখে ছিলো নিশ্চয়। কুকুরটা এসে টাকার নোটটাকে দেখে গিয়ে আবার শুয়ে পড়লো! যাক, হান্নান যদি এই বাড়ীতে থাকে কোন সমস্যা নেই। তাকে ফোন করলাম, কল ম্যাসেজে চলে গেলো।

-হ্যালো, বাড়িতে কেহ আছো, হ্যালো!
কয়েকবার ডাকলাম, কোন খবর নেই! হান্নান এই বাড়ীতে আছে বলে মনে হলো না; রান্নাবান্নার গন্ধ ইত্যাদি নেই; রাস্তায় ২/১জন মানুষ, যাদের দেখছি, এগুলো রাশিয়ান ইহুদী। যাক, টাকাটা উদ্ধার করা দরকার: ৩/৪ হাত লম্বা একটা ডাল মাল হলে, খোঁচা দিয়ে উহাকে উপরের দিকে তুলে দিলে, বাতাসে উল্টো দিকের বেড়ায় গিয়ে লাগবে। এখানে কোন গাছ নেই, একপাশে একটা গোলাপ কাঁটার ঝোপ। পাশের বাড়ীর আংগিনায় একটা গাছ আছে; কাছে গিয়ে দেখি ডুমুর গাছ, ফল ধরেছে; ইহার ডাল ভাংগার পর কেহ দেখলে, মুশকিল হবে। চারিদিকে চেয়েমেয়ে টুং করে একটা নতুন ডাল নিলাম; লম্ব ৩ হাতের কম হবে। ডাল হাতে ফিরে আসার পর, কুকুর লাফ দিয়ে উঠলো, তেড়ে এলো আমার দিকে! লাফ দিয়ে, বেড়া ডিংগিয়ে বের হয়ে আসে কিনা কে জানে; নতুন বিপদ! ডালটা ফেলে দিলাম; কুকুর একটু শান্ত হলো।

হতাশ হয়ে গাড়ীর পাশে দাঁড়িয়ে আছি, এমন সময় মাথার উপর থেকে শিশু কন্ঠে কে যেন হ্যালো বললো। তেতালার ব্যালকনীতে একটা ৭/৮ বছরের মেয়ে।
-হ্যালো, তুমি কেমন আছো? আমি বললাম।
-ভালো! তোমার কিছু দরকার ছিলো?
-আমার সামান্য টাকা উড়ে গিয়ে আংগিনায় পড়েছে; আমি কুকুরের কারণে নিতে পারছি না; তুমি নীচে এসে, টাকাটা আমায় দিতে পার?
-আমি পারতাম, কিন্তু ঐ কুকুরটাকে আমি খুব ভয় পাই।
-কুকুরটা তোমাদের না?
-না, উহা মালিকদের, তারা নীচের তলায়। আমরা ভাড়াটিয়া থাকি!
-আমি অনেকবার ডাকলাম, কেহ নেই মনে হচ্ছে!
-আচ্ছা, আমি ওদের বাসায় গিয়ে দেখি।

৫ মিনিট পর দরজা খুলে এক বিশাল মেয়ে বেরিয়ে আসলো, ৬ ফুটের বেশী লম্বা হবে, বিশাল গঠন, ম্যান-মাউন্টেন, মুখটা একটু কঠিন। তার পেছনে ৯/১০ বছরের আরেকটা মেয়ে, ও তেতালার মেয়েটা আসলো। কুকুরটা শোয়া থেকে উঠে আংগিনায় এসে দাঁড়ালো। আমি তাকিয়ে আছি, সে নিজের থেকে কথা বললো,
-হ্যালো, কিভাবে সাহায্য করতে পারি, জেন্টেলম্যান?
-আমার পকেট থেকে ১০০ ডলারের একটা বিল উড়ে গিয়ে আংগিনায় পড়েছে, তুমি যদি নিয়ে দাও!
-কোথায়?

আমি আংগুল দিয়ে দেখালাম; সে হাতে নিলো।
-টাকা তো পেলাম, টাকা কি তোমার?
-আমার।
-প্রমাণ?
-প্রমাণ কেন?
-টাকা তো আমাদের কারোও হতে পারে?

আমি হেসে বললাম, বিলের উপর আমাের স্বাক্ষর আছে!
-তাই? কি নামের স্বাক্ষর?
-টিমোথি গাইটনের।
-নাম মিলেছে; ছবিটাও কি তোমার?
-না, ছবি বেন্জামিন ফ্রাংকলিনের।
-ভালো, তোমার ছবিযুক্ত আইডি আছে সাথে, ড্রাইভিং লাইসেন্স? নামের সাথে মিলিয়ে দেখি!
আমি হাসলাম, বললাম,
- স্বাক্ষরের নাম নিয়ে জোক করেছি।
-জোকটা সুন্দর হয়েছে; তবে সিগনেচারের নামের সাথে আইডি'র নাম না মিললে, টাকা তোমাকে দেয়া ঠিক হবে না।
-ঠিক আছে, টাকা তুমি রাখ, আমি চললাম।
-শোন, তুমি আমাদের কুকুরকে ২ বার ঘুষি দেখায়েছ; তারপর, ডাল দেখায়ে ভয় লাগায়েছ; আমি ক্যামেরায় সব দেখেছি।
-তুমি ঠিকই দেখেছ, কিছু বুঝনি; আমি ডাল এনেছিলাম টাকার নোটটা উদ্ধার করতে; তোমার ভাবনাশক্তি সীমিত!
-তুমি একটা মেয়ের সাথে কথা বলছ, সেটা ভুলে গেছ?
-ওকে, স্যরি!

-আমি গাড়ীতে উঠে বসলাম; পাশ দিয়ে গাড়ী যাচ্ছে, আমি অপেক্ষা করছি ট্রাফিকে মিশতে, চোখ রাস্তায়। আড় চোখে দেখলাম মেয়েটা গেইটের তালা খুলছে; রাস্তায় মিশতে, আমি একটু পেছনে সরতে সে জানালায় টোকা দিলো।
-তোমার টাকা নিয়ে যাও, তোমার হিউমারটা খুবই সাধারণ, মোটামুটি চলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৩
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×