আমি ৫ম শ্রেণীতে পড়ার সময়, দুরের এক গ্রামে একজন কলেজ ছাত্রীর সাথে দেখা হয়েছিলো, উনি কায়স্হ পরিবারের মেয়ে, উনাকে আমার খুবই ভালো লেগেছিলো, এটি সেই কাহিনী।
৫ম শ্রেণীতে প্রমোশান পেয়েছি, তখনো ক্লাশ শুরু হয়নি; সমুদ্রের কাছে আমার এক খালার বাড়ী, শুকনোর দিনে মেঠো পথ ধরে, ৬ মাইল হেঁটে উনাদের বাড়ীতে যেতে খুবই পছন্দ করতাম। মা পিঠা বানিয়ে, একটা এ্যালুমিনিয়ামের পাতিল ভরে দিয়েছন; আমি দুপুরের পরেই রওয়ানা দিলাম। মাইল চা'রেক পরে একটি বেশ বড় মাঠ পড়ে; মাঠের উত্তর পশ্চিম ধারে একটি হিন্দু গ্রাম, উহাকে ডান পাশে রেখে আমার পরবর্তী মাঠে নামার কথা; আমি সোজা না গিয়ে, উত্তরের হিন্দু গ্রামটা দেখে, উহার মাঝ দিয়ে তার পশ্চিমের মাঠে যাবার চেষ্টা করলাম; বেশ কিছু বাড়ীঘর পার হয়ে একটা যায়গায় এলাম, ২'টি বাড়ীর মাঝে সরু একটি লম্বা জমি, জমিতে ভেঁড়ির ডাল চাষ করা হয়েছে; আমি সেটার উত্তর আল ধরে পশ্চিম দিকে যাচ্ছি, আলের পাশের বাড়ীটা বেশ ছোট; আশেপাশে লোকজন নেই বললেই চলে, গরমে লোকজন মনে হয় ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।
জমিটা পুর্ব-পশ্চিমে লম্বা, পশ্চিম প্রান্তটা পুকুরপাড়ের মতো উঁচু, গাছে ভারা; আার ধারণা, ইহার পরেই পশ্চিমের অন্য মাঠের শুরু হবে। আলের মাঝাাঝি অংশ উত্তরের বাড়ীটার উঠোনের সাথে অনেকটা লেগে গিয়েছে; উঠোনের এই পাশে, আম গাছের নীচে চেয়ারে বসে একজন তরুণী বই পড়ছিলেন; আমাকে দেখে, অনেকটা অবাক হয়ে দেখছেন; আমিও দেখছি; আমি কয়েক গজ সামনে যাবার পর, উনি পেছন থেকে আমাকে ডাক দিলেন,
-এই ছেলে, তুমি ঐদিকে কোথায় যাচ্ছ?
আমি পেছনে সরে উনার কাছাকাছি এলাম, উনি উঠোন থেকে নেমে আলের উপর এসেছেন, হাসছেন,
-তুমি আমাদের এলাকার ছেলে নও, এলাকা চেন না, কোথায় যাচ্ছ?
আমার খালার গ্রামের নাম বললাম; তিনি এবার জোরে হাসলেন, বললেন,
-সামনে উত্তর দক্ষিণে লম্বা গড় (বাড়ীর নালা), উহাতে পানি; তোমাকে উত্তর অথবা দক্ষিণ দিক হয়ে পশ্চিম দিকে যেতে হবে।
আমিও উনার সাথে হাসিতে যোগ দিলাম; উনার কপালে সিঁদুর; সৌম্য কান্তির তরুণী; এত সহজ, এত উজ্বল, যেন অনেক দিনের চেনা।
আমাকে বললেন,
-বেড়াতে যাচ্ছ! পাতিলে কি?
-পিঠা, খালাকে দেখতে যাচ্ছি!
-কি কি পিঠা?
-নারিকেল-বরা, পুয়া পিঠা, আপন পিঠা; আপনাকে কয়েকটা দিই?
-না, লাগবে না; নিশ্চয় খুব স্বাদের পিঠা হবে!
-আপনি খেয়ে দেখেন, আমি দিচ্ছি!
আমি পাতিলের মুখ খোলার শুরু করলাম, তিনি মানা করছেন খুলতে; আমি বললাম,
-আপনি খেলে আমি খুশী হবো।
-তুমি খালার জন্য নিচ্ছ, কাউকে দেয়া ঠিক হবে না; তদুপরি, আমি খেতে পারবো না, আমরা কায়স্হ!
-কায়স্হ হলে কি হবে! আমার সাথে কায়স্হ মেয়েরা পড়ে, ওরা আমাদের বাড়ীর পিঠা খায়!
-তাই? ওরা হয়তো তোমাকে পছন্দ করে, সেইজন্য খায়; কায়েস্হদের জন্য অন্যদের তৈরি খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ!
-তাই? ধর্ম মানা করেছে?
-তা করেছে; তবে, আমার মনে হয়, স্বাস্হ্যগত কারণে, অন্যের তৈরি খাবার পরিস্কার ও বিশুদ্ধ কিনা সেটাই কারণ হতে পারে।
-আমার মা খুবই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন, তিনি বানায়েছেন; আপনি নিশ্চিন্তে খেয়ে পারেন।
ততক্ষণে আমি পাতিলের মুখ খুলে ফেলেছি; উনি লজ্জিত মুখে ১ টি নারিকেল-বরা নিলেন; আমিও একটা নিয়ে খেতে শুরু করলাম; উনি খেলেন, বললেন,
-অনেক স্বাদ।
-আপনি আরো কয়েকটা নেন।
-না, আর না!
-আপনি না নেয়া অবধি আমি যাচ্ছিনা।
উনি আরো ২/৩টা পিঠা হাতে নিলেন; আমার সাথে দক্ষিণের ২ টি বাড়ী অবধি এলেন; সেখান থেকে পশ্চিম দিকের মাঠে নামা যায়; আমি উনার থেকে বিদায় নিয়ে মাঠের দিকে অগ্রসর হলাম; তিনি বললেন,
-তুমি বাড়ী ফেরার পথে, কিংবা পরে সময় করে আমাদের বাড়ী আসিও।
আমি কিছুদুর যাবার পর পেছনে ফিরে দেখলাম, উনি তখনো ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:২৬