আসলে, ইহাতে সমস্যা নেই, বরং জীবনটা বেশ আনন্দময় হয়ে থাকে; কেমন রহস্যঘেরা কথাবার্তা, টানটান উত্তেজনাভর্তি অভিজ্ঞতা, লোমখাড়া-করা গল্প: আরব্য উপন্যাসের কোন এক বাউন্ডুলে আলাদীন সামান্য প্রদ্বীপের জ্বীনকে বশে এনে রাজকুমরীকে বিয়ে করে, ধনী হয়ে, সুখশান্তিতে জীবন যাপন করেছিলো; বাংগালী দরিদ্র নাপিত আয়নার ভেতরে ভুতের প্রতিবিম্ব দেখায়ে ১ বস্তা স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে বাড়ী ফিরলো; ব্লগার রাজিব রাত ৩টায় পানি খেতে উঠে দেখেন, খাটের কাছে একজন সুন্দরী মেয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে হাসছে; এগুলোর চেয়ে জীবনের বড় অভিজ্ঞতা কি হতে পারে?
খুব অল্প বাংগালী জীবনে জ্বীনভুতকে মিস করেছেন; একজন ব্লগার যদি জ্বীনভুতের গল্প ফাঁদেন ব্লগে, যাঁরা মন্তব্য করতে আসেন, তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় ব্লগের হার্ড-ড্রাইভ ভরে যাওয়ার উপক্রম। এ'ছাড়া ধর্মীয় পুস্তকে এদের উপস্হিতি, এনাটমি, ফিজিওলোজী, সোস্যাল লাইফের প্রমাণ দিয়ে সবাই নিজের বক্তব্যকে দাঁড়া করাতে প্রানপণ চেষ্টা করেন।
আমেরিকানরা প্রতিবছর হালুইন উৎসব পালন করে, ইহা জ্বীনপরী, দৈত্যদানব, ভুতপেত্নীদের নিয়ে উৎসব; গত বছর ব্যয় করেছে ৯ বিলিয়ন ডলার, ২টি পদ্মাসেতু; হালুইনের মুভি ও টিভি প্রোগ্রামের হিসেব করলে আরো ডলার যোগ হবে। বাংলাদেশের বইমেলায় যথাসম্ভব জীনপরীর উপর বইপত্র অবিক্রিত থাকে না। বাংলাদেশের বাচ্চাদের সন্ধ্যাবেলার দুরন্তপনা কমানোর একটা সহজ পদ্ধতি হলো ভুত আসছে বলা। ছোট বেলায় যেই ভুতকে ভয় পায়, সেই ভুত আজীবনের জন্য মাথায় বাসা বাঁধে, ব্লগে আসলেও ঐ জ্বীনভুতেরা মাথার উপর বসে থাকে, এবং ব্লগে ঘুরে বেড়ায়।
আমেরিকার বাচ্চারা আজীবন হালুইন করার পর, কলেজে গেলে উহা নিয়ে আর আগের মতো গল্প করে না, উহাকে ধর্মের অংশ করে না, উহা বাচ্চাদের দখলে, বাচ্চাদের ভুবনে থেকে যায়, আমেরিকান ব্লগারদের জন্য উহা আর বিষয় হয়ে থাকে না। আমাদের ব্লগে একজন জ্বীনের কথা লিখলে, বাকীদেরও নিজস্ব পালিত জ্বীনের কথা মনে পড়ে যায়। একটা ভালো দিক হলো, এই গল্পগুলো মিথ্যা, কিংবা এনালাইটিক্যাল ভাবনার অভাব মাত্র।
আসলে, ছোটখাট একটা সমস্যা কিন্তু আছে: যেসব মানুষের ভাবনায় বস্তু ও বিষয় সম্পর্কে লজিক্যাল কারণ, এনালাইটিক্যাল ব্যাখ্যা নেই, তারা আমাদের চারিপাশের বিশ্ব সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা রাখেন না; আশপাশের অনেক কিছুই এঁদের কাছে রহস্যময় মনে হয়; ফলে, রূপকথাও এদের কাছে আসল ঘটনা বলে মনে হতে পারে। আমাদের বিশ্বে যা আছে, যা ঘটছে, সবকিছুর ব্যাখ্যা আছে; কিন্তু অনেক কিছুর ব্যাখ্যা বেশ জটিল, সবাই এগুলো পুরোপুরি আয়ত্ব করতে পারেন না; অনেক সময়, অনেক জাতির বড় অংশ মানুষের এনালাইটিক্যাল ক্ষমতা খুবই কম, তখন পুরো জাতি পেছনে পড়ে যায়; ইয়েমেন ও সিরিয়ার যুদ্ধ আসলে এই ২ দেশের মানুষের এনালাইটিক্যাল ভাবনার অভাবের কারণে ঘটছে; ইয়েমেনের বেশীরভাগ লোকদের গল্পগুজবে জ্বীন একটি বড় বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৭