আমাদের দেশের অর্থনীতিটা হচ্ছে, ৩য় বিশ্বের গলাকাটা ক্যাপিটেলিজম; ইহার পেছনে তেমন কোন তত্ব নেই, ইহা ভারত ও পাকিস্তানের অনুকরণে একটা গোলযোগপুর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্হা: যারা সরকারের সাথে কোন না কোনভাবে যুক্ত, তারা ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে, সরকারী সম্পদ দখল করে, অন্যদের সম্পদ ও সুযোগ দখল করে একটা অর্থনীতি চালাচ্ছে; তারা অর্থনীতিকে নিজের প্রয়োজন অনুসারে সাজায়; সরকার ও প্রশাসন মুলত: দেশ চালায় নিজেদের ভালোর জন্য, দেশকে তারা বাজার হিসেবে নিয়েছে। বিশ্বে ৩য় বিশ্বের দেশই বেশী।
৩য় বিশ্বও চলছে, বসে নেই, এখানে সরকার আছে, প্রশাসন আছে, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড আছে; ব্লগার হিসেবে আপনাকে এগুলো বুঝতে হবে। সরকার ও প্রশাশনকে বুঝের জন্য আপনাকে সমাজনীতি ও রাজনীতি বুঝতে হবে। অর্থনীতি বুঝার জন্য আপনাকে দেশীয় ক্যাপিটেলিজমকে বুঝতে হবে। ক্যাপিটেজিম খুবই শক্তিশালী একটা অর্থনোতিক সিষ্টেম, যা আসলে সরকারকে চালায়; অর্থাৎ, যাদের হাতে ক্যাপিটেল থাকে, তারা সরকার গঠনে ও উনার কার্যক্রম চালনায়ও সরাসরি প্রভাব রাখে। সেই কারণে, আপনাকে ইহার উপর জ্ঞান রাখতে হবে।
ক্যাপিটেলিজমের স্বাস্হ্য বুঝার জন্য অনেক ধরণের ইনডেক্স ব্যবহার করা হয়; কিছু ইনডেক্স দীর্ঘমেয়াদী ধারণা দেয়, যেমন বাজেট, জিডিপি, মাথাপিছু আয়, সবর্বনিম্ন বেতন, ব্যাংকের সুদের হার, ইত্যাদি। আবার কিছু ইনডেক্স আছে, যা সাপ্তাহিক ও মাসিক ধারণা দিতে পারে; যেমন (১) ষ্টক-ইনডেক্স (২) বন্ডের ইয়েল্ড (৩) বেকারত্বের হার (৪) বাজার দর (৫) নাগরিকদের ক্রয়-ক্ষমতা।
সারা বিশ্বই এই মহুর্তে ক্যাপিটেলিজমকেই অর্থনৈতিক তত্ব হিসেবে ব্যবহার করছে; কিন্তু ক্যাপিটেলিজমেরও বিবর্তন ঘটেছে, অর্থনীতিবিদরা ইহাকে এখন কয়েকভাগে বিভক্ত করেছেন: (১) রাষ্ট্রীয় ক্যাপিটেলিজম; ইহার উদাহরণ হচ্ছে: চীন, ইরান, তুরস্ক (২) ফ্রি-মার্কেট ক্যাপিটেলিজম; ইহার উদাহরণ হচ্ছে: জাপান, আমেরিকা, জার্মানী, বৃটেন (৩) ওয়েলফেয়ার ক্যাপিটেলিজম; ইহার উদাহরণ হচ্ছে: স্ক্যানডেনেভিয়া, কানাডা, ফ্রান্স (৪) ৩য় বিশ্বের ক্যাপিটেলিজম; ইহার উদাহরণ হচ্ছে: ভারত, বাংলাদেশ থেকে শুরু করে লেবানন, আফগানিস্তান।
আমেরিকা নিজকে ফ্রি-মার্কেট অর্থনীতির দেশ হিসেবে গণ্য করে; ফ্রি-মার্কেট অর্থনীতির মুল সংজ্ঞা দেয়া হয় সাধারণ অর্থনীতির দিক থেকে: বাজারের চাহিদা ও সাপ্লাই অর্থনীতির গতি নির্ধারণ করে। কিন্তু আমেরিকার অর্থনীতি ভয়ংকর কমপ্লেক্স, শুধু বাজারের চাহিদা ও সাপ্লাই এখানে অর্থনীতির গতি ও দিক নির্ণয় করার মতো সোজা ব্যাপার নয়; কারণ, সরকার ইহাকে কঠিনভাবে কন্ট্রোল করে; ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও কংগ্রেসের সিদ্ধান্তগুলো আমেরিকার অর্থনীতির গতি ও দিক নির্ণয়ে বিশাল প্রভাব রাখে।
আমাদের অর্থনীতির সঠিক কোন গতিপথ নেই, সঠিক কোন প্যাটার্ণও অনুসরণ করে না; তবুও, দেশের বাজেট, ষ্টক-মার্কেট, সরকারী বন্ড, বেকারত্বের হার, ন্যুনতম বেতনভোগীদের জীবনযাত্রার মান, সুদের হার থেকে আপনি দেশের অর্থনীতির স্বাস্হ্য অনেকটা বুঝতে পারবেন। ইহা কি আপনার জন্য ইন্তারেষ্টিং ব্যাপার, নাকি কয়েকলাইন পদ্য লেখা ইন্টারেষ্টিং?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৪৩