সভ্যতার এই যুগে, আমেরিকা হচ্ছে সবচেয়ে কম বর্ণবাদের দেশ; অষ্ট্রেলিয়া এই মহুর্তে সবচেয়ে বেশী বর্ণবাদের দেশ। আমেরিকার গত ভোটে বর্ণবাদীরা ট্রাম্পের পক্ষে ছিলো, ওরাই ট্রাম্পের হয়ে মানুষের সুপ্ত বর্ণবাদকে কাজে লাগায়েছে কিছুটা; কিন্তু জেতার জন্য উহা মুখ্য কারণ ছিলো না। এবার, ভোটের প্রচারণার শুরুতে ট্রাম্পের জেতার ব্যাপারে তেমন সংশয় ছিলো না; কিন্তু করোনা নিয়ে তার অসফলতা ও করোনাকে কেদ্র করে ট্রাম্পের ভুলের পর ভুল আমেরিকাকে ভয়ংকর বিপাকের মাঝে টেনে নিয়ে গেছে; যেখানে পুরো ইউরোপ করোনাকে মোটামুটি কন্ট্রোলে এনেছে, আমেরিকায় ইহা বেড়েই চলেছে। এখন গড়ে প্রতিদিন ৫০,০০০ বেশী নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ছে।
এই অবস্হায়, মানুষ হতাশায় ভুগছে, ৪ কোটী বেকার হয়েছে করোনায়; কিন্তু করোনা বেড়েই চলছে। করোনাকে কেন্দ্র করে ট্রাম্পের সরকার অকারণে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার মহাধনী কর্পরেশনগুলোকে দিয়ে বসে আছে। সে সঠিক সময়ে লগডাউন করেনি, এবং কোন প্রস্তুতি নেয়নি; এখন সে মানুষের সামনে বলে বেড়াচ্ছে, সে সঠিক সময়ে সব পদক্ষেপ নেয়ায় মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের প্রাণ বেঁচে গেছে; এতে মানুষ ওর সততা সম্পর্কে ভীত হয়ে উঠেছে।
এদিকে পুলিশের নির্যাতনে আফ্রিকান আমেরিকান নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলো পুরো মাস; ট্রাম্প ইহাকে তার পক্ষে নিতে পারতো, কিন্তু তার নিজের ভুলের জন্য ইহা তার বিপক্ষে চলে গেছে। বিক্ষোভের সময় সারাদেশে মিলিটারী মোতায়েতেনের হুমকি দেয়ায় বিক্ষোভ অনেক বেড়ে যায়; অবশ্য সে ২ দিনের জন্য হোয়াইট হাউসের চারিদিকে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছিলো; এতে তার ভাবমুর্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তার দলের থিংক ট্যাংক ম্যাংক তাকে এসব সমস্যার কথা জানিয়েছে।
এখন জাতীয় জরীপে সে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী জো-বাইডেনের থেকে গড়ে ১০ পয়েন্ট পেছনে আছে; অবশ্য ইহা কোনভাবে বাইডেনের জয়ের নিশ্চয়তা দিচ্ছে না; তবে, ট্রাম্প বিচলিত।
ট্রাম্প বিচলিত হয়ে, নতুন পন্হা নিয়েছে, "শুধুমাত্র রেসিজমকে কাজে লাগিয়ে জয়ী হওয়া"; আমেরিকার ভোটারদের মাঝে শতকরা ৬৪ ভাগ হলো সাদা ভোটার, এবং সাদারাই ভোটের ব্যাপারে সিরিয়াস, তাদের বেশীরভাগই ভোট দেয়ার চেষ্টা করে। আমেরিকায় এবার হয়তো শতকরা ৫৫ ভাগ মানুষ ভোট দিতে যেতে পারে, যেখানে মোট ভোটারের শতকরা ৬৪ ভাগই হবে সাদা; ট্রাম্প চেষ্টা করছে "স্যুইং রাজ্যগুলোতে" নিরপেক্ষ বর্ণবাদীদের ভোট পেতে, সেইসব বর্ণবাদীদের ভোট পেলে সে জয়ী হয়ে যাবে। "স্যুইং রাজ্য" হচ্ছে, যেসব রাজ্য কোন সময়ে ডেমোক্রেটদের পক্ষে যায়, কোন সময় রিপাবলিকানদের পক্ষে যায়; এবার ৬টি রাজ্যকে "স্যুইং রাজ্য" ধরা হচ্ছে আপাতত; এগুলো হচ্ছে, মিশিগান, উইসকনসিন, পেনসিলভেনিয়া, ফ্লোরিডা, অরিজোনা ও নর্থ ক্যারোলিনা।
গত ও চলমান বিক্ষোভে, আমেরিকার ইতিহাসে মানুষ প্রথমবারের মতো জাতির ১৬০টি'র বেশী জাতীয় মনুমেন্ট নষ্ট করে দিয়েছে, সরকার এই মনুমেন্টগুলো সরাতে বাধ্য হয়েছে; ইহা কিন্তু রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি সঠিক হয়নি, এগুলো নষ্ট করার সময়, ভাংগার সময়, কালো নাগরিকেরা বেশী এ্যাকটিভ ছিলো; ট্রাম্প এখানে একটা সুযোগ পেয়ে গেছে; গত ৩ দিন সে শুধু এটার উপর বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছে, এবং সাদাদের মাঝে কিছুটা হালে পানি পাওয়ার শুরু করেছে। সে গতকাল, প্রেসিডেনসিয়াল ডিক্রির মাধ্যমে এসব মনুমেন্টকে পুনরায় স্হাপনের অর্ডার দিয়েছে; ইহা তার পক্ষে যাবে।
জাতীয় জরীপ যেভাবে আছে, এই জরীপগুলো "স্যুইং রাজ্যগুলো"র জন্যও সঠিক হলে, সে জয়ী হতে পারবে না; সামনে ৪ মাস সময় আছে, অনেক কিছু ঘটতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০২০ রাত ২:২৫